আন্দোলনের সুনামিতে ভেসে যাবে সরকার: মিন্টু
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেছেন, আমরা তো এখনো আন্দোলন শুরু করিনি। তাতেই সরকারের লোকেরা বলে তারা নাকি ধাক্কা দিলে পড়বে না।
তিনি বলেন, ‘আমি বলব কত বড় ধাক্কা লাগবে? তুফানের সঙ্গে কিন্তু সুনামিও আসে। দরকার হলে আমরা সবাই মিলে সেটাও তৈরি করব। আন্দোলনের সুনামির ধাক্কায় এই সরকার ভেসে চলে যাবে।’
মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে পানির ট্যাঙ্কের সামনে ১২ দলীয় জোটের বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মিন্টু বলেন, আমরা অতীতে দেখেছি আওয়ামী লীগের ডাকে আগে ২০০ লোকও আসত না। সামনে দুজনও আসবে না। আওয়ামী লীগ এখন দেশে দুঃস্বপ্নের নাম। কোনোভাবেই আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় রাখা যাবে না। এরা নিজেদের স্বার্থে দেশকে বিক্রি করে দিচ্ছে। দেশকে রক্ষা করা আমাদের সবার ঈমানি দায়িত্ব।
অব্যাহতভাবে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। এ সময় নেতা-কর্মীরা বিদ্যুতের দাম কমানোর দাবি এবং চট্টগ্রামে বিএনপির মিছিলে পুলিশের গুলি ও হামলার বিচার চেয়ে স্লোগান দেন।
আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, আজকে দেশের লোক বহু কষ্টে আছে। সরকার বলছে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে। আসলে বিশ্বে এখন তেলের দাম কমেছে ২৫ শতাংশ। দেশে এগুলোর দাম কমানোর কোনো লক্ষণ নেই। তারা বলে ২৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা আছে। ২৪ হাজার নাকি উৎপাদন হচ্ছে। তাহলে এত লোডশেডিং কেনো? কারণ তাদের দুর্নীতি ও লুটপাট। তাদেরকে বিদায় করতে না পারলে ভবিষ্যত প্রজন্মের ভবিষ্যত অন্ধকার।’
জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদার পরিচালনায় বিক্ষোভ পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, বাংলাদেশ লেবার পার্টি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, এনডিপির চেয়ারম্যান ক্বারী মোহাম্মদ আবু তাহের, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর মহাসচিব গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাগপার সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, ইসলামী ঐক্য জোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিম ও বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাসেমসহ জোটের শীর্ষ নেতারা।
নেতারা সরকারকে জনদুর্ভোগের সরকার আখ্যা দিয়ে বলেন, দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন বৃদ্ধি জনজীবনকে দুঃসহ অবস্থায় নিয়ে গেছে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা না করে আবারও নতুন করে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা দেশবাসীকে হতবাক করে দিয়েছে। বিদ্যুতে দাম বাড়লে এর প্রভাবে প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়বে যা সীমিত আয়ের মানুষকে তিলে তিলে মেরে ফেলার শামিল। সমাবেশে অবিলম্বে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা প্রত্যাহার করার দাবি জানানো হয়।
অবৈধ অনির্বাচিত সরকারের সুবিধাভোগী মহল বিএনপি ঘোষিত যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের নিয়ে নানা প্রকার মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করে নেতারা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেন আমরা বিএনপি ঘোষিত যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে আছি এবং থাকব। সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকার গঠনসহ ১০ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ১২ দলীয় জোটের রাজপথে যুগপৎ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
সমাবেশ শেষে ১২ দলীয় জোটের একটি বিক্ষোভ মিছিল বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্ক সংলগ্ন রাস্তায় শুরু হয়ে পুরানা পল্টন মোড় ঘুরে আবারও বিজয়নগরে পানির ট্যাঙ্কের সামনে এসে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষ হয়।
আবদুল আউয়াল মিন্টু আরও বলেন, বর্তমান সরকারের চারদিকে শুধু দুর্নীতি আর দুর্নীতি। এক সপ্তাহের মধ্যেই তারা ব্যাংক থেকে কত হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়ে গেছে। অসংখ্য টাকা তারা পাচার করেছে। আমি চাই ১০ দফা মেনে নিয়ে সরকার পদত্যাগ করুক। তা না হলে তাদেরকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে। আমরা কেবল আন্দোলন শুরু করেছি। কঠোর আন্দোলন আসছে। কোনোভাবেই এই সরকার থাকতে পারবে না। দেশ ও জনগণের অধিকার রক্ষা এবং জনগণকে বাঁচাতে যা কিছু করা দরকার সবকিছু করা হবে, ইনশাআল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ২৫ জানুয়ারি বাকশাল দিবসকে কালো দিবস হিসেবে পালনের লক্ষ্যে সারা দেশে যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি করা হবে। তিনি অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানান।
এমএইচ/এমএমএ/