মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

শেষ ট্রেন

ফতেহগঞ্জ রেলস্টেশনটা আকারে খুব বড় নয়। কয়েকটি অচল হয়ে যাওয়া বগি পড়ে রয়েছে পরিত্যক্ত রেললাইনের উপরে। এই স্টেশনে সব ট্রেন থামেও না। তবে রাত্রির শুরু থেকে বেশ কয়েকটি ট্রেন ছেড়ে যায় শহরমুখী। বেশিরভাগ ট্রেনই মালবাহী ট্রেন। ফতেহগঞ্জের আশেপাশে বেশিরভাগ শস্যক্ষেত। সরিয়া, আলু, গম, আখ এখানে ফলে বৃষ্টির মতো। অন্যান্য ফসলও খুব ভালো হয়। সেসব ফসলই বিক্রি হয় এই স্টেশনের পাশে। ফলে দিনের বেলা লোকজনের আনাগোনা না থাকলেও রাত্রিতেই যেন জমজমাট হয়ে উঠে স্টেনশটা। রাত্রির দেবতা যেন এখানে বসিয়ে দেয় রহস্যের পসরা।

স্টেশনের নতুন মাস্টার হিসেবে এসেছেন সাখওয়াত হোসেন। সদ্য স্নাতক পাস করেই সংসারের হাল ধরেছেন বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটাতে। গ্রামের বাড়ি দেওয়ানগঞ্জ মহকুমায়, সেই গ্রাম থেকে সরকারি চাকরি করা যেন সোনার হরিণ ধরে আনা। স্টেশনের কাজের চাপে খুব একটা যাওয়া হয় না বাবা-মায়ের ঘরে।

সেই স্টেশনের পাশেই রয়েছে পতিতাদের আনাগোনা। রাত হলেই যেন সেখানে বাড়ে যৌনতার দেবতার ব্যস্ততা। মুখে সাদা মোটা প্রলেপের মেকাপ করে, লাল লিপস্টিক লাগিয়ে আকৃষ্ট করে খদ্দরদের। সেই বারাঙ্গনাদের অনেকেই স্টেশনের পাশের অব্যবহৃত রেলওয়ের কামরায় কাজ সেরে জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের বেশিরভাগ খদ্দরই, শ্রমিক ও বাবু সাহেবরা।

স্টেশন মাস্টার সাখওয়াত বেশ নিরীহ প্রকৃতির লোক। কোনো দুর্নীতি কিংবা টাকার বিনিময়ে মালপত্র নেওয়ানোর অভিযোগও নেই তার বিরুদ্ধে। রাতে স্টেশনে কাজ করার পর দুপুর পর্যন্ত এক ঘুম দেয় সে। এরপর বিকেল হলে প্রতিদিনই হাটতে বের হয় গ্রামের মেঠোপথে। গ্রামের পথের দুই পাশে সারি সারি হলুদ সরিষার ক্ষেত। সেই সরিষার ক্ষেত যেন যেন ইশারা দিয়ে ডেকে যায় পথিকদের। তার সামনেই বয়ে গেছে উজান নদী। সেই নদীর ধারেই বসে বিকেলটা কাটায় শাখওয়াত। এই গ্রামে খুব একটা বন্ধু নেই তার, রয়েছে শুধু রফিক। যে শাখওয়াত মিয়াকে খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়। এক কথায় মজিদ শফিকের কেয়ারটেকার।

উজান নদীর প্রকাণ্ড বটগাছটার নিচেই বসে সময় কাটায় আঞ্জুম। সঙ্গে বসে আড্ডা জমায় তার সাথীরা, কখনো বা নদীর পাশের সরিষা খেতে জুড়ে দৌড়ে দৌড়ে বাড়ি যায় সাদিয়া। দেখে যেন মনে হয় কোনো এক হলুদ বনের ধারে আকাশ নদীর নীলে উড়ে যাচ্ছে এক প্রজাপতি।

প্রায়ই স্টেশনে সেই পল্লির মেয়েদের দেখা পায় সাখওয়াত। কিন্ত কিছু করার নেই, সমাজটা এখানে এভাবেই চলছে, এখানে এই নিয়ম। এসব ভেবেই খুব বিষণ্ণ থাকে সে।

আজ স্টেশনে বেশ একটা জটলা বেধে গেল। গ্রামের হারুন সরদারের নাকি মালামাল নিয়ে ঝামেলা লেগেছে শহরের লিটন মালাকারের সাথে। সেই ঝামেলা মিটমাটের দায়িত্ব পড়েছে সাখওয়াতের উপর। সেই ঝামেলার দায়িত্ব শেষ করতে না করতেই স্টেশনে এসেছে ফতেহগঞ্জ থানার পুলিশ। স্টেশনের পাশেই মিলেছে পতিতা পল্লির সুমনা রানির লাশ। কে বা কারা যেন সুন্দর দেহের আকৃতিতে একে দিয়েছে মৃত্যুর যন্ত্রণা। গলায় কিসের যেন একটা দাগ, সাদা ধবধবে গলায় লাল রক্তবরণ ধারণ করেছে সেই দাগ।

স্টেশনের এসব ঝামেলা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই জায়গা থেকেই চেষ্টা তদবির করতে লাগল সাখওয়াত। কিন্ত উপায় খুব একটা হয়ে উঠছে না।

আজ নদীর ধারে আবার এসে বসেছে সাখওয়াত। হঠাৎ প্রকাণ্ড বটগাছটার নিচে চোখ পড়তেই দেখা মিলল আঞ্জুমের। ঠিক যেন দমকা একটা হাওয়া এসে নাড়িয়ে দিল সাখওয়াতের সমস্ত শরীর। যেন আমের বনের দমকা হাওয়া এসে নাড়িয়ে দেয় আমের মুকুল।
সাদা বর্ণের চেহারায় যেন লাল লাল আভা। চোখে যেন নেমে এসেছে নিশ্চুপ দিগন্তের রহস্য। ভ্রুকুটিতে যেন কাজল লেপেছে কালো মেঘের দেবতা। সদ্য ১৭ তে পাওয়া দেওয়া বালিকার যৌবন যেন উঁকি দেয় পোশাকের দেয়াল ভেদ করে। বান্ধবীর সাথে হাস্যরসে মেতে আছে আঞ্জুম। সেই আঞ্জুমের হাসি যেন উজান নদীর ঢেউ, উজান নদীর ঢেউ যেভাবে ভাঙছে দুই কূল সেভাবে সাখওয়াতের হৃদয় কূলে আছড়ে পড়ছে আঞ্জুমের হাসি।

সেদিন রাতে স্টেশনে আর মন বসছে না, আকাশে উকি দিচ্ছে শুক্লা দাদশীর চাঁদ। শীতের হিমেল হাওয়ায় দূর থেকে যেন ভেসে আসছে সরিষা ফুলের প্রজাপতিরা। তারই মাঝে সাখওয়াতের বুক জুড়ে যে নারীহৃদয় খেলা করছে সে আঞ্জুম। যাকে ভেবে আজ অফিসে খুব একটা কাজেই হাত দেওয়া হলো না সাখওয়াতের।

গ্রামের সকলেই স্টেশনের বড় বাবু বলে চেনেন সাখওয়াতকে। অনেকেই সম্মানও করে। মাঝেমধ্যেই গ্রামের ভালো ফল ফলাদি পাঠিয়ে দেয় সাখওয়াতের অফিসে।

পরদিন আবার সেই নদীতটে আঞ্জুমের সাথে দেখা সাখওয়াতের। সাখওয়াতের মনে যেন আবার দোলা দেয় প্রেমের প্রজাপ্রতি। আজ যে করেই হউক আঞ্জুমের সাথে কথা বলবে সাখওয়াত। দৃপ্তপায়ে এগিয়ে গিয়ে মনের একরাশ লজ্জাকে দূরে ঠেলে দিয়ে জিজ্ঞেস করল: তোমার নাম কী?

আঞ্জুম: আমার নাম আঞ্জুম আপনি ভালো আছেন বাবুসাহেব?

বাবুসাহেব নামটায় কেমন যেন খটকা বোধ করতে লাগে শাখওয়াত, সাখওয়াত বলে তুমি আমাকে বাবুসাহেব না ডাকলে খুশি হব।

এরপর এভাবেই চলতে থাকে তাদের কথোপকথন। সায়াহ্নের এক অবেলায় দুজন দুজনকে অবলীলায় সঁপে দেয় তাদের মন ও প্রাণ।

এভাবে প্রতি বেলায়ই প্রায় দেখা করত আঞ্জুম ও সাখওয়াত। আঞ্জুম-সাখওয়াতের প্রেম দেখে গোধূলি নিজেকে লুকিয়ে নিত আকাশের কালো বুকে। যৌবনের পুলক দীপ্তে কখন যে সাখওয়াতের ওষ্ঠাধারে আঞ্জুমের লাল লিপস্টিক জায়গা করে নিয়েছে সেটা সে বুঝেনি।

মাস ছয়েক পেরেল মায়ের চিঠি এল সাখওয়াতের। বাবার অসুখ করেছে। যেকোনোভাবেই ছুটি তাকে নিতেই হবে। বাড়ি তাকে আসতে হবে। মায়ের চিঠি পেয়ে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি ফিরল সাখওয়াত।

অপরাহ্নে নদীতটে আঞ্জুম সাখওয়াতের আশায় বসে থাকলেও দেখা নেই তার। নদীর বুকে যেন কোথায় একটা চর জেগেছে। সরিষাফুলগুলোও নিজেদের লুকিয়ে নিয়েছে সরিষার দানার মাঝে। দিন যায়, রাত যায়, কেটে যায় সূর্যাস্ত থেকে রাত, মধ্যরাত। তবুও দেখা নেই সাখওয়াতের। এভাবেই মাসখানেক পার হয়ে যায় কিন্তু সাখওয়াতের দেখা মেলে না।

প্রতিদিনই প্রায় স্টেশনে সাখওয়াতকে খুঁজতে আসেন আঞ্জুম। রফিকের কাছে খোঁজ নিয়েও কিছু জানতে পারে না সে। এদিকে গায়ে গড়নে বেড়ে উঠায় পল্লিতে চাহিদা বেড়েছে আঞ্জুমের। বাবা-মা হারা আঞ্জুমের ছোটবেলায় ঠাঁই হয়েছিল এই পল্লির সুমি মাসির কাছে। সুমি মাসি তাকে মেয়ের মতোই বড় করেছে কিন্তু কখনো কাজে দেয়নি। এবার সুমি মাসিও যেন তাকে ধরে বসল কাজের জন্য।

সুমি মাসিকে মা বলেই ডাকে আঞ্জুম। আঞ্জুম সুমি মাসির কাছে তার ভালোবাসার কথা জানালে, সুমি মাসি অট্টহাসিতে লুটায়। সুমি মাসি বলে, যৌবনকালে এমন বহুত নাগর আমার পিছে আছিল, কাজ শেষে সব ব্যাটায় পালায়, আমাগো খালি মুখেই ভালোবাসে, মনে মনে আসলে এই শরীরের লোভ। সুমি মাসি সাফ জানিয়ে দিলেন ৭ দিন পর থেকে কাজ শুরু করবি।

এরপর সাত দিন পেরিয়ে গেলেও আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই আঞ্জুমের। আঞ্জুম আজ নিজেকে সাজিয়েছে চন্দন লেপে, মেখেছে সুগন্ধী, রেলস্টেশনের পাশের পতিতাপল্লিতে আজ বাবুদের ভিড়। নতুন বারাঙ্গনাকে পেতে সুমি মাসির কাছে ধরনা দিচ্ছেন অনেকেই। সবচেয়ে বেশি টাকায় বিনিময়ে আঞ্জুমের দেহের মাতাল স্বাদ নেওয়ার সুযোগ পেলেন হারুন সরদার।

মাস দুয়েক ফিরে এলেন সাখওয়াত। বাবার মৃত্যুর পর মায়ের মৃত্যু তাকে এই জীবনের মায়া থেকে দূরে নিয়ে এসেছিল। স্টেশনে ফিরতেই স্টেশনের গার্ড রফিক খবর দিলেন, বড়বাবু, পল্লির সরদারের মেয়ে আঞ্জুম আপনাকে খুঁজতে আসছিল। এখন স্টেশনে অনেক লোকজনের ভিড় হয় আঞ্জুমের জন্য।

এই কথা শোনামাত্র, আকাশ থেকে পড়ল সাখওয়াত। মন-প্রাণ দিয়ে যাকে ভালোবেসেছিল, যার রূপের তৃষ্ণায় খুঁজেছিল নিজের স্বর্গ; সেই আঞ্জুম আজ এই কাজ করছে। কোনোমতেই কথাটা মানতে পেরে উঠছে না সাখওয়াত।

রফিককে আসার খবর পাঠিয়ে স্টেশনের অবস্থা জানতে চাইলে রফিকও ঠিক একই কথা বললেন। রফিক জানালেন, স্টেশনের সব কাজের লোক আপনারে নিয়ে খারাপ কথা কয় বড়বাবু। পল্লির আঞ্জুমের সঙ্গে নাকি আপনার প্রেম আছে। আপনি নাকি আঞ্জুমের সবচেয়ে বড় খদ্দের। নইলে আপনাকে প্রতিদিন সে খুঁজতে আসে কেন?

ব্যাপারটা বেশ শক্তভাবে আঘাত করে সাখওয়াতকে। সাখওয়াত আজ অফিসে বসেছে। বিষন্ণ মনে কাজ করছে। রাত্রি বাড়ার সাথেই স্টেশন মাস্টারের বাইরের রুমে সেই চিরচেনা গলার সুর। যে গলার সুরে তৃষ্ণা মিটতো সাখওয়াতের। রুমে প্রবেশ করেই নির্বাক দাঁড়িয়ে গেলেন দুইজন। দুজন দুজনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মূর্তির মতো কারো কোনো কথা নেই। যেই মানবীকে ভালোবেসে সব সঁপেছিল সাখওয়াত। তার গড়নে, চললে আজ ব্যবধান। তার নরম গালে লেপেছে ইংরেজি মুখ রাঙানোর প্রসাধনী।

সাখওয়াতকে আঞ্জুম বলল, আমাদের মতো মেয়েদের আপনারা কী জন্য ভালোবাসার নামে রঙ তামাশা করেন বড়বাবু। আগে কইতেন, এই শরীরডা দিতাম। মনডা দিয়া তো কষ্টের নদীতে ডুবছি। কই, প্রতিদিন যে কত মাইনসেরে শরীর দিই মায়াতো লাগে না। আপনারে দিসি আমার মন এজন্যই এখন আমার এই অবস্থা।

আঞ্জুমকে সাখওয়াত বলল, তুমি এখন যাও, কাল বিকেলে আমি নদীতীরে আসব।

পরদিন নদীতটে এসে দুজন দুজনকে সব ঘটনা খুলে বললেন। চারপাশে কথা কানাঘুষা শুরু হয়েছে বড়বাবুকে নিয়ে। আঞ্জুমকে সাখওয়াত বলল, আমার জীবনে দুই মাসে কী হয়েছে জানি না, তুমি আমাকে বিয়ে করবে?

আঞ্জুম অট্টহাসিতে বলল, আপনি তামাশা করছেন বড়বাবু?

সাখওয়াত বললো, তামাশা নয় সত্যি, কাল রাত ১০টার ট্রেনে আমরা হাওড়া যাব। তুমি যেভাবেই হউক, আসবে। একটা বোরকা পড়ে আসবে।

রফিকের কাছে ঘটনাটা খুলো বলল সাখওয়াত। চাকরিটা সে আর করবে না। আজ রাতেই তারা অন্য একটা ট্রেনে হাওড়া যাবে। রফিককে সব ব্যবস্থা করতে বললেন।

মৃদুমধুর ঠান্ডার রাত্রিতে ট্রেন এসে দাঁড়ালো স্টেশনে। ফাস্ট ক্লাস কেবিনে দুজন দুজনার জীবনের সব ভুলে উঠে পড়ল। জানালার ফাঁক দিয়ে দুজন দেখে নিল চিরপরিচিত জীবনটাকে। হুইসেল বেজে উঠল, ট্রেন ধীরে ধীরে চলত লাগল। দুইপাশে সারি সারি ফসলের ক্ষেত, আকাশে পুর্ণিমার চাঁদ উঁকি দিচ্ছে। পুরো আকাশটাই অসংখ্য তারা। দুজন মুখোমুখি বসে আছে চুপচাপ। ট্রেন চলছে, কোথাও থামবে কি না তার প্রয়োজন বোধ করছে না কেউই। একটা ভালোবাসার দেবতা যেন সেই ট্রেনের কামরায় আশীর্বাদ দিয়েছেন। পৃথিবীর পথে অনন্তকাল চলছে তাদের ভালোবাসার ট্রেন।

এসএন

Header Ad
Header Ad

বিদ্যুৎ খাতে ১৫ বছরে ৭২ হাজার কোটি টাকার লুটপাট

ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিদ্যুৎ খাতকে কেন্দ্র করে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দ্রুত সরবরাহ আইন (কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট আইন) প্রণয়ন করে দায়মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে এই খাতে লুটপাটের মডেল তৈরি হয়। গত ১৫ বছরে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনায় ঘুষ, কমিশন, এবং অপ্রয়োজনীয় সক্ষমতার কারণে জনগণের ওপর ৭২ হাজার কোটি টাকার বোঝা চাপানো হয়েছে।

২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৫,৭০০ মেগাওয়াট থেকে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৩২,০০০ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। এ সময়ে শতাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে বেশিরভাগ প্রকল্প দ্রুত সরবরাহ আইনের আওতায় অনুমোদন পাওয়ায় উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার সুযোগ বন্ধ ছিল।

বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে ৩০ থেকে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার দুর্নীতির মাধ্যমে লুট হয়েছে।

মহাপরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুতের চাহিদা ৩০,০০০ মেগাওয়াট ধরা হলেও, পরে এই লক্ষ্যমাত্রা ৪০,০০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হয়। চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করায় অপ্রয়োজনীয় সক্ষমতা তৈরি হয়। এই অতিরিক্ত সক্ষমতার জন্য ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বাবদ প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার অপচয় হয়েছে।

বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেছেন, “উচ্চমাত্রার লক্ষ্য নির্ধারণ করে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এর ফলে জনগণের কাঁধে ভাড়া ও অন্যান্য ব্যয়ের বোঝা চেপেছে।”

শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন নির্মাণ এবং মিটার কেনাকাটায় বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। তবে এসব খাতে দুর্নীতির বিস্তারিত চিত্র এখনও স্পষ্ট নয়।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিদ্যুৎ খাতে এ ধরনের দুর্নীতি অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সরকারের উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের ফলে জনগণকে অযৌক্তিকভাবে অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হয়েছে।

প্রস্তাবিত সমাধান:

- বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি কমাতে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে প্রকল্প অনুমোদন।
- দায়মুক্তি আইন বাতিল করে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
- শ্বেতপত্রে বিস্তারিত তদন্তের মাধ্যমে দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ।
- অপ্রয়োজনীয় সক্ষমতা বন্ধ এবং বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ।

বিদ্যুৎ খাতের এই সংকট উত্তরণে জনসাধারণ, বিশেষজ্ঞ এবং গণমাধ্যমের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

Header Ad
Header Ad

সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতীয় নাগরিক আটক

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মো. নাজির উদ্দিন কার্তিক (২৫) আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে নওগাঁ ব্যাটালিয়নের (১৬ বিজিবি) বিজিবি সদস্যরা গোমস্তাপুর উপজেলার কেতাব বাজার এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেন।

আজ মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ১৬ বিজিবির গণমাধ্যম শাখা থেকে পাঠানো এক হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।

নওগাঁ ব্যাটালিয়নের (১৬ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার বাংগাবাড়ি বিজিবির নিয়মিত টহল দল মঙ্গলবার সকালে সীমান্ত পিলার ২০৪/এমপি হতে আনুমানিক ১ কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যান্তরে কেতাব বাজার এলাকায় টহল পরিচালনা করছিলেন। টহল দেওয়ার সময় একজন ব্যক্তির গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে বিজিবির সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি অসংলগ্ন বক্তব্য দিতে থাকেন। পরে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে ওই ব্যক্তি স্বীকার করেন তিনি ভারতীয় নাগরিক। ওই ব্যক্তির ভাষ্যমতে তাঁর নাম, নাজির উদ্দিন কার্তিক। তিনি ভারতের বিহার রাজ্যের কাঠিয়ার জেলার আবাদপুর থানার গাবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা। তল্লাশী করে ওই ব্যক্তির কাছ ভারতীয় ১০ রুপি এবং বাংলাদেশী ২৫০ টাকা পাওয়া গেছে। তাঁর কাছ থেকে কোনো পাসপোর্ট বা বৈধ ডকুমেন্ট পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে ওই ব্যক্তিকে আটক পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ কার্যক্রম চলমান আছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Header Ad
Header Ad

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশি জানলেই হয়রানি

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় ভ্রমণ ও চিকিৎসার কাজে যাওয়া বাংলাদেশিরা সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এবং বিজেপি সমর্থকদের লংমার্চ কর্মসূচি ঘিরে এই হয়রানির মাত্রা বেড়ে গেছে।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) থেকে আগরতলায় হোটেল ভাড়া না পেয়ে বাংলাদেশি পর্যটকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বাসিন্দা ফরিদ মিয়া জানান, হোটেল ভাড়া নেওয়ার পর মুসলিম এবং বাংলাদেশি হওয়ায় তাকে এক ঘণ্টার মধ্যেই হোটেল থেকে বের করে দেওয়া হয়। টাকা ফেরত না পেয়ে তিনি বাধ্য হয়ে শহরের বাইরে আত্মীয়ের বাড়িতে রাত কাটান এবং পরদিন দেশে ফিরে আসেন।

আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টে বাঁশের বেড়া দিয়ে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সীমান্ত পারাপারের সময় বাংলাদেশিদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করা হচ্ছে। আখাউড়া স্থলবন্দরে ফিরে আসা যাত্রীরা জানিয়েছেন, সীমান্তে বাংলাদেশিদের হুমকি ও হয়রানির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমান শিলচরে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফেয়ারে জামদানি শাড়ির একটি স্টল দিয়েছিলেন। সেখানে একদল যুবক "জয় শ্রী রাম" স্লোগান দিয়ে তার দোকানে হামলা চালায়। হামলাকারীরা দোকান ভাঙচুর করে এবং সমস্ত টাকা-পয়সা লুটপাট করে নিয়ে যায়।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি অতিরিক্ত সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। বিজিবি ৬০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল জাবের বিন জব্বার জানিয়েছেন, সীমান্তে কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা এড়াতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশিরা এমন হয়রানি ও বৈষম্যমূলক আচরণের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে এর সমাধানের জন্য দুই দেশের সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা নিরসনে কূটনৈতিক পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বিদ্যুৎ খাতে ১৫ বছরে ৭২ হাজার কোটি টাকার লুটপাট
সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতীয় নাগরিক আটক
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশি জানলেই হয়রানি
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের গোলামি করতে স্বাধীনতা অর্জন করিনি: সোহেল তাজ
মাইক্রোসফটের সমীক্ষায় ভুয়া খবর ছড়ানোর শীর্ষে ভারত
আগরতলার বাংলাদেশ হাইকমিশনে কনস্যুলার সেবা বন্ধ
একটি ইস্যু দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক মূল্যায়ন করা যাবে না : ভারতীয় হাইকমিশনার
জাতীয় ঐক্যের ডাক দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ
শান্তিরক্ষী বাহিনীর ভূমিকা মমতা বোঝেন কিনা, নিশ্চিত নই: শশী থারুর
যমুনার চর কেটে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ
২০২৩ সালে সর্বোচ্চ দুর্নীতি পাসপোর্ট, বিআরটিএ ও আইনশৃঙ্খলায়
শেখ হাসিনার পতন কোনোভাবেই মানতে পারছেন না ভারত : রিজভী
ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে জরুরি তলব
সেনাবাহিনীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, এসএসসি পাসেই আবেদনের সুযোগ
এস আলম পরিবারের ৩৫০ ব্যাংক হিসাবের সন্ধান
২৮ বিয়ে প্রসঙ্গে যা বললেন নায়িকা রোমানা
বাংলাদেশিদের সেবা দেবে না ত্রিপুরার কোনো হোটেল–রেস্তোরাঁ
ভারত সফরে আসছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন
‘বাংলাদেশি কনস্যুলেটে হামলা প্রতিবেশীদের মধ্যে বিবাদের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে’
বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলায় ৩ পুলিশ বরখাস্ত, গ্রেপ্তার ৭