সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের নতুন উদ্যোগ, প্রত্যাশা টেকসই সমাধান

২০১৭ সালে মিয়ানমার বাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্প ও ভাসানচরে অবস্থান করছে। দীর্ঘ প্রায় ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকে ও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।

২০১৭ সালের নভেম্বরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নেওয়া প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। চীনের মধ্যস্থতায় ২০১৯ সালে আবার প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। ফলশ্রুতিতে গত প্রায় ছয় বছরে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থেমে ছিল। ২০২০ সাল থেকে স্বল্প পরিসরে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরু না হওয়ায় চীন মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে আসছিল। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আসিয়ান দেশগুলোও ছোট পরিসরে প্রত্যাবাসন শুরু করার বিষয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল।

সম্প্রতি মিয়ানমার পাইলট প্রকল্পের আওতায় এক হাজারের কিছু বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ৮ মার্চ মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও আসিয়ানের কয়েকটি দেশসহ আট দেশের কূটনীতিকদের রাখাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। ৮ দেশের ১১ কূটনীতিককে মিয়ানমারের মংডু ও সিটওয়ে শহরে অন্তর্বর্তীকালীন ক্যাম্পসহ আশপাশের এলাকা দেখানো হয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নেওয়া প্রস্তুতির অগ্রগতি দেখাতে এই কূটনীতিকদের সেখানে পরিদর্শনে নেওয়া হয়েছে। মিয়ানমার দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে চায় বলে তাদের জানানো হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলোর থেকে জানা যায় যে, চীনের চাপে মিয়ানমার এ উদ্যোগ নিয়েছে।

কূটনীতিকরা রাখাইন থেকে ফিরে এসে রাখাইনের চলমান পরিস্থিতি ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের তুলনায় এখন কিছুটা ভালো বলে জানিয়েছে। মিয়ানমারের সিটওয়ের কাছে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত (আইডিপি) ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারা এখন সিটওয়ে শহরে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে, আগে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে বের হতে দেওয়া হতো না। প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায় যে, রোহিঙ্গারা সেখানে স্বল্পপরিসরে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে যা এতদিন ছিল না।

রাষ্ট্রদূতরা নাফ নদীর পাড়ের নকুইয়া গ্রামে পাঁচ বছর আগে বানানো অন্তর্বর্তীকালীন ক্যাম্পের সংস্কার কাজ দেখেন। নাফ নদীপথে যে সব রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে তাদের প্রথম কিছুদিন এই ক্যাম্পে রাখা হবে। এরপর তারা মংডুর লাপুখা ক্যাম্পে স্থানান্তরিত হবে। সেখানে তারা মাসখানেক থাকবে এবং সবশেষে তাদের মংডু এবং সিটওয়ের কাছে নির্মাণাধীন ক্যাম্পগুলোতে স্থায়ীভাবে স্থানান্তর করা হবে। কূটনীতিকদের চকপিউ এলাকায় ২০১২ সাল থেকে বসবাসরত আইডিপি’দের ক্যাম্পও দেখানো হয়। এই ক্যাম্পগুলো বন্ধ করে পাশের গ্রামে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে স্থানান্তর করা হবে বলে তাদের জানানো হয় । চকপিউ একটা গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এখানে চীনের বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত তেল কোম্পানি এবং গভীর সমুদ্রবন্দর রয়েছে।

বিভিন্ন মিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে, বর্তমানে রাখাইনের পরিস্থিতি ভালো। কয়েক মাস আগে রাখাইনে আরাকান আর্মি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। পরবর্তীতে নিপ্পন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাসাকাওয়ার মধ্যস্থতায় সেখানে সাময়িক অস্ত্র বিরতি চলছে এবং আপাত শান্তি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় হাজারখানেক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে প্রত্যাবাসন শুরু করা যেতে পারে।

প্রত্যাবাসন শুরু হলে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ কিছুটা কমবে এবং সামরিক সরকারের গ্রহণযোগ্যতা কিছুটা বাড়বে বলে চীন মনে করে। আগামী ২৪ এপ্রিল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় মিয়ানমারকে তাদের যুক্তি পেশ করতে হবে, প্রত্যাবাসনের এই উদ্যোগের সঙ্গে আইসিজে’র সম্পর্ক থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকার আইসিজেকে জানাবে যে তারা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পদক্ষেপ নিচ্ছে।

 

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে ৮ লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের দেওয়া এই তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছিল মিয়ানমার। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ওই তালিকা থেকে পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে পরিবারভিত্তিক প্রত্যাবাসনের জন্য প্রাথমিকভাবে ১১৪০ জনকে বাছাই করা হয়।এর মধ্যে ৭১১ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমার সম্মতি দেয়। বাকি ৪২৯ জনের ব্যাপারে তাদের আপত্তি থাকায় তাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করতে ১৫ মার্চ মিয়ানমারের মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্সের মংডুর আঞ্চলিক পরিচালক অং মাইউ’র নেতৃত্বে ১৭ সদস্যর প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসে। প্রতিনিধি দলটি সাত দিনে ৪২৯ রোহিঙ্গার সাক্ষাৎতের মাধ্যমে তথ্য যাচাই শেষে ২২ মার্চ বাংলাদেশ ত্যাগ করে।

মিয়ানমার পাইলট প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায়। প্রত্যাবাসনের বিষয়ে তারা যে আন্তরিক এই প্রকল্পের মাধ্যমে তারা সেটা বোঝানোর চেষ্টা করবে। পরিবারভিত্তিক প্রত্যাবাসনের আওতায় প্রথমে এক হাজারের কিছু বেশি রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।

মিয়ানমারের তথ্য উপমন্ত্রী মেজর জেনারেল জাও মিন তুন এপ্রিলের মাঝামাঝি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ক পাইলট কর্মসূচি শুরু হতে পারে বলে জানায়। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের আবাসনের জন্য ৭৫০টি প্লটের উপর ১৫টি নতুন গ্রাম তৈরি করতে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ফেরত নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রথমে দুই মাসের জন্য হ্লা ফো খাউং অন্তর্বর্তী ক্যাম্পে রাখা হবে। সেখান থেকে মংডু শহরের তাউং পিয়ো লেটওয়ে ও নাগার খু ইয়া ক্যাম্পে তাদের যাচাই করার পর তাদের নতুন এই গ্রামগুলোতে পাঠানো হবে।

গত ২৩ মার্চ মিয়ানমার জানিয়েছে যে, এই পাইলট প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে আরও পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে তাদের নিজ গ্রামে ফিরতে ইচ্ছুক। তবে নিজ গ্রামে ফেরত না যেতে পারলে তারা প্রত্যাবাসনে আগ্রহী নয়। নাগরিক অধিকার, ভ্রমণ স্বাধীনতা কিংবা অন্যান্য জাতিসত্তার সমান অধিকারের নিশ্চয়তা পেলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে।

ইউএনএইচসিআর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি মূল্যায়নের পর সেখানকার পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুকূল নয় বলে জানায়। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় পাইলট প্রকল্পের আওতায় মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে ইউএনএইচসিআর জানায় যে, রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের এই আলোচনায় তারা জড়িত নয়।

ইউএনএইচসিআর রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করছে বলে জানিয়েছে। রোহিঙ্গারা যাতে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে অংশ নেয় সে জন্য তারা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে। ইউএনএইচসিআর, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরির প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে। বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এবং তাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা অব্যাহত রাখবে ইউএনএইচসিআর।

যেসব রোহিঙ্গাদের তথ্য যাচাই বাছাই করা হয়েছে তাদের অনেকে এখনই মিয়ানমার ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী নয় বলে জানা যায়। তারা মিয়ানমার ফেরার ব্যাপারে যথেষ্ট ভরসা পাচ্ছেন না। মিয়ানমারে থাকা রোহিঙ্গারা সেখানে ভালো আছে এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার বন্ধ হওয়ার বিষয়ে সেখানে থাকা রোহিঙ্গারা তাদের আশ্বস্ত করলে তারা নিজেরাই মিয়ানমারে ফিরে যাবে জানায়।

মিয়ানমারে ক্যাম্পগুলোতে অবস্থানরত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। চলমান সহিংসতায় জাতিসংঘ ও অন্যান্য সাহায্য সংস্থাগুলো মিয়ানমারে ত্রাণ কার্যক্রম সঠিকভাবে চালাতে না পারার কারণে রোহিঙ্গারা সেখানে শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সে সব ক্যাম্পে ত্রাণ কার্যক্রম অবিলম্বে চালু করার ব্যবস্থা করতে হবে। এই পাইলট প্রকল্পে মিয়ানমার জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে সঙ্গে রাখেনি। গত ছয় বছর ধরে এই সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সহায়তা দিয়ে আসছে। জাতিসংঘ রাখাইনের পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের সহায়ক নয় বলে জানিয়েছে। ত্রাণ সহায়তা ছাড়া রোহিঙ্গারা আবার মানবিক বিপর্যয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই উদ্যোগে তাই তাদের সাথে রাখার দরকার ছিল বলে অনেকে মনে করে।

বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গারা বিভিন্ন সময় দাবি জানিয়ে আসছে যে, নাগরিকত্ব না পেলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবেন না। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়ে কিছু জানায়নি এবং রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে তাদের মনোভাবের পরিবর্তনের বিষয়টিও স্পষ্ট নয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে অগ্রগতির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের তাদের জনগণ মনে করে বলে জানিয়েছে, তবে এই প্রকল্পে তাদেরও কোনো সম্পৃক্ততার কথা জানা যায়নি। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক মনোভাবের পরিবর্তন সম্পর্কে নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়েও কিছু জানা যায়নি এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার পরিবর্তনের ইঙ্গিতও স্পষ্ট নয়।

রোহিঙ্গা অধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে যে, নাগরিকত্বের স্বীকৃতি ছাড়া প্রত্যাবাসন হলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি তৈরি হবে। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার পর নতুন বানানো গ্রামে স্থানান্তরিত করবে বলে জানিয়েছে কিন্তু রোহিঙ্গারা তাদের নিজ গ্রামে ফিরতে চায়। মিয়ানমারের ক্যাম্পগুলোতে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের তাদের আগের বাড়িঘর ও গ্রামগুলোতে পুনর্বাসন করা শুরু হলে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হবে ও রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে যাবে এবং এর ফলে সার্বিক প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া টেকসই হবে বলে আশা করা যায়।

রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের উপর বোঝার মত চেপে আছে। বিরাজমান বৈশ্বিক সংকটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ রোহিঙ্গা সংকট থেকে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর্থিক সংকটের কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য বাজেট কমানো হয়েছে। এর পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে। চলমান এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ চাইছে, সংখ্যায় কম হলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হোক। বাংলাদেশ সরকার টেকসই প্রত্যাবাসনের উপর জোর দিয়ে তা চলমান রাখার ব্যাপারে আগ্রহী। এ বিষয়ে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সক্রিয় সহযোগিতা আশা করে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য নেওয়া মিয়ানমারের এই উদ্যোগ ইতিবাচক। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের তাদের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের বিষয়ে আশ্বস্ত করে টেকসই পরিকল্পনার মাধ্যমে এই কার্যক্রম চলমান রাখবে এটাই প্রত্যাশা।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) হাসান মো. শামসুদ্দীন: মিয়ানমার ও রোহিঙ্গাবিষয়ক গবেষক

আরএ/

Header Ad
Header Ad

মে মাসে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

জুলাই-আগস্ট গণঅভুত্থানে গণহত্যার মামলায় আগামী মাসের শুরুতেই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে-আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আলজাজিরার বৈশ্বিক নেতাদের সাক্ষাৎকারমূলক অনুষ্ঠান ‘টক টু আল–জাজিরা’য় এ কথা বলেন তিনি।
আগামী ডিসেম্বর থেকে আগামী বছর জুনের মধ্যেই নির্বাচন হবে বলে ফের জানিয়েছেন তিনি

এ সময় তিনি আরও বলেন, শুধু মানবিক সহায়তা নয়, নিরাপদ প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান।

বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উদাহরণ সৃষ্টিকারী নির্বাচন উপহার দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা এখনও তুঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান।

আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লব, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, সাবেক সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।

আলজাজিরার উপস্থাপক ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, এটা কি বলা ঠিক যে, শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন সম্ভবত শেষ হয়েছে? কিছু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব আপনাকে দিতে হবে। কারণ, পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অনেকে রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে।

জবাবে ড. ইউনূস বলেন, মধুচন্দ্রিমা শেষ হোক বা না হোক, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি চলে যেতে এখনও বলছে না। বরং একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে সরকারই নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে। জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা এখনও বলছে না।

লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারবে?

জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি। তারা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া যাতে তৈরি হয়।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়া হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন,
এ প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে–তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কিনা। তারা এখনও কিছু ঘোষণা করেনি। তা ছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ নানা বিষয় সামনে আসতে পারে।

তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তা নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দল আছে, যারা বলতে পারে যে, এ আইনের অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

সাক্ষাৎকারে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের প্রসঙ্গ ওঠে। ড. ইউনূস জানান,
তিনি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন তিনি। জবাবে মোদি বলেছিলেন, এটা তার জন্য সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু বললে, সেটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।

যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, একসঙ্গে কাজ করার নীতি নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা একসঙ্গেই পারস্পরিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিতে চাই।

Header Ad
Header Ad

ঢাকাসহ সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এর পাশাপাশি কমতে পারে দিনের তাপমাত্রা। এছাড়া আকাশ আংশিক মেঘলা থেকে মেঘলা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০-১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইতে পারে।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

সোমবার সকাল ৬টায় ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ২৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮২ শতাংশ।

সারাদেশের সকাল ৬ টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো অথবা বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে সারাদেশে দিনের তাপামাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

আরও বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

রোববার (২৭ এপ্রিল) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুরের ডিমলাতে সর্বোচ্চ ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

Header Ad
Header Ad

সবাই মিলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই লক্ষ্য: আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। ছবি: সংগৃহীত

ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় সনদ তৈরি করা। সবাই মিলে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার অংশ হিসেবে আলোচনা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের এলডি হলে গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

আলী রীয়াজ বলেন, চর্চা, ঐক্যে এবং সম্মিলিতভাবে জাতীয় সনদ তৈরি করতে সবার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় সনদ তৈরি করা। যাতে করে ক্ষমতার বিন্যাসে পরিবর্তন ঘটে। বাংলাদেশ যাতে সমস্ত সম্ভাবনা নিয়ে জাগ্রত হতে পারে। গত ৫৩ বছর মানুষ যে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করছে, সেই আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করা যায়, পথ উন্মুক্ত করা যায়, যেন সবাই মিলে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি। তারাই অংশ হিসেবে এ আলোচনা।

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন, মতামত ও সুপারিশই যথেষ্ট নয়। সব রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর জনমানুষের ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশকে নতুন বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর করতে পারব। কাজে কি লিখছি তা নয়, চর্চার মধ্য দিয়ে, অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে, প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে আমাদের এ কাজে অগ্রসর হতে হবে। আমরা সেই প্রচেষ্টায় আছি।

ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তরুণদের নেতৃত্বে প্রাণ দিয়ে যে সম্ভাবনা তৈরি করেছে, সবাই মিলে সে সম্ভাবনাকে বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হতে হবে। সেই পথ ও প্রচেষ্টায় সবাই একত্রিত আছি, থাকব। একত্রিত থাকার তাগিদ জারি রাখব।

রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে স্প্রেডশিট আকারে ৩৯টি দলের কাছে মতামত চেয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে ৩৫টি দল মতামত জমা দিয়েছে বলে জানান আলী রীয়াজ। রোববার পর্যন্ত কমিশন ১৯টি দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে। ২০তম দল হিসেবে গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে কমিশন সংলাপ করছে বলে জানান আলী রীয়াজ।

২০১৮ সালে বর্তমান গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত কোটা সংস্কার আন্দোলনের কথা তুলে ধরে আলী রীয়াজ বলেন, তাদের অকুতোভয় সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের নতুন পর্যায় সূচনা হয়েছিল। যার ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী পর্যায়ে একটি অভূতপূর্ব ও অভাবনীয় গণঅভ্যুত্থান হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

মে মাসে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা
ঢাকাসহ সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে
সবাই মিলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই লক্ষ্য: আলী রীয়াজ
ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ
কাশ্মীর সীমান্তে ভারত-পাকিস্তানের ফের গোলাগুলি
টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে ৩ পরিবর্তন
দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা
টটেনহামকে উড়িয়ে প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না মোদি
রেফারির কাছে ক্ষমা চাইলেন মাদ্রিদের ডিফেন্ডার আন্তনিও রুদিগার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা উপহার দিলেন ছাত্রদল নেতা
দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি
নওগাঁয় গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত না দেওয়ায় জাতীয় পার্টি’র নেতাকে গণধোলাই
পাকিস্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও পানি না দেওয়ার আহ্বান বিজেপি এমপির
এসআই নিয়োগের ফলাফল প্রকাশ, ৫৯৯ জনকে প্রাথমিক সুপারিশ
হাকিমপুরে গরীবের চাল ছাত্রলীগ নেতার গুদামে
চুরির অভিযোগে কুবির দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার
ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগবাড়িয়ে কিছু করার পক্ষে নয় ঢাকা
সাব-ইন্সপেক্টর পদে প্রাথমিক সুপারিশ পেল ৫৯৯ জন
দুই উপদেষ্টার এপিএস-পিও’র দুর্নীতির খোঁজে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু