বাড়াবাড়ি করলে খালেদাকে জেলে পাঠানো হবে: প্রধানমন্ত্রী
বিএনপি যদি বাড়াবাড়ি করে, তবে খালেদা জিয়াকে আবারও জেলে পাঠানো হবে বলে হঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘যদি বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করে, তবে খালেদা জিয়াকে আবারও জেলে পাঠানো হবে।’
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আজকে তাদের (বিএনপি) কী অবস্থা, আজকে তাদের গণতন্ত্র উদ্ধার করতে হবে। যে দলের জন্ম সামরিক শাসকের পকেট থেকে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারির দ্বারা, তারা আবার গণতন্ত্র কী উদ্ধার করবে? সেটাই আমার প্রশ্ন। আবার সেই কথা শুনে কিছু লোক তাদের সাথে তাল মিলায়। এদের জ্ঞান-বুদ্ধি কোথায় থাকে? তারা কি বাস্তবটা বুঝতে পারে না। আর নেতৃত্ব কোথায়? বিএনপি যে লাফালাফি করে তাদের নেতা কই?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত, তার ৭ বছরের সাজা হয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা এতিমদের নামে বিদেশ থেকে যে মোটা অঙ্কের টাকা এসেছিল সেই একটি টাকাও এতিমরা পায় নাই বা ওই ট্রাস্টের না সব টাকা গেছে নিজের নামের নিজের অ্যাকাউন্টে। সেখানেও সে ধরা খেয়েছে এবং মামলা হয়েছে এবং তত্বাবধায়ক সরকার সেই মামলা দিয়েছে এবং ১০ বছরের জেল হয়েছে।’
তাদেরই প্রিয় ইয়াজদ্দিন, মইনউদ্দিন ও ফখরুদ্দিন গং এই মামলা দিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। অন্যদিকে তারেক রহমান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি।
দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রারম্ভিক বক্তৃতা করেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম , ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, বীরবিক্রম, সংগঠনের কার্যনির্বাহী সদস্য পারভিন জামান কল্পনা, নজরুল কন্যা সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি, মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি এবং উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ সভাটি সঞ্চালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার খুনীদের জিয়াউর রহমান বিদেশে চাকরি দিয়ে পুনর্বাসিত করলেও একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তাদের বের করে দেয়। কিন্তু ২০০১ সালে খালেদা জিয়া যখন বিচারের রায়ের তারিখ পড়েছে খুনি বিচারের কাঠগড়ায়, সেই সময় খুনি খায়রুজ্জামানকে, যে ৩ নভেম্বর জেলহত্যায়ও জড়িত তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাকরি এবং প্রমোশন দেয় এবং মালয়েশিয়ায় হ্ইাকমিশনার করেও পাঠায়। খুনি পাশাকে বিদেশে মৃত অবস্থায় প্রমোশন দেয় এবং তার ভাতা ও সব ধরনের বেনিফিট পরিবারকে দেয়। তাহলে কী করে অস্¦ীকার করবে এই হতাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত নয়। ৩ নভেম্বর বা ১৫ আগস্টের হত্যার সঙ্গে জিয়া যে জড়িত নয় তা কীভাবে অস্বীকার করবে।
তিনি বলেন, ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে খুনি রশিদকে ভোট চুরি করে খালেদা জিয়া পার্লামেন্টে বাসানোর মাধ্যমে খুনিদের পৃষ্ঠাপোষকতা করেছে। আর ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় তারেক জিয়া ও খালেদা জিয়া যে সম্পূর্ণভাবে জড়িত তাতে আর কোন সন্দেহ নেই। কারণ, সংসদে এনিয়ে আওয়ামী লীগকে আলোচনা করতে দেয়া হয়নি। উল্টো খালেদা জিয়া বলেন তিনি (শেখ হাসিনা) ভ্যানিটি ব্যাগে গ্রেনেড নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। অর্থাৎ একটি অপরাধ করার পর পরে সেই অপরাধটা অন্যের ঘাড়ে চাপানোর ট্রিকসটা তারা ভালভাবেই জানেন।
ক্ষমতায় থাকাকালীন অপারেশন ক্লিন হার্টের সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী নির্বাচন এবং তাদের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআই তছনছ এবং ফাইল পত্র ও কম্পিউটার সিজ করে নেওয়ার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পার্টির কাজও করতে দেবে না। এই হলো খালেদা জিয়ার গণতন্ত্রের নমুনা। আমাদের দলের উপর যে অত্যাচার তারা করেছে কই আমরাতো তার প্রতিশোধ নিতে যাইনি। আমরা আইনগত ভাবেই যা করার করেছি। খুনিদের বিচার করেছি। আর যে খুনীদের তারা রক্ষা করেছে। যুদ্ধারপরাধী যাদের ফাঁসির রায় হয়েছে তাদের কেবিনেটের মন্ত্রী করেছে।
আজ ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস। ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দ্বিতীয় কলঙ্কজনক অধ্যায় এই দিনটি।
১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী ও চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এএইচএম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এর আগে ১৫ আগস্টের পর এই চার জাতীয় নেতাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলে কোনো কথা নেই, কিন্তু একটা মানুষের গায়ে হাত দিলে ছাড়ব না। আর বিএনপি যে এত লম্ফ-ঝম্প করে তাদের দলের মাথা কোথায়? সবাই তো দুর্নীতিবাজ, সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। দেশের মানুষ কেন তাদের পাশে থাকবে?
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান সরকারের গত সাড়ে ১৩ বছরের দেশের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের কথা জনগণের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সামনে নির্বাচন। আমরা মানুষের মন জয় করে এবং দেশের উন্নয়ন করেই নৌকার পক্ষে ভোট আনব।
দেশের মানুষ আর সেই অশান্ত পরিবেশ চায় না, শান্তির পরিবেশ চায়, দেশের উন্নতি চায়। তাই দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকেই চায়, কেন না আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা মানে দেশে শান্তি, উন্নয়ন আর অগ্রগতি।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপির অপতৎপতার সমালোচনা করে আরও বলেন, দেশের জনগণ কি একটু ভেবে দেখেছে এই লুটেরা, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদীরা (বিএনপি-জামায়াত) ক্ষমতায় আসলে দেশের অবস্থা কী হবে? করোনা মহামারিসহ দুঃসময়ে বিএনপির অস্তিত্ব কোথায় ছিল? তারা তো জনগণের পাশে দাঁড়ায়নি।
বিএনপি যে এতো লম্ফ-ঝম্প করছে আর স্বপ্ন দেখছে জনগণ ভোট দিয়ে ভরে দেবে-এত সহজ নয়। দেশের জনগণ কী বিএনপির শাসনামলের হাওয়া ভবন, দুঃশাসন, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, দুর্নীতি, লুটপাট, নির্যাতনের কথা ভুলে যাবে? ভুলবে না। দেশের জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গেই আছে, বাংলাদেশকে আর কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের দুঃশাসনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার সময় দেশে কয়টা সরকার ছিল? হাওয়া ভবনে একটা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আরেকটা। হাওয়া ভবনের পাওনা না মিটিয়ে দেশে কোন উন্নয়নের কাজ হয়নি, যোগ করেন তিনি।
এমএমএ/