বইপ্রেমী পাঠকের মূল আকর্ষণ অমর একুশে বইমেলা
এবারের বইমেলা নিয়ে আমরা বেশ আশাবাদী। আশা করছি, বইমেলা গতবারের মতো এবারও ভালোভাবে আমরা শেষ করতে পারব। মেলার পরিসর একটু ছোট হয়েছে এ কথা সত্যি। যে কারণে অনেক দূরত্বে না হয়ে প্রকাশনাগুলো অপেক্ষাকৃত কম দূরত্বে বিন্যস্ত হয়েছে।
এ বছর জ্যামিতিকভাবে স্টল বিন্যস্ত হয়েছে। আমি মনে করি, এটি পাঠকদের জন্য ভালো হয়েছে। তাদের এক স্টল থেকে অন্য স্টলে যেতে বেশি দূরত্বে ঘুরতে হবে না। তবে ভালোর তো আসলে শেষ নেই। আমরা সারাবিশ্বই একের পর এক বৈশ্বিক বিপর্যয়ের মধ্যদিয়ে এগুচ্ছি। করোনা ধকল কাটিয়ে উঠার পরে একটু সুস্থির হতে না হতেই শুরু হয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। যুদ্ধের কারণে সব কিছুর দাম অনেক বেড়ে গেছে। সেক্ষেত্রে কাগজের মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজেই স্বাভাবিকভাবেই বইয়ের মূল্য কিছুটা বাড়বে। আমরা যদিও যতটুকু কম সম্ভব মূল্য নির্ধারণের চেষ্টা করছি।
তবে আমরা আশা করছি, যারা বই প্রেমিক তারা নিশ্চয়ই বই কিনতে মেলায় আসবে। এমনিতেই তারা দুটি বছর বই কিনতে পারেনি করোনার কারণে। বইয়ের দাম বেড়েছে, সেদিক থেকে আমরা কিছুটা চিন্তিত। কাগজের মূল্যবৃদ্ধিতে এতো টাকা দিয়ে বই কিনতে পারবেন কি না পাঠকরা, এটি একটি চিন্তার বিষয়। এটি আমাদের একটি শঙ্কার জায়গা। এ ছাড়া ভয়ের কিছু নেই। তা ছাড়া জীবনযাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা থাকতে হবে।
এবার বইয়ের সংখ্যাও কিছুটা কম হবে বিগত বছরগুলোর তুলনায়। তবুও নিত্যনতুন বই প্রকাশ হবে এবং প্রকাশকরা যদি লাভবান না হন, তাহলে এতো প্রকাশক কেন তৈরি হচ্ছে? কাজেই আমি মনে করি না, প্রকাশকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যাদের ভালো বই থাকবে, জনপ্রিয় বই থাকবে, গবেষণাধর্মী বই থাকবে অর্থাৎ বইয়ের ভ্যারিয়েশন থাকবে তাদের বই বিক্রি বেশিই হবে। কারণ আমরা যতই বলি না কেন শুধুমাত্র জনপ্রিয় ধারার পাঠক নয়, সব ধরনের বইয়েরই পাঠক ছিল এবং আছে। বিক্রি কম-বেশি হবে। যাদের বই মানসম্পন্ন হবে না তাদের বই বিক্রি হবে না। কাজেই আমি মনে করি না যে, এটি ক্ষতিকর। এ রকমটি হবেই। আমিতো দেখেছি, সেই ছোট ছোট স্টলগুলো থেকে এখন বড় বড় প্যাভিলিয়ন করছে, নিশ্চয়ই তাদের ভালো ব্যবসা হয়।
আমরা আশার কথাটিই আগে বলতে চাই। আমার এতো বছরের অভিজ্ঞতা আসলে সেটিই বলে। তবে একটি কথা যেটি বলতে চাই যে, এবারের মেলা একটু পরিশীলিত কম মনে হচ্ছে আমার কাছে। এর একটি কারণ— যারা স্টল বানিয়েছে তারা এখনো জায়গাগুলো পরিষ্কার করেনি। একটি দুটি দিন গেলে সেটি আরও ভালো বোঝা যাবে যে, মেলার আঙ্গিনাটি কীভাবে পরিষ্কার হয়। মেলায় ডাস্টবিন ব্যবস্থা করা হয়েছে কি না সেটিও দেখা দরকার। আশা করছি আরও পরিচ্ছন্ন ও ধুলা-বালি কম থাকবে। তা ছাড়া খাবারের স্টলগুলোও একপাশে বসানো হয়েছে। পাঠক দর্শনার্থীরা যেন বিশ্রাম নেওয়ার পাশাপাশি চা কফি খেতে পারেন সে ব্যবস্থাও আছে। ঝড় বৃষ্টি মোকাবিলায় একটা প্রতিরোধের ব্যবস্থা সবসময়ই থাকে। আমি মনে করি প্রাকৃতিক দুর্যোগও আমরা মোকাবিলা করতে সক্ষম হব।
লেখক, প্রকাশক সবাই আমরা আসলে তাকিয়ে থাকি একুশে বইমেলার দিকে। কারণ একুশে বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা ও এটি একটি জাতীয় আয়োজন। আমি অবশ্যই আশাবাদ ব্যক্ত করছি, বইমেলা এবার সুস্থ সুন্দরভাবেই সম্পন্ন হবে। প্রথম সপ্তাহে মেলা এমনিতেই খুব একটা জমজমাট হয় না। পরের সপ্তাহ থেকেই মেলাটি জমে উঠবে, নিত্য নতুন বই আসবে এবং পাঠকরা নতুন বই কিনবে। উৎসবমুখর আয়োজনে প্রচুর বই কেনা-বেচার মধ্যদিয়েই এবারের বইমেলা সফলভাবেই সম্পন্ন হবে।
মনিরুল হক: প্রকাশক অনন্যা
আরএ/