বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় মহানবীর আদর্শ অনুসরণের আহ্বান
বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর নীতি আদর্শ অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।
রবিবার (৯ অক্টোবর) ১২ই রবিউল আউয়াল উপলক্ষে মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের বর্তমান ইমাম হজরত শাহসুফী সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল-হাসানীর (মা.জি.আ.) নেতৃত্বে লাখো নবীপ্রেমী জনতার উচ্ছ্বাসমুখর অংশগ্রহণে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রাজধানীতে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে জশনে জুলুস বের হয়েছে।
শোভাযাত্রা শেষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশ্ব শান্তি সমাবেশ প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ১৪ দলীয় সমন্বয়ক ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু। এ ছাড়া বিশ্ব শান্তি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান শান্তি সমাবেশের উদ্বোধন করেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নূরুল আমিন রুহুল, মইনীয়া যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহজাদা সাইয়্যিদ মেহবুব-এ-মইনুদ্দীন আল-হাসানী, কার্যকরী সভাপতি শাহজাদা সাইয়্যিদ মাশুক-এ-মইনুদ্দীন আল-হাসানী, আমেরিকা থেকে আসা আন্তর্জাতিক ইসলামিক স্কলার ড. শেখ আহমদ তিজানি বিন ওমর, মরক্কো থেকে মো. লাকদার দারফুফি, তুরস্ক থেকে সাইয়্যিদি মোহাম্মদ ইএল হোসাইনী, অধ্যাপক ড. রফিকুল আলম প্রমুখ।
শান্তি সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে মাইজভাণ্ডার দরবারের বর্তমান ইমাম ও ঈদে মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠানের সভাপতি সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারি বলেন, মহানবীর (সা.) দুনিয়ায় শুভাগমন জগৎবাসীর জন্য আল্লাহ পাকের বিশেষ রহমত ও অনুগ্রহ। রাসুল (সা.) এর দুনিয়ায় শুভাগমনের মূল উদ্দেশ্যই হলো একটি শান্তি ও সহাবস্থানপূর্ণ মানবিক বিশ্ব সমাজ গড়ে তোলা। আজ সিরিয়া, ফিলিস্তিন, মিয়ানমারসহ তাবৎ দুনিয়ায় যুদ্ধ সংঘাত ও রক্তপাতে জর্জরিত। শক্তিধর দেশগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান না করে অস্ত্রের ভাষায় কথা বলছে। নিষেধাজ্ঞা পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে সমগ্র পৃথিবীর মানুষ খাদ্য জ্বালানি সংকটসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। এই দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে মহানবীর (সা.) আদর্শ অনুসরণের বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, মদিনার সনদের আলোকে কীভাবে সমতাভিত্তিক, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক আধুনিক কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠন করা যায় সাড়ে চৌদ্দশত বৎসর আগে রাসুলই আমাদের দেখিয়েছেন। শাহসূফী সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী বলেন, প্রিয়নবী (সা.) ছিলেন পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র নায়ক।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ইসলাম প্রচার ও প্রসারে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বহু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সমগ্র বাংলাদেশে প্রায় এক লাখ মসজিদভিত্তিক মক্তব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রতিটি মসজিদভিত্তিক একজন আলেম সেখানে ৫ হাজার ২০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছে। এটি আজ থেকে ১২, ১৩ বছর বা ১৪ বছর আগে কল্পনাও করা যায়নি। এটি আমাদের সরকার বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশে এক যোগে ৬০০ মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে ইতোমধ্যে কয়েকশ’ নির্মিত হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা যার পূর্ব পুরুষ ইসলাম প্রচারের জন্য এই ভূখণ্ডে এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন তারই সুযোগ্য কন্যা। শুধু বাস্তবায়ন করেছেন তা নয় কওমি মাদরাসা স্বীকৃতি দেওয়ার পর তাদের অনেকরই সরকারি চাকরি হয়েছে। এভাবে ইসলামের খেদমতের জন্য আমাদের নেত্রী যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর আর কোনো সরকার কোনো নেতা, নেত্রী এত কাজ করেনি। বঙ্গবন্ধু ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন। বঙ্গবন্ধুই বিশ্ব ইজতেমার জায়গা দিয়েছেন। এদেশে হাউজি খেলা, জুয়া খেলা, মদ বঙ্গবন্ধু বন্ধ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর পর আর কেউ ইসলামের জন্য এত কাজ করেনি।
‘আজকের সমাবেশে উপস্থিত আলেম ওলামাদের কাছে আমার ফরিয়াদ আপনার জনগণের কাছে এই কথাগুলো তুলে ধরবেন, আমাদের সরকার ইসলামের কী কাজ করেছে। দেশে অনেকেই ইসলামের কথা বলে ফ্যাতনা সৃষ্টি করে। মহানবীর জন্মদিনে মহা আনন্দের দিনে অনুরোধ যারা ফ্যাতনা সৃষ্টি করছে ইসলামের কথা বলে ইসলামের অমঙ্গল করছে ইসলামের বদনাম করছে তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য। ইসলামের কথা বলে যারা মুসলমান হত্যা করে, মানুষের হাত পায়ের রগ কাটে তারা ইসলামের বন্ধু নয় ইসলামের শত্রু। আর বাংলাদেশে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার হয়েছে ওলি আউলিয়াদের মাধ্যমে। ওলামায়ে কেরামকে অনেক ক্ষেত্রে অসম্মান করা হয়। অথচ তাদের হাত ধরে এই দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই দেশে কোনো যুদ্ধ বিগ্রহের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কিন্তু ওলামায়ে কেরামদের বিরুদ্ধে অনেকে কথা বলে তারা আসলে ফ্যাতনা সৃষ্টিকারী এদের সবার ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান।’
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, মহানবীর ক্ষমা ও উদরতা নারী জাতির প্রতি সম্মান শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমরা যদি মক্কা বিজয়ের চেতনা থেকে আমাদের কর্মপন্থা নির্ধারণ করি তবে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি হয়ে উঠবে উন্নত সমৃদ্ধ শান্তি ও কল্যাণময়। হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি আমাদের দেশে রয়েছে এটি আরও সুসংহত ও সুদৃঢ় হবে।
তিনি বলেন, ইসলামের আদর্শ ও মর্মবাণী সঠিকভাবে প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৩ সালে বায়তুল মোকাররমে ঈদে মিলাদুন্নবীর শুভ উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে বিশ্ব নবীর আদর্শ প্রচার ও দীনিই খেদমত এর এক নবদিগন্তের দ্বার উন্মোচন করেন।
এসএম/এসএন