ফুলের বাগান
আল-আমিন লুবনাকে ভালোবাসে। লুবনাকে প্রস্তাব দেয়। লুবনা রাজি হয়। একটা শর্ত পালন করতে বলে। শর্ত হচ্ছে আল-আমিনকে একটা ফুলের বাগান করতে হবে। ফুলের বাগান থেকে প্রতিদিন একটা করে ফুল দিতে হবে। যতদিন একটা করে ফুল দিতে পারবে ততদিন ভাচঋত বাসা টিকবে। ফুল দিতে না পারলেই ভালবাসা শেষ হয়ে যাবে।
আল-আমিন বলে, ফুল প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। সব ঋতুতে সব ফুল ফুঁটে না। কিভাবে প্রতিদিন একটা করে ফুল দিবে। লুবনার ভাষ্য হচ্ছে, সারা বছরই কোনো না কোনো ফুল ফুঁটে। বাগানে সব ফুলের গাছ লাগাতে হবে। যেই ফুল ফুঁটে তা দিলেই হবে।
যদি প্রাকৃতিরক দুর্যোগ অথবা অন্য কোনো কারণে ফুল না ফুঁটে। অথবা বিভিন্ন ধরনের প্রাণী আছে যারা বাগানে ঢুকে ফুল নষ্ট করতে পারে বা ফুলের গাছ ধ্বংস করতে পারে। সত্যিই যদি এরকম হয় তাহলে প্রেমের ব্যর্থতা বলতে হবে। প্রেম করতে হলে এই কাজটা করতেই হবে। প্রেমের জন্য মানুষ কত কি না করেছে। সত্যিকারে যারা ভালবাসে তারা অনেক কিছুই করতে পারে। তুমি যদি আমাকে সত্যিকার ভালবাস তাহলে এটাও করতে পারবে।
আল-আমিন শর্ত মেনে নেয়। বাগান এবং ফুল ফুঁটতে যতদিন সময় লাগে ততদিন চেয়ে নেয়। লুবনা সময় দেয়। প্রথম যেদিন ফুল দিবে সেইদিনই কথা বলতে পারবে। ফুল দেওয়ার প্রথম দিন থেকেই খেলা শুরু। আল-আমিন ফুলের বাগান করে। বাগানে ফুল ফুঁটতেও আরম্ভ করে। সব ঋতুর ফুলই আছে। আল-আমিন অনেক খুশি হয়। যাকে এতদিন দেখেছে। যার সঙ্গে কথা বলার জন্য মন আকুবাকু করেছে। তার শর্ত সে পালন করতে পারছে। শর্ত পালন করা মানে তাকে চিরদিনের জন্য পাওয়া।
প্রথম ফোঁটা ফুল নিয়ে লুবনার সামনে দাঁড়ায়। লুবনাকে ভালবাসি বলে। লুবনাও বলে, আমিও ভালবাসি। আজ থেকে আমাদের ভালবাসা শুরু। যতদিন ফুল থাকবে ততদিন ভালবাসা থাকবে। ফুল নাই ভালবাসাও নাই। ফুল হচ্ছে ভালবাসার প্রতিক। প্রতিক হারিয়ে গেলে ভালবাসাও হারিয়ে যাবে। ঐ বছর বন্যা হয়। বন্যায় সবকিছু পানির নিচে চলে যায়। আল-আমিনের ফুলের বাগানও পানির নিচে চলে যায়। লুবনার শর্ত পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। আল-আমিন ও লুবনাকে ভুলতে পারছে না। লুবনার বাড়ির সামনে ফুলবিহীন দাঁড়িয়ে থাকে। লুবনাকে দেখে। কথা বলতে চেষ্টা করে। লুবনা আসে না। কোনো কথাও বলে না।
আল-আমিনের বুকটা লুবনার জন্য কাঁদে। লুবনাকে সে স্বপ্নে দেখে। স্বপ্নে এখনো সে লুবনাকে ফুল দেয়। লুবনা হাসিমুখে সেই ফুল গ্রহণ করে। বন্যা শেষ। সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসছে। আল-আমিনের ভালবাসা স্বাভাবিক হচ্ছে না। লুবনা এখনো কোনো কথা বলছে না। দেখা করতে গেলে সামনেই আসছে না। আল-আমিন আবার ফুলের বাগান করে। আগের মত পরিচর্যা করে অল্প দিনেই ফুল ফুঁটায়। ফুল নিয়ে লুবনার কাছে যায়। লুবনা গ্রহণ করে না। কিছু বলেও না।
আল-আমিনের কষ্ট হয়। বাগানের পরিচর্যা করে না। ফুল ফুঁটানোর চেষ্টা ও করে না। যারজন্য করা সে যদি ফুল না নেয় তাহলে বাগান করে কী লাভ।
অল্প কয়েকদিনেই বাগানের গাছগুলো মরতে থাকে। ফুলের কলিগুলো ফুঁটার আগেই ঝড়ে যায়। লুবনা বাগানে আসে। আল-আমিন লুবনাকে বাগানে আসতে দেখেই ঘর থেকে দূরে আসে। কী ব্যাপার। আমার বাগানে তুমি এসেছ।
দেখতে এলাম আমার শর্তের অবস্থা।
শর্ত থাকবে কি করে। বন্যার উপর আমার হাত নেই। আমি কী করব।
বন্যার পরে হাত ছিল।
তুমি আমার ফুল নাও না। আমি ফুল দিয়ে কী করব।
ফুল না নিলেও ভালবাসা নিয়েছিলাম।
তাহলে আমার সাথে কথা বলতে না কেন?
দেখতাম তুমি কি কর।
দেখলে আমি কি করেছি।
হুমম।
তুমি নিষ্ঠুর।
তাহলে আমি চলে যাই। তুমি থাক।
কেন এসেছিলে।
তোমাকে ভালবাসি বলতে এসেছিলাম।
তাহলে চলে যাচ্ছ যে।
নিষ্ঠুর মেয়েদের সঙ্গে কেউ প্রেম করে।
আমি করি। থাক। আমি আবার ফুলের বাগান করব। ফুল ফুঁটাব। রোজ একটা করে তোমাকে ফুল উপহার দিব।
প্রতিদিন দিতে হবে। মিস করা চলবে না।
কামরুল হাছান মাসুক, খেওড়া, কসবা, বি-বাড়ীয়া