রোহিঙ্গা সংকট: ফিরে দেখা ২০২২
রোহিঙ্গাবিষয়ক নানা সমস্যা নিয়ে ২০২২ সাল অতিক্রান্ত হয়েছে। তবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১.২ মিলিয়ন রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন এখনো শুরু হয়নি। আশার কথা হচ্ছে বাংলাদেশ সফলতার সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছে এবং এই সংকটে বাংলাদেশের ভূমিকা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। দেশের মধ্যেও এই সমস্যার বিষয়ে নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণের সচেতনতা বাড়াতে সমর্থ হয়েছে যা কৃতিত্বের দাবি রাখে। যুক্তরাষ্ট্র ২১ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর দেশটির সেনাবাহিনীর চালানো সহিংসতাকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ১৪ জুন পঞ্চম জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ২৭তম আন্তর্জাতিক নিক্কেই সম্মেলনের বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে এশিয়ার দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। ১৩ জুন ২০২২, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মিয়ানমারবিষয়ক মহাসচিবের বিশেষ দূত ড. নোলিন হাইজারকে দ্বিপাক্ষিক প্রত্যাবাসন ব্যবস্থার দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাখাইনে কর্মসূচি বাড়াতে অনুরোধ জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার উপর জোর দিয়ে এই সমস্যার মূল সমাধান প্রত্যাবাসনের জন্য, আঞ্চলিক দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। কোভিড-১৯ মহামারি পরবর্তী ইউক্রেন ও আফগানিস্তান সমস্যার ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতার কারণে রোহিঙ্গাদের তহবিল সংকটের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহযোগিতা না কমানোর অনুরোধ জানানো হয়। ২০২২ সালে জে আর পি তে ৮৮ কোটি মার্কিন ডলারের বিপরীতে মানবিক কার্যক্রমের জন্য মাত্র ৪৪ শতাংশ বরাদ্দ পাওয়া গেছে যা বিবেচনার অবকাশ রাখে। প্রতি বছর ক্যাম্পগুলোতে প্রায় ৩৫ হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে, জনসংখ্যার এই বাড়তি চাপ মোকাবেলা ক্রমেই মানবিক সহায়তার উপর চাপ ফেলছে।
১৯ জুন ২০২২ বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থানকারী রোহিঙ্গারা বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য 'বাড়ি চলো' কর্মসূচির আয়োজন করে। এর মাধ্যমে তারা তাদের দাবি তুলে ধরে ও মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। ৩১ ডিসেম্বর নতুন বছরে নিজ দেশে ফেরার আকুতি জানিয়ে ‘গো হোম ক্যাম্পেইন-২০২৩’ স্লোগানে সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা। এ সময় ‘এনাফ ইজ এনাফ, লেটস গো হোম, ২০২৩ শুড বি রোহিঙ্গা হোম ইয়ার’ সংবলিত পোস্টার-প্ল্যাকার্ড হাতে দেশে ফেরার দাবি তোলে রোহিঙ্গারা।
মিয়ানমারে আসিয়ান চেয়ারের বিশেষ দূত কম্বোডিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী প্রাক সোখোন, রোহিঙ্গা ইস্যুর টেকসই সমাধানে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর বিষয়ে বাংলাদেশকে আশ্বাস দিয়েছে। ৬ আগস্ট বাংলাদেশ সফরের সময় রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান খুঁজতে আন্তরিকভাবে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন চীনের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর আই সি জে তে গাম্বিয়ার করা মামলার শুনানি এ বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। ২২ জুলাই আদালত মামলার এখতিয়ার নিয়ে মিয়ানমারের আপত্তি খারিজ করে দেয় এবং অভিযোগের বিষয়ে মিয়ানমারকে ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিলের মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এন ইউ জি এই বিচার প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করবে বলে জানায়। তারা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য রাখাইন অঞ্চলের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রচারণার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়ানোর মাধ্যমে তাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে পরিণত করা হয়েছিল। এর থেকে উত্তরণের উপায় দ্রুত বের করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে সামাজিক সমস্যা তৈরি এবং মাদক ও নারী পাচারে জড়িত হয়ে পড়ার বিষয়ে তার উদ্বেগের কথা কানাডিয়ান হাইকমিশনারকে জানানোর পর হাইকমিশনার জানান যে কানাডা সব সময় বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে। কানাডা রোহিঙ্গাদের জন্য দাতব্যের মাধ্যমে একটি অতিরিক্ত তহবিল তৈরি করছে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর উপর চাপ কমাতে বাংলাদেশ সরকার ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রম হাতে নিয়েছে যা একটি দূরদর্শী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ।
জাতিসংঘ শুরুতে এর বিরোধিতা করেছিল। পরবর্তীতে জাতিসংঘ ও জাপান এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা জাতিসংঘ ও জাপানের পর ভাসানচর প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার ৭৯ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। জাপান ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের সহায়তায় দুই মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে নেওয়া উদ্যোগের প্রশংসা করেছে জাপান।
স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হওয়াতে রোহিঙ্গাদের হতাশা ক্রমে তীব্র হচ্ছে এর ফলে নানা ধরনের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। গত ৫ বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অস্ত্র, মাদক, ধর্ষণ, অপহরণ, ডাকাতি, পুলিশের ওপর হামলা, হত্যা ও মানব পাচারসহ নানা অপরাধে ২ হাজার ৪৩৮টি বিভিন্ন ধরনের মামলা হয়েছে। ক্যাম্পের মধ্যে এসব হত্যাকাণ্ডের লক্ষ্য ছিল রোহিঙ্গা নেতা ও স্বেচ্ছাসেবকরা। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১২৫টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
মিয়ানমার থেকে অন্যান্য প্রতিবেশী দেশে মানব পাচার ও অবৈধভাবে মেথামফেটামিন বা ইয়াবা পাচার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। সেখানে স্থিতিশীলতা ফিরে না আসলে সংগঠিত অপরাধ দেশের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়বে এবং সামনের দিনগুলোতে বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা হুমকির সৃষ্টি করবে। ১৪ নভেম্বর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব ও ডি জি এফ আই বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের তমব্রু এলাকায় মাদকবিরোধী যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান চলাকালে মাদক চোরাচালানিদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষের সময় রোহিঙ্গা মাদক চোরাচালানকারীদের গুলিতে দায়িত্বরত অবস্থায় নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য নিহত এবং একজন আহত হয়। যতই দিন যাচ্ছে রোহিঙ্গা শিবিরে হত্যা, গুম, মাদক চোরাচালান ও অপহরণসহ নানা অপরাধ বেড়েই চলছে। প্রতিদিনই রোহিঙ্গাদের হাতে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয়রা।
১৬ নভেম্বর, ২০২২, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রথমবারের মতো 'মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি' শীর্ষক রেজুলেশনটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে মিয়ানমার, ইউএনএইচসিআর ও ইউএনডিপির মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারকটির পুনঃনবায়ন পূর্বক সেটার কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য বলা হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টা জোরদার করতে প্রস্তাবটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গাদের জন্য একটি পুনর্বাসন কার্যক্রম হাতে নিতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র সরকার অত্যন্ত আনন্দিত। প্রথম দফায় ৬০ জনের মতো রোহিঙ্গার একটি তালিকা নিয়ে কাজ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত ৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ থেকে ২৪ জন রোহিঙ্গা যুক্তরাষ্ট্রে উদ্দেশে রওনা হয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া মোট সহায়তার পরিমাণ দাঁড়ায় ১.৯ বিলিয়ন ডলার।
রাখাইন রাজ্যে গত চার মাসেরও বেশি সময় ধরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং আরাকান আর্মির (এ এ) মধ্যে তীব্র লড়াই চলছিল। আগস্ট মাসে উত্তর মংডুতে বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে এ এ’র মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয় ও প্রায় তিন মাস ধরে চলে। সীমান্ত উত্তেজনা কমাতে গত ২৩ নভেম্বর থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত বিজিপি ও বিজিবি মহাপরিচালক পর্যায়ের অষ্টম সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বিজিবি ও বিজিপি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের কথা জানানো হয়। সীমান্তের দুই পাশের অপরাধী চক্র ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অবস্থান চিহ্নিত হলে তাদের অপতৎপরতা রোধে তাৎক্ষণিক তথ্য আদান-প্রদানসহ একে অপরকে কার্যকরভাবে সহযোগিতা করতে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে।
বর্তমানে মিয়ানমার সেনাবাহিনী পি ডি এফ ও জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে বহুমুখী যুদ্ধ করছে। সেনাবাহিনী দেশের মাত্র ১৭% নিয়ন্ত্রণ করছে এবং ২৩% এলাকায় সংঘর্ষ চলছে। মিয়ানমারে ৩৩০টি শহরের মধ্যে ৭১% শহর এখন এনইউজি এবং জাতিগত প্রতিরোধ সংস্থার (ইআরও) নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ২৬ নভেম্বর এ এ এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি অনানুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতি হয়েছে। বেশ কয়েক দিন আলোচনার পর সামরিক বাহিনী এবং এএ রাখাইন রাজ্যে এই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। নিপ্পন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মি. ইয়োহেই সাসাকাওয়া এই যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছে।
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নেতারা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ, শক্তিশালী, বিশ্বাসযোগ্য ও একমাত্র রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিল। এর প্রেক্ষিতে গত ২০ নভেম্বর ২০২২ সারা বিশ্বের রোহিঙ্গা সম্প্রদায় আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (এ আর এন এ) নামে একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে। এই সংগঠনটি রোহিঙ্গাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তাদের বার্তা পৌঁছানো, মিয়ানমার এবং সারা বিশ্বের সব সহযোগীদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে সাহায্য করবে।
২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বর, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবারের মতো মিয়ানমার নিয়ে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, প্রস্তাবটিতে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধের পাশাপাশি অং সান সুচিসহ সব রাজবন্দির মুক্তির আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রস্তাবটিতে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবটির পক্ষে ১২টি দেশ ভোট দেয়। ১৫ সদস্য দেশের মধ্যে চীন, ভারত ও রাশিয়া ভোটদানে বিরত ছিল। এতে আসিয়ানের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ২০২১ সালে গৃহীত পাঁচ দফা ঐকমত্যের দ্রুত ও পূর্ণ বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। নিরাপত্তা পরিষদ প্রস্তাবটি অনুমোদন করায় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদের নিয়মিত কার্যকলাপের অংশ হয়ে গেল। প্রস্তাবটি রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত ও স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশের এতদসংক্রান্ত অব্যাহত প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালি ও ত্বরান্বিত করবে।
নিরাপত্তা পরিষদের গৃহীত প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, নিরাপত্তা ও মানবিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য বাংলাদেশের গৃহীত কার্যক্রমের প্রশংসা করা হয়। বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবিলার পাশাপাশি ক্যাম্পের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে যা প্রশংসার দাবি রাখে। ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রমে বর্তমানে জাতিসংঘের সঙ্গে জাপান, ইউ এস ও কানাডা যুক্ত হয়েছে। এতে বোঝা যায় যে এই সিদ্ধান্ত একটি বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ ছিল। বাংলাদেশ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ফোরামে রোহিঙ্গা সমস্যা সংক্রান্ত কার্যক্রম তুলে ধরে এর দ্রুত সমাধানে সক্রিয় সহযোগিতার জন্য আহ্বান করে আসছে। এর ফলে দেরিতে হলে ও বর্তমানে এই সংকট আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্থান করে নিয়েছে এবং বাংলাদেশের উদ্যোগের স্বীকৃতি মিলছে।
২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ সময়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হওয়ায় সংকটের মোকাবিলায় একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। যেকোনো পরিস্থিতিতে ত্রাণ ও আর্থিক সাহায্য চলমান রাখতে জরুরিভিত্তিতে আপতকালীন ব্যবস্থা গ্রহণ ও রিজার্ভ গড়ে তোলার ব্যবস্থা নিতে হবে। এ আর এন এ ও রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা অন্যান্য সংগঠনগুলোকে মিলিতভাব রাখাইনে প্রত্যাবাসন সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করার ব্যবস্থা নিতে হবে। সংকট সমাধানে গৃহীত চলমান সচেতনতামূলক কার্যক্রমগুলো চালিয়ে যেতে হবে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ২০২২ সালে নেওয়া উদ্যোগের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এসব কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন করা গেলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান আলোর মুখ দেখবে বলে আশা করা যায়।
হাসান মো. শামসুদ্দীন: ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এবং মিয়ানমার ও রোহিঙ্গাবিষয়ক গবেষক।
এসএন