আন্দোলনকে যার যার অবস্থান থেকে পরিচালনা করতে হবে: সাকি
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ১৮ কোটি মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ফলে প্রত্যেকে ভোটাধিকারের দাবিতে যে আন্দোলন করবে, সরকার সেই জাতীয় ঐক্যের জায়গা তৈরি করে দিয়েছে। ফলে এই জাতীয় আন্দোলন সবাই যার যার সাধ্যমতো করবে এবং কিভাবে সমন্বয় গড়ে তোলা যাবে সেই সমন্বিত যুগপৎ ধারায় আলোচনা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই বিষয়ে আরো আলোচনা করা হবে। আলোচনার মধ্যে দিয়ে একটি রূপরেখা নিশ্চিত ভাবে সামনে আসবে।
মঙ্গলবার (৩১ মে) রাজধানীর হাতিরপুলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যায়ে বিএনপি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে মতবিনিময় করার উদ্দেশ্য বিএনপির প্রতিনিধি দল আমাদের অফিসে এসেছেন। আমরা গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষ থেকে বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। বিশেষভাবে বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের অধীনে যে ফ্যাসীবাদী কর্তৃত্ববাদী শাসন চলছে, যেভাবে তারা দেশের জনগণের জীবনে নাবিশ্বাস তুলেছে। বাংলাদেশের জনগণকে বিভক্ত করছে, একইভাবে পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে একটি বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মধ্যে ফেলছে, তাতে আমরা উভয় দল (বিএনপি-গণসংহতি আন্দোলন) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করি। এই বাস্তবতা সম্পর্কে আমাদের পর্যবেক্ষণের অনেক মিল খুঁজে পেয়েছি। আমরা মনে করি বাংলাদেশের এই বাস্তবতার অবিলম্বে বদল হওয়া দরকার। আর এই বদল একমাত্র গণতান্ত্রিক গতিমুখে ফিরার মধ্যে দিয়েই সম্ভব হতে পারে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে বিপদের মধ্যে পড়ব।’
সাকি বলেন, ‘বর্তমান সরকার যেহেতু জনগণের ভোট ছাড়া-সম্মতি ছাড়া জবরদস্তি করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে পুরোপুরি নিজেদের পকেটে ডুকিয়ে জনগণের ওপর স্টিমরোলার চালিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে। আন্দোলন ছাড়া এই অবস্থা বদলানোর অন্য কোনো পথ নেই। আমাদের দলের পক্ষ থেকে বক্তব্যে ও অবস্থান পরিষ্কার-আজকে আলোচনার মধ্যে দিয়েও আমরা ঐক্যমত হয়েছি যে, একটি সুষ্ঠু গ্রহণযোগ নির্বাচনই গণতন্ত্রের গতিমুখে ফেরার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সেই নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হতে হলে জনগণ সত্যিকার অর্থে ভোট দিতে পারবেন- এমন একটা নির্বাচন করতে হলে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনোভাবেই ওই নির্বাচন সম্ভব নয়।
বিশেষভাবে ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে সংলাপ করে তার উপর আস্থারাখার এবং সবাইকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ছিলেন। সেই নির্বাচনে যেভাবে ভোট ডাকাতি করা হয়েছে, রাতের অন্ধকারে নির্বাচনের আগের রাতেই সমস্ত ভোট ব্যালট বাক্স ভরে ফেলা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের মানুষ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে সেটা বিশ্বাস করে না। আমরা মনে করি-বর্তমান সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে, এই সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং একটি অন্তর্বতিকালীন সরকারের অধীনে একটি নির্বাচনকালিন সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আজকে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় এই বিষয়ে ঐক্যমত্য হয়েছে। ইতিমধ্যে বিরোধীরাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি বড় ঐক্যমত্য তৈরি হয়েছে যেটা আগামী দিনের আন্দোলন ও রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।’
তিনি বলেন, ‘৫০ বছরের দেশের মানুষ অভিজ্ঞায় দেখেছে- নির্বাচনের সময় যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তারাই নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। বাংলাদেশের মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। এই বিষয়ে সমাধান করতে গেলে বিরাজমান যে সাংবিধানিক কাঠামো যেটার উপর ভর করে বর্তমান সরকার ফ্যাসীবাদ কায়েম করেছে। এই সাংবিধানিক কাঠামোর বদল দরকার। সেজন্য আমরা সংবিধান সংস্কারের জন্য সুনিদিষ্ট কতগুলো প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছি। এইভাবে আমরা ৭টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছি।’
‘আমরা মনে করি- বাংলাদেশের ভবিষ্যত রাষ্ট্রটি কিভাবে চলবে-এই সরকারের পতনের পরে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পর বাংলাদেশ কিভাবে চলবে-এই বিষয়ে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গুনগত রুপান্তর ও গণতান্ত্রিক বন্ধবস্তের মাধ্যমে নতুন স্বপ্ন তৈরি হতে পারে। কারণ বর্তমান সরকারের পতনের জন্য আন্দোলন দরকার। যদি একটি জাতীয় রূপরেখা বিরোধীগুলোর পক্ষ থেকে হাজির হয় তাহলে মানুষ নতুন করে আন্দোলিত হবে এবং আমরা একটা বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে পারব। সেজন্য আমরা প্রাথমিকভাবে ঐক্যমত্য হয়েছি যে-যুগপৎ ধারায় এই চলমান আন্দোলন কে যার যার অবস্থান থেকে পরিচালনা করতে হবে।
এমএইচ/