পর্যটন জনবল তৈরিতে নতুন ভাবনা
আইটিবি বার্লিন বিশ্বের বৃহত্তম পর্যটন ও ভ্রমণ বাণিজ্য মেলা। বার্লিনে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত এই মেলায় বিশ্ব পর্যটনের অনেক নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত হয়। মেলায় পর্যটন শিক্ষা ও বিনিয়োগ মূল অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে। বলা হয়েছে- শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও বিনিয়োগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে পর্যটন সম্ভাবনাগুলোকে দৃষ্টিগোচর করতে হবে। পর্যটন শিক্ষা ও পেশাগত উন্নয়নের জন্য জাতিসংঘ বিশ্ব পর্যটন সংস্থা (ইউএনডব্লিউটিও) এবং সৌদি আরব যৌথভাবে কাজ করবে বলে আইটিবি বার্লিনে ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক টেকসই পর্যটনে ইউএনডব্লিউটিও একটি নতুন পর্যটনে ব্যাচেলর অব সায়েন্স ডিগ্রি চালু করার জন্য সুইজারল্যান্ডের লুসার্ন ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস অ্যান্ড আর্টসের বিজনেস স্কুলের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
পর্যটন শিক্ষা ও পেশাগত উন্নয়নের জাতিসংঘ বিশ্ব পর্যটন সংস্থা এবার সৌদি আরবের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই রাষ্ট্রটি ২০২২ সালে পর্যটনে ৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ট্যুরিস্ট ভিসা চালু করেছে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘ বিশ্ব পর্যটন সংস্থা কর্তৃক বিশ্বের ৪০ টি পর্যটন গ্রামের মধ্যে একটি সৌদি আরবের - এই স্বীকৃতিও তারা আদায় করে নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী প্রামীণ পর্যটন পরিচালনার দপ্তর স্থাপিত হয়েছে সৌদি আরবে। এইসব তথ্য থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, সৌদি আরব বিশ্ব পর্যটন নিয়ে কাজ করার যোগ্যতা কেন লাভ করছে। বর্তমান সৌদি প্রধানমন্ত্রী যুবরাজ সালমানের সঙ্গে আমার দেখা হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ওমানের রাজধানী মাসকটে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ বিশ্ব পর্যটন সংস্থার আন্তর্জাতিক সম্মেলনে। এখানে তার সঙ্গে আমার বেশ সময় ধরে দীর্ঘ কথা হয়। তখনই বুঝে গেছিলাম যে, সৌদি আরব আগামী দিনে পর্যটনের নতুন দরজা উন্মোচন করবে। ইতোমধ্যে প্রায় ৬ বছর পেরিয়ে গেছে এবং আমরা দেখতে পারছি তাদের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অবস্থা। অথচ অর্ধশতাধিক বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা কিছুই করতে পারলাম না। এর উত্তর কে দিবে, জানি না।
এবার আসি সারা পৃথিবীতে বিজ্ঞান, কলা, বাণিজ্য ও সমাজবিজ্ঞানের আওতায় পর্যটন নিয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে হরদম। তাহলে সুইজারল্যান্ডের লুসার্ন ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস অ্যান্ড আর্টসের মতো একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জাতিসংঘ বিশ্ব পর্যটন সংস্থা একটি নতুন ব্যাচেলর অফ সায়েন্স ডিগ্রি প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল কেন? উল্লেখ্য যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০০৭ সালে স্থাপিত হয়েছে।
বিষয় দুটো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং সঙ্গত কারণেই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। পর্যটন যেভাবে পৃথিবীতে জীবনযাপনের আবশ্যকীয় উপাদানে পরিণত হবে, তা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পিস্ থ্রো ট্যুরিজমের আম্মান সম্মেলনের ১১ নভেম্বর ২০০০-এর ঘোষণা থেকেই অনুমান করা হচ্ছিল। ওই ঘোষণায় বলা হয়েছিল যে, পর্যটন একটি মৌলিক মানবিক কর্মকাণ্ড যা সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত, পরিবেশগত, রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও দায়িত্ব সম্পৃক্ত। এই ঘোষণায় ভ্রমণকে মানুষের অধিকার বলে উল্লেখ করা হয়।
পর্যটন এখন অনেক জনগোষ্ঠীর জীবন ধারণের উপাদান ও মর্যাদার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রচুর বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এই খাতে। সমাজ ও সংস্কৃতিতে এর অবিচ্ছেদ্য অবস্থান ক্রমেই নিবিড় থেকে নিবিড়তর হচ্ছে। এই অবস্থায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গত কারণেই পর্যটনের দিকে নতুন করে নজর দেওয়ার সময় এসেছে। আমাদেরও এই বিষয় অনেক বেশি যত্নশীল হতে হবে। জনবল চাহিদা নিরূপণ, জনবল তৈরি ও নিয়োগ পরিকল্পনা ইত্যাদিতে অনেক বেশি মনযোগী হতে হবে।
এসএন