আমরা ঋণের বোঝা বাড়াতে চাই না
আমাদের বর্তমান সময়ে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বগামীর কারণে এমন কিছু পলিসি নেওয়া যাবে না অথবা এমন কিছু করা যাবে না, যাতে এটি আরও বাড়ে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতি যথেষ্ট বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন দ্রব্যের ঊর্ধ্বমূল্য থাকায় আমাদের এখানেও দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে। স্থানীয় বাজারে দাম বেড়েছে অপেক্ষাকৃত বেশি। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যের উপরে আরও একটি চাপ আছে। কাজেই একটি বাজেটে আমরা যে ইমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন নিয়ে কথা বলছি, আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, এক্ষেত্রে আমাদের যেন এমনটি না হয়। একটি লাগামের মধ্যে যেন আমরা মূল্যস্ফীতি ধরে রাখতে পারি, সেই প্রচেষ্টা আমাদের থাকতে হবে।
আমরা যেহেতু অনেকাংশেই আন্তর্জাতিক বাজারের উপর নির্ভরশীল, সেজন্য জরুরি অবস্থা অথবা মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেলে যাতে দরিদ্র মানুষের কষ্ট না হয়, সেখানে যাতে স্বল্পমূল্যে পণ্যসামগ্রী তাদের দেওয়া যায় সেটি খেয়াল করতে হবে। তা ছাড়া এগ্রিকালচারে আমাদের আরও বেশি মনযোগ দেওয়া দরকার হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে যেহেতু সারের দাম বেড়ে গেছে, সেক্ষেত্রে খাবারের দাম অর্থাৎ কৃষিদ্রব্যতে মূল্য ধরে রাখা প্রয়োজন হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দামের বিষয়টি মাথায় রেখে কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
বর্তমান সময়কার ভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষাপটে যে চ্যালেঞ্জগুলো, যেমন— দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে একটু চাপ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাণিজ্যের ভারসাম্য অর্থাৎ আয় যতটা হচ্ছে, রপ্তানি যতটা হচ্ছে আমদানি তার চেয়ে অনেক বেশি। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, আয় যদি না হয়, ব্যয়ের বিষয়টিই কীভাবে হবে? এখন পর্যন্ত অনেক ঘাটতি আছে। অনেক বছর আমরা রেভিনিও টার্গেট পূরণ করতে পারিনি। এ বছরও সরকার একটি রেভিনিও টার্গেট দিচ্ছে, সেই জায়গাতে এই রেভিনিও অর্জন করা সম্ভব তা নয়। যে সুশৃঙ্খল অবস্থা দরকার, প্রযুক্তির ব্যবহার করা দরকার কর আদায়ের ক্ষেত্রে, ভ্যাট ট্যাক্স আদায়ে, সেটিরও কিন্তু গতি খুব ধীর।
আমরা আমাদের পলিসির যদি পরিবর্তন করতে না পারি, আমাদের অবকাঠামোগত পরিবর্তন না করতে পারি, তাহলে কিন্তু ব্যয়ের জায়গায় টাকা না থাকলে আমরা যতকিছুই চিন্তা করি না কেন , আমাদের কিন্তু ঋণ নির্ভর হতে হবে। আয় যদি বেশি হয়, তাহলেতো আমাকে ঋণ নির্ভর হতে হয় না। ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রার যে চাপ সেটিও থাকে না। কাজেই আয়ের জায়গাটিতে পলিসিগত অবকাঠামোর পরিবর্তন খুবই জরুরি।
একই সঙ্গে সময়ের ব্যাপারটিও খেয়াল রাখতে হবে অর্থাৎ মনিটরিং করতে হবে। প্রকল্প কতটা বাস্তবায়ন হচ্ছে সেটি তদারকির বিষয়টি সুস্পষ্ট নির্দেশনায় থাকতে হবে। কারণ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কিন্তু ঋণগুলো ম্যাচিউরড হবে। ততদিনে প্রকল্প বাস্তবায়ন না হলে আমরা ফেরত দেব কীভাবে? প্রকল্পগুলোতো আয় হওয়ার জন্যেই। প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়ে সেটি থেকে আয় হবে, সেটি অর্থনীতির বাস্তবায়নে কাজে লাগবে। তাহলেই কেবল ঋণ ফেরত দিতে সমস্যা হবে না। কাজেই মেগা প্রকল্পগুলো সময়মতো বাস্তবায়নের জন্য মনিটরিং এবং যেগুলো ধীরগতিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকতে হবে। আমরা ঋণের বোঝা বাড়াতে চাই না। কাজেই সেক্ষেত্রে আমাদের নিশ্চয়ই আয়ের সংস্থান করতে হবে এবং সেই লক্ষ্য অর্জনে অবশ্যই উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে।
নাজনীন আহমেদ: অর্থনীতিবিদ
আরএ/