আলোচনায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই ব্রিটিশ এমপি
হঠাৎ করেই আলোচনায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই ব্রিটিশ এমপি। একজন নিজ দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এবং অন্যজন বর্ণবাদী মন্তব্য করার অভিযোগে নিজ পার্টি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়ে আলোচনায় এসেছেন।
এই দুই এমপি হলেন, পপলার অ্যান্ড লাইম হাউজ আসনের এমপি আপসানা বেগম ও ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনের এমপি রূপা হক।
গেল মাসের শেষ দিকে যুক্তরাজ্যের লিভারপুলে লেবার পার্টির এক অনুষ্ঠানে দেশটির সদ্য বরখাস্তকৃত অর্থমন্ত্রী কাওয়াসি কাওয়ারতেংকে ‘লোক দেখানো কৃষ্ণাঙ্গ’ বলে মন্তব্য করেন রূপা হক। সভায় তিনি আরও বলেন, কাওয়াসি কাওয়ারতেংকে দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি একজন কৃষ্ণাঙ্গ। কারণ তিনি ভালো ও দামি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। দেশের সব ভালো স্কুলে পড়েছেন।
এ নিয়ে সমালোচনার জেরে ২৭ সেপ্টেম্বর রুপার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় তার দল লেবার পার্টি। এমপি রূপা হককে সংসদীয় দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে লেবার পার্টি। রূপা হককে আপাতত পার্লামেন্টে বসতে হবে স্বতন্ত্র এমপি হিসেবে। যদিও এমন মন্তব্যের জন্য পরে দুঃখ প্রকাশ করেছেন রূপা।
অন্যদিকে, আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি আপসানা বেগম তার নিজ দল লেবার পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন। ৭ অক্টোবর যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে এই অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে, পপলার অ্যান্ড লাইম হাউজ আসনের এমপি আপসানা বেগম বলেন, ‘লেবার পার্টির বর্তমান নেতৃত্ব দলের সাবেক বামপন্থী নেতা জেরেমি করবিনের অনুসারী সোশ্যালিস্ট অংশকে শায়েস্তা করতে চায়। লেবার পার্টি সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আমার মনোনয়ন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি তার প্রাক্তন স্বামীর বিরুদ্ধেও হয়রানি ও ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ আনেন।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালে এমপি পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে নানা অপতৎরতা শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচিত হওয়ার পরপর তার বিরুদ্ধে প্রতারণা করে হাউজিং সুবিধা নেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ উঠে। আবার কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের লেবার প্রশাসন সেই অভিযোগে মামলা দায়ের করে। শেষ পর্যন্ত আদালতে ওই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয় এবং মামলার খরচ বাবত কাউন্সিল জনগণের ট্যাক্সের প্রায় ৮০ হাজার পাউন্ড গচ্চা দেয়।
আপসানা বেগম বলেন, ওই মামলায় আদালতের শুনানিতে উঠে আসে তার বিরুদ্ধে হাউজিং প্রতারণার মিথ্যা অভিযোগের অগ্রভাগে ছিলেন তার সাবেক স্বামী ও স্বামীর ভগ্নিপতী— যারা স্থানীয় লেবার শাখার সদস্য। এখন আমার সাবেক স্বামী ও আমার দল লেবার পার্টির উভয়ের কমন টার্গেটে পরিণত হয়েছি আমি।
এ সব অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন এমপি আপসানা বেগমের সাবেক স্বামী এহতেশাম হক। তিনি বলেন, পারিবারিক বিষয় সামনে এনে রাজনৈতিক ফায়দা লুটা হচ্ছে। তার এ সব অভিযোগ নির্বাচনি প্রচারণার অংশ। তার (আপসানা বেগম) কোনো অভিযোগ থাকলে পুলিশে যেতে পারেন, আদালতে যেতে পারেন।
যুক্তরাজ্যস্থ সুনামগঞ্জ প্রবাসী সমিতির সভাপতি সাংবাদিক ইমানুজ্জামান চৌধুরী মহি বলেন, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বেশ কয়েকজন এমপি প্রতিনিধিত্ব করছেন, যা আমাদের জন্য গর্বের। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নানা কারণে তাদের কেউ কেউ আলোচনায় এসেছেন এবং নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়ার শঙ্কাতেও রয়েছেন। বিষয়টি আমাদের মর্মাহত করেছে।
আপসানা বেগমের পৈত্রিক বাড়ি বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় এবং রুপা হকের বাড়ি পাবনার মোকসেদপুরে।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চার এমপি প্রতিনিধিত্ব করছেন। তারা হলেন, রোশনারা আলী, রুপা হক, আপসানা বেগম ও টিউলিপ ছিদ্দিকী।
আরএ/