ভালোবাসার একদিন
‘ফ্রিওয়াই-ফাই পেয়েছি!’ নুহা তার মায়ের ফোন এনে এই বাক্যটাই চিৎকার করে বলেছিল। তার উত্তেজনা দেখে মনে হচ্ছিল যেন নতুন কিছু আবিষ্কার করে ফেলেছে। নুহা আমাদের বাসার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। কিন্তু স্মার্টফোন বিষয়ে তার দক্ষতা দেখে মাঝেমধ্যে অবাক হই। এমন সব খুঁটিনাটি বিষয় সে জানে, যা আমিও জানি না। বিনে পয়সায় ওয়াই-ফাই সুবিধা বেশ উপভোগ করছি। রুমের চেয়ে বারান্দায় গেলে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ভালো পাওয়া যায়। তাই সময়ে-অসময়ে বারান্দায় বসে কাটাই! আর এভাবেই পেয়ে যাই ইলাবতীকে!
নামটা কেমন পৌরাণিক মনে হলো? প্রথম তার নাম শুনে আমারও এমন মনে হয়েছিল।
ধীরে ধীরে খুব পরিচিত মনে হতে লাগল—ইলাবতীকে। সে আমাদের সামনের বাড়ির বাসিন্দা।
প্রথম দিন আমাদের কথা শুরু হয়েছিল ওয়াই-ফাই নিয়ে। আমার মতোই বারান্দায় বসে স্মার্টফোনে তাকিয়ে থাকত।
একদিন হুট করে ইলাবতী জিজ্ঞেস করল, ‘কি! বিনা মূল্যে সেবা নিচ্ছেন?’ আমি খানিকটা লজ্জিত হয়ে বললাম, ‘হ্যাঁ।’ একটু সময় নিয়ে তাকে পাল্টা প্রশ্ন করি, ‘আপনিই কি তাহলে সেবাদাতা?’
ইলাবতী বলল, ‘না, না, আপনারই মতো একজন সেবাগ্রহীতা!’
শুনে আনন্দিত হই। ভালো লাগে এই ভেবে, আর কোনো মিল না থাক, আমরা দুজন একই সেবার আওতাভুক্ত!
সেদিনের পর বারান্দায় আমার যাতায়াত বেড়ে গেল। বিনে পয়সার ওয়াই-ফাই যত না টানে, তার চেয়ে বেশি আগ্রহ ইলাবতীর সঙ্গে একবার কথা বলার সুযোগ পাওয়া।
ফেসবুকে অবশ্য আমাদের কথাগুলো ছিল খুবই ছকবাঁধা। এই যেমন ইলাবতী জানতে চাইত, জব সেক্টর কেমন? কখনো-বা পড়াশোনার টিপস। আমি তার কাছে শুনতাম ক্যাম্পাসের বর্তমান হালচাল।
ইলাবতীর ছিল ছবি তোলার শখ। আমিও ছবি তুলতে ভালোবাসি। কিন্তু এই ছবি তোলা, পড়াশোনার টিপস, সমাজ-সংস্কৃতি নিয়ে গল্পগুজবের মধ্যে একসময় চলে আসে আরও কিছু বিষয়। যা একান্তই নিজস্ব। অফিস থেকে ফিরে প্রতিদিন নিয়ম করে চ্যাটিং হতো, ফোনে কথাও বলতাম কখনো। ইলাবতী সরাসরি কিছু বলত না, তবে হাবভাবে বোঝা যেত, আমি বললেই সে এককথায় রাজি।
এর মধ্যেই এল আমাদের কলেজের দশম বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান। দুই দিনব্যাপী পুনর্মিলনী উৎসবে আমি গেলাম ক্যাম্পাসে। ইলাবতীকে দেখলাম একটা শাড়ি পরেছে। নীল জমিনে কালো পাড়। নীল শাড়িতে ইলাবতীকে মনে হচ্ছিল, যেন ডানাকাটা পরি। আর চুলের বাঁধনটা শাড়ির সঙ্গে অপরূপ লাগছে।
আমিও পাঞ্জাবি পরেছি। ইলাবতীকে সামনে দেখে বললাম, 'আমাদের দুজনের পোশাক মানিয়েছে বেশ, চলো একটা ছবি তুলি।' ইলাবতী হাসতে হাসতে পাশে এলো। সেলফি তুললো। সেলফি তোলার এক ফাঁকে আস্তে করে বলল, 'নীল শাড়িতে তো ছবি তুললাম, যদি লাল শাড়িতে ছবি তুলতে চাই?'
কী উত্তর দেব খুঁজে পাচ্ছিলাম না। একটা হাসি দিয়ে বললাম, 'ছবি তুলতে আমিও রাজি, তবে আমার মাথায় তখন একটা পাগড়ি থাকবে।'
ডিএসএস/