অর্থনৈতিক পলিক্রাইসিস রোধ করাই বড় চ্যালেঞ্জ
আমি মনে করি, যেকোনো অর্থনীতিরই ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক রয়েছে একইসঙ্গে সবসময়ই কিছু সমস্যা রয়েছে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতি খুব সহজে চাঙা হয়ে যাবে এমনটি ভাবা অস্বাভাবিক। অবশ্যই আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমরা জানি, লম্বা একটি সময় করোনা মহামারির করণে অর্থনীতিতে অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে।
অনেক প্রতিষ্ঠান শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। যেহেতু অনেক বড় একটা সময় আমরা নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছি, সেটি থেকে উদ্ধার হতে না হতেই ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। দুনিয়া জুড়েই এই যে একটি পলি-ক্রাইসিস অবস্থা যেমন, শিক্ষা ক্ষেত্রসহ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এই বন্ধ থাকা সময়গুলোতে যে ক্ষতি হয়েছে সেটি পুনরুদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তারপরও আমি বলব, বাংলাদেশ অন্যতম দেশ যেখানে এই সময়েও ইতিবাচক অবস্থানে আছি আমরা।
বর্তমানে সারা দুনিয়া জুড়েই অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এর বিভিন্নমুখী ফলাফল আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমাদের দরিদ্র সীমা কমে গেলেও কিন্তু অন্যরকম কিছু সমস্যাও দেখা দিয়েছে। অনেক বেশি দরিদ্র মানুষের জন্য অনেক সাহায্য সহযোগিতা হয়তো আছে। কিন্তু যে মানুষটি এত বেশি গরিব না কিন্তু এত বেশি উপরেও উঠতে পারছে না, কোনো রকমে খেয়ে-পরে বেঁচে আছে, সেইসব পরিবার, যারা হয়তো আপনার বাসায় এসে সাহায্য চাইবে না, মুখ ফুটে কথা বলবে না, তাদেরকে আমাদের দেখতে হবে। যেমন-তাদের স্বাস্থ্য খাতে যদি খরচ কম হয়, তার সন্তানের স্কুলের বেতন যদি কিছুটা কমিয়ে দেওয়া যায় অথবা কোচিংয়ের বেতন কম হয় তাহলে তাদের জন্য আমি কী করছি? তাদের জন্য কম খরচে কোয়ালিটি শিক্ষা দেওয়া যায়, তা ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে যদি আমরা পাবলিক সার্ভিস দিতে পারি, যেমন যেখানে মশার উপদ্রব আছে, সেখানে মশার ওষুধ বেশি দেওয়া যদি হয়, যেখানে রোগ বালাই কম হয়, তাকে একটু রাস্তাঘাট করে দেওয়া যায়, যেন সে শহরে গিয়ে খুব সহজে সবজি বিক্রয় করতে পারে এ রকম কিছু ভাবনা এখন আমাদের ভাবতে হবে। অর্থাৎ একদম প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা যদি করে দেওয়া যায়, তাহলে ওরা আমাদের সঙ্গে একটা প্রতিযোগিতায় আসতে পারবে।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের কয়েকটি ইতিবাচক দিক আছে, যেটি নিঃসন্দেহে ভালো। অর্থনৈতিক সংকট বলতে আমরা কিছুটা চাপের মধ্যে আছি। তবে আমি সেটিকে ঠিক ভারসাম্যহীনতা বলতে চাই না। আমরা যে চাপের মধ্যে আছি, সেক্ষেত্রে খাদ্য সংকটের ভয় আছে বলে আমি মনে করছি না। আমরা যেহেতু প্রধান খাদ্যদ্রব্য নিজেরা উৎপাদন করছি। সাধারণ মানুষ যেহেতু মূল্যস্ফীতির একটি চাপের মুখে আছে, জ্বালানি সংকট সাধারণ মানুষের মধ্যে চাপ আরও বৃদ্ধি করতে পারে। ফলে আমাদের দ্রুত জ্বালানি সংকট মোকাবিলা করা উচিত। সেটি মোকাবিলা করতে হলে আমাদের তেলের সরবরাহ ঠিক করতে হবে এবং তা সঠিকভাবে ব্যবহারে মনযোগ দিতে হবে।
আমাদের রেমিট্যান্স বৃদ্ধি হয়েছে এটি খুবই ভালো দিক। আমাদের এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে কোভিডের পরে মানুষজন ব্যাপকহারে বাইরে যেতে পারছে না। সেটি মাত্র গত এক বছর ধরে যাচ্ছে। তা ছাড়া বিদেশ গিয়েই তো আর মানুষ সঙ্গে সঙ্গে টাকা পাঠায় না। তবে সামনে আমাদের রেমিট্যান্সের পরিমাণ বাড়বে। সেইটুকু সময় পর্যন্ত অর্থাৎরেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাওয়া পর্যন্ত এখন যে সংকট আমরা মোকাবিলা করছি, সেজন্য আমাদের কিছুটা স্ট্র্যাটেজিক হতে হবে। অপচয় রোধ করতে হবে।সেক্ষেত্রে আমাদের স্ট্র্যাটেজিক ইউটিলাইজেশন হতে হবে। আমাদের কৃষি উৎপাদন, শিল্প উৎপাদন যেখানে তেলের সরবরাহ দরকার সেখানে ব্যবহার বাড়াতে হবে।
আমি মনে করি, আমাদের ইকোনোমিক জোনগুলো বাস্তবায়নের দিকে যেতে হবে। কাজেই ইকোনোমিক জোনগুলোতে লং টার্মে, মিডিয়াম টার্মে জোনসমূহ বাস্তবায়নে মনযোগ দিতে হবে। যেকোনো অর্থনৈতিক সংকট আমাদের জন্য যেন বিপর্যয় নিয়ে না আসে সেজন্য আমাদের শিল্প উৎপাদন বাড়াতে হবে।
ড.নাজনীন আহমেদ: অর্থনীতিবিদ