মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল ২০২৫ | ১৮ চৈত্র ১৪৩১
Dhaka Prokash

বৈশ্বিক মানবিক সংকটে ঊর্ধ্বমুখী সামরিক ব্যয়ের প্রভাব

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের প্রায় সব দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, স্থানীয় মুদ্রার দরপতন, মার্কিন ডলারের সংকট ইত্যাদি নানা কারণে সাধারণ মানুষ ক্রমাগত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার জটিল ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বিশ্বব্যাপী মূল্যবৃদ্ধির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে এবং পণ্য, খাদ্যসামগ্রী, জ্বালানি ও সারের মূল্যস্ফীতি ঘটিয়েছে।

মুদ্রা বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, জাতীয় ঋণের মাত্রা বাড়ছে এবং অনেক দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। আমদানি নির্ভর দেশগুলোকে আমদানি ব্যয় মেটাতে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হচ্ছে এবং মুদ্রার অবমূল্যায়ন হওয়ার কারনে মুদ্রাস্ফীতির চাপ বাড়ছে। বর্তমানে বিশ্বের ৮২টি দেশের সাড়ে ৩৪ কোটি মানুষ খাদ্য নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। দেশগুলোতে খাদ্য সহায়তার জন্য বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউ এফ পি) কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অনাহারের ঝুঁকিতে থাকা এসব মানুষের মধ্যে ৪৫টি দেশের ৫ কোটি মানুষ চরম পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই ধাক্কা চলমান উন্নয়নের গতিকে ধীর করে দিয়েছে। এর মধ্যে শ্রীলংকার উপর যে বিপর্যয় নেমে এসেছিল তার প্রভাব এখনো কিছুটা রয়েছে। শ্রীলংকার পর পাকিস্তান ও আর্জেন্টিনা অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে ও তা কাটিয়ে উঠতে সংগ্রাম করছে।

ইতোমধ্যে অনেক বৈশ্বিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ইউক্রেন, আফগানিস্তান, ইয়েমেন, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, তুরস্কে ভূমিকম্প, ইথিওপিয়া ও সর্বশেষ সুদানের গৃহযুদ্ধ বিশ্ব ব্যাপী মানবিক সংকটের তালিকা দীর্ঘায়িত করে চলেছে। এর ফলে মানবিক ও ত্রাণ সহায়তার গুরুত্ব ও লক্ষ্য ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে। ২০২১ সালের ২৪শে আগস্ট ইথিওপিয়ার ফেডারেল সরকার ও টিগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট এর মধ্যে সংঘর্ষে ওই অঞ্চলে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। সুদানে গত ১৫ এপ্রিল থেকে চলা সংঘর্ষে শত শত মানুষ নিহত হয়েছে, প্রায় আট লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে পালাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এসব মানবিক বিপর্যয় ত্রাণ সহায়তা ও মানবিক কার্যক্রমের উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলছে। জাতিসংঘ পূর্ব আফ্রিকার তিন-চতুর্থাংশ শরণার্থীর খাদ্য রেশন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিয়েছে এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ইথিওপিয়া, কেনিয়া, দক্ষিণ সুদান ও উগান্ডার শরণার্থীরা। পশ্চিম আফ্রিকার বুরকিনা ফাসো, ক্যামেরুন, চাদ, মালি, মৌরিতানিয়া ও নাইজারে ডব্লিউএফপির রেশনও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। বুরকিনা ফাসোতে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৯০ লাখে পৌঁছেছে। ডব্লিউএফপি আশঙ্কা করছে যে দক্ষিণ সুদানে শরণার্থীসহ দেশটির ৮৩ লাখ মানুষ তীব্র ক্ষুধার সম্মুখীন হবে।

যুদ্ধের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে ইউরোপের দেশগুলো আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। ইউরোপজুড়ে গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকটের সম্মুখীন হয়েছে।

ইউএনএইচসিআরের তথ্য মতে ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৮০ লাখেরও বেশি শরণার্থী ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে। বিশ্বব্যাপী ৫৯.১ মিলিয়ন মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সাম্প্রতিককালে, ১ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে ২৮১ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত এবং কয়েক মিলিয়ন মানুষ রাষ্ট্রহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।

বিশ্বের সামরিক ব্যয় ২০২২ সালে সর্বকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছুঁয়ে ২ দশমিক ২৪ ট্রিলিয়নে পৌঁছেছে। পৃথিবীব্যাপী যুদ্ধ ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারনে অস্ত্রের চাহিদা বাড়ছে এবং সেই সঙ্গে বাড়ছে সামরিক ব্যয়। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) ২৪ এপ্রিল বৈশ্বিক সামরিক ব্যয় সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, ইউরোপের দেশগুলোর সামরিক খাতে ব্যয় বেড়েছে ১৩ শতাংশ যা গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

এই ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ সম্পর্কিত হলেও ইউরোপের অন্য দেশগুলো রাশিয়ার হুমকির প্রতিক্রিয়ায় নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সামরিক ব্যয় বাড়িয়েছে। এ কারণে ফিনল্যান্ড ৩৬ শতাংশ, লিথুয়ানিয়া ২৭ শতাংশ, সুইডেন ১২ শতাংশ এবং পোল্যান্ডে ১১ শতাংশ সামরিক ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। ফিনল্যান্ড এপ্রিলে ন্যাটোর ৩১তম সদস্য হয়েছে, পাশাপাশি সুইডেনও এখন ন্যাটো জোটে যুক্ত হতে চাচ্ছে। নেদারল্যান্ডস, স্পেন, ইটালির মতো ইউরোপীয় দেশগুলোও গত দশকে সামরিক খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে বৈশ্বিক সামরিক ব্যয়ের ক্রমাগত বৃদ্ধি এটাই প্রমাণ করে যে, আমরা বর্তমানে একটি অনিরাপদ বিশ্বে বসবাস করছি।

বিশ্বে সামরিক ব্যয়ের ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ব্যয় শতকরা ০.৭ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৮৭৭ বিলিয়ন ডলারে। যা বিশ্বের মোট সামরিক ব্যয়ের শতকরা ৩৯ ভাগ। ইউক্রেনকে দেওয়া অব্যাহত আর্থিক সামরিক সহায়তার কারণে এই ব্যয়ের পরিমাণ বেড়েছে। ২০২২ সালে ইউক্রেনের জন্য মার্কিন আর্থিক সামরিক সহায়তার পরিমাণ ছিল ১৯.৯ বিলিয়ন ডলার।

চীন সামরিক খাতে ব্যয়ের দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, ২০২২ সালে এই খাতে চীনের বরাদ্দ ছিল আনুমানিক ২৯২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২১ সালের তুলনায় ৪.২ শতাংশ বেশি। চীনের সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে আঞ্চলিক প্রতিবেশী দেশগুলোতে। জাপান ২০২২ সালে সামরিক খাতে ৪৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫.৯ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে তাইওয়ান তাদের ব্যয় বাড়িয়েছে ১৩.৯ শতাংশ এবং সাউথ কোরিয়া বাড়িয়েছে ৪.৬ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়ার সামরিক ব্যয় ৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ১৮০ কোটি ডলার। অস্ট্রেলিয়া সরকার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কেনার পেছনে ১ হাজার ৯০০ কোটি অস্ট্রেলীয় ডলার খরচ করার ঘোষণা দিয়েছে।

রাশিয়ার সামরিক ব্যয় ২০২২ সালে আনুমানিক ৯ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে প্রায় ৮৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার যা বৈশ্বিক মোট সামরিক ব্যয়ের ৩.৯ শতাংশ। সামরিক ব্যয়ে বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে আছে ভারত। ২০২২ সালে ভারত সামরিক খাতে ৭ হাজার ৬৬০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে যা সামরিক খাতে বিশ্বের মোট খরচের ৩.৬ শতাংশ। সৌদি আরব পঞ্চম বৃহত্তম সামরিক ব্যয়কারী দেশ, ২০২২ সালে তাদের ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়ে আনুমানিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

২০২২ সালে ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর সামরিক ব্যয় ছিল মোট ১২৩২ বিলিয়ন ডলার যা ২০২১ সালের তুলনায় ০.৯ শতাংশ বেশি। বিশ্বে সামরিক খাতে ব্যয়ের তালিকায় ৩.১ শতাংশ নিয়ে যুক্তরাজ্যের অবস্থান ষষ্ঠ যার পরিমাণ ৬৮.৫ বিলিয়ন ডলার। এর পরেই মোট ব্যয়ের আড়াই শতাংশ জার্মানির আর ২.৪ শতাংশ ফ্রান্সের। ইউক্রেনে সামরিক ব্যয় ২০২২ সালে ছয় গুণের বেশি বেড়ে ৪৪ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, জাতীয় প্রবৃদ্ধির শতকরা হিসাবে সামরিক খাতে খরচ ২০২২ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে শতকরা ৩৪ ভাগ। এটা একটা দেশের সামরিক ব্যয়ের সর্বোচ্চ এক বছরের বৃদ্ধর রেকর্ড। ২০২২ সালে এশিয়া ও ওশেনিয়ার দেশগুলোর সম্মিলিত সামরিক ব্যয় ছিল ৫৭৫ বিলিয়ন ডলার যা আগের বছরের তুলনায় ২.৭ শতাংশ বেশি এবং এই ব্যয় ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত রেখেছে।

২০২১ সালের সেনা অভ্যুত্থানের পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো মিয়ানমারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এরপরও দেশটির সামরিক সামর্থ্য কমেনি বা তাদের সমরাস্ত্র কেনা থেমে নেই। প্রতি বছর দেশটি তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট ও সামরিক সামর্থ্য বাড়িয়ে যাচ্ছে। ২০২২ সালে মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল সাড়ে ২২৮ কোটি মার্কিন ডলার। প্রতিবেশী দুই দেশ চীন ও ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় মিয়ানমার এই দুই দেশ থেকে বেশিরভাগ অস্ত্র কিনে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক জান্তার ক্ষমতা দখলের পর চীন, রাশিয়া ও সার্বিয়া দেশটিকে যুদ্ধ বিমান, সাজোঁয়া যান, রকেট ও কামান সরবারহ করেছে।

বিশ্বব্যাপী মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সশস্ত্র সংঘাত এবং ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে এর ফলে খাদ্যাভাব দেখা দিচ্ছে দারিদ্র্য বাড়ছে সেই সঙ্গে বাড়ছে উদ্বাস্তু ও বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও সংকটের কারণে দাতারা অনুদান কমিয়ে দেওয়ায় ডব্লিউ এফ পি রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্যসহায়তা প্রায় ১৭ শতাংশ কমিয়েছে। রোহিঙ্গাদের খাবারের জন্য মাথাপিছু মাসিক বরাদ্দ ছিল ১২ ডলার, ১ মার্চ থেকে তা কমিয়ে ১০ ডলার করা হয়েছে। নতুন তহবিল জোগাড় না হলে আগামী দিনগুলোতে এই সাহায্যের পরিমাণ আরও কমতে পারে। তহবিল সংকটের কারণে সুযোগ-সুবিধা আরও কমে যেতে পারে এই আশঙ্কায় রোহিঙ্গাদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে।

বাংলাদেশ গত প্রায় ছয় বছর ধরে ১.২ মিলিয়ন রোহিঙ্গার ভার বহন করে চলছে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে প্রতি বছর ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভবিষ্যতে এই ব্যয় আরও বাড়তে পারে। বাংলাদেশের একার পক্ষে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়। নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের ব্যয় বহনের জন্য বন্ধুরাষ্ট্র ও দাতাগোষ্ঠীর কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে যা প্রাপ্তি এখনো অনিশ্চিত। সারা বিশ্বে সামরিক ব্যয় বেড়েই চলছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে মানুষের দুর্দশা ও নিপীড়িত বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা। বিশ্বব্যাপী এই সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি মানবিক সহায়তাও বাড়ানোর উদ্যোগ চলমান রাখতে হবে। একটা শান্তিময় বিশ্বের প্রত্যাশায় সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি যেন চলমান মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ কার্যক্রমের উপর প্রভাব না ফেলে তা নিশ্চিত করতে বিশ্ব মানবতাবোধকে জাগ্রত রাখতে হবে।

হাসান মো. শামসুদ্দীন: ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত), মিয়ানমার ও রোহিঙ্গাবিষয়ক গবেষক।

এসএন

Header Ad
Header Ad

বিটিভিতে আজ প্রচারিত হবে ঈদের বিশেষ ‘ইত্যাদি’

উপস্থাপক হানিফ সংকেত। ছবি: সংগৃহীত

জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র ঈদের বিশেষ পর্ব আজ (১ এপ্রিল) বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর প্রচারিত হবে। হানিফ সংকেতের রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনায় নির্মিত এই বিশেষ পর্বে থাকছে বর্ণাঢ্য আয়োজন। বরাবরের মতোই অনুষ্ঠানের শুরু হবে কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী গান ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে।

এবারের ‘ইত্যাদি’তে থাকছে দেশাত্মবোধক গান, যেখানে কিংবদন্তি শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী ও সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া গানের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছেন আরও ১০ জন তরুণ শিল্পী। সংগীত পরিবেশনায় থাকছেন হাবিব ওয়াহিদ ও প্রীতম হাসান। এ ছাড়া সিয়াম আহমেদ ও জান্নাতুল সুমাইয়া হিমিও গানে অংশ নিয়েছেন। বিশেষ নৃত্য পরিবেশন করবেন জনপ্রিয় চার অভিনেত্রী সাফা কবির, সাদিয়া আয়মান, সামিরা খান মাহি ও পারসা ইভানা।

এবারের ‘ইত্যাদি’তে তিন জনপ্রিয় তারকা দম্পতি—শহীদুজ্জামান সেলিম ও রোজী সিদ্দিকী, এফ এস নাঈম ও নাদিয়া আহমেদ, ইন্তেখাব দিনার ও বিজরী বরকতউল্লাহ গানে গানে অনলাইন কেনাকাটার মজার অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন। মধ্যবিত্তের অর্থনৈতিক টানাপোড়েন নিয়ে নির্মিত মিউজিকাল ড্রামাতে অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু, মোমেনা চৌধুরী, আনোয়ার শাহী ও র‍্যাপ শিল্পী মাহমুদুল হাসান।

বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে তৌসিফ মাহবুব ও শবনম বুবলির নৃত্য পরিবেশনা। পাশাপাশি, ‘গুজব’ নামের ছোট নাটিকায় বিদেশি অভিনয়শিল্পীদের অংশগ্রহণ দর্শকদের জন্য বাড়তি চমক হয়ে আসবে। এছাড়াও নিয়মিত চরিত্র নাতি ও কাশেম টিভির রিপোর্টার, সামাজিক অসঙ্গতি ও সমসাময়িক ঘটনাও উঠে আসবে ‘ইত্যাদি’র বিশেষ পর্বে।

অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করেছে ফাগুন অডিও ভিশন এবং রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনায় রয়েছেন হানিফ সংকেত। ঈদের আমেজে ভরা ‘ইত্যাদি’র এই বিশেষ পর্ব দর্শকদের জন্য চমক ও বিনোদনে ভরপুর হতে যাচ্ছে।

Header Ad
Header Ad

ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকা, নেই যানজটের চিরচেনা দৃশ্য

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

প্রতিদিন যানজটে নাকাল রাজধানীবাসীর জন্য ঈদের ছুটিতে ঢাকা যেন এক অন্য রকম শহর। কর্মব্যস্ত এই নগরী এখন শান্ত, ফাঁকা ও যানজটমুক্ত। যারা ঈদে ঢাকায় রয়ে গেছেন, তারা উপভোগ করছেন এক ভিন্ন পরিবেশ।

মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) ঈদের দ্বিতীয় দিনেও রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ ছিল কম। অলস দুপুরে ফাঁকা রাস্তায় হালকা বাতাসে খেলা করছিল রোদের ছায়া। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু এলাকায় মানুষের চলাচল বাড়তে দেখা গেছে।

ঈদে যারা ঢাকায় থেকে গেছেন, তারা অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে। মিরপুর চিড়িয়াখানা, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, জিয়া উদ্যান, শ্যামলী ওয়ান্ডারল্যান্ডসহ বিভিন্ন পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রাকিব হাসান জানান, "ঈদের ছুটিতে ঢাকার ফাঁকা রাস্তাগুলোতে ঘুরে বেড়ানোর দারুণ সুযোগ পাওয়া যায়। গতকাল বন্ধুদের সঙ্গে বাইকে পুরো শহরটা ঘুরেছি, দারুণ লেগেছে।"

তবে, কর্মজীবীদের জন্য এই ফাঁকা ঢাকা যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস। ব্যাংক কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা বলেন, "সারা বছর এই যানজট নিয়ে অফিস করতে হয়। কিন্তু ঈদের ছুটিতে ঢাকাকে অন্য রকম মনে হয়। যদি সারা বছর এমন থাকত, তাহলে জীবন আরও সহজ হতো।"

যাত্রী কম থাকায় আয় কমে গেছে রিকশাচালকদের। সায়েন্সল্যাবে অপেক্ষমাণ রিকশাচালক মোহাম্মদ আরিফ জানান, "যাত্রী নেই বললেই চলে। আয় কমেছে, তবে ভালো দিক হলো জ্যাম নেই, রিকশা চালানো সহজ লাগছে।"

অন্যদিকে, সদরঘাট থেকে গুলিস্তানে আসা চালক লোকমান বলেন, "গুলিস্তান ও বাবুবাজার এলাকায় কিছুটা যানজট পেয়েছি, তবে বাকি রাস্তা ফাঁকা ছিল।"

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, ঈদের ছুটিতে বাসাবাড়ি ও অফিস-আদালত ফাঁকা থাকায় অপরাধ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক জানান, "সাইবার মনিটরিংসহ গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে ঈদকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের নাশকতার তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।"

সরকারি চাকরিজীবীরা এবারের ঈদে টানা ৯ দিনের ছুটি উপভোগ করছেন। আগামী ৬ এপ্রিল থেকে অফিস-আদালত খুলবে। তবে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এর আগেই খুলবে, ফলে ধীরে ধীরে রাজধানী আবার কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে।

Header Ad
Header Ad

মাদারীপুরে তিন মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ৪, আহত ২

ছবি: সংগৃহীত

মাদারীপুরে পদ্মা সেতু এক্সপ্রেসওয়ের সংলগ্ন সাহেববাজার সড়কে বিপরীতমুখী তিনটি মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে চার যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) দুপুর দেড়টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা গেছে, নাওডোবা গোলচত্বর থেকে সাহেববাজার সড়কে তিনটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হন। গুরুতর আহত চারজনকে হাসপাতালে নেওয়া হলে আরও দুজনের মৃত্যু হয়।

শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রতন শেখ জানান, দুর্ঘটনাটি জাজিরা থানার অন্তর্ভুক্ত হলেও এটি শিবচরের সীমানা সংলগ্ন। তিনি বলেন, "ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হয়েছেন। আহত চারজনকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে আরও দুজনের মৃত্যু হয়। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও দুই যুবক।"

এদিকে, স্থানীয় প্রশাসন দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখছে এবং নিহতদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বিটিভিতে আজ প্রচারিত হবে ঈদের বিশেষ ‘ইত্যাদি’
ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকা, নেই যানজটের চিরচেনা দৃশ্য
মাদারীপুরে তিন মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ৪, আহত ২
থানায় জিডি করলেন ভোক্তা অধিকারের জব্বার মন্ডল
রাশিয়া আমাদের চিরকালের বন্ধু, কখনো শত্রু নয়: চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান খালেদা জিয়ার
দ্বিতীয় দফায় মিয়ানমারে ত্রাণ সহায়তা পাঠালো বাংলাদেশ
ভারতে প্রশিক্ষণ প্লেন বিধ্বস্ত, পাইলট আহত
এপ্রিলে ঢাকায় আসছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল
জাপানে মেগা ভূমিকম্পের শঙ্কা, প্রাণহানি হতে পারে ৩ লাখ
জুলাই কন্যাদের সম্মানজনক পুরস্কার নিয়ে যা জানাল যুক্তরাষ্ট্র
দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের সম্ভাবনা
শান্তিপূর্ণ ঈদ উদযাপনে সেনাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়াল
রাজধানীতে মেট্রোরেল ও সারা দেশে আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল শুরু
যমুনা সেতু দিয়ে একসপ্তাহে ২ লাখ ৪৭ হাজার যানবাহন পারাপার, ১৭ কোটি টাকার টোল আদায়
ঈদের দিনে সড়কে মৃত্যুর মিছিল: ১০ জেলায় নিহত ২১
টঙ্গিবাড়ীতে ঈদের দিনে ১০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি, উপকৃত ৪২০ পরিবার
ঈদের দিনেও তাপপ্রবাহ অব্যাহত, এক বিভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনা
যশোরের শার্শা সীমান্তে যুবকের লাশ উদ্ধার, আটক ১