বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ৬ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

শেষ ট্রেন

ফতেহগঞ্জ রেলস্টেশনটা আকারে খুব বড় নয়। কয়েকটি অচল হয়ে যাওয়া বগি পড়ে রয়েছে পরিত্যক্ত রেললাইনের উপরে। এই স্টেশনে সব ট্রেন থামেও না। তবে রাত্রির শুরু থেকে বেশ কয়েকটি ট্রেন ছেড়ে যায় শহরমুখী। বেশিরভাগ ট্রেনই মালবাহী ট্রেন। ফতেহগঞ্জের আশেপাশে বেশিরভাগ শস্যক্ষেত। সরিয়া, আলু, গম, আখ এখানে ফলে বৃষ্টির মতো। অন্যান্য ফসলও খুব ভালো হয়। সেসব ফসলই বিক্রি হয় এই স্টেশনের পাশে। ফলে দিনের বেলা লোকজনের আনাগোনা না থাকলেও রাত্রিতেই যেন জমজমাট হয়ে উঠে স্টেনশটা। রাত্রির দেবতা যেন এখানে বসিয়ে দেয় রহস্যের পসরা।

স্টেশনের নতুন মাস্টার হিসেবে এসেছেন সাখওয়াত হোসেন। সদ্য স্নাতক পাস করেই সংসারের হাল ধরেছেন বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটাতে। গ্রামের বাড়ি দেওয়ানগঞ্জ মহকুমায়, সেই গ্রাম থেকে সরকারি চাকরি করা যেন সোনার হরিণ ধরে আনা। স্টেশনের কাজের চাপে খুব একটা যাওয়া হয় না বাবা-মায়ের ঘরে।

সেই স্টেশনের পাশেই রয়েছে পতিতাদের আনাগোনা। রাত হলেই যেন সেখানে বাড়ে যৌনতার দেবতার ব্যস্ততা। মুখে সাদা মোটা প্রলেপের মেকাপ করে, লাল লিপস্টিক লাগিয়ে আকৃষ্ট করে খদ্দরদের। সেই বারাঙ্গনাদের অনেকেই স্টেশনের পাশের অব্যবহৃত রেলওয়ের কামরায় কাজ সেরে জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের বেশিরভাগ খদ্দরই, শ্রমিক ও বাবু সাহেবরা।

স্টেশন মাস্টার সাখওয়াত বেশ নিরীহ প্রকৃতির লোক। কোনো দুর্নীতি কিংবা টাকার বিনিময়ে মালপত্র নেওয়ানোর অভিযোগও নেই তার বিরুদ্ধে। রাতে স্টেশনে কাজ করার পর দুপুর পর্যন্ত এক ঘুম দেয় সে। এরপর বিকেল হলে প্রতিদিনই হাটতে বের হয় গ্রামের মেঠোপথে। গ্রামের পথের দুই পাশে সারি সারি হলুদ সরিষার ক্ষেত। সেই সরিষার ক্ষেত যেন যেন ইশারা দিয়ে ডেকে যায় পথিকদের। তার সামনেই বয়ে গেছে উজান নদী। সেই নদীর ধারেই বসে বিকেলটা কাটায় শাখওয়াত। এই গ্রামে খুব একটা বন্ধু নেই তার, রয়েছে শুধু রফিক। যে শাখওয়াত মিয়াকে খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়। এক কথায় মজিদ শফিকের কেয়ারটেকার।

উজান নদীর প্রকাণ্ড বটগাছটার নিচেই বসে সময় কাটায় আঞ্জুম। সঙ্গে বসে আড্ডা জমায় তার সাথীরা, কখনো বা নদীর পাশের সরিষা খেতে জুড়ে দৌড়ে দৌড়ে বাড়ি যায় সাদিয়া। দেখে যেন মনে হয় কোনো এক হলুদ বনের ধারে আকাশ নদীর নীলে উড়ে যাচ্ছে এক প্রজাপতি।

প্রায়ই স্টেশনে সেই পল্লির মেয়েদের দেখা পায় সাখওয়াত। কিন্ত কিছু করার নেই, সমাজটা এখানে এভাবেই চলছে, এখানে এই নিয়ম। এসব ভেবেই খুব বিষণ্ণ থাকে সে।

আজ স্টেশনে বেশ একটা জটলা বেধে গেল। গ্রামের হারুন সরদারের নাকি মালামাল নিয়ে ঝামেলা লেগেছে শহরের লিটন মালাকারের সাথে। সেই ঝামেলা মিটমাটের দায়িত্ব পড়েছে সাখওয়াতের উপর। সেই ঝামেলার দায়িত্ব শেষ করতে না করতেই স্টেশনে এসেছে ফতেহগঞ্জ থানার পুলিশ। স্টেশনের পাশেই মিলেছে পতিতা পল্লির সুমনা রানির লাশ। কে বা কারা যেন সুন্দর দেহের আকৃতিতে একে দিয়েছে মৃত্যুর যন্ত্রণা। গলায় কিসের যেন একটা দাগ, সাদা ধবধবে গলায় লাল রক্তবরণ ধারণ করেছে সেই দাগ।

স্টেশনের এসব ঝামেলা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই জায়গা থেকেই চেষ্টা তদবির করতে লাগল সাখওয়াত। কিন্ত উপায় খুব একটা হয়ে উঠছে না।

আজ নদীর ধারে আবার এসে বসেছে সাখওয়াত। হঠাৎ প্রকাণ্ড বটগাছটার নিচে চোখ পড়তেই দেখা মিলল আঞ্জুমের। ঠিক যেন দমকা একটা হাওয়া এসে নাড়িয়ে দিল সাখওয়াতের সমস্ত শরীর। যেন আমের বনের দমকা হাওয়া এসে নাড়িয়ে দেয় আমের মুকুল।
সাদা বর্ণের চেহারায় যেন লাল লাল আভা। চোখে যেন নেমে এসেছে নিশ্চুপ দিগন্তের রহস্য। ভ্রুকুটিতে যেন কাজল লেপেছে কালো মেঘের দেবতা। সদ্য ১৭ তে পাওয়া দেওয়া বালিকার যৌবন যেন উঁকি দেয় পোশাকের দেয়াল ভেদ করে। বান্ধবীর সাথে হাস্যরসে মেতে আছে আঞ্জুম। সেই আঞ্জুমের হাসি যেন উজান নদীর ঢেউ, উজান নদীর ঢেউ যেভাবে ভাঙছে দুই কূল সেভাবে সাখওয়াতের হৃদয় কূলে আছড়ে পড়ছে আঞ্জুমের হাসি।

সেদিন রাতে স্টেশনে আর মন বসছে না, আকাশে উকি দিচ্ছে শুক্লা দাদশীর চাঁদ। শীতের হিমেল হাওয়ায় দূর থেকে যেন ভেসে আসছে সরিষা ফুলের প্রজাপতিরা। তারই মাঝে সাখওয়াতের বুক জুড়ে যে নারীহৃদয় খেলা করছে সে আঞ্জুম। যাকে ভেবে আজ অফিসে খুব একটা কাজেই হাত দেওয়া হলো না সাখওয়াতের।

গ্রামের সকলেই স্টেশনের বড় বাবু বলে চেনেন সাখওয়াতকে। অনেকেই সম্মানও করে। মাঝেমধ্যেই গ্রামের ভালো ফল ফলাদি পাঠিয়ে দেয় সাখওয়াতের অফিসে।

পরদিন আবার সেই নদীতটে আঞ্জুমের সাথে দেখা সাখওয়াতের। সাখওয়াতের মনে যেন আবার দোলা দেয় প্রেমের প্রজাপ্রতি। আজ যে করেই হউক আঞ্জুমের সাথে কথা বলবে সাখওয়াত। দৃপ্তপায়ে এগিয়ে গিয়ে মনের একরাশ লজ্জাকে দূরে ঠেলে দিয়ে জিজ্ঞেস করল: তোমার নাম কী?

আঞ্জুম: আমার নাম আঞ্জুম আপনি ভালো আছেন বাবুসাহেব?

বাবুসাহেব নামটায় কেমন যেন খটকা বোধ করতে লাগে শাখওয়াত, সাখওয়াত বলে তুমি আমাকে বাবুসাহেব না ডাকলে খুশি হব।

এরপর এভাবেই চলতে থাকে তাদের কথোপকথন। সায়াহ্নের এক অবেলায় দুজন দুজনকে অবলীলায় সঁপে দেয় তাদের মন ও প্রাণ।

এভাবে প্রতি বেলায়ই প্রায় দেখা করত আঞ্জুম ও সাখওয়াত। আঞ্জুম-সাখওয়াতের প্রেম দেখে গোধূলি নিজেকে লুকিয়ে নিত আকাশের কালো বুকে। যৌবনের পুলক দীপ্তে কখন যে সাখওয়াতের ওষ্ঠাধারে আঞ্জুমের লাল লিপস্টিক জায়গা করে নিয়েছে সেটা সে বুঝেনি।

মাস ছয়েক পেরেল মায়ের চিঠি এল সাখওয়াতের। বাবার অসুখ করেছে। যেকোনোভাবেই ছুটি তাকে নিতেই হবে। বাড়ি তাকে আসতে হবে। মায়ের চিঠি পেয়ে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি ফিরল সাখওয়াত।

অপরাহ্নে নদীতটে আঞ্জুম সাখওয়াতের আশায় বসে থাকলেও দেখা নেই তার। নদীর বুকে যেন কোথায় একটা চর জেগেছে। সরিষাফুলগুলোও নিজেদের লুকিয়ে নিয়েছে সরিষার দানার মাঝে। দিন যায়, রাত যায়, কেটে যায় সূর্যাস্ত থেকে রাত, মধ্যরাত। তবুও দেখা নেই সাখওয়াতের। এভাবেই মাসখানেক পার হয়ে যায় কিন্তু সাখওয়াতের দেখা মেলে না।

প্রতিদিনই প্রায় স্টেশনে সাখওয়াতকে খুঁজতে আসেন আঞ্জুম। রফিকের কাছে খোঁজ নিয়েও কিছু জানতে পারে না সে। এদিকে গায়ে গড়নে বেড়ে উঠায় পল্লিতে চাহিদা বেড়েছে আঞ্জুমের। বাবা-মা হারা আঞ্জুমের ছোটবেলায় ঠাঁই হয়েছিল এই পল্লির সুমি মাসির কাছে। সুমি মাসি তাকে মেয়ের মতোই বড় করেছে কিন্তু কখনো কাজে দেয়নি। এবার সুমি মাসিও যেন তাকে ধরে বসল কাজের জন্য।

সুমি মাসিকে মা বলেই ডাকে আঞ্জুম। আঞ্জুম সুমি মাসির কাছে তার ভালোবাসার কথা জানালে, সুমি মাসি অট্টহাসিতে লুটায়। সুমি মাসি বলে, যৌবনকালে এমন বহুত নাগর আমার পিছে আছিল, কাজ শেষে সব ব্যাটায় পালায়, আমাগো খালি মুখেই ভালোবাসে, মনে মনে আসলে এই শরীরের লোভ। সুমি মাসি সাফ জানিয়ে দিলেন ৭ দিন পর থেকে কাজ শুরু করবি।

এরপর সাত দিন পেরিয়ে গেলেও আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই আঞ্জুমের। আঞ্জুম আজ নিজেকে সাজিয়েছে চন্দন লেপে, মেখেছে সুগন্ধী, রেলস্টেশনের পাশের পতিতাপল্লিতে আজ বাবুদের ভিড়। নতুন বারাঙ্গনাকে পেতে সুমি মাসির কাছে ধরনা দিচ্ছেন অনেকেই। সবচেয়ে বেশি টাকায় বিনিময়ে আঞ্জুমের দেহের মাতাল স্বাদ নেওয়ার সুযোগ পেলেন হারুন সরদার।

মাস দুয়েক ফিরে এলেন সাখওয়াত। বাবার মৃত্যুর পর মায়ের মৃত্যু তাকে এই জীবনের মায়া থেকে দূরে নিয়ে এসেছিল। স্টেশনে ফিরতেই স্টেশনের গার্ড রফিক খবর দিলেন, বড়বাবু, পল্লির সরদারের মেয়ে আঞ্জুম আপনাকে খুঁজতে আসছিল। এখন স্টেশনে অনেক লোকজনের ভিড় হয় আঞ্জুমের জন্য।

এই কথা শোনামাত্র, আকাশ থেকে পড়ল সাখওয়াত। মন-প্রাণ দিয়ে যাকে ভালোবেসেছিল, যার রূপের তৃষ্ণায় খুঁজেছিল নিজের স্বর্গ; সেই আঞ্জুম আজ এই কাজ করছে। কোনোমতেই কথাটা মানতে পেরে উঠছে না সাখওয়াত।

রফিককে আসার খবর পাঠিয়ে স্টেশনের অবস্থা জানতে চাইলে রফিকও ঠিক একই কথা বললেন। রফিক জানালেন, স্টেশনের সব কাজের লোক আপনারে নিয়ে খারাপ কথা কয় বড়বাবু। পল্লির আঞ্জুমের সঙ্গে নাকি আপনার প্রেম আছে। আপনি নাকি আঞ্জুমের সবচেয়ে বড় খদ্দের। নইলে আপনাকে প্রতিদিন সে খুঁজতে আসে কেন?

ব্যাপারটা বেশ শক্তভাবে আঘাত করে সাখওয়াতকে। সাখওয়াত আজ অফিসে বসেছে। বিষন্ণ মনে কাজ করছে। রাত্রি বাড়ার সাথেই স্টেশন মাস্টারের বাইরের রুমে সেই চিরচেনা গলার সুর। যে গলার সুরে তৃষ্ণা মিটতো সাখওয়াতের। রুমে প্রবেশ করেই নির্বাক দাঁড়িয়ে গেলেন দুইজন। দুজন দুজনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মূর্তির মতো কারো কোনো কথা নেই। যেই মানবীকে ভালোবেসে সব সঁপেছিল সাখওয়াত। তার গড়নে, চললে আজ ব্যবধান। তার নরম গালে লেপেছে ইংরেজি মুখ রাঙানোর প্রসাধনী।

সাখওয়াতকে আঞ্জুম বলল, আমাদের মতো মেয়েদের আপনারা কী জন্য ভালোবাসার নামে রঙ তামাশা করেন বড়বাবু। আগে কইতেন, এই শরীরডা দিতাম। মনডা দিয়া তো কষ্টের নদীতে ডুবছি। কই, প্রতিদিন যে কত মাইনসেরে শরীর দিই মায়াতো লাগে না। আপনারে দিসি আমার মন এজন্যই এখন আমার এই অবস্থা।

আঞ্জুমকে সাখওয়াত বলল, তুমি এখন যাও, কাল বিকেলে আমি নদীতীরে আসব।

পরদিন নদীতটে এসে দুজন দুজনকে সব ঘটনা খুলে বললেন। চারপাশে কথা কানাঘুষা শুরু হয়েছে বড়বাবুকে নিয়ে। আঞ্জুমকে সাখওয়াত বলল, আমার জীবনে দুই মাসে কী হয়েছে জানি না, তুমি আমাকে বিয়ে করবে?

আঞ্জুম অট্টহাসিতে বলল, আপনি তামাশা করছেন বড়বাবু?

সাখওয়াত বললো, তামাশা নয় সত্যি, কাল রাত ১০টার ট্রেনে আমরা হাওড়া যাব। তুমি যেভাবেই হউক, আসবে। একটা বোরকা পড়ে আসবে।

রফিকের কাছে ঘটনাটা খুলো বলল সাখওয়াত। চাকরিটা সে আর করবে না। আজ রাতেই তারা অন্য একটা ট্রেনে হাওড়া যাবে। রফিককে সব ব্যবস্থা করতে বললেন।

মৃদুমধুর ঠান্ডার রাত্রিতে ট্রেন এসে দাঁড়ালো স্টেশনে। ফাস্ট ক্লাস কেবিনে দুজন দুজনার জীবনের সব ভুলে উঠে পড়ল। জানালার ফাঁক দিয়ে দুজন দেখে নিল চিরপরিচিত জীবনটাকে। হুইসেল বেজে উঠল, ট্রেন ধীরে ধীরে চলত লাগল। দুইপাশে সারি সারি ফসলের ক্ষেত, আকাশে পুর্ণিমার চাঁদ উঁকি দিচ্ছে। পুরো আকাশটাই অসংখ্য তারা। দুজন মুখোমুখি বসে আছে চুপচাপ। ট্রেন চলছে, কোথাও থামবে কি না তার প্রয়োজন বোধ করছে না কেউই। একটা ভালোবাসার দেবতা যেন সেই ট্রেনের কামরায় আশীর্বাদ দিয়েছেন। পৃথিবীর পথে অনন্তকাল চলছে তাদের ভালোবাসার ট্রেন।

এসএন

Header Ad
Header Ad

অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো মাউশির বিতর্কিত ডিজিকে

অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হক ও মাউশির লোগো। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষক নেতাদের আন্দোলন ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) পদ থেকে অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি শিক্ষা ক্যাডারের ১৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা এবং পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি তার বিতর্কিত কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে মাউশিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। এদিকে, নতুন মহাপরিচালক হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানের এই দায়িত্ব কেবল সাময়িক, যা পদোন্নতি হিসেবে গণ্য হবে না। পরবর্তীতে নিয়মিত নিয়োগের মাধ্যমে মহাপরিচালক নিয়োগ হলে এই চলতি দায়িত্ব বাতিল হয়ে যাবে।

অধ্যাপক এহতেসাম উল হকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এর আগে তিনি বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়ন চালানোর অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তথ্য তিনি পুলিশের কাছে সরবরাহ করেছিলেন।

২০২৩ সালের ৫ আগস্ট তার অপসারণের দাবিতে কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার অপসারণের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০২১ সালের জুন মাসে বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে যোগদানের পর থেকে তিনি নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যান। তিনি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, অধ্যক্ষ থাকাকালীন তিনি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন এবং আন্দোলনে অসহযোগিতা করতেন। এমনকি কলেজের গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন, যা তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও ব্যবহার করতেন। তিনি কলেজের বিদ্যুৎ ব্যবহার করে নিজের বাসায় গ্রিল নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ করিয়েছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি দিতেন এবং বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) খারাপ করে দেওয়ার ভয় দেখাতেন। এছাড়া, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন না দিয়ে বিদায় করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ডিজি পদ থেকে এহতেসাম উল হককে অপসারণের খবরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, একজন বিতর্কিত ব্যক্তি শিক্ষাখাতের এত বড় দায়িত্বে থাকতে পারেন না। তার অপসারণের মাধ্যমে প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতি সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে।

Header Ad
Header Ad

২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ ডিসি ওএসডি

ছবি: সংগৃহীত

২০১৮ সালের বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ জন জেলা প্রশাসককে (ডিসি) বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত ছয়টি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিতর্কিত নির্বাচনে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের কারণে এই কর্মকর্তাদের ওএসডি করা হয়েছে। এর আগে একই কারণে আরও ১২ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছিল।

ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের পরিচালক (যুগ্মসচিব) কবীর মাহমুদ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. মাহমুদুল আলম, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. আবুল ফজল মীর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সদস্য-পরিচালক (যুগ্মসচিব) মঈনউল ইসলাম, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (যুগ্মসচিব) মো. ওয়াহিদুজ্জামান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) এ কে এম মামুনুর রশিদ এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বাপবিবো) সদস্য (যুগ্মসচিব) ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম।

এছাড়া তালিকায় রয়েছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব কাজী আবু তাহের, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সদস্য (যুগ্মসচিব) মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) আনার কলি মাহবুব, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য (যুগ্মসচিব) সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সাবিনা ইয়াসমিন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আতাউল গনি এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (সংযুক্ত) আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন।

এছাড়া, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব এ জেড এম নুরুল হক, বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) এস এম আজিয়র রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সচিব (যুগ্ম-সচিব) মো. মাসুদ আলম সিদ্দিক এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম-সচিব গোপাল চন্দ্র দাশসহ আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই ওই সময়ের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এবার সেই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে ওএসডি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা।

Header Ad
Header Ad

ট্রাম্পের বিস্ফোরক দাবি: চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনকেই দায়ী করে নতুন বিতর্ক উসকে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন রাজনীতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত ট্রাম্প এবার ইউক্রেনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল।

মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) ফ্লোরিডার মার-আ-লাগোতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রতি কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনে একটি নতুন নির্বাচন হওয়া উচিত। বিশ্লেষকদের মতে, এটি জেলেনস্কিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনারই ইঙ্গিত।

ট্রাম্প আরও বলেন, ইউক্রেনে দীর্ঘদিন ধরে কোনো নির্বাচন হয়নি এবং সেখানে সামরিক আইন চলছে। তার দাবি, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা মাত্র চার শতাংশে নেমে গেছে, আর দেশটি ধ্বংসের পথে। যদিও যুদ্ধকালীন সময়ে নির্ভরযোগ্য জনমত জরিপ পাওয়া কঠিন, তবে বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা ট্রাম্পের দাবির মতো এতটা কমেনি।

এছাড়া, ইউক্রেনের নির্বাচন প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, "তারা কি জনগণের মতামত নিয়েছে? তারা আলোচনার টেবিলে বসতে চায়, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেখানে কোনো নির্বাচন হয়নি।"

প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে ২০২৪ সালের এপ্রিলে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, যুদ্ধকালীন সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই মন্তব্য কৌতুকপূর্ণ, কারণ তিনি নিজেই ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

ট্রাম্প আরও দাবি করেন, ইউক্রেন চাইলে যুদ্ধ বন্ধ করতে পারতো এবং তাদের উচিত ছিল রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়া। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর অর্থ হলো—ইউক্রেনকে হয় রাশিয়ার মিত্র সরকার গঠনের প্রস্তাবে রাজি হতে হতো, নয়তো প্রতিরোধ ছেড়ে দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে হতো।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক অবস্থান ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ইউক্রেনকে সমর্থন না দিয়ে বরং রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি বিতর্কিত শান্তিচুক্তির দিকে এগোতে পারেন, যা পুতিনের জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক জয় হিসেবে বিবেচিত হবে।

সূত্র: সিএনএন

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো মাউশির বিতর্কিত ডিজিকে
২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ ডিসি ওএসডি
ট্রাম্পের বিস্ফোরক দাবি: চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল
ডিবির সাবেক প্রধান হারুনের ১০০ বিঘা জমি, ৫ ভবন ও ২ ফ্ল্যাট ক্রোকের নির্দেশ
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন রেখা গুপ্তা, বিজেপির সিদ্ধান্তে চমক
একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতির শহীদ মিনারে না যাওয়ার আহ্বান
নামাজি জীবনসঙ্গী খুঁজছেন আইশা খান
গাইবান্ধায় গাঁজাসহ আটক এএসআইকে কারাগারে প্রেরণ
উপদেষ্টাদের মিটিংয়ে কোন প্রটোকলে গিয়েছিলেন হাসনাত-পাটোয়ারী: ছাত্রদল সেক্রেটারি
সরকারে থেকে ‘নতুন দল’ গঠন করলে মেনে নেওয়া হবে না: মির্জা ফখরুল
হোস্টিং সামিট ২০২৫ অনুষ্ঠিত
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তানকে ৩২১ রানের বড় লক্ষ্য দিলো নিউজিল্যান্ড
বৈষম্যবিরোধী নামধারী শীর্ষ নেতার নির্দেশে কুয়েটে ছাত্রদলের ওপর হামলা: রাকিব
যান্ত্রিক ত্রুটিতে আবারও বন্ধ বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র
কুবিতে ছাত্র সংসদের দাবিতে মানববন্ধন ও সন্ত্রাসবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল
২২০ জনকে নিয়োগ দেবে সমরাস্ত্র কারখানা, এসএসসি পাসেও আবেদন
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ২ দিনব্যাপি খামারি প্রশিক্ষণ
সবার সাত দিন কারাগারে থাকা উচিত: আদালতে পলক
বিপ্লবী সরকারের ডাক থেকে সরে এলেন কাফি  
নাঈম ভাই হেনা কোথায়?: ‘তুই অনেক দেরি করে ফেলেছিস বাপ্পা’