শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৬ পৌষ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

সামাজিক উন্নয়নে ধর্মীয় পর্যটনের প্রভাব

তীর্থযাত্রার তাত্ত্বিকতার সঙ্গে ধর্মীয় পর্যটন ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। ধর্মীয় পর্যটনে ধর্মীয় অনুশীলনকে একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুশীলনের মাধ্যমে মানুষ বিশ্বকে অনুভব করে ও বুঝতে সক্ষম হয়। ধর্ম এই ক্ষেত্রে একটি মৌলিক উপাদান হিসেবে মানুষের সর্বজনীন অনুভবকে চেতনায় রূপ দেয়। সমকালীন বিবেকমান মানুষেরা মনে করেন যে, নির্দিষ্ট ধর্ম অনুশীলনের ক্ষেত্র সমাজে বৈচিত্র্য ও পরমত সহিষ্ণুতার সৃষ্টি করে। সুতরাং, ধর্ম পর্যটনসহ সমাজের নানাবিধ বিষয়কে যুক্ত করে। সংস্কৃতি ও ধর্মের সম্পর্ক সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তির প্রেরণা ও অনুশীলনের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। তাই ধর্মের সমাজবিজ্ঞান মানুষ ও সংস্কৃতির কাঠামোগত রূপ দেয়। ধর্মের নিয়ম-কানুন, আচার-অনুষ্ঠান সমাজে শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থা তৈরি করে।

পর্যটনের মাধ্যমে ধর্মীয় এলাকার সাংস্কৃতিক সংরক্ষণের মৌলিক বিষয়গুলি উদ্ভাবন করে যা সমাজে প্রয়োগ করা যেতে পারে। সংস্কৃতির উপর যেমন সমাজতাত্ত্বিক ধারণার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়, তেমনি ধর্মীয় প্রভাবও পরিলক্ষিত হয়। অনেকে সাংস্কৃতিক যুক্তি, গতিশীলতা ও প্রগতিশীল মূল্যবোধকে ধর্মীয় সংস্কৃতি বলে মনে করেন। যাই হোক, সংস্কৃতি ও ধর্ম নিজেদের মধ্যে অবিচ্ছিন্নভাবে জড়িয়ে রয়েছে। ধর্মীয় এলাকার শান্তির উপাদানগুলিকে শক্তিশালী করতে হলে পর্যটনকে সঙ্গে নিতে হবে। কারণ নান্দনিকতা ও নীতিশাস্ত্রের সঙ্গে, ধমীর্য় সংস্কৃতিকে যুক্ত করতে হলে নানা ধর্মের নানা মতের পর্যটকরূপী মানুষের সমন্বিত অংশগ্রহণ দরকার। ধর্মের মধ্যে পর্যটনের অবস্থান ধর্মের সংস্কৃতির রক্ষক হিসাবে কাজ করবে।

সংস্কৃতি ও পর্যটনের প্রতি ধর্মের মনোভাব
নির্দিষ্ট ধর্মীয় গোষ্ঠীর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে বলে গবেষকরা নানাভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠান ইতিবাচক বলে অনেক গবেষক তা প্রমাণও করেছেন। উন্নত গুণমান, উন্নত জীবন, কল্যাণ, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, বৈবাহিক সন্তুষ্টি, টেকসই জীবন ও ইতিবাচক কর্মক্ষমতা ইত্যাদি মূলত সব ধর্মের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্ম প্রচেষ্টা। এইজন্য মানুষ ধর্ম ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে তীব্রভাবে ধার্মিক হয়ে ওঠে। সমাজে ধর্ম কেবল একটি বিশ্বাস ব্যবস্থা নয়। বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে উপলব্ধি ও বিশ্বাসের ভিত্তিও বটে। ধর্মবিশ্বাস ও সংস্কৃতি বিশেষত মানসিক স্বাস্থ্যসেবার নৈতিক উদ্দেশ্য এবং ব্যক্তিগত শক্তির সম্ভাব্য উৎস হিসাবে সামাজিকভাবে স্বীকৃত। তাই ধর্মীয় অনুশীলনের মাত্রা ও জীবনের সন্তুষ্টির মধ্যে একটি নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান, যার জন্য ধার্মিকরা জীবনে অধিক সন্তুষ্ট থাকেন।

ভ্রমণ ও আতিথেয়তা শিল্পের মতো ধর্ম পণ্য ও পরিষেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত। যেমন হালাল খাদ্য ধর্মীয় উপলব্ধি ও জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। পর্যটনের প্রতি ধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি সম্প্রদাসমূহের মধ্যে ধর্মীয় মনোভাবের প্রভাব সৃষ্টি করে। সামাজিক ও গোষ্ঠীগত চাহিদা পর্যটন থেকে অর্থ উপার্জনের পথ দেখায়, যা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মনোভাবের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। কিছু সামাজিক তত্ত্ব ও অনুশীলন থেকে বুঝা যায় যে, ধর্মীয় গোষ্ঠী যত বেশি চরম আচরণ করে, বাহ্যিকভাবে তত বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এই আচরণ পর্যটনের প্রতি কম ইতিবাচক হিসাবে পরিগণিত। যেহেতু পর্যটন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আতিথেয়তার উপর নির্ভর করে, তাই পর্যটনের প্রতি স্থানীয় জনগণের সর্বজনীন ধর্মীয় উপলব্ধি একটি বড় বিষয়। সেবাদানের বিনিময়ে অধিক অর্থ আদায়, অপরাধ, পতিতাবৃত্তি কিংবা মাদক সরবরাহ ইত্যাদি ধর্মীয় নৈতিকতা বর্জিত। ফলে পর্যটন গন্তব্যে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আরো নেতিবাচক দিকগুলি হল আবাসনের দাম বৃদ্ধি, পারস্পরিক বিশ্বাসের মধ্যে দ্ব›দ্ব ও জীবনযাত্রার মান হ্রাস ইত্যাদি। ধর্মের টেকসই নীতি, আচার-অনুষ্ঠান ও ধর্মের সর্বজনীনতার প্রকাশ ইত্যাদি পর্যটনের বহুমুখী রূপকে সমন্বয়ের মাধ্যমে পর্যটনের প্রতি ধর্মের মনোভাবকে প্রকাশ করে।

ধর্মীয় পর্যটন বনাম সাংস্কৃতিক পর্যটন
ধর্মীয় পর্যটন বলতে নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারীগণ কর্তৃক ধর্মীয় বিবেচনায় পবিত্র স্থানসমূহ পরিদর্শনকে বুঝায়। এই পর্যটনের মধ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সকল ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণ গ্রন্থিত। ফলে অনুসারীরা এই বিশ্বাস দ্বারা অনুপ্রাণিত হন যে, এই জাতীয় পর্যটন উপাসনার পথকে প্রশস্ত করে। গবেষকরা পর্যটনের জন্য ধর্মীয় স্থানগুলির প্রমোশন ও সম্প্রসারণকে বিশেষ প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন। এইজন্য বর্তমান ও আদি উপাসনাস্থলগুলি অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বহন করে। ধর্মীয পর্যটনের স্থানগুলি বুঝাপড়ার মাধ্যমে জ্ঞানের দিকে পরিচালিত করতে হবে, যা আধ্যাত্মিক ভাবধারাকে শক্তিশালী করবে এবং বিশ্বাস ব্যবস্থার শক্তির ভিত্তিকে সমাজে প্রগাঢ় করবে। তাই পর্যটন পণ্যগুলিকে ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক গন্তব্যগুলিতে প্রচার ও ভৌত প্রকাশ একান্ত জরুরি।

অন্যদিকে, সাংস্কৃতিক পর্যটন হলো এমন এক ধরনের পর্যটন যেখানে দর্শনার্থীরা পর্যটন গন্তব্যে মূর্ত ও বিমূর্ত সাংস্কৃতিক আকর্ষণ শিখতে, আবিষ্কার করতে, অভিজ্ঞতা লাভ করতে এবং ধারণ করতে উদ্বুদ্ধ হন। জাতিসংঘ বিশ্ব পর্যটন সংস্থার সংজ্ঞা অনুসারে, সাংস্কৃতিক পর্যটন হলো মূলত সাংস্কৃতিক অনুপ্রেরণার জন্য ব্যক্তির গমনাগমন অর্থাৎ স্মৃতিস্তম্ভ পরিদর্শন, শিক্ষা সফর, পারফর্মিং আর্টস, সাংস্কৃতিক ভ্রমণ, উৎসব ভ্রমণ এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদানকে বুঝায়। প্রকৃতি, লোককাহিনী বা শিল্প ইত্যাদি সাংস্কৃতিক পর্যটনের প্রধান বিষয়। উল্লেখ্য যে, ধর্মীয় পর্যটন বা তীর্থযাত্রাও এক ধরনের সাংস্কৃতিক পর্যটন। এই পর্যটন লৌকিক ও সামাজিক আচার ধর্মীয় অনুশীলনের মধ্যে প্রবেশ করে প্রগতিশীল নতুন চেহারা তৈরি করে। যার জন্য আমরা বলি, ধর্ম যার যার উৎসব সবার।

বাংলাদেশে ধর্ম, সংস্কৃতি, জাতিগত ও লোককাহিনীভিত্তিক নানা ধরনের উৎসব রয়েছে। কিছু সাধারণ উৎসব, যা সারা দেশের মানুষ সম্মিলিতভাবে উদযাপন করে। এদের মধ্যে জাতীয়, ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যগত উৎসবগুলো প্রধান। অন্যদিকে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক উৎসব যেমন সাহিত্য, সংগীত, শিল্প, নাটক, লোকনৃত্য, যাত্রা, ঐতিহ্যবাহী পরিবহন, পোশাক ইত্যাদি আছে। যেগুলো সংস্কৃতির প্রধান উপাদান সম্বলিত যা, দেশের সকল ধর্মের মানুষেরা সমানভাবে উপভোগ করে। এভাবেই একটি দেশে সাংস্কৃতিক পর্যটন উৎকর্ষ লাভ করে।

পর্যটন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সকল উপাদানকে সর্বোত্তম একটি উৎকর্ষী বিন্দুকে নিয়ে যেতে পারে। যা নতুন জীবনদর্শন ও জীবনধারা গড়ে তুলতে সক্ষম। ধর্মীয় পর্যটন ও তীর্থযাত্রা ইত্যাদি অনুশীলন সামাজিক-সাংস্কৃতিক বাস্তুসংরক্ষণের জন্য অত্যন্তÍ প্রয়োজনীয় বিষয়। মানুষ সামাজিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ধর্ম ও জীবনের উৎকর্ষতাকে একটি সমসত্ত্ব বিন্দুতে পৌঁছে দিতে পারে।

বাংলাদেশের ধর্মীয় পর্যটন এলাকা
বাংলাদেশে অধিকাংশ মানুষই মুসলমান। তবে হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ এখানে অন্য তিনটি মহান ধর্মও রয়েছে। সব ধর্মেরই রয়েছে তাদের নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাস, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব। কিন্তু তারা সবসময় অন্য ধর্মের আচার-অনুষ্ঠানকে সম্মান করে। এটি বাংলাদেশের একটি অনন্য সাসংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য।

এখানে সবচেয়ে ব্যাপক ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রয়েছে ইসলাম ধর্মের। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মের অনেক ধর্মীয় এলাকা রয়েছে। তবে অধিকাংশই ইসলামি স্থাপনাসমৃদ্ধ যেমন মসজিদ, মাদ্রাসা ও মাজার ইত্যাদি। বিডিনিউজ ২৪ ডটকম ১ মার্চ ২০১১ তারিখে বলছে যে, বাংলাদেশে মোট ২,৫০,৩৯৯টি মসজিদ আছে। মন্দির হলো হিন্দু ধর্মীয় অনুশীলন ও ভক্তির জন্য নির্মিত ভবন বা স্থাপনা। ডেভিড ম্যাককাচিওন (১২ আগস্ট ১৯৩০ - ১২ জানুয়ারি ১৯৭২) এর মতে, বাংলাদেশে ৪ (চার) ধরনের মন্দির আছে। এরা ঐতিহ্যবাহী নির্মানশৈলী সমৃদ্ধ। এই শৈলী ২ (দুই) ধরণের: রেখা ও পিধা দেউল। উইকিপিডিয়া বলছে, এই দেশে ১৪৪ টি বিশিষ্ট হিন্দু মন্দির আছে। এ ছাড়াও মোট ৫১ (একান্ন)টি শক্তিপীঠের মধ্যে ৬ (ছয়)টি শক্তিপীঠ বাংলাদেশে অবস্থিত। এইসব শক্তিপীঠের সঙ্গে রয়েছে ২ (দুই)টি করে গুরুত্বপূর্ণ মন্দির। বৌদ্ধধর্ম বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম দর্শন ধর্ম। একাদশ শতাব্দীতে এই ভূখণ্ডে বর্তমান নওগাঁ জেলায় প্রথম বৌদ্ধধর্ম যাত্রা শুরু করে। এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ মন্দির, বিহার, স্তুপা, ওয়াট ও গোম্পা ইত্যাদি। ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্টাইন উভয় ধরণের খ্রিস্টানের বাস বাংলাদেশে। এখানে রয়েছে তাঁদের বেশ কিছু গির্জা এবং ১৬টি খ্রিস্টান ধর্মতাত্ত্বিক প্রতিষ্ঠান।

ধর্মীয় পর্যটন উন্নয়নের ধরণ
সাধারণত তীর্থযাত্রা ও পর্যটনের মধ্যে জটিল সম্পর্কের সারাংশ দিয়ে ধর্মীয় পর্যটনের প্রবর্তন ঘটে। ধর্মীয় পর্যটনের মধ্যে রয়েছে আধ্যাত্মিক স্থান ও সংশ্লিষ্ট পরিষেবাগুলির পরিসর, যা ধর্মনিরপেক্ষ এবং ধর্মীয় উভয় কারণেই পরিদর্শন করা হয়। বর্তমান সময়ে ধর্মীয় পর্যটনকে একটি অর্থনৈতিক অনুষঙ্গ হিসাবে বিশ্লেষণ করা হয়। ধর্ম ও পর্যটন উভয়ই সামাজিক প্রক্রিয়ার অংশ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। যা সমাজে একটি প্রধান অবদানকারী বিষয় হিসেবে পরিগণিত। সুতরাং ধর্মকে তার সমস্ত অর্থ ও বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে পর্যটন নামক বাজারযোগ্য পণ্য বিকাশে এগিয়ে আসতে হবে। ভোক্তাগণ তীর্থযাত্রী ও অন্যান্য পর্যটক হিসেবে সমাজে স্থান দখল করে আছে। ধর্মীয় পর্যটন বিকাশের এই ধরণটি বৈজ্ঞানিকভাবে বর্তমান বিশ্বে বহুল আলোচিত ও সমাদৃত।

স্থানীয় সম্প্রদায়ের সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রভাব ও অবদানের কারণে ধর্মীয় পর্যটনকে পর্যটনের একটি নতুন রূপ হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। স্মিথ (১৯৯২) নামক একজন গবেষক উল্লেখ করেছেন যে, পর্যটক ও তীর্থযাত্রী-পর্যটকদের জন্য ২ (দুটি) সমান্তরাল ও বিনিময়যোগ্য পথ পুনঃসংজ্ঞায়িত করা উচিত। যার মধ্যে একটি হলো ধর্মনিরপেক্ষ জ্ঞান-ভিত্তিক পথ; অন্যটি বিশ্বাস দ্বারা নির্মিত পবিত্র পথ। তাহলে বিশ্বব্যাপী প্রতিটি মানুষ ব্যক্তিগত প্রয়োজন বা অনুপ্রেরণার ভিত্তিতে সময়, স্থান ও সাংস্কৃতিক পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট পথে ভ্রমণ করতে পারবেন বা ইচ্ছামতো পথ পরিবর্তন করতে পারবেন। তিনি উপসংহারে বলেছেন যে, পর্যটক ও তীর্থযাত্রীরা একই অবকাঠামো ভাগ করে নিতে চায়। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে ধর্মীয় পর্যটনের দ্রুত বিকাশ ও বৃদ্ধির কারণে ভবিষ্যতের জন্য নানাবিধ বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অনেকেই ধর্মীয় পর্যটকদের বহুবিধ অবয়বের কথা ভাবতে শুরু করেছেন। যেমন আধ্যাত্মিক পর্যটক, নতুন প্রজন্মের আধ্যাত্মিক পর্যটক, সাইবার ধর্মীয় পর্যটক ইত্যাদি। বিশেষত ইন্টারনেট ব্যবহার করে সাইবার ধর্মীয় পর্যটকরা ভিডিওর মাধ্যমে নিয়মিতভাবে কিছু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান দেখতে ও তাতে অংশগ্রহণ করতে পারেন। ধর্মীয় পর্যটনের এইসব নতুন নতুন পর্যটকদের জন্য উপযোগী সেবাদান গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।

পর্যটনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ
ধর্ম হলো বিশ্বাস, দৃষ্টিভঙ্গি ও অনুশীলনের সমষ্টি। সৃষ্টিকর্তার উপাসনা বা অলৌকিক শক্তি, অঙ্গীকার ও ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি নিষ্ঠাই ধর্ম পালন। কিন্তু ধর্মের সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি হলো পবিত্র বা আধ্যাত্মিক উদ্বেগের সঙ্গে বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও অনুশীলনের উপস্থাপনা । পর্যটন এই সকল পবিত্র উপাদানের সঙ্গে সম্পর্কিত বিশ্বাস ও অনুশীলনের পদ্ধতিকে একীভূত করতে পারে। তাই পর্যটন কার্যক্রম সমস্ত ধর্ম বিশ্বাসী মানুষ দ্বারা জৈবিক ও আধ্যাত্মিক সম্পদ সংরক্ষণ করতে সক্ষম। মানুষ আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় পর্যটন অনুশীলন করে সামাজিক শান্তি ও সম্প্রীতির দূত হিসেবে নিজেদের স্থান তৈরি করতে পারে। এই পদ্ধতি মানবজাতি ও সভ্যতাকে বাঁচাতে পারে। ধর্মীয় পর্যটনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ সমাজে একটি গভীর ধারণা সৃষ্টি করতে পারে।

ধর্মীয় বিশ্বাস একদিকে ধর্মীয় পর্যটনে ভূমিকা পালন করে, অন্যদিকে পর্যটকরা যখন ধর্মীয় স্থানগুলি পরিদর্শনকালে প্রায় তীর্থযাত্রীদের মতো আচরণ করে। এই ধরণের পর্যটনের মাধ্যমে ধর্ম ও সাংস্কৃতিক পণ্য ও আচরণ প্রদর্শিত হয়, যা চিন্তা ও চেতনার সমৃদ্ধি ঘটায়। পবিত্র স্থানের চারপাশে অবস্থিত সাংস্কৃতিক পর্যটনের এটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

পৃথিবীতে এখন বিশ্বায়নের সাংস্কৃতিক মাত্রা প্রবল। তাই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ধর্মীয় পর্যটনের গভীর ধারণা প্রয়োজন। ধর্মীয় পর্যটন একটি অনন্য ধরণের জ্ঞানীয় পর্যটন হিসাবে কাজ করে। এই পর্যটন যাত্রীদের সন্তুষ্টি, তাদের ধর্মীয় সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়া ইত্যাদির মাধ্যমে ধর্মীয় সম্পদের সুরক্ষা এবং স্যুভেনির সংরক্ষণের মাধ্যমে ধর্মীয় পবিত্র স্মৃতি সংরক্ষণে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

ধর্মীয় পর্যটনের ক্ষেত্রে একাধিক অনুপ্রেরণা সমানভাবে কাজ করে ও ভোক্তা সংস্কৃতির চাহিদা পূরণ করে। পাশাপাশি ধর্মীয় পর্যটন নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ে সাহায্য করে। সাংস্কৃতিক চাহিদাগুলি বিনোদনের সঙ্গে জড়িত, ধর্মীয় স্থান পরিদর্শনের মাধ্যমে জ্ঞান বৃদ্ধি হয় ও তা সক্রিয় মানসিক শিথিলতার উৎস হিসেবে কাজ করে। ধর্ম সমাজে শান্তি প্রচারণার অন্যতম নিয়ামক বলে সমাজবিজ্ঞানীগণ মনে করেন। ধর্মনিরপেক্ষতার মাধ্যমে সকল ধর্ম নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে সমাজকে একত্রিত করে। পর্যটন এখানে সবচেয়ে বড় অনুঘটক। মানুষের মধ্যে ধর্মীয় সহনশীলতা অন্যের বিশ্বাসকে গ্রহণ করছে। এই বিশ্বাস নিজস্ব সংস্কৃতির মাধ্যমে সর্বত্র সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। ধর্মীয় এলাকাকে পর্যটন গন্তব্যে পরিণত করা ধর্মীয় পর্যটনের একটি চূড়ান্ত কাজ হতে পারে, যা ধর্ম ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে সমান ভূমিকা রাখতে সক্ষম । ধর্মীয় পর্যটন ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা হ্রাস করবে, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করবে এবং বৈষম্যহীন বিশ্বাস ও ঐতিহ্য দিয়ে ধর্মীয় স্বাধীনতাকে সংরক্ষণ করবে। ধর্ম সমাজের এমন একটি শক্তি, যা অর্থনীতি, সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য পর্যটনকে ব্যবহার করতে পারে। ধর্মীয় পর্যটন হতে পারে আর্থ-সামাজিক বাস্তুশাস্ত্রের শক্তিঘর যা শেষ পর্যন্ত ভবিষ্যতের মানবজাতিকে রক্ষা করবে।

এসএন

Header Ad
Header Ad

সত্যি কি থাপ্পড় মেরেছিলেন শাহরুখ, ৯ বছর পর মুখ খুললেন হানি সিং

শাহরুখ খান ও হানি সিং। ছবি: সংগৃহীত

কয়েক বছর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ঘটনায় দাবি করা হয়েছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি অনুষ্ঠানের সময় হোটেল রুমে পাঞ্জাবি সংগীতশিল্পী হানি সিংয়ের ওপর চড়াও হয়েছিলেন বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খান।

সেই সময় গুঞ্জন ছিল, শাহরুখ খান এত জোরে চড় মারেন যে হানি সিং গুরুতর আহত হন। এমনকি তাঁর কপাল ফেটে রক্তক্ষরণ হয়, এবং সে কারণেই তিনি সেদিন মঞ্চে পারফর্ম করতে পারেননি। বলিউড মহলে ঘটনাটি নিয়ে তখন বেশ আলোচনা হয়েছিল।

তবে, দীর্ঘ ৯ বছর পর, অবশেষে হানি সিং নিজেই ভাঙলেন নীরবতা। সম্প্রতি ওটিটিতে মুক্তি পাওয়া তাঁর জীবনকাহিনিভিত্তিক একটি তথ্যচিত্রে গায়ক এই বিতর্কিত ঘটনার আসল সত্য তুলে ধরেছেন। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, আসলে সেদিন কী ঘটেছিল এবং কীভাবে সেই সময়কার গুজব বাস্তবতাকে মিথ্যে রূপে উপস্থাপন করেছিল।

হানি সিং বলেন, বলিউড কিং খান কখনই আমার গায়ে হাত তুলবেন না। উনি এমন মানুষই নন। আমাকে খুবই ভালোবাসেন বাদশাহ। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক। তাই শাহরুখ আমাকে মেরেছে, সেটি একেবারেই মিথ্যা কথা।

এ গায়ক বলেন, আসলে সেদিন আমার মঞ্চে উঠতে ইচ্ছে করছিল না। মনে হচ্ছিল— মঞ্চে উঠলেই মরে যাব। তাই প্রথমে হোটেলের রুমে ঢুকে মাথার সব চুল কেটে ফেললাম। তারপর নিজের মাথায় একটা কফি মাগ ভাঙলাম। এতেই আহত হই। এসব করেই সেদিনের শো আটকে ছিলাম।

হানি সিংয়ের এই বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন তার বোনও। তিনি বলেন, এ ঘটনার পরই মাথায় রক্ত নিয়ে ফোন করে হানি। আমরা তো খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এর নেপথ্যে শাহরুখের কোনো দোষ নেই।

Header Ad
Header Ad

মেয়ে থেকে ছেলেতে রূপান্তর, বগুড়ার শ্রাবণী এখন শ্রাবণ

বগুড়ার শ্রাবণী এখন ওমর ফারুক। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ার ধুনট উপজেলার সরুগ্রাম পূর্বপাড়া এলাকায় বিরল এক ঘটনা ঘটেছে। শ্রাবণী আক্তার খুশি (১৫) নামের এক ছাত্রী মেয়ে থেকে ছেলে হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। উৎসুক জনতা ভিড় জমাচ্ছে তার বাড়িতে।

শ্রাবণী স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। তিনি খোকন মিয়ার বড় মেয়ে।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক বছর ধরে শ্রাবণীর আচরণে ছেলেদের মতো বৈশিষ্ট্য দেখা যাচ্ছিল। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে তার পরিবার নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষা করায়। ছয় মাস ধরে চলা মেডিকেল পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যায় যে, শ্রাবণী শারীরিকভাবে একজন ছেলেতে রূপান্তরিত হয়েছেন।

রূপান্তরের পর তার নতুন নাম রাখা হয়েছে ওমর ফারুক শ্রাবণ। শ্রাবণ নিজেও এই পরিবর্তন মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, মেয়ে থেকে ছেলেতে রূপান্তরিত হওয়ায় আমার কোনো দুঃখ নেই। এখন আমি বাবার কাজে সহযোগিতা করতে পারব।

শ্রাবণের বাবা খোকন মিয়া জানান, মেয়ের আচরণ ও শারীরিক গঠনে পরিবর্তন লক্ষ্য করার পর থেকে আমি নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়েছি। অবশেষে বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) ডাক্তারি রিপোর্টে জানা যায়, আমার মেয়ে একজন ছেলেতে রূপান্তরিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মুরুব্বিদের পরামর্শে শ্রাবণীকে ছেলেদের পোশাক পরিয়ে মাথার চুল কেটে নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন থেকে সে ওমর ফারুক শ্রাবণ নামে পরিচিত।

খোকন মিয়া বলেন, আমার তিন মেয়ে ছিল। ছেলে না থাকায় সমাজের নানা কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু আমার বড় মেয়ে ছেলে হিসেবে রূপান্তরিত হওয়ায় আমি ও আমার পরিবার অত্যন্ত খুশি।

Header Ad
Header Ad

বাড়ি ফেরার পথে সড়কে ঝরে গেল বাবা-ছেলের প্রাণ

দুর্ঘটনা কবলিত মোটরসাইকেল। ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের মধুপুরে বাড়ি ফেরার পথে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে বাবা-ছেলের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকালে উপজেলার মহিষমারা ইউনিয়নের আশ্রা বাজার সংলগ্ন স্থানে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- উপজেলার আশ্রা গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী বাবা মজিবুর রহমান (৫৮) এবং তার বড় ছেলে জাহিদ (২৭)।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী রুবেল মিয়া বলেন, বাবা ও ছেলে দুইজনে মিলে আশ্রা বাজার থেকে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফেরার পথে আশ্রা বাজারের পশ্চিম পাশে পৌঁছলে একটি অটোরিকশাকে সাইড দিতে গেলে বিপরীত দিক থেকে আসা অপর একটি মোটরসাইকেলের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই বাবা ও ছেলের মৃত্যু হয়। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে মধুপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এমরানুল কবির জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে তারা মরদেহ উদ্ধার করে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

সত্যি কি থাপ্পড় মেরেছিলেন শাহরুখ, ৯ বছর পর মুখ খুললেন হানি সিং
মেয়ে থেকে ছেলেতে রূপান্তর, বগুড়ার শ্রাবণী এখন শ্রাবণ
বাড়ি ফেরার পথে সড়কে ঝরে গেল বাবা-ছেলের প্রাণ
ছাত্রলীগ নেতা মুক্তাদির শিক্ষার্থীদের হাতে আটক, থানায় সোপর্দ
এ দেশে মেজরিটি–মাইনরিটি বলে কিছু নেই: জামায়াতের আমির
আজ বছরের দীর্ঘতম রাত, সবচেয়ে ছোট দিন আগামীকাল
রাজনীতিবিদকে বিয়ে করতে চান ফারজানা সিঁথি
গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ
পাকিস্তানে জঙ্গি হামলায় ১৬ সেনা নিহত
বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত সচিব ইসমাইল বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার
হামজাকে নিয়ে যা বললেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল
বহু ভাষা, বহু সংস্কৃতি, বহু ধর্মের বিকাশে কাজ করতে চায় কমিশন: ফারুকী
অবৈধ অনুপ্রেবেশের অভিযোগে ত্রিপুরায় শিশুসহ ৬ বাংলাদেশি গ্রেফতার
টাঙ্গাইলে বাস-সিএনজির সংঘর্ষ: নিহত ২
চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরি, দুদিনের মধ্যে অভিযান: ডিএমপি কমিশনার
আসাদের নিরাপত্তা বাহিনী সিরিয়ার নতুন সরকারের কাছে অস্ত্র জমা দিচ্ছে
দেশের সার্বভৌমত্ব আর গণতন্ত্র বিএনপির কাছে নিরাপদ: টুকু
গত ১৫ বছরে নানকের সম্পত্তি ফুলে ফেঁপে ওঠেছে ৩০ গুণ
দেশের বৃহত্তম রেলসেতুতে বঙ্গবন্ধুর নাম বাতিল হচ্ছে