জি-২০ দেশসমূহের পর্যটন ভাবনা
ভারতের গুজরাটে গত ৭-১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ পর্যটন ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের আগে ৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ‘জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য গ্রামীণ পর্যটন’ থিমকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞগণ গ্রামীণ পর্যটনের মাধ্যমে সেরা অনুশীলন, সাফল্যের সম্ভাবনা ও সমস্যাগুলো তুলে আনার প্রতি তাগিদ দেন। গ্রামের পর্যটন অবকাঠামো উন্নয়নে ইতিবাচক এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে পর্যটন কার্যক্রম কর্মসংস্থান সৃষ্টির ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম বলে তারা মত দেন।
উল্লেখ্য যে, জি-২০ গ্রুপে রয়েছে মোট ১৯টি দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এরা হলো দেশ হলো আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, জার্মানি, ফ্রান্স, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, মেক্সিকো, রাশিয়ান ফেডারেশন, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
জি-২০ পর্যটন খাতে পাঁচটি অগ্রাধিকার ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে, যা পর্যটন খাতের রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করার জন্য মূল সাংগঠনিক অবয়ব তৈরি করবে এবং ২০৩০ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোর লক্ষ্য অর্জন করবে। পাঁচটি অগ্রাধিকার ক্ষেত্র নিম্নরূপ:
ক. সবুজ পর্যটন অর্থাৎ টেকসই, দায়িত্বশীল ও পর্যটন খাতের স্থিতিস্থাপকতার জন্য এই খাতের সবুজায়ন।
খ. ডিজিটালাইজেশন অর্থাৎ পর্যটন খাতে প্রতিযোগিতামূলকতা, অন্তর্ভুক্তি ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য ডিজিটালাইজেশনের শক্তিকে কাজে লাগানো।
গ. দক্ষতা অর্থাৎ পর্যটন খাতে চাকরি ও উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে যুবকদের ক্ষমতায়ন।
ঘ. পর্যটন এসএমই অর্থাৎ পর্যটন খাতে উদ্ভাবন এবং গতিশীলতা ধরে রাখতে পর্যটন এসএমই, স্টার্টআপস ও বেসরকারি খাতকে লালন করা।
ঙ. গন্তব্য ব্যবস্থাপনা অর্থাৎ এসডিজি বাস্তবায়নকল্পে গন্তব্যের কৌশলগত ব্যবস্থাপনাকে পুনর্বিবেচনা করা।
গ্রামীণ পর্যটনের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক পরিবর্তন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্প্রদায় উন্নয়নকে উদ্দীপিত করার উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এ ছাড়া এরা গ্রামীণ পর্যটন ও প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যটনকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। গ্রামীণ পর্যটন মূল্যবোধ ও গ্রামগুলোকে তাদের সংশ্লিষ্ট ল্যান্ডস্কেপ, জ্ঞান ব্যবস্থা, জৈবিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, স্থানীয় মূল্যবোধ এবং কার্যকলাপ যেমন কৃষি, বনজ, পশুসম্পদ এবং মৎস্যসম্পদ, তাদের গ্যাস্ট্রোনমি সুরক্ষা করতে পারে। অন্য ফোকাস এলাকা হিসেবে রয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানসমূহ। এইসবে সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক নিদর্শন রয়েছে, যা সারা বিশ্বে প্রাচীন সভ্যতা সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি খুলে দেয়। পর্যটকদের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পর্যটনকে বাহন ব্যবহার করা যেতে পারে। এই প্রয়াস প্রত্নগন্তব্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বুঝার এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের পথ সুগম করতে পারে।
মোখলেছুর রহমান: রেক্টর, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্যুরিজম স্টাডিজ, ঢাকা।
এসএন