সুখে থেকো জারা
আজ থেকে ৯ মাস আগের ঘটনা। ফেসবুকে একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়! তার নাম জারা (ছদ্মনাম)
তার আসল নাম টা প্রকাশ করতে চাই না। তার সাথে আমার অনেক কথা হতো রাত দিন সব সময়। তার থেকে কখনো আমি তার ছবি চাইনি, সে ইচ্ছে করেই একদিন ছবি দিলো। আস্তে আস্তে ভাল লাগা শুরু হয়। তাকে জিজ্ঞেস করি সে প্রেম করে কি না। সে কিছু না বলে কথা ঘুরিয়ে নিয়ে যায়। আমি আবার জিজ্ঞেস করি। পরে সে জানায় সে প্রেম করে, কিন্তু ছেলে পাকিস্তানের। এটা শুনে আমার অনেক খারাপ লাগলো। তবুও আমি কথা বন্ধ করি নি, তখনো আমাদের কথা চলতেই থাকে। তার পাকিস্তানের বয়ফ্রেন্ড তাকে সময় দেয় না। না না অভিযোগ করতে থাকে আমার কাছে, একদিন দেখি সে খুবই রেগে আছে। জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে। বলে কিছু না। আবার বললাম কি হয়েছে বলে কিছু না। তার পর হঠাৎ সে বলছে সে ব্রেকআপ করছে পাকিস্তানির সাথে।
আমিঃ কিন্তু কেন?
সেঃ ওরে আমি ব্লক করে দিছি।
আমিঃ কেন কি হয়েছিল?
সেঃ সে অনেক খারাপ ছেলে।
আমিঃ হঠাৎ এ কথা?
সেঃ সে আমাকে ---- ভিডিও দিছে।
আমিঃ----
এভাবে আরো না না অভিযোগ করতে থাকে।
তারপর আস্তে আস্তে সে আমার সাথে প্রেম শুরু করে।
দুজনে অনেক বেশি প্রেম পড়ে যাই। এদিকে জারার একটা বান্ধবী ছিলো, যে জারা কে পাকিস্তানির সাথে প্রেম করিয়ে দিছিলো। তার নাম জান্নাতুল। সে জানে না তার জারা পাকিস্তানির সাথে ব্রেকআপ করে আমার সাথে রিলেশন শুরু করছে। পাকিস্তানি ওই ছেলে জান্নাতুল কে বলে, জারা আমাকে ব্লক করছে। জান্নাতুল জারা কে জিজ্ঞেস করে কেন কি হয়েছে তোদের। জারা বলে আমি তার সাথে রিলেশন করবো না। জান্নাতুল জারা কে অনেক বোঝায়, কিন্তু জারা তখন আমার প্রেমে অন্ধ সে কিছুই বুঝতে চায় না। পরবর্তীতে জান্নাতুল মেনে নেয়, কিন্তু জান্নাতুল জানে না, জারা আমার সাথে প্রেম করছে। কারণ সে এটা মানবে না। জান্নাতুলের সাথেও আমার ফেসবুকে বন্ধুত্ব ছিলো। সে ও অনেক কথা বলতো আমার সাথে। ধীরে ধীরে জারা জান্নাতুল কে সব বলে দেয় আমার আর জারার বিষয়ে। জান্নাতুল প্রথমে না মানলেও পরে মেনে নেয়।
ধীরে ধীরে জারার সব বান্ধবী রা জানতে পারে আমার কথা। সবাই দেখি আমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিচ্ছে জারা কে জিজ্ঞেস করে সবাই কে এড করি। এভাবে খুব ভালো চলছিল আমাদের সম্পর্ক। খুব দুষ্ট মিষ্টি ঝগড়া। আদর ভালবাসা । একদিন রাতে জারা জানায় তার বেষ্টফ্রেন্ড জান্নাতুলের কাল জন্মদিন, জান্নাতুলের জন্মদিন আর জারার গিফ্ট হিসেবে পরের দিন তাদের বিকাশে ১০২০ টাকা পাঠাই, এবং জান্নাতুল কে একটা টেডি বিয়ার আর জারার একটা টেডিবিয়ার কেনার জন্য। তারা অনেক খুশি হয়। জানিনা তারা কি কিনছিলো।
হঠাৎ একদিন......
আমি জানতে পারি আমার পরিবার আমার বিয়ে ঠিক করেছে। সেই বিয়ে করলে মেয়ের বাবা আমাকে সরকারি চাকরি নিয়ে দিবে। আর আমার স্বপ্ন ছিলো এটা। বাবার ও স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু আমরা মধ্যবিত্ত। আমি যখন জানতে পারি বিয়ের বিষয়ে, তখন জারা কে জানাই। জারা খুব কান্না শুরু করে। অনেক পাগলামি করতে থাকে। সম্পর্কে হঠাৎ অশান্তি চলে আসে। দুজনে কখন খাই কখন খাই না কিছু ঠিক নেই। সব এলোমেলো হয়ে গেলো। এর মাঝে জারার বান্ধবী রা আমাকে মেসেজ দিয়ে বলে ভাইয়া আপনাকে ভাল ভাবতাম আপনি জারা কষ্ট দেন কেন। কিন্তু তারা জানে না আমার বিয়ের বিষয়ে। তারা ভাবছে আমি জারার সাথে ঝগড়া করছি। এর মাঝে জারা আবার হাত কাটে। এটা দেখে তার বান্ধবী, জান্নাতুল সবাই খুব রেগে যায় আমার উপর।
কি করবো কোন কিছুই আমি বুঝতে পারছি না। একদিকে পরিবারের বিয়ের চাপ। অন্য দিকে জারার ভালবাসা। জারা কে আমি সত্যি অনেক ভালবাসি, অনেক অনেক বেশি। কেউ কল্পনাও করতে পারবে না এত ভালবাসি , জারা কান্না করে আর আমাকে বলে তুমি এ বিয়ে করো না আমি মরে যাবো। আমি সুইসাইড করবো দেখো হাত কাটছি। পরে আমি আমার স্বপ্নের ভবিষ্যৎের কথা ভুলে গিয়ে পরিবারের কথার বাইরে গিয়ে জারা কে কথা দেই আমি শুধু জারা কেই বিয়ে করবো আর কাউকে না। জারা এটা শুনে খুব খুশি হয়। পরে সেও প্রমিস করে সে শুধু আমারি হবে আর কারো না। এবং কসম করে বলে।
এদিকে আমার বাবা ওই মেয়ের বাবার সাথে বিয়ে কথা পাকা করে ফেলেছিলো। যখন আমি পরিবারে যানাই আমি এ বিয়ে করবো না। চাকরি চাই না। বাবা খুব রেগে যায়। পরিবারের অশান্তি শুরু হয়। এত অশান্তির মাঝে মা অসুস্থ হয়ে যায়। পরিবারের সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করে কেন আমি বিয়ে করতে চাই না। আমি তাদের কিছু উত্তর দিতে পারি না। পরিবারের সবাই আমার উপর খুব রেগে যায়।
এদিকে জারার সাথে সব ঠিক ঠাক সুন্দর আবার আগের মতো৷ তার সাথে আবার সুন্দর সময় কাটে।
কিছুদিন কেটে যায় এভাবেই ৫ মাস পার হয়ে যায় আমাদের রিলেশনের।
হঠাৎ একদিন
জারার পরিবার সব জেনে যায়, আমাদের প্রেমের সম্পর্কে।
জারা তার মা আর ভাইয়ের সামনে বসে লাউডস্পিকার দিয়ে আমাকে কল দেয়৷ আমি কল রিসিভ করি। হঠাৎ শুনতে পাই জারা কান্না করছে। আমি বলি কি হয়েছে কান্না করছো কেন? সে বলে তার পরিবার সব জেনে গেছে। নাও তুমি মায়ের সাথে কথা বলো তার মায়ের সাথে কথা বলি আমি, তার মা আমাকে বলে আমি যেন জারা কে আর কল না দেই, আর জারার সব ছবি যেন ডিলিট করে দেই। এর মাঝে জারা বড় ভাই, জারার মায়ের থেকে ফোন নিয়ে আমার সাথে কথা বলে, জারা বড় ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করে আমার বাড়ি কোথায় কি করি, আমি সব উত্তর দেই। সে বলে তার সাথে যেন ঢাকা দেখা করি। নইতো এখনি যেন জারা ওখানে গিয়ে জারা কে নিয়ে চলে আসি, জারা কে তারা আর পরিবারের রাখবে না। জারা পাশে কান্না করছে আমি শুনতে পাচ্ছিলাম। আমার চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছিলো আমার এখনো মনে আছে সন্ধ্যা বেলা তখন রাস্তার পাশে বসে একা একা কানে ফোন ধরে চোখের পানি মুছছিলাম। অনেক ক্ষন ওদের সাথে কথা হয় । তারপর জারাকে দেয়। জারা আমি জানাই তুমি কান্না করো না। তোমার কান্না আমি সহ্য করতে পারছি না। জারা কে বলি তোমার পাশে কেউ না থাকলেও আমি আছি। জারা ফোন কেটে দেয়। তারপর জারার ভাই জারার ফোন ভেঙে ফেলে, তার অনেক অনেক মারধর করে। জারার স্কুল প্রাইভেট সব বন্ধ করে দেয়৷
তারপর অনেক দিন আমাদের কথা হয় না। ওর বান্ধবী দের থেকে খোজ নেওয়ার চেষ্টা করি, কেউ কিছু জানে না। ভয়ে কেউ ওদের বাড়িতেও যায় না। পরে জান্নাতুল কে বলি, জান্নাতুল তার বাড়ির পাশের ছিলো সে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে আমাকে জানায়, জারা এখন ঠিক আছে। আমি জারা কে অনেক মিস করতে থাকি। সব সময় চিন্তা হতো ওর জন্য।
আস্তে আস্তে ওর পরিবার জারা কে প্রাইভেটে যেতে দেয়। কিন্তু বলে দেয় আমার সাথে যেন কথা না বলে, তবুও জারা রাতে বসে বসে খাতায় লিখতো, চিঠি হিসেবে সেটা পড়তে গিয়ে তার বান্ধবীদের দিতো, তার বান্ধবী রা ছবি তুলে আমাকে দিতো, আমি পড়ে উত্তর দিতাম সেই সব কথা জারা কে বলতো এভাবে এক মাস চলতে থাকে আস্তে আস্তে তার চিঠি আসা বন্ধ হয়ে যায়। তার বান্ধবী দের থেকে শুধু জানতাম সে ভাল আছে হাসি খুশি আছে। এর মাঝে হঠাৎ একদিন আমার মা আমার পরিবারের এসব চিন্তা করতে করতে হার্ট অ্যাটাক করে। মাকে নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। মায়ের কোন ঙান নেই। সারাদিন সারারাত মায়ের পাশে। একদিকে মায়ের চিন্তা অন্য দিকে জারার কথা খুব মনে পড়ছে ওর সাথে কষ্ট গুলো শেয়ার করার জন্য খুব ইচ্ছে করছিলো।
কিন্তু কি করার কথা বলা তো সম্ভব নয়। কিছু দিন পরে মা কে নিয়ে বাসায় আসি। মা একটু সুস্থ হয় তবে বিছানা থেকে উঠতে পারে না। এদিকে জারারও কোন খোঁজ পাই না। জারার এক বন্ধবির থেকে জানতে পারলাম, জান্নাতুল নাকি, জারা থেকে আমাকে দুরে রাখতে চায়। আমার নামে না না খারাপ কথা জারা কে বলতে থাকে। জারাও আস্তে আস্তে দুরে সরে যায়। জারার সাথে অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করে। তখন আমি এক নাটক করি, আমার খালাতো বোনের হাতে আমার হাত দিয়ে একটা ছবি তুলে স্টোরি দেই, যেন জারার বান্ধবীরা গিয়ে জারা কে জানায়, আর জারা রেগে যেন আমাকে একটু হলেও বকা দিতেও কল করে। কিন্তু সে কিছুই করে নি।
এখন জারার পরিবারে সব ঠিক হয়ে গেছে জারা কে ফোন কিনে দিছে জারা নতুন ফেসবুক একাউন্ট খুলেছে, জারার এক বান্ধবী আমাকে জানায়, কিন্তু জান্নাতুলের কাছে পাসওয়ার্ড আছে। জান্নাতুল নিষেধ করছে তাই জারা আমার সাথে কথা বলে না। আমি জারা কে ফ্রেন্ডরিকুয়েষ্ট দেই। জারা ব্লক করে দেয়। আস্তে আস্তে, জারার সব বান্ধবী আমাকে ব্লক করে দেয়। গত কাল আমার জন্মদিন ছিলো, সকল বন্ধু বান্ধব জন্মদিনের উইস করলো কিন্তু মনে বিন্দু মাত্র শান্তি নেই। জারা একবারও আমার সাথে কথা বললো না। একটা মেসেজও দিলো না। সারাদিন তার উইসের অপেক্ষায় ছিলাম। সে কোন মেসেজ দেই নি। এখন একা একা অন্ধকার ঘরে শুয়ে আছি চোখ দিয়ে পানি পড়ছে কান্না করতে পারছি না। পারিবারের কাছে খারাপ হলাম আমি, জারা দুরে চলে। কই গেল তার কসম? দুনিয়ার প্রতি থেকে বিশ্বাস টা হারিয়ে গেলো দুনিয়ায় থাকতে আর কারো ইচ্ছেই করে না। মায়ের অবস্থা আজ জারার জন্য । আমার পরিবারের অশান্তি আজ তার জন্য, কিন্তু সে আমাকে ভুলে অনেক শান্তি তে আছে। এই দুনিয়ায় আমার কষ্ট গুলো বলার মতো একটা মানুষ নাই। আমার দুই কূলই হারিয়ে আমি এখন শুন্য। বেঁচে থাকার আর ইচ্ছেও করে না।
কষ্ট গুলো বলার মতো কেউ নাই, তাই অন্ধকার রুমে একা একা শুয়ে শুয়ে কষ্ট গুলো লিখলাম৷ হইতো তাকে আর কখনো পাবো না, তার কন্ঠ টা আর কখনো শুনতে পাবো। তার সাথে আর কোন দিন ঝগড়া করতে পারবো না। এগুলো ভাবলেই বুক টা ফেটে যাচ্ছে।
কান্না করছি আর লিখছি আসলে লিখে কখনো মনের কষ্ট বোঝানো যায় না। জানতে পেরেছি জারার নাকি বিয়ের কথা চলছে, সে এখন মহা খুশিতে আছে। তার নতুন জীবনের জন্য আমার শুভ কামনা রইলো। সে যেন সব সময় ভাল থাকে। জারা তুমি যদি কখনো লিখা টা দেখো, তখন যদি আমি দুনিয়ায় না থাকি। আমাকে মাফ করে দিও। অনেক ঝগড়া করছি। কষ্ট দিছি। আমার ভুলটা কি ছিলো একবার বলেও গেলে না। যাই হোক সুখে থেকো।
ডিএসএস/