বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের নতুন উদ্যোগ, প্রত্যাশা টেকসই সমাধান

২০১৭ সালে মিয়ানমার বাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্প ও ভাসানচরে অবস্থান করছে। দীর্ঘ প্রায় ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকে ও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।

২০১৭ সালের নভেম্বরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নেওয়া প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। চীনের মধ্যস্থতায় ২০১৯ সালে আবার প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। ফলশ্রুতিতে গত প্রায় ছয় বছরে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থেমে ছিল। ২০২০ সাল থেকে স্বল্প পরিসরে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরু না হওয়ায় চীন মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে আসছিল। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আসিয়ান দেশগুলোও ছোট পরিসরে প্রত্যাবাসন শুরু করার বিষয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল।

সম্প্রতি মিয়ানমার পাইলট প্রকল্পের আওতায় এক হাজারের কিছু বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ৮ মার্চ মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও আসিয়ানের কয়েকটি দেশসহ আট দেশের কূটনীতিকদের রাখাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। ৮ দেশের ১১ কূটনীতিককে মিয়ানমারের মংডু ও সিটওয়ে শহরে অন্তর্বর্তীকালীন ক্যাম্পসহ আশপাশের এলাকা দেখানো হয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নেওয়া প্রস্তুতির অগ্রগতি দেখাতে এই কূটনীতিকদের সেখানে পরিদর্শনে নেওয়া হয়েছে। মিয়ানমার দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে চায় বলে তাদের জানানো হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলোর থেকে জানা যায় যে, চীনের চাপে মিয়ানমার এ উদ্যোগ নিয়েছে।

কূটনীতিকরা রাখাইন থেকে ফিরে এসে রাখাইনের চলমান পরিস্থিতি ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের তুলনায় এখন কিছুটা ভালো বলে জানিয়েছে। মিয়ানমারের সিটওয়ের কাছে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত (আইডিপি) ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারা এখন সিটওয়ে শহরে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে, আগে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে বের হতে দেওয়া হতো না। প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায় যে, রোহিঙ্গারা সেখানে স্বল্পপরিসরে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে যা এতদিন ছিল না।

রাষ্ট্রদূতরা নাফ নদীর পাড়ের নকুইয়া গ্রামে পাঁচ বছর আগে বানানো অন্তর্বর্তীকালীন ক্যাম্পের সংস্কার কাজ দেখেন। নাফ নদীপথে যে সব রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে তাদের প্রথম কিছুদিন এই ক্যাম্পে রাখা হবে। এরপর তারা মংডুর লাপুখা ক্যাম্পে স্থানান্তরিত হবে। সেখানে তারা মাসখানেক থাকবে এবং সবশেষে তাদের মংডু এবং সিটওয়ের কাছে নির্মাণাধীন ক্যাম্পগুলোতে স্থায়ীভাবে স্থানান্তর করা হবে। কূটনীতিকদের চকপিউ এলাকায় ২০১২ সাল থেকে বসবাসরত আইডিপি’দের ক্যাম্পও দেখানো হয়। এই ক্যাম্পগুলো বন্ধ করে পাশের গ্রামে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে স্থানান্তর করা হবে বলে তাদের জানানো হয় । চকপিউ একটা গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এখানে চীনের বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত তেল কোম্পানি এবং গভীর সমুদ্রবন্দর রয়েছে।

বিভিন্ন মিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে, বর্তমানে রাখাইনের পরিস্থিতি ভালো। কয়েক মাস আগে রাখাইনে আরাকান আর্মি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। পরবর্তীতে নিপ্পন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাসাকাওয়ার মধ্যস্থতায় সেখানে সাময়িক অস্ত্র বিরতি চলছে এবং আপাত শান্তি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় হাজারখানেক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে প্রত্যাবাসন শুরু করা যেতে পারে।

প্রত্যাবাসন শুরু হলে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ কিছুটা কমবে এবং সামরিক সরকারের গ্রহণযোগ্যতা কিছুটা বাড়বে বলে চীন মনে করে। আগামী ২৪ এপ্রিল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় মিয়ানমারকে তাদের যুক্তি পেশ করতে হবে, প্রত্যাবাসনের এই উদ্যোগের সঙ্গে আইসিজে’র সম্পর্ক থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকার আইসিজেকে জানাবে যে তারা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পদক্ষেপ নিচ্ছে।

 

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে ৮ লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের দেওয়া এই তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছিল মিয়ানমার। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ওই তালিকা থেকে পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে পরিবারভিত্তিক প্রত্যাবাসনের জন্য প্রাথমিকভাবে ১১৪০ জনকে বাছাই করা হয়।এর মধ্যে ৭১১ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমার সম্মতি দেয়। বাকি ৪২৯ জনের ব্যাপারে তাদের আপত্তি থাকায় তাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করতে ১৫ মার্চ মিয়ানমারের মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্সের মংডুর আঞ্চলিক পরিচালক অং মাইউ’র নেতৃত্বে ১৭ সদস্যর প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসে। প্রতিনিধি দলটি সাত দিনে ৪২৯ রোহিঙ্গার সাক্ষাৎতের মাধ্যমে তথ্য যাচাই শেষে ২২ মার্চ বাংলাদেশ ত্যাগ করে।

মিয়ানমার পাইলট প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায়। প্রত্যাবাসনের বিষয়ে তারা যে আন্তরিক এই প্রকল্পের মাধ্যমে তারা সেটা বোঝানোর চেষ্টা করবে। পরিবারভিত্তিক প্রত্যাবাসনের আওতায় প্রথমে এক হাজারের কিছু বেশি রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।

মিয়ানমারের তথ্য উপমন্ত্রী মেজর জেনারেল জাও মিন তুন এপ্রিলের মাঝামাঝি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ক পাইলট কর্মসূচি শুরু হতে পারে বলে জানায়। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের আবাসনের জন্য ৭৫০টি প্লটের উপর ১৫টি নতুন গ্রাম তৈরি করতে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ফেরত নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রথমে দুই মাসের জন্য হ্লা ফো খাউং অন্তর্বর্তী ক্যাম্পে রাখা হবে। সেখান থেকে মংডু শহরের তাউং পিয়ো লেটওয়ে ও নাগার খু ইয়া ক্যাম্পে তাদের যাচাই করার পর তাদের নতুন এই গ্রামগুলোতে পাঠানো হবে।

গত ২৩ মার্চ মিয়ানমার জানিয়েছে যে, এই পাইলট প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে আরও পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে তাদের নিজ গ্রামে ফিরতে ইচ্ছুক। তবে নিজ গ্রামে ফেরত না যেতে পারলে তারা প্রত্যাবাসনে আগ্রহী নয়। নাগরিক অধিকার, ভ্রমণ স্বাধীনতা কিংবা অন্যান্য জাতিসত্তার সমান অধিকারের নিশ্চয়তা পেলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে।

ইউএনএইচসিআর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি মূল্যায়নের পর সেখানকার পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুকূল নয় বলে জানায়। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় পাইলট প্রকল্পের আওতায় মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে ইউএনএইচসিআর জানায় যে, রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের এই আলোচনায় তারা জড়িত নয়।

ইউএনএইচসিআর রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করছে বলে জানিয়েছে। রোহিঙ্গারা যাতে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে অংশ নেয় সে জন্য তারা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে। ইউএনএইচসিআর, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরির প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে। বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এবং তাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা অব্যাহত রাখবে ইউএনএইচসিআর।

যেসব রোহিঙ্গাদের তথ্য যাচাই বাছাই করা হয়েছে তাদের অনেকে এখনই মিয়ানমার ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী নয় বলে জানা যায়। তারা মিয়ানমার ফেরার ব্যাপারে যথেষ্ট ভরসা পাচ্ছেন না। মিয়ানমারে থাকা রোহিঙ্গারা সেখানে ভালো আছে এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার বন্ধ হওয়ার বিষয়ে সেখানে থাকা রোহিঙ্গারা তাদের আশ্বস্ত করলে তারা নিজেরাই মিয়ানমারে ফিরে যাবে জানায়।

মিয়ানমারে ক্যাম্পগুলোতে অবস্থানরত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। চলমান সহিংসতায় জাতিসংঘ ও অন্যান্য সাহায্য সংস্থাগুলো মিয়ানমারে ত্রাণ কার্যক্রম সঠিকভাবে চালাতে না পারার কারণে রোহিঙ্গারা সেখানে শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সে সব ক্যাম্পে ত্রাণ কার্যক্রম অবিলম্বে চালু করার ব্যবস্থা করতে হবে। এই পাইলট প্রকল্পে মিয়ানমার জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে সঙ্গে রাখেনি। গত ছয় বছর ধরে এই সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সহায়তা দিয়ে আসছে। জাতিসংঘ রাখাইনের পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের সহায়ক নয় বলে জানিয়েছে। ত্রাণ সহায়তা ছাড়া রোহিঙ্গারা আবার মানবিক বিপর্যয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই উদ্যোগে তাই তাদের সাথে রাখার দরকার ছিল বলে অনেকে মনে করে।

বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গারা বিভিন্ন সময় দাবি জানিয়ে আসছে যে, নাগরিকত্ব না পেলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবেন না। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়ে কিছু জানায়নি এবং রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে তাদের মনোভাবের পরিবর্তনের বিষয়টিও স্পষ্ট নয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে অগ্রগতির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের তাদের জনগণ মনে করে বলে জানিয়েছে, তবে এই প্রকল্পে তাদেরও কোনো সম্পৃক্ততার কথা জানা যায়নি। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক মনোভাবের পরিবর্তন সম্পর্কে নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়েও কিছু জানা যায়নি এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার পরিবর্তনের ইঙ্গিতও স্পষ্ট নয়।

রোহিঙ্গা অধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে যে, নাগরিকত্বের স্বীকৃতি ছাড়া প্রত্যাবাসন হলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি তৈরি হবে। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার পর নতুন বানানো গ্রামে স্থানান্তরিত করবে বলে জানিয়েছে কিন্তু রোহিঙ্গারা তাদের নিজ গ্রামে ফিরতে চায়। মিয়ানমারের ক্যাম্পগুলোতে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের তাদের আগের বাড়িঘর ও গ্রামগুলোতে পুনর্বাসন করা শুরু হলে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হবে ও রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে যাবে এবং এর ফলে সার্বিক প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া টেকসই হবে বলে আশা করা যায়।

রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের উপর বোঝার মত চেপে আছে। বিরাজমান বৈশ্বিক সংকটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ রোহিঙ্গা সংকট থেকে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর্থিক সংকটের কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য বাজেট কমানো হয়েছে। এর পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে। চলমান এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ চাইছে, সংখ্যায় কম হলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হোক। বাংলাদেশ সরকার টেকসই প্রত্যাবাসনের উপর জোর দিয়ে তা চলমান রাখার ব্যাপারে আগ্রহী। এ বিষয়ে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সক্রিয় সহযোগিতা আশা করে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য নেওয়া মিয়ানমারের এই উদ্যোগ ইতিবাচক। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের তাদের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের বিষয়ে আশ্বস্ত করে টেকসই পরিকল্পনার মাধ্যমে এই কার্যক্রম চলমান রাখবে এটাই প্রত্যাশা।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) হাসান মো. শামসুদ্দীন: মিয়ানমার ও রোহিঙ্গাবিষয়ক গবেষক

আরএ/

Header Ad
Header Ad

বিদ্যুৎ খাতে ১৫ বছরে ৭২ হাজার কোটি টাকার লুটপাট

ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিদ্যুৎ খাতকে কেন্দ্র করে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দ্রুত সরবরাহ আইন (কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট আইন) প্রণয়ন করে দায়মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে এই খাতে লুটপাটের মডেল তৈরি হয়। গত ১৫ বছরে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনায় ঘুষ, কমিশন, এবং অপ্রয়োজনীয় সক্ষমতার কারণে জনগণের ওপর ৭২ হাজার কোটি টাকার বোঝা চাপানো হয়েছে।

২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৫,৭০০ মেগাওয়াট থেকে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৩২,০০০ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। এ সময়ে শতাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে বেশিরভাগ প্রকল্প দ্রুত সরবরাহ আইনের আওতায় অনুমোদন পাওয়ায় উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার সুযোগ বন্ধ ছিল।

বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে ৩০ থেকে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার দুর্নীতির মাধ্যমে লুট হয়েছে।

মহাপরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুতের চাহিদা ৩০,০০০ মেগাওয়াট ধরা হলেও, পরে এই লক্ষ্যমাত্রা ৪০,০০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হয়। চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করায় অপ্রয়োজনীয় সক্ষমতা তৈরি হয়। এই অতিরিক্ত সক্ষমতার জন্য ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বাবদ প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার অপচয় হয়েছে।

বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেছেন, “উচ্চমাত্রার লক্ষ্য নির্ধারণ করে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এর ফলে জনগণের কাঁধে ভাড়া ও অন্যান্য ব্যয়ের বোঝা চেপেছে।”

শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন নির্মাণ এবং মিটার কেনাকাটায় বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। তবে এসব খাতে দুর্নীতির বিস্তারিত চিত্র এখনও স্পষ্ট নয়।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিদ্যুৎ খাতে এ ধরনের দুর্নীতি অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সরকারের উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের ফলে জনগণকে অযৌক্তিকভাবে অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হয়েছে।

প্রস্তাবিত সমাধান:

- বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি কমাতে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে প্রকল্প অনুমোদন।
- দায়মুক্তি আইন বাতিল করে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
- শ্বেতপত্রে বিস্তারিত তদন্তের মাধ্যমে দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ।
- অপ্রয়োজনীয় সক্ষমতা বন্ধ এবং বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ।

বিদ্যুৎ খাতের এই সংকট উত্তরণে জনসাধারণ, বিশেষজ্ঞ এবং গণমাধ্যমের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

Header Ad
Header Ad

সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতীয় নাগরিক আটক

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মো. নাজির উদ্দিন কার্তিক (২৫) আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে নওগাঁ ব্যাটালিয়নের (১৬ বিজিবি) বিজিবি সদস্যরা গোমস্তাপুর উপজেলার কেতাব বাজার এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেন।

আজ মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ১৬ বিজিবির গণমাধ্যম শাখা থেকে পাঠানো এক হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।

নওগাঁ ব্যাটালিয়নের (১৬ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার বাংগাবাড়ি বিজিবির নিয়মিত টহল দল মঙ্গলবার সকালে সীমান্ত পিলার ২০৪/এমপি হতে আনুমানিক ১ কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যান্তরে কেতাব বাজার এলাকায় টহল পরিচালনা করছিলেন। টহল দেওয়ার সময় একজন ব্যক্তির গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে বিজিবির সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি অসংলগ্ন বক্তব্য দিতে থাকেন। পরে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে ওই ব্যক্তি স্বীকার করেন তিনি ভারতীয় নাগরিক। ওই ব্যক্তির ভাষ্যমতে তাঁর নাম, নাজির উদ্দিন কার্তিক। তিনি ভারতের বিহার রাজ্যের কাঠিয়ার জেলার আবাদপুর থানার গাবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা। তল্লাশী করে ওই ব্যক্তির কাছ ভারতীয় ১০ রুপি এবং বাংলাদেশী ২৫০ টাকা পাওয়া গেছে। তাঁর কাছ থেকে কোনো পাসপোর্ট বা বৈধ ডকুমেন্ট পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে ওই ব্যক্তিকে আটক পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ কার্যক্রম চলমান আছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Header Ad
Header Ad

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশি জানলেই হয়রানি

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় ভ্রমণ ও চিকিৎসার কাজে যাওয়া বাংলাদেশিরা সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এবং বিজেপি সমর্থকদের লংমার্চ কর্মসূচি ঘিরে এই হয়রানির মাত্রা বেড়ে গেছে।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) থেকে আগরতলায় হোটেল ভাড়া না পেয়ে বাংলাদেশি পর্যটকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বাসিন্দা ফরিদ মিয়া জানান, হোটেল ভাড়া নেওয়ার পর মুসলিম এবং বাংলাদেশি হওয়ায় তাকে এক ঘণ্টার মধ্যেই হোটেল থেকে বের করে দেওয়া হয়। টাকা ফেরত না পেয়ে তিনি বাধ্য হয়ে শহরের বাইরে আত্মীয়ের বাড়িতে রাত কাটান এবং পরদিন দেশে ফিরে আসেন।

আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টে বাঁশের বেড়া দিয়ে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সীমান্ত পারাপারের সময় বাংলাদেশিদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করা হচ্ছে। আখাউড়া স্থলবন্দরে ফিরে আসা যাত্রীরা জানিয়েছেন, সীমান্তে বাংলাদেশিদের হুমকি ও হয়রানির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমান শিলচরে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফেয়ারে জামদানি শাড়ির একটি স্টল দিয়েছিলেন। সেখানে একদল যুবক "জয় শ্রী রাম" স্লোগান দিয়ে তার দোকানে হামলা চালায়। হামলাকারীরা দোকান ভাঙচুর করে এবং সমস্ত টাকা-পয়সা লুটপাট করে নিয়ে যায়।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি অতিরিক্ত সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। বিজিবি ৬০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল জাবের বিন জব্বার জানিয়েছেন, সীমান্তে কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা এড়াতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশিরা এমন হয়রানি ও বৈষম্যমূলক আচরণের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে এর সমাধানের জন্য দুই দেশের সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা নিরসনে কূটনৈতিক পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বিদ্যুৎ খাতে ১৫ বছরে ৭২ হাজার কোটি টাকার লুটপাট
সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতীয় নাগরিক আটক
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশি জানলেই হয়রানি
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের গোলামি করতে স্বাধীনতা অর্জন করিনি: সোহেল তাজ
মাইক্রোসফটের সমীক্ষায় ভুয়া খবর ছড়ানোর শীর্ষে ভারত
আগরতলার বাংলাদেশ হাইকমিশনে কনস্যুলার সেবা বন্ধ
একটি ইস্যু দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক মূল্যায়ন করা যাবে না : ভারতীয় হাইকমিশনার
জাতীয় ঐক্যের ডাক দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ
শান্তিরক্ষী বাহিনীর ভূমিকা মমতা বোঝেন কিনা, নিশ্চিত নই: শশী থারুর
যমুনার চর কেটে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ
২০২৩ সালে সর্বোচ্চ দুর্নীতি পাসপোর্ট, বিআরটিএ ও আইনশৃঙ্খলায়
শেখ হাসিনার পতন কোনোভাবেই মানতে পারছেন না ভারত : রিজভী
ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে জরুরি তলব
সেনাবাহিনীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, এসএসসি পাসেই আবেদনের সুযোগ
এস আলম পরিবারের ৩৫০ ব্যাংক হিসাবের সন্ধান
২৮ বিয়ে প্রসঙ্গে যা বললেন নায়িকা রোমানা
বাংলাদেশিদের সেবা দেবে না ত্রিপুরার কোনো হোটেল–রেস্তোরাঁ
ভারত সফরে আসছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন
‘বাংলাদেশি কনস্যুলেটে হামলা প্রতিবেশীদের মধ্যে বিবাদের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে’
বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলায় ৩ পুলিশ বরখাস্ত, গ্রেপ্তার ৭