সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

একজন সম্রাজ্ঞী ছিলেন সুলতানা কামাল

ছবি : সংগৃহীত

একটি গ্রামোফোন এখন বাক্সবন্দী। আর একটি বাক্সে মোড়ানো গ্রামোফোনের রের্কড। সেই গ্রামোফোনে বাজত নানা সুর। সেই সুরে বেধেঁছিল নয় ভাই বোনের উচ্ছল পরিবার। সেই পরিবারের আঙ্গিনায় ছিল পেয়ারা গাছ এবং একটি কাঠগোলাপ ফুলের গাছ। সেই কাঠগোলাপ গাছটি স্বাক্ষী হয় নানা ঘটনার। এই পরিবারের ছয় ভাইবোনের ছোট বোনটির নাম রাখলেন ভাই আলগীর মোহাম্মদ কবির। এই ভাইটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগে ২য় বর্ষে পড়াকালীন সময়ে ১৯৬৪ সালের ২২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে মঞ্চে চেয়ার ছুঁড়ে মারার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত হন। পরবর্তীকালে তিনি আর ছাত্রত্ব ফিরে চাননি। রাগে দুঃখে প্রবাসে পাড়ি দিয়েছিলেন। কোনদিন আর দেশে ফিরেননি। যিনি এখন পরপারে।

পরবর্তীকালে বোনের নামটি জুড়ে দিয়েছিলেন তাঁর দুই কন্যার নামের সাথে। এই পরিবারের আর একভাই ফারুক মোহাম্মদ ইকবাল শেখ বোরহানউদ্দিন পোষ্ট গ্রাজুয়েট কলেজের ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন, ছিলেন একজন ফুটবলার। ১৯৭১ এ ১২ ডিসেম্বর পাক হানাদাররা সকল ভাই বোনের সামনে থেকে জীপে করে নিয়ে যায়,পরবর্তীকালে সে আর ফিরে আসেনি। এই ভাইটি হারিয়ে যাবার পর মা দরজা খুলে অপেক্ষা করতেন কখন সন্তান আসবে তার জন্য। ছেলের শোকে তিনি বিমর্ষ হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে রাখা হতো। এই পরিবারের আর এক ভাই গোলাম মোস্তফা ছিলেন একজন প্রথিতযশা খেলোয়াড়। এই পরিবারের আর এক ভাই জাহাঙ্গীর মোঃ জসিমের কাধেঁ চড়ে যখন বোনটি বাইরে বেড়াতে বের হতেন,তখন বোনটি আধো আধো বোলে বাংলা চাই, বাংলা চাই, ভুলবনা, ভুলবনা শ্লোগান দিতেন। এই ভাইটি এক সময় যখন চোখে কম দেখা শুরু করলেন, তখন এই বোনটি পড়ে শোনাতেন। তখন সেগুলো শুনে ভাইটি কলেজে পাঠদান করতেন। ভাইটি এখনো বেঁচে আছেন। চোখে দেখেন না। কিন্তু মনের চোখে বোনকে সারাবেলা দেখতে পান। এই পরিবারের আর এক বোন ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ক্রীড়ায় চ্যম্পিয়ন ছিলেন ।

 

 

এই পরিবারের বড় চাচা শামসুল হক ঢাকা ওয়ান্ডার্স এ ফুটবল খেলতেন। বাবা গ্রামে হাডুডু খেলতেন। জন্মসূত্রে প্রাপ্ত এই বোনটি তৃতীয় শ্রেণী পড়াকালীন সময়ে ১২ ফিটের জাম্পিং পিট দুর্দান্ত গতিতে অতিক্রম করার দক্ষতাই প্রমাণ করেছিল তিনি হবেন একজন ক্রীড়াবিদ। শৈশবে ভাই জাহাঙ্গীর মোঃ জসিমের কাছে খেলাধূলার দীক্ষা নেন। পরবর্তীকালে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন ‘দৌড়, ঝাপ, নিক্ষেপ’ গ্রন্থের লেখক ধারাবাহিকভাবে নয় বছরের প্রাদেশিক চ্যম্পিয়ন বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ কাজী আব্দুল আলীমের কাছ থেকে। তখন তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে মেজর হামিদ নামে একজন কোচ আসতেন, তাঁর কাছ থেকেও নতুন বিশেষ কিছু কৌশল রপ্ত করেন। এই বোনটির মেজো বোন মমতাজ বেগম বোনের খেলার সামগ্রী কাপড় চোপড় গুছিয়ে রাখতেন। ষ্টেডিয়ামে খাবার, পানি নিয়ে যেতেন। আর এক ছোট ভাই গোলাম আহমেদ বোনের পা ম্যাসেজ করে দিতেন। বোনের সাথে খেলা দেখতে ষ্টেডিয়ামে চলে যেতেন। এই পরিবারটি ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী দবিরউদ্দিন আহমেদের পরিবার। তৎকালীন সময়ে সরকারি ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ বর্তমান বদরুন্নেসা কলেজের রাজনৈতিক অস্থায়ী দপ্তর ছিল এই বাসার একটি কক্ষ।


১৯৬৭ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেগম বদরুন্নেসা কলেজে ভোটে দাড়াঁন। এই ভোটের পোষ্টার এই বাড়িতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীবৃন্দ লিখতেন। উক্ত ভোটে শেখ হাসিনা সহ- সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালে ছয় ভাইয়ের বোনটি ১২০০ ভোটের অধিক ভোট পেয়ে ছাত্রলীগ মনোনীত ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। এই বোনটির নাম সুলতানা আহমেদ। পারিবারিক নাম ছিল খুকী। বন্ধুমহলে খুকী নামে পরিচিত। বিয়ের পর যার নাম হয় সুলতানা কামাল।

 

তখনকার সময়ে সাইকেলে করে বই বিক্রি করতেন বিক্রেতারা। তাদের কাছ থেকে তিনি প্রতি সপ্তাহে দুই তিনটি বই কিনতেন। এক সময় দেখা গেল বইয়ের সংখ্যা তিনশতর কাছাকাছি। তিনি ভাল ছবি আঁকতে পারতেন। বন্ধুদের সাথে চিঠি বিনিময়ের সময় ছবি আঁকতেন। ভালো সাইকেল চালাতে পারতেন। ভীষণ বন্ধুবৎসল এই মানুষটি ১৯৫২ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বকশীবাজারে জন্মগ্রহণ করেন। নয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি অষ্টম। পৈতৃক বাড়ি রাজধানী ঢাকার মাতুয়াইলে। মৃধা বাড়ি নামে তাদের বাড়ি সমধিক পরিচিত। ১৯৬৭ সালে মুসলিম গার্লস স্কুল থেকে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ন হন। ১৯৬৯ সালে সরকারি ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমানে বদরুন্নেসা কলেজ), ঢাকা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ন হন। পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ছোট বোন সুলতানা কামালকে এই বিভাগে ভর্তির বিষয়ে বড় বোন খালেদা রহমানকে ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নাজমুল করিম পরামর্শ প্রদান করেন।

 

তিনি ছিলেন রোকেয়া হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থী । যার রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ছিল ৩৮৯ । স্নাতক পরীক্ষার রোল ছিল ৯৭৪। ১৯৬৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর স্নাতকের ক্লাশ শুরু করেন। ক্লাশ শেষে রোকেয়া হলের ঘাসে বসে গল্প করতেন সুলতানা কামাল এবং তার দুই সহপাঠী মাশুরা হোসেন,সাবিনা ইয়াসমিন এবং মেহরাজ জাহান। মাঝে মাঝে দুপুরের পর ক্লাশ থাকেেল তাদের বাসায় চলে যেতেন সহপাঠীবৃন্দ। বাড়ির আঙ্গিনায় বেড়ে উঠা পেয়ারা গাছ থেকে পেয়ারা খেতেন। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে ফিরতেন কলা ভবনে। তাঁর স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা শুরু হয় ২১ জুলাই ১৯৭৫ । ৭ আগষ্ট পর্যন্ত চলে লিখিত পরীক্ষা। ১৮ আগষ্ট, ১৯৭৫ ছিল মৌখিক পরীক্ষা। কিন্তু এর মধ্যে ঘটে যায় সুলতানা কামালের জীবনের নতুন অধ্যায়। তৎকালীন গণ পরিষদ সদস্য হেদায়েতুল ইসলাম সুলতানা কামালের বিয়ের প্রস্তাব দেন তাঁর পিতা দবিরউদ্দিন আহমেদকে। বিয়ের ব্যাপারে পাত্র শেখ কামাল প্রথমে নারাজ ছিলেন। তাঁর কথা হচ্ছে তাঁর সহপাঠী তাঁর কাছে ছোট বোনের মত। কি করে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হবেন? কিন্তু পাত্রের বোন শেখ রেহানা এবং ভাই শেখ জামাল বায়না ধরেন, সে যদি সুলতানাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করে তাহলে তাকে ভাবী ডাকবেনা। পরবর্তীতে শেখ কামাল সম্মতি দেন। এই পাত্রের বাবা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ১৪ এপ্রিল, ১৯৭৫ সালে সুলতানা কামালকে আশীর্বাদ করেন।

 

 

১৪ জুলাই সোমবার পারিবারিক সম্মতিতে অফিসার্স ক্লাব, ঢাকা মিন্টো রোডে বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিয়ের দিন দুই বান্ধবীর ভীষণ কান্না অবলোকন করে বঙ্গবন্ধু বলেন, সুলতানার সাথে দুই বন্ধুকে বাড়ি নিয়ে চলো। স্মৃতিচারণটি করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ট্রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশুরা হোসেন। অপরদিকে, আর এক সহপাঠী বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, তিনি, মাশুরা, মেহরাজ এবং সুলতানা একসাথে চারজন রিকশায় করে সেগুনবাগিচায় চাইনীজ খেতে যেতেন। তিনি এবং খুকী কলেজের সহপাঠী ছিলেন বলে সুলতানা কামালের সাথে সখ্যতা ছিল বেশী। তাছাড়া, কলেজ এবং বাড়ি একসাথে থাকায় বন্ধুর বাসায় যাওয়া আসা যাওয়া ছিল । বন্ধুর বাসার ছাদে বসে তেতুল, পেয়ারা খেতেন। তাছাড়া, এই চার বন্ধু ছিলেন এক মন এক আত্মা। সাবিনা ইয়াসমিন সঙ্গীত নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন বলে এই তিন বন্ধু তাকে লেখাপড়ায় সাহায্য করতেন। সহপাঠী মাশুরা হোসেন এবং সাবিনা ইয়াসমিনের স্মৃতিতে সুলতানা কামাল এখনো অম্লান। তাঁদের কথা হলো, সুলতানা কামালের শূন্যতা পূরণ হবার নয়। তিনি ছিলেন, সহজ সরল প্রাণবন্ত একজন মানুষ।

তিনি আন্তঃ বিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় পুরস্কার লাভ করার পর আর থেমে থাকেননি।। তিনি ১৯৬২-৬৩ সালে আন্তঃবিদ্যালয় এ্যাথলেট হিসেবে পুরস্কৃত হন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করে মোহামেডান ক্লাবের পক্ষে লং জাম্পে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য রোকয়ো হলের মাঠে, আজিমপুর গার্লস স্কুলে অনুশীলন করতেন। লাহোরে গিয়ে প্রায় ১০ দিন ছিলেন । এই সফরের সঙ্গী ছিলেন জাহানারা আহমেদ এই বিষয়ে স্মৃতিচারণ করেন । ১৬ বছর বয়সে ১৯৬৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তানে অলিম্পিকে পাকিস্তান লং জাম্পে ১৬ ফিট অতিক্রম করে রেকর্ডসহ স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৭০ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় হার্ডলসে স্বর্ণপদক লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের

 

প্রথম নারী ব্লু  সনদপত্রটি ১১/০৮/১৯৭০ইং সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষার পরিচালকের স্বাক্ষর সম্বলিত সনদপত্র অর্জন করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে রোকেয়া হল ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে ঢাকা ষ্টেডিয়ামে জাতীয় এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে তিনি ১০০ মিটার হার্ডলস, হাইজাম্পে এবং লং জাম্পে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং স্বর্ণপদক লাভ করেন। । ১৯৭৩ সালে অল ইন্ডিয়া রুরাল গেইমসে (নিখিল ভারত গ্রামীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা) রৌপ্য পদক জিতেন। এই পদক জয়ের পর বঙ্গবন্ধু তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কি পুরস্কার চান এই অর্জনে । উত্তরে সুলতানা বলেছিলেন, ক্রীড়া কমপ্লেক্স চান। বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি ১৯৭৩ এ শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় নির্বাচিত করে।

ধারাবাহিকভাবে ১৯৭৩, ১৯৭৪ এবং ১৯৭৫ সালে জাতীয় এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৭৫ সালে চট্টগ্রামে জাতীয় এ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় ১০০ মিটারে হার্ডলসে ১৭.৫ সেকেন্ডে সময় নিয়ে তিনি নতুন রেকর্ড গড়ে প্রথম হন।

সুলতানা কামাল একজন হাসিখুশী প্রাণোচ্ছল তরুণী ছিলেন। ছিলেন হাস্যোজ্জল বন্ধুবৎসল এবং অতিথিবৎসল। আত্মীয় স্বজনের সকলের বিপদে এগিয়ে যেতেন। ভীষণ পরোপকারী ছিলেন। এমনকি বাড়ির কাজের লোকদের বিশ্রাম নিতে বলতেন, তাদের কাজ তিনিই করে ফেলতেন। ভীষণ রুচিশীল, পরিপাটি গোছানো ছিলেন। ১৮ আগষ্ট ১৯৭৫ সালে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে মৌখিক পরীক্ষার তারিখ ছিল বন্ধু মাশুরা হোসেন, সাবিনা ইয়াসমিন এবং তাঁর একই দিনে ছিল পরীক্ষা। কিন্তু তাঁর তিনদিন পূর্বে ঘাতকের গুলিতে প্রাণ হারান তিনি। বাবা মা এই শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েন। মা ঘরের কাপড় পরেই ঢাকা মেডিকেলের মর্গে ছুটে যান । সেখানে মেয়েকে খুঁজে পাননি। সঠিকভাবে জানতে পারছিলেন না কি হয়েছে। ভাই এরশাদ মো. রফিক ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে তাকে যেতে দেয়া হয়নি। পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিব সৈয়দ হোসেনের বাড়ি গিয়ে জানতে পারেন সুলতানা কামাল নেই।

 

শোকাকুল মা রোগ শোকে জর্জরিত হয়ে পড়েন। এদিকে বাবা কন্যা হারানোর শোকে ৫৮ দিন পর ১৯৭৫ এর ১২ অক্টোবর পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। মা জেবুন্নেসা ঘরের চারিদিকে সন্তানের ছবি টাঙ্গিয়ে রেখে হারানোর যন্ত্রনা লাঘবের চেষ্টা করেন। এমনকি হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর তার হারিয়ে যাওয়া মেয়ে, মেয়ের জামাই, তাঁর স্বামী এবং বঙ্গবন্ধু ছবি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে যে কয়দিন ছিলেন সে কয়দিন ছবি টেবিলে রাখেন। তাঁর কথা ছিল, তিনি তাদের না দেখে বেঁচে থাকতে পারবেন না।

 

সন্তান শোকে শোকাকুল মা ২০০০ সালের ২৬ ডিসেন্বর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন । বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি বন্ধুদের সাথে এক রকমের পোশাক পরতেন। ১৩ আগষ্ট, ১৯৭৫ ছিল মায়ের সাথে ছিল তাঁর শেষ দেখা। ছোট ভাই গোলাম আহমেদ বলেন, আপা যাবার সময় বলে গিয়েছিলেন ১৫ তারিখ সকালে আসবেন। তিনি বলেন, ৭৪ এর দিকে তার বাবা ফার্ম থেকে ১০ টি মোরগ কিনেছিলেন, ৮ টি মোরগ জবাই করা হলেও দুইটি মোরগ জবাই করা হয়নি। মোরগ দুইটি সুলতানা কামালের স্বামী শেখ কামালকে দেখলেই ডাকত। তখন শেখ কামাল হাসতে হাসতে বলতেন, এই মোরগ দুইটি তার পেটেই যাবে। এই মোরগ দুটিকে রান্না করে ১৫ আগষ্ট শেখ কামালকে আপ্যায়ন করার কথা ছিল। কিন্তু বিধিবাম।

 

পরবর্তীকালে সুলতানা কামালের মা এই মোরগ দুটিকে জবাই করতে দেননি। মোরগ দুটি অসুস্থ হলে তার মা হাসপাতালে নিয়ে যেতেন এবং প্রাকৃতিকভাবে ১৯৭৯ সালে মৃত্যুবরণ করে। ষাট দশকের দিকে পুরস্কারগুলো সংরক্ষণ রাখার জন্য একটি কাঠের আলমারি তৈরি করা হয়েছিল। সেই আলমারিটিতে থরে থরে সাজানো রয়েছে বিভিন্ন পুরস্কার। সুলতানা কামালের দল ভারতে খেলতে গেলে পুরো খেলোয়াড় দলকে ইন্দিরা গান্ধী স্মারক দেন। সেই স্মারকটি এখনো সংরক্ষিত আছে। তিনি ২২ টি স্বর্ণপদক অর্জন করেন এবং ১০ এর অধিক রৌপ্য পদক লাভ করেন। ৫০ এর অধিক সনদপত্র অর্জন করেন। তাদের বাসার বসার ঘরে সুলতানা কামালের বিশাল চিত্রকর্ম প্রমাণ করে বোনের প্রতি ভাইদের ভালবাসার নিদর্শন। তৎকালীন সময়ে বেশ কয়েকবার সাপ্তাহিক বিচিত্রার প্রচ্ছদে সুলতানা কামালের ছবি এবং প্রতিবেদন ছাপা হয়। তিনি বাংলাদেশ বেতারে খেলা সংক্রান্ত সাক্ষাৎকার এবং অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে যে সম্মানী পেতেন সেটি জমা হতো ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের জনতা ব্যাংক টিএসসি শাখায়। আজ পর্যন্ত সে সম্মানির অর্থগুলো ভাইয়েরা তুলেননি।

 

১৯৭৩ সালে বার্লিনে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিশ্ব যুব সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে গেলে ফেরার সময় এক জোড়া জুতো নিয়ে আসেন। সেই জুতো এখনো সংরক্ষিত আছে। সংরক্ষিত আছে তাঁর ব্যবহৃত সোয়েটার এবং ১৩ জুলাই,১৯৭৫ ইং তারিখ বাবার বাড়ীতে পরিধান করা ফতুয়া। সুলতানা কামালের গল্পের বইয়ে তাঁর নিখুঁত হাতের লেখা দেখলেই বুঝা যায় তিনি কতটা গুছানো ছিলেন। তিনি বেশীরভাগ সময় শরৎচন্দ্রের উপন্যাস পড়তেন। সংরক্ষিত আছে বিয়ের আমন্ত্রণ কার্ড এবং গায়ে হলুদের ডালার লাল ঝালর এবং পাসপোর্ট। বোনের প্রতি ভাইদের ভালাবাসার অকৃত্রিম নিদর্শন, যা বিরল। তাঁর ছোট ভাই এখনো মনে করেন, সে আসবে। কারণ তার সাথে শেষ কথা ছিল, আমি ১৫ তারিখ আসতেছি। হাসিখুশীমাখা পরিবারটি বাস করত ঢাকার বকশীবাজারের ৮ নম্বর সড়কে। যে জায়গাটিতে তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন, সে জায়গাটিতে স্থাপিত হয়েছে সুলতানা কামাল অডিটোরিয়াম। ভাইয়েরা পিতার নামে দবিরউদ্দিন মৃধা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন। যে ফাউন্ডেশন থেকে প্রতি বছর সুলতানা কামাল স্মৃতি টূর্নামেন্টে ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

 

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ক্রীড়া ও খেলাধূলার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা পুরস্কার (২০০০) এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (১৯৯৭) সম্মাননা প্রদান করে। ঢাকার ধানমন্ডিতে স্থাপিত হয়েছে সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স। তিনি বেঁচে থাকলে ক্রীড়াক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে একজন অনুসরণীয় ক্রীড়াবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতেন এতে কোন সন্দেহ নেই। এমন জাতীয় সম্পদকে অসময়ে হারানো দেশের জন্য বেদনার। ‘সুলতানা’ যার নামের অর্থ সম্রাজ্ঞী ,ক্ষমতাবান। সত্যি নামের সাথে মিলে যায় তার জীবন।

 

 

ভাইদের কাছে এখনো তিনি সম্রাজ্ঞী হয়ে আছেন। এই কৃতি খেলোয়াড়ের সকল স্মৃতি সংরক্ষণ এখন সময়ের দাবী হয়ে দাড়িয়েছে। কেননা, এই নিদর্শন হারিয়ে গেলে একটি ইতিহাস হারিয়ে যাবে। নারী খেলোয়াড়দের জন্য সুলতানা কামাল এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তাঁর সনদপত্র, পুরষ্কার সকল কিছু জাতীয় জাদুঘর অথবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট জাদুঘরে সংরক্ষিত হলে অনাগত প্রজন্মের নিকট একটি প্রেরণা এবং শিক্ষার উৎস হয়ে দাড়াবে। সুলতানা কামাল পরিবারের সম্পদ নয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা জাতির সম্পদ। এই সম্পদ ক্রীড়া জগতে একজন ক্ষমতাশালী ক্রীড়াবিদ হিসেবে আমরণ প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। সুলতানা কামালের শূন্যতা পূরণ হবার নয়। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে একদল বিপথগামী সেনা সদস্য। সেই সাথে সকলের সাথে প্রাণ হারান ২২ বছর আটমাস বয়সী বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল। ঢাকার বনানী কবরস্থানে ১৫ আগষ্টের শহীদদের সাথে তিনি চিরতরে শায়িত আছেন। একজন বোনের বিদায়ে পুরো পরিবার স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। জাতি হারিয়েছে একটি নক্ষত্রকে। বিশিষ্ট কবি ও নাট্যকার মুহাম্মদ জালাল উদ্দিন নলুয়া’র এক বোন খুকী নামে ছিলেন। যিনি অকালে প্রাণ হারান।

 

তিনি তাঁর বোন খুকীকে নিয়ে ‘অভিমানী’ শিরোনামে একটি কবিতা লিখেছিলেন। যে কবিতাটি মিলে যায় সুলতানা কামালের ভাইদের দুঃখের সাথে। যেন কবিতাটি লেখা হয়েছে সুলতানা কামাল খুকীকে নিয়েই। কবিতাটির শেষ চারটি লাইন ছিল এরকম- খুকীবোন বলে নাম ধরে খুঁজলাম কতো/অভিমানী এলে না শুনলে না, কাদঁলাম যতো/লক্ষ্যা নদীর কান্না তোমার বুকে/সাগরের ব্যথা আমাদের চোখেমুখে।’ হ্যা,খুকী বোনের জন্য ভাইদের দুঃখ সাগরের ব্যথার মতই। শুরু করেছিলাম একটি গ্রামোফোনের গল্প দিয়ে। শেষ ও করব তার গল্প দিয়ে। তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠে সবচেয়ে বেশী শুনতেন যে গানটি তার কয়েকটি চরণ দিয়ে শেষ করব লেখাটি ,‘ ‘রানার ! রানার! ভোর তো হয়েছে - আকাশ হয়েছে লাল/আলোর স্পর্শে কেটে যাবে,কবে এই দুঃখের কাল’? দুঃখের কাল শেষ হউক। সুলতানা কামালের ভাই বোনেরা তাদের বোন হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করুক এই প্রার্থনা। সুলতানা কামালের পরিবারের সকল ঘটনার স্বাক্ষী ৭৫ বছরের বেশী বয়সী কাঠগোলাপ গাছটিতে কাঠগোলাপ এখনো তাদের আঙ্গিনায় ফোটে। এই ফুল যেন কাঠগোলাপ নয়। যেন সুলতানা কামাল ফুটে থেকে সুভাষ ছড়ায় । ৬৯ তম জন্মদিনে অফুরন্ত শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা ক্রীড়া জগতের কিংবদন্তী সুলতানা কামাল আপনাকে।

 

তথ্যসূত্রঃ
১. ১৫ আগষ্ট,১৯৭৫, শেখ হাসিনা এবং বেবী মওদুদ সম্পাদিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট,২০১৯।
২. সুলতানা কামালের মেজো ভাই জাহাঙ্গীর মোঃ জসিম, বড় বোন খালেদা রহমান,মমতাজ বেগম এবং ছোট ভাই গোলাম আহমেদ মৃধার সাক্ষাৎকার,১৩.০৯.২০২১ইং
৩. সুলতানা কামালের সহপাঠী,মাশুরা হোসেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাষ্টের সাক্ষাৎকার,১১.০৯.২০২১ইং
৪. সুলতানা কামালের সহপাঠী জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সঙ্গীত শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের সাক্ষাৎকার,১৪.৯.২০২১ইং
৫. সুলতানা কামালের খেলার সঙ্গী জাহানারা আহমেদের সাক্ষাৎকার,১৪.০৯.২০২১ইং

 

লেখক :  অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Header Ad
Header Ad

মে মাসে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

জুলাই-আগস্ট গণঅভুত্থানে গণহত্যার মামলায় আগামী মাসের শুরুতেই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে-আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আলজাজিরার বৈশ্বিক নেতাদের সাক্ষাৎকারমূলক অনুষ্ঠান ‘টক টু আল–জাজিরা’য় এ কথা বলেন তিনি।
আগামী ডিসেম্বর থেকে আগামী বছর জুনের মধ্যেই নির্বাচন হবে বলে ফের জানিয়েছেন তিনি

এ সময় তিনি আরও বলেন, শুধু মানবিক সহায়তা নয়, নিরাপদ প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান।

বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উদাহরণ সৃষ্টিকারী নির্বাচন উপহার দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা এখনও তুঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান।

আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লব, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, সাবেক সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।

আলজাজিরার উপস্থাপক ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, এটা কি বলা ঠিক যে, শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন সম্ভবত শেষ হয়েছে? কিছু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব আপনাকে দিতে হবে। কারণ, পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অনেকে রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে।

জবাবে ড. ইউনূস বলেন, মধুচন্দ্রিমা শেষ হোক বা না হোক, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি চলে যেতে এখনও বলছে না। বরং একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে সরকারই নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে। জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা এখনও বলছে না।

লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারবে?

জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি। তারা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া যাতে তৈরি হয়।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়া হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন,
এ প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে–তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কিনা। তারা এখনও কিছু ঘোষণা করেনি। তা ছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ নানা বিষয় সামনে আসতে পারে।

তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তা নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দল আছে, যারা বলতে পারে যে, এ আইনের অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

সাক্ষাৎকারে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের প্রসঙ্গ ওঠে। ড. ইউনূস জানান,
তিনি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন তিনি। জবাবে মোদি বলেছিলেন, এটা তার জন্য সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু বললে, সেটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।

যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, একসঙ্গে কাজ করার নীতি নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা একসঙ্গেই পারস্পরিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিতে চাই।

Header Ad
Header Ad

ঢাকাসহ সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এর পাশাপাশি কমতে পারে দিনের তাপমাত্রা। এছাড়া আকাশ আংশিক মেঘলা থেকে মেঘলা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০-১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইতে পারে।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

সোমবার সকাল ৬টায় ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ২৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮২ শতাংশ।

সারাদেশের সকাল ৬ টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো অথবা বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে সারাদেশে দিনের তাপামাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

আরও বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

রোববার (২৭ এপ্রিল) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুরের ডিমলাতে সর্বোচ্চ ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

Header Ad
Header Ad

সবাই মিলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই লক্ষ্য: আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। ছবি: সংগৃহীত

ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় সনদ তৈরি করা। সবাই মিলে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার অংশ হিসেবে আলোচনা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের এলডি হলে গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

আলী রীয়াজ বলেন, চর্চা, ঐক্যে এবং সম্মিলিতভাবে জাতীয় সনদ তৈরি করতে সবার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় সনদ তৈরি করা। যাতে করে ক্ষমতার বিন্যাসে পরিবর্তন ঘটে। বাংলাদেশ যাতে সমস্ত সম্ভাবনা নিয়ে জাগ্রত হতে পারে। গত ৫৩ বছর মানুষ যে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করছে, সেই আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করা যায়, পথ উন্মুক্ত করা যায়, যেন সবাই মিলে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি। তারাই অংশ হিসেবে এ আলোচনা।

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন, মতামত ও সুপারিশই যথেষ্ট নয়। সব রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর জনমানুষের ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশকে নতুন বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর করতে পারব। কাজে কি লিখছি তা নয়, চর্চার মধ্য দিয়ে, অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে, প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে আমাদের এ কাজে অগ্রসর হতে হবে। আমরা সেই প্রচেষ্টায় আছি।

ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তরুণদের নেতৃত্বে প্রাণ দিয়ে যে সম্ভাবনা তৈরি করেছে, সবাই মিলে সে সম্ভাবনাকে বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হতে হবে। সেই পথ ও প্রচেষ্টায় সবাই একত্রিত আছি, থাকব। একত্রিত থাকার তাগিদ জারি রাখব।

রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে স্প্রেডশিট আকারে ৩৯টি দলের কাছে মতামত চেয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে ৩৫টি দল মতামত জমা দিয়েছে বলে জানান আলী রীয়াজ। রোববার পর্যন্ত কমিশন ১৯টি দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে। ২০তম দল হিসেবে গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে কমিশন সংলাপ করছে বলে জানান আলী রীয়াজ।

২০১৮ সালে বর্তমান গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত কোটা সংস্কার আন্দোলনের কথা তুলে ধরে আলী রীয়াজ বলেন, তাদের অকুতোভয় সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের নতুন পর্যায় সূচনা হয়েছিল। যার ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী পর্যায়ে একটি অভূতপূর্ব ও অভাবনীয় গণঅভ্যুত্থান হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

মে মাসে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা
ঢাকাসহ সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে
সবাই মিলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই লক্ষ্য: আলী রীয়াজ
ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ
কাশ্মীর সীমান্তে ভারত-পাকিস্তানের ফের গোলাগুলি
টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে ৩ পরিবর্তন
দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা
টটেনহামকে উড়িয়ে প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না মোদি
রেফারির কাছে ক্ষমা চাইলেন মাদ্রিদের ডিফেন্ডার আন্তনিও রুদিগার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা উপহার দিলেন ছাত্রদল নেতা
দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি
নওগাঁয় গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত না দেওয়ায় জাতীয় পার্টি’র নেতাকে গণধোলাই
পাকিস্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও পানি না দেওয়ার আহ্বান বিজেপি এমপির
এসআই নিয়োগের ফলাফল প্রকাশ, ৫৯৯ জনকে প্রাথমিক সুপারিশ
হাকিমপুরে গরীবের চাল ছাত্রলীগ নেতার গুদামে
চুরির অভিযোগে কুবির দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার
ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগবাড়িয়ে কিছু করার পক্ষে নয় ঢাকা
সাব-ইন্সপেক্টর পদে প্রাথমিক সুপারিশ পেল ৫৯৯ জন
দুই উপদেষ্টার এপিএস-পিও’র দুর্নীতির খোঁজে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু