বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

একজন সম্রাজ্ঞী ছিলেন সুলতানা কামাল

ছবি : সংগৃহীত

একটি গ্রামোফোন এখন বাক্সবন্দী। আর একটি বাক্সে মোড়ানো গ্রামোফোনের রের্কড। সেই গ্রামোফোনে বাজত নানা সুর। সেই সুরে বেধেঁছিল নয় ভাই বোনের উচ্ছল পরিবার। সেই পরিবারের আঙ্গিনায় ছিল পেয়ারা গাছ এবং একটি কাঠগোলাপ ফুলের গাছ। সেই কাঠগোলাপ গাছটি স্বাক্ষী হয় নানা ঘটনার। এই পরিবারের ছয় ভাইবোনের ছোট বোনটির নাম রাখলেন ভাই আলগীর মোহাম্মদ কবির। এই ভাইটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগে ২য় বর্ষে পড়াকালীন সময়ে ১৯৬৪ সালের ২২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে মঞ্চে চেয়ার ছুঁড়ে মারার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত হন। পরবর্তীকালে তিনি আর ছাত্রত্ব ফিরে চাননি। রাগে দুঃখে প্রবাসে পাড়ি দিয়েছিলেন। কোনদিন আর দেশে ফিরেননি। যিনি এখন পরপারে।

পরবর্তীকালে বোনের নামটি জুড়ে দিয়েছিলেন তাঁর দুই কন্যার নামের সাথে। এই পরিবারের আর একভাই ফারুক মোহাম্মদ ইকবাল শেখ বোরহানউদ্দিন পোষ্ট গ্রাজুয়েট কলেজের ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন, ছিলেন একজন ফুটবলার। ১৯৭১ এ ১২ ডিসেম্বর পাক হানাদাররা সকল ভাই বোনের সামনে থেকে জীপে করে নিয়ে যায়,পরবর্তীকালে সে আর ফিরে আসেনি। এই ভাইটি হারিয়ে যাবার পর মা দরজা খুলে অপেক্ষা করতেন কখন সন্তান আসবে তার জন্য। ছেলের শোকে তিনি বিমর্ষ হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে রাখা হতো। এই পরিবারের আর এক ভাই গোলাম মোস্তফা ছিলেন একজন প্রথিতযশা খেলোয়াড়। এই পরিবারের আর এক ভাই জাহাঙ্গীর মোঃ জসিমের কাধেঁ চড়ে যখন বোনটি বাইরে বেড়াতে বের হতেন,তখন বোনটি আধো আধো বোলে বাংলা চাই, বাংলা চাই, ভুলবনা, ভুলবনা শ্লোগান দিতেন। এই ভাইটি এক সময় যখন চোখে কম দেখা শুরু করলেন, তখন এই বোনটি পড়ে শোনাতেন। তখন সেগুলো শুনে ভাইটি কলেজে পাঠদান করতেন। ভাইটি এখনো বেঁচে আছেন। চোখে দেখেন না। কিন্তু মনের চোখে বোনকে সারাবেলা দেখতে পান। এই পরিবারের আর এক বোন ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ক্রীড়ায় চ্যম্পিয়ন ছিলেন ।

 

 

এই পরিবারের বড় চাচা শামসুল হক ঢাকা ওয়ান্ডার্স এ ফুটবল খেলতেন। বাবা গ্রামে হাডুডু খেলতেন। জন্মসূত্রে প্রাপ্ত এই বোনটি তৃতীয় শ্রেণী পড়াকালীন সময়ে ১২ ফিটের জাম্পিং পিট দুর্দান্ত গতিতে অতিক্রম করার দক্ষতাই প্রমাণ করেছিল তিনি হবেন একজন ক্রীড়াবিদ। শৈশবে ভাই জাহাঙ্গীর মোঃ জসিমের কাছে খেলাধূলার দীক্ষা নেন। পরবর্তীকালে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন ‘দৌড়, ঝাপ, নিক্ষেপ’ গ্রন্থের লেখক ধারাবাহিকভাবে নয় বছরের প্রাদেশিক চ্যম্পিয়ন বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ কাজী আব্দুল আলীমের কাছ থেকে। তখন তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে মেজর হামিদ নামে একজন কোচ আসতেন, তাঁর কাছ থেকেও নতুন বিশেষ কিছু কৌশল রপ্ত করেন। এই বোনটির মেজো বোন মমতাজ বেগম বোনের খেলার সামগ্রী কাপড় চোপড় গুছিয়ে রাখতেন। ষ্টেডিয়ামে খাবার, পানি নিয়ে যেতেন। আর এক ছোট ভাই গোলাম আহমেদ বোনের পা ম্যাসেজ করে দিতেন। বোনের সাথে খেলা দেখতে ষ্টেডিয়ামে চলে যেতেন। এই পরিবারটি ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী দবিরউদ্দিন আহমেদের পরিবার। তৎকালীন সময়ে সরকারি ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ বর্তমান বদরুন্নেসা কলেজের রাজনৈতিক অস্থায়ী দপ্তর ছিল এই বাসার একটি কক্ষ।


১৯৬৭ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেগম বদরুন্নেসা কলেজে ভোটে দাড়াঁন। এই ভোটের পোষ্টার এই বাড়িতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীবৃন্দ লিখতেন। উক্ত ভোটে শেখ হাসিনা সহ- সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালে ছয় ভাইয়ের বোনটি ১২০০ ভোটের অধিক ভোট পেয়ে ছাত্রলীগ মনোনীত ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। এই বোনটির নাম সুলতানা আহমেদ। পারিবারিক নাম ছিল খুকী। বন্ধুমহলে খুকী নামে পরিচিত। বিয়ের পর যার নাম হয় সুলতানা কামাল।

 

তখনকার সময়ে সাইকেলে করে বই বিক্রি করতেন বিক্রেতারা। তাদের কাছ থেকে তিনি প্রতি সপ্তাহে দুই তিনটি বই কিনতেন। এক সময় দেখা গেল বইয়ের সংখ্যা তিনশতর কাছাকাছি। তিনি ভাল ছবি আঁকতে পারতেন। বন্ধুদের সাথে চিঠি বিনিময়ের সময় ছবি আঁকতেন। ভালো সাইকেল চালাতে পারতেন। ভীষণ বন্ধুবৎসল এই মানুষটি ১৯৫২ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বকশীবাজারে জন্মগ্রহণ করেন। নয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি অষ্টম। পৈতৃক বাড়ি রাজধানী ঢাকার মাতুয়াইলে। মৃধা বাড়ি নামে তাদের বাড়ি সমধিক পরিচিত। ১৯৬৭ সালে মুসলিম গার্লস স্কুল থেকে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ন হন। ১৯৬৯ সালে সরকারি ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমানে বদরুন্নেসা কলেজ), ঢাকা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ন হন। পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ছোট বোন সুলতানা কামালকে এই বিভাগে ভর্তির বিষয়ে বড় বোন খালেদা রহমানকে ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নাজমুল করিম পরামর্শ প্রদান করেন।

 

তিনি ছিলেন রোকেয়া হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থী । যার রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ছিল ৩৮৯ । স্নাতক পরীক্ষার রোল ছিল ৯৭৪। ১৯৬৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর স্নাতকের ক্লাশ শুরু করেন। ক্লাশ শেষে রোকেয়া হলের ঘাসে বসে গল্প করতেন সুলতানা কামাল এবং তার দুই সহপাঠী মাশুরা হোসেন,সাবিনা ইয়াসমিন এবং মেহরাজ জাহান। মাঝে মাঝে দুপুরের পর ক্লাশ থাকেেল তাদের বাসায় চলে যেতেন সহপাঠীবৃন্দ। বাড়ির আঙ্গিনায় বেড়ে উঠা পেয়ারা গাছ থেকে পেয়ারা খেতেন। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে ফিরতেন কলা ভবনে। তাঁর স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা শুরু হয় ২১ জুলাই ১৯৭৫ । ৭ আগষ্ট পর্যন্ত চলে লিখিত পরীক্ষা। ১৮ আগষ্ট, ১৯৭৫ ছিল মৌখিক পরীক্ষা। কিন্তু এর মধ্যে ঘটে যায় সুলতানা কামালের জীবনের নতুন অধ্যায়। তৎকালীন গণ পরিষদ সদস্য হেদায়েতুল ইসলাম সুলতানা কামালের বিয়ের প্রস্তাব দেন তাঁর পিতা দবিরউদ্দিন আহমেদকে। বিয়ের ব্যাপারে পাত্র শেখ কামাল প্রথমে নারাজ ছিলেন। তাঁর কথা হচ্ছে তাঁর সহপাঠী তাঁর কাছে ছোট বোনের মত। কি করে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হবেন? কিন্তু পাত্রের বোন শেখ রেহানা এবং ভাই শেখ জামাল বায়না ধরেন, সে যদি সুলতানাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করে তাহলে তাকে ভাবী ডাকবেনা। পরবর্তীতে শেখ কামাল সম্মতি দেন। এই পাত্রের বাবা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ১৪ এপ্রিল, ১৯৭৫ সালে সুলতানা কামালকে আশীর্বাদ করেন।

 

 

১৪ জুলাই সোমবার পারিবারিক সম্মতিতে অফিসার্স ক্লাব, ঢাকা মিন্টো রোডে বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিয়ের দিন দুই বান্ধবীর ভীষণ কান্না অবলোকন করে বঙ্গবন্ধু বলেন, সুলতানার সাথে দুই বন্ধুকে বাড়ি নিয়ে চলো। স্মৃতিচারণটি করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ট্রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশুরা হোসেন। অপরদিকে, আর এক সহপাঠী বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, তিনি, মাশুরা, মেহরাজ এবং সুলতানা একসাথে চারজন রিকশায় করে সেগুনবাগিচায় চাইনীজ খেতে যেতেন। তিনি এবং খুকী কলেজের সহপাঠী ছিলেন বলে সুলতানা কামালের সাথে সখ্যতা ছিল বেশী। তাছাড়া, কলেজ এবং বাড়ি একসাথে থাকায় বন্ধুর বাসায় যাওয়া আসা যাওয়া ছিল । বন্ধুর বাসার ছাদে বসে তেতুল, পেয়ারা খেতেন। তাছাড়া, এই চার বন্ধু ছিলেন এক মন এক আত্মা। সাবিনা ইয়াসমিন সঙ্গীত নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন বলে এই তিন বন্ধু তাকে লেখাপড়ায় সাহায্য করতেন। সহপাঠী মাশুরা হোসেন এবং সাবিনা ইয়াসমিনের স্মৃতিতে সুলতানা কামাল এখনো অম্লান। তাঁদের কথা হলো, সুলতানা কামালের শূন্যতা পূরণ হবার নয়। তিনি ছিলেন, সহজ সরল প্রাণবন্ত একজন মানুষ।

তিনি আন্তঃ বিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় পুরস্কার লাভ করার পর আর থেমে থাকেননি।। তিনি ১৯৬২-৬৩ সালে আন্তঃবিদ্যালয় এ্যাথলেট হিসেবে পুরস্কৃত হন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করে মোহামেডান ক্লাবের পক্ষে লং জাম্পে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য রোকয়ো হলের মাঠে, আজিমপুর গার্লস স্কুলে অনুশীলন করতেন। লাহোরে গিয়ে প্রায় ১০ দিন ছিলেন । এই সফরের সঙ্গী ছিলেন জাহানারা আহমেদ এই বিষয়ে স্মৃতিচারণ করেন । ১৬ বছর বয়সে ১৯৬৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তানে অলিম্পিকে পাকিস্তান লং জাম্পে ১৬ ফিট অতিক্রম করে রেকর্ডসহ স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৭০ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় হার্ডলসে স্বর্ণপদক লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের

 

প্রথম নারী ব্লু  সনদপত্রটি ১১/০৮/১৯৭০ইং সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষার পরিচালকের স্বাক্ষর সম্বলিত সনদপত্র অর্জন করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে রোকেয়া হল ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে ঢাকা ষ্টেডিয়ামে জাতীয় এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে তিনি ১০০ মিটার হার্ডলস, হাইজাম্পে এবং লং জাম্পে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং স্বর্ণপদক লাভ করেন। । ১৯৭৩ সালে অল ইন্ডিয়া রুরাল গেইমসে (নিখিল ভারত গ্রামীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা) রৌপ্য পদক জিতেন। এই পদক জয়ের পর বঙ্গবন্ধু তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কি পুরস্কার চান এই অর্জনে । উত্তরে সুলতানা বলেছিলেন, ক্রীড়া কমপ্লেক্স চান। বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি ১৯৭৩ এ শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় নির্বাচিত করে।

ধারাবাহিকভাবে ১৯৭৩, ১৯৭৪ এবং ১৯৭৫ সালে জাতীয় এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৭৫ সালে চট্টগ্রামে জাতীয় এ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় ১০০ মিটারে হার্ডলসে ১৭.৫ সেকেন্ডে সময় নিয়ে তিনি নতুন রেকর্ড গড়ে প্রথম হন।

সুলতানা কামাল একজন হাসিখুশী প্রাণোচ্ছল তরুণী ছিলেন। ছিলেন হাস্যোজ্জল বন্ধুবৎসল এবং অতিথিবৎসল। আত্মীয় স্বজনের সকলের বিপদে এগিয়ে যেতেন। ভীষণ পরোপকারী ছিলেন। এমনকি বাড়ির কাজের লোকদের বিশ্রাম নিতে বলতেন, তাদের কাজ তিনিই করে ফেলতেন। ভীষণ রুচিশীল, পরিপাটি গোছানো ছিলেন। ১৮ আগষ্ট ১৯৭৫ সালে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে মৌখিক পরীক্ষার তারিখ ছিল বন্ধু মাশুরা হোসেন, সাবিনা ইয়াসমিন এবং তাঁর একই দিনে ছিল পরীক্ষা। কিন্তু তাঁর তিনদিন পূর্বে ঘাতকের গুলিতে প্রাণ হারান তিনি। বাবা মা এই শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েন। মা ঘরের কাপড় পরেই ঢাকা মেডিকেলের মর্গে ছুটে যান । সেখানে মেয়েকে খুঁজে পাননি। সঠিকভাবে জানতে পারছিলেন না কি হয়েছে। ভাই এরশাদ মো. রফিক ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে তাকে যেতে দেয়া হয়নি। পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিব সৈয়দ হোসেনের বাড়ি গিয়ে জানতে পারেন সুলতানা কামাল নেই।

 

শোকাকুল মা রোগ শোকে জর্জরিত হয়ে পড়েন। এদিকে বাবা কন্যা হারানোর শোকে ৫৮ দিন পর ১৯৭৫ এর ১২ অক্টোবর পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। মা জেবুন্নেসা ঘরের চারিদিকে সন্তানের ছবি টাঙ্গিয়ে রেখে হারানোর যন্ত্রনা লাঘবের চেষ্টা করেন। এমনকি হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর তার হারিয়ে যাওয়া মেয়ে, মেয়ের জামাই, তাঁর স্বামী এবং বঙ্গবন্ধু ছবি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে যে কয়দিন ছিলেন সে কয়দিন ছবি টেবিলে রাখেন। তাঁর কথা ছিল, তিনি তাদের না দেখে বেঁচে থাকতে পারবেন না।

 

সন্তান শোকে শোকাকুল মা ২০০০ সালের ২৬ ডিসেন্বর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন । বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি বন্ধুদের সাথে এক রকমের পোশাক পরতেন। ১৩ আগষ্ট, ১৯৭৫ ছিল মায়ের সাথে ছিল তাঁর শেষ দেখা। ছোট ভাই গোলাম আহমেদ বলেন, আপা যাবার সময় বলে গিয়েছিলেন ১৫ তারিখ সকালে আসবেন। তিনি বলেন, ৭৪ এর দিকে তার বাবা ফার্ম থেকে ১০ টি মোরগ কিনেছিলেন, ৮ টি মোরগ জবাই করা হলেও দুইটি মোরগ জবাই করা হয়নি। মোরগ দুইটি সুলতানা কামালের স্বামী শেখ কামালকে দেখলেই ডাকত। তখন শেখ কামাল হাসতে হাসতে বলতেন, এই মোরগ দুইটি তার পেটেই যাবে। এই মোরগ দুটিকে রান্না করে ১৫ আগষ্ট শেখ কামালকে আপ্যায়ন করার কথা ছিল। কিন্তু বিধিবাম।

 

পরবর্তীকালে সুলতানা কামালের মা এই মোরগ দুটিকে জবাই করতে দেননি। মোরগ দুটি অসুস্থ হলে তার মা হাসপাতালে নিয়ে যেতেন এবং প্রাকৃতিকভাবে ১৯৭৯ সালে মৃত্যুবরণ করে। ষাট দশকের দিকে পুরস্কারগুলো সংরক্ষণ রাখার জন্য একটি কাঠের আলমারি তৈরি করা হয়েছিল। সেই আলমারিটিতে থরে থরে সাজানো রয়েছে বিভিন্ন পুরস্কার। সুলতানা কামালের দল ভারতে খেলতে গেলে পুরো খেলোয়াড় দলকে ইন্দিরা গান্ধী স্মারক দেন। সেই স্মারকটি এখনো সংরক্ষিত আছে। তিনি ২২ টি স্বর্ণপদক অর্জন করেন এবং ১০ এর অধিক রৌপ্য পদক লাভ করেন। ৫০ এর অধিক সনদপত্র অর্জন করেন। তাদের বাসার বসার ঘরে সুলতানা কামালের বিশাল চিত্রকর্ম প্রমাণ করে বোনের প্রতি ভাইদের ভালবাসার নিদর্শন। তৎকালীন সময়ে বেশ কয়েকবার সাপ্তাহিক বিচিত্রার প্রচ্ছদে সুলতানা কামালের ছবি এবং প্রতিবেদন ছাপা হয়। তিনি বাংলাদেশ বেতারে খেলা সংক্রান্ত সাক্ষাৎকার এবং অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে যে সম্মানী পেতেন সেটি জমা হতো ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের জনতা ব্যাংক টিএসসি শাখায়। আজ পর্যন্ত সে সম্মানির অর্থগুলো ভাইয়েরা তুলেননি।

 

১৯৭৩ সালে বার্লিনে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিশ্ব যুব সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে গেলে ফেরার সময় এক জোড়া জুতো নিয়ে আসেন। সেই জুতো এখনো সংরক্ষিত আছে। সংরক্ষিত আছে তাঁর ব্যবহৃত সোয়েটার এবং ১৩ জুলাই,১৯৭৫ ইং তারিখ বাবার বাড়ীতে পরিধান করা ফতুয়া। সুলতানা কামালের গল্পের বইয়ে তাঁর নিখুঁত হাতের লেখা দেখলেই বুঝা যায় তিনি কতটা গুছানো ছিলেন। তিনি বেশীরভাগ সময় শরৎচন্দ্রের উপন্যাস পড়তেন। সংরক্ষিত আছে বিয়ের আমন্ত্রণ কার্ড এবং গায়ে হলুদের ডালার লাল ঝালর এবং পাসপোর্ট। বোনের প্রতি ভাইদের ভালাবাসার অকৃত্রিম নিদর্শন, যা বিরল। তাঁর ছোট ভাই এখনো মনে করেন, সে আসবে। কারণ তার সাথে শেষ কথা ছিল, আমি ১৫ তারিখ আসতেছি। হাসিখুশীমাখা পরিবারটি বাস করত ঢাকার বকশীবাজারের ৮ নম্বর সড়কে। যে জায়গাটিতে তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন, সে জায়গাটিতে স্থাপিত হয়েছে সুলতানা কামাল অডিটোরিয়াম। ভাইয়েরা পিতার নামে দবিরউদ্দিন মৃধা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন। যে ফাউন্ডেশন থেকে প্রতি বছর সুলতানা কামাল স্মৃতি টূর্নামেন্টে ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

 

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ক্রীড়া ও খেলাধূলার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা পুরস্কার (২০০০) এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (১৯৯৭) সম্মাননা প্রদান করে। ঢাকার ধানমন্ডিতে স্থাপিত হয়েছে সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স। তিনি বেঁচে থাকলে ক্রীড়াক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে একজন অনুসরণীয় ক্রীড়াবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতেন এতে কোন সন্দেহ নেই। এমন জাতীয় সম্পদকে অসময়ে হারানো দেশের জন্য বেদনার। ‘সুলতানা’ যার নামের অর্থ সম্রাজ্ঞী ,ক্ষমতাবান। সত্যি নামের সাথে মিলে যায় তার জীবন।

 

 

ভাইদের কাছে এখনো তিনি সম্রাজ্ঞী হয়ে আছেন। এই কৃতি খেলোয়াড়ের সকল স্মৃতি সংরক্ষণ এখন সময়ের দাবী হয়ে দাড়িয়েছে। কেননা, এই নিদর্শন হারিয়ে গেলে একটি ইতিহাস হারিয়ে যাবে। নারী খেলোয়াড়দের জন্য সুলতানা কামাল এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তাঁর সনদপত্র, পুরষ্কার সকল কিছু জাতীয় জাদুঘর অথবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট জাদুঘরে সংরক্ষিত হলে অনাগত প্রজন্মের নিকট একটি প্রেরণা এবং শিক্ষার উৎস হয়ে দাড়াবে। সুলতানা কামাল পরিবারের সম্পদ নয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা জাতির সম্পদ। এই সম্পদ ক্রীড়া জগতে একজন ক্ষমতাশালী ক্রীড়াবিদ হিসেবে আমরণ প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। সুলতানা কামালের শূন্যতা পূরণ হবার নয়। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে একদল বিপথগামী সেনা সদস্য। সেই সাথে সকলের সাথে প্রাণ হারান ২২ বছর আটমাস বয়সী বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল। ঢাকার বনানী কবরস্থানে ১৫ আগষ্টের শহীদদের সাথে তিনি চিরতরে শায়িত আছেন। একজন বোনের বিদায়ে পুরো পরিবার স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। জাতি হারিয়েছে একটি নক্ষত্রকে। বিশিষ্ট কবি ও নাট্যকার মুহাম্মদ জালাল উদ্দিন নলুয়া’র এক বোন খুকী নামে ছিলেন। যিনি অকালে প্রাণ হারান।

 

তিনি তাঁর বোন খুকীকে নিয়ে ‘অভিমানী’ শিরোনামে একটি কবিতা লিখেছিলেন। যে কবিতাটি মিলে যায় সুলতানা কামালের ভাইদের দুঃখের সাথে। যেন কবিতাটি লেখা হয়েছে সুলতানা কামাল খুকীকে নিয়েই। কবিতাটির শেষ চারটি লাইন ছিল এরকম- খুকীবোন বলে নাম ধরে খুঁজলাম কতো/অভিমানী এলে না শুনলে না, কাদঁলাম যতো/লক্ষ্যা নদীর কান্না তোমার বুকে/সাগরের ব্যথা আমাদের চোখেমুখে।’ হ্যা,খুকী বোনের জন্য ভাইদের দুঃখ সাগরের ব্যথার মতই। শুরু করেছিলাম একটি গ্রামোফোনের গল্প দিয়ে। শেষ ও করব তার গল্প দিয়ে। তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠে সবচেয়ে বেশী শুনতেন যে গানটি তার কয়েকটি চরণ দিয়ে শেষ করব লেখাটি ,‘ ‘রানার ! রানার! ভোর তো হয়েছে - আকাশ হয়েছে লাল/আলোর স্পর্শে কেটে যাবে,কবে এই দুঃখের কাল’? দুঃখের কাল শেষ হউক। সুলতানা কামালের ভাই বোনেরা তাদের বোন হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করুক এই প্রার্থনা। সুলতানা কামালের পরিবারের সকল ঘটনার স্বাক্ষী ৭৫ বছরের বেশী বয়সী কাঠগোলাপ গাছটিতে কাঠগোলাপ এখনো তাদের আঙ্গিনায় ফোটে। এই ফুল যেন কাঠগোলাপ নয়। যেন সুলতানা কামাল ফুটে থেকে সুভাষ ছড়ায় । ৬৯ তম জন্মদিনে অফুরন্ত শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা ক্রীড়া জগতের কিংবদন্তী সুলতানা কামাল আপনাকে।

 

তথ্যসূত্রঃ
১. ১৫ আগষ্ট,১৯৭৫, শেখ হাসিনা এবং বেবী মওদুদ সম্পাদিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট,২০১৯।
২. সুলতানা কামালের মেজো ভাই জাহাঙ্গীর মোঃ জসিম, বড় বোন খালেদা রহমান,মমতাজ বেগম এবং ছোট ভাই গোলাম আহমেদ মৃধার সাক্ষাৎকার,১৩.০৯.২০২১ইং
৩. সুলতানা কামালের সহপাঠী,মাশুরা হোসেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাষ্টের সাক্ষাৎকার,১১.০৯.২০২১ইং
৪. সুলতানা কামালের সহপাঠী জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সঙ্গীত শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের সাক্ষাৎকার,১৪.৯.২০২১ইং
৫. সুলতানা কামালের খেলার সঙ্গী জাহানারা আহমেদের সাক্ষাৎকার,১৪.০৯.২০২১ইং

 

লেখক :  অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Header Ad

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

ছবি: সংগৃহীত

দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুন। কাজের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও বেশ সরব তিনি। কথা বলেন নানা ইস্যু নিয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনেও বিভিন্ন সময় নিজের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যেও বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। এবার এমনি একটি বার্তায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগনের আস্থার বিষয়ে আক্ষেপ জানালেন এই নির্মাতা।

বুধবার (২০ নভেম্বর) আশফাক নিপুন তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বস্তরের ছাত্র এবং সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল, বাসায় বসে বসে দোয়া করেছিল, যার যা সামর্থ্য দিয়ে সহায়তা করেছিল। কারণ, তারা দেখেছিল লড়াইটা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসক বনাম সাধারণ ছাত্র-জনতার। এটাও অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই যে এই আন্দোলন বেগবান করতে বিরোধী সকল দলের কর্মীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের সংগ্রামও গত দেড় দশকের। কিন্তু এটা যদি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার লড়াই হতো তাহলে সাধারণ মানুষ এই লড়াই থেকে দূরে থাকত। সেই প্রমাণ বিগত ১৫ বছরে আছে।

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ এখনো দেশের কোনো রাজনৈতিক দলকেই পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে না। এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা মেনে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত কীভাবে সাধারণ জনগণের ভেতর নিজের দলের প্রতি আস্থা তৈরি করা যায় সেই বিষয়ে নিরলস কাজ করা। এই আস্থা ক্ষমতায় গিয়ে অর্জন করা সম্ভব না। কারণ, সাধারণ মানুষ আজীবন এস্টাবলিশমেন্টের বিপক্ষে। এই আস্থা অর্জন করতে হয় ক্ষমতা বলয়ের বাইরে থেকেই।

নিপুন আরও লিখেন, অরাজনৈতিক সরকার দিয়ে দীর্ঘদিন দেশ চালানো যেমন কাজের কথা না ঠিক তেমনি রাজনৈতিক সরকার হতে চাওয়া সকল রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝা উচিত মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে সকল প্রকার পূর্বানুমান (যেমন- বর্ষাকালে আন্দোলন হয় না, নির্বাচনের আগেই কেবল জোরেশোরে আন্দোলন হয়, ঘোষণা দিয়ে বিরোধী সকল পক্ষ আন্দোলনে শামিল না হলে সফল হয় না) অগ্রাহ্য করেই। সেটা সম্ভব হয়েছে সাধারণ মানুষের ন্যায্যতার আকাঙ্ক্ষা থেকেই।

সবশেষ এই নির্মাতা লিখেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষার দুই পয়সার দাম দেন নাই। সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা আর দেশপ্রেমকে পুঁজি করে অরাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক যারাই রাজনীতি রাজনীতি খেলতে চাইবে, তাদের দশাও কোন একসময় যেন পলাতক শেখ হাসিনার মতো না হয়, সেই বিষয় নিশ্চিত করতে হবে তাদেরকেই।

Header Ad

‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা

ফাইল ছবি

জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছি। এ নতুন দেশে আমাদের দায়িত্ব সকল মানুষকে এক বৃহত্তর পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ করা। কেউ কারো উপরে না, আবার কেউ কারো নিচেও না, এই ধারণা আমরা আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার সাহস ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে সম্প্রতি আমরা অর্জন করেছি, সেটাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ, আহত এবং জীবিত ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই। যে সুযোগ তারা আমাদের দিয়েছে, তার মাধ্যমে আমাদের দেশকে পৃথিবীর সামনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশে পরিণত করতে আমরা শপথ নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করে যারা দেশ গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে জাতি তাদের সারা জীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

বক্তব্য শেষে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

Header Ad

নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু

ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁ শহরে যানযট নিরসন ও শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক-শ্রমিকদের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। এতে শহরে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) অভিযানের উদ্বোধন করেন নওগাঁ পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক টি.এম.এ মমিন। এ সময় নওগাঁ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জিয়া উদ্দিন, নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন, নওগাঁ জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আফজাল হোসেন ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযান শুরুর পর থেকেই শহরের বরুনকান্দি, মশরপুর, তাজের মোড় ও কালীতলাসহ মোট ৮ টি প্রবেশদ্বারে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। চেক পোষ্টগুলোতে ২ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন ছাত্র সমন্বয়ক, ৪ জন রোভার স্কাউট সদস্য ও ২ জন রিকশা মালিক শ্রমিক প্রতিনিধিসহ মোট ১২ জন করে কাজ করছেন।

পৌর প্রশাসক জানান, নওগাঁ শহরে বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ৪ হাজার। কিন্তু প্রতিদিন পার্শবতী বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১০ হাজার রিকশা, ব্যাটারী চালিত অটো রিকশা ও ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করে। এতে তীব্র যানযট ও জন মানুষের ভোগান্তি তৈরী হয়। এই দূর্ভোগ লাঘোবে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল ও পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিনের দিক নির্দেশনায় যানবাহন নিয়ন্ত্রনসহ বিশেষ অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। বৈধ চালকদের চিহ্নিত করতে তাদের মাঝে পরিধেয় বিশেষ ধরনের জ্যাকেট প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

নওগাঁর পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিন বলেন, নওগাঁ শহরের যানযট দীর্ঘদিনের সমস্যা। পরিকল্পিত ভাবে এই সমস্যা দূর করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের উদ্যোগে পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের সমন্বয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন ষ্টেক হোল্ডারদের পরামর্শ নিয়ে একটি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, অভিযান সফল ভাবে বাস্তবায়ন হলে শহরে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। জনগন এর সুফল পাবেন। সকলকে এই কার্যক্রমে সহযোগিতা প্রদানের আহবান জানান তিনি।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’
‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা
নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু
২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ৫ জনকে রোবটিক হাত উপহার
সেনাকুঞ্জের পথে খালেদা জিয়া
সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়ব: জেড আই খান পান্না
নির্বাচন কমিশন গঠন, সিইসি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দীন
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল: ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষ ছিলেন ক্যামেরুনের
জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা সেই শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার
মিরপুর ও মহাখালীতে অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া
‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’, এমন কথা বলেননি ট্রাম্প
লেবাননে ৮ শতাধিক ইসরায়েলি সেনা নিহত
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরল ২৪ বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত
সাবেক এমপি শাহজাহান ওমরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর
১২ বছর পর সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া