দূষণ রোধে জনসংযোগ ও জনঅংশগ্রহণে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে
পরিবেশ বিষয়ে আমরা যত বড় ভুক্তভোগী পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে আমরা ততটাই উদাসীন। আমাদের আইন প্রণয়ন থেকে শুরু করে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা অনেক রকম প্রতিশ্রুতিসহ অনেক বড় বড় বুলি আওড়াচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আইনের প্রয়োগ ও গণসচেতনতা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণ ও পরিবেশ রক্ষার উদ্যোগ অথবা প্রতিরোধ গড়ে তোলার কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের ততটাই অনীহা দেখা যায়। সেটি বায়ুদূষণ হোক, জলদূষণ হোক, বর্জ্যের মাধ্যমে নদী খাল জলাধার ভরাট করা হোক, উন্মুক্ত অবস্থায় সমস্ত নির্মাণ কার্যক্রম হোক কোনো বিষয়েই আমরা কোনো দায়িত্বশীলতার প্রমাণ দেখাতে পারিনি।
এসব কার্যক্রমের ক্ষেত্রে চরম অনীহা আমাদের চরম দুরাবস্থার কারণ, একইসঙ্গে চরম মাত্রায় দূষণের দিকে ফেলে দিয়েছে। যদি ব্যাপারটি এমন হতো যে, এটি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এবং সেটির কারণে আমরা ভুগছি, তাহলে এতটা আফসোস হয়ত থাকত না। বিষয় হচ্ছে, যেগুলি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, সেগুলিতে আমাদের দুর্বলতা, অকার্যক্রম আইন প্রয়োগ, দুর্বল সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা এবং নির্বোধের মতোই অনেকক্ষেত্রেই আমাদের অনীহা। পুরো বিষয়টির একটি বড় ফাঁক হলো, জনসচেতনতা ও জনঅংশগ্রহণে বিনিয়োগ না করা। সরকার বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে এগুলি করতে চায়। জনবিমুখ ও জনবিচ্ছিন্ন সংগঠনগুলো কোনো কাজেই আসে না। এ বিষয়ে সবকিছু জানা সত্ত্বেও জনবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতের বিষয়ে সরকার বিমুখ। সবকিছু মিলিয়ে এটি একটি আত্মঘাতী প্রচেষ্টা। এর পরিণতি ৩২ থেকে ৩৬ শতাংশ বা ৫০ শতাংশ হতে পারে। এর মধ্যে মৃত্যুগুলো সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে হয়। এই মৃত্যুর ক্ষেত্রে নারী মৃত্যু, শিশু মৃত্যু এবং কর্মক্ষম মানুষের অক্ষম হয়ে যাওয়া এগুলো কিন্তু ধনী মানুষের হচ্ছে না। তারা চিকিৎসার জন্য বিদেশ চলে যায়। ফলে তারাও এই পুরো বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে ততটাই অমনোযোগী।
আমি মনে করি, রাজনৈতিকভাবে এটি মোকাবিলা করা প্রয়োজন। পরিবেশ রাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থা তৈরি করবে বলে আমি বিশ্বাস করতে চাই। সত্যিকার অর্থেই জনমানুষ, জনসংযোগ একইসঙ্গে জনদুর্ভোগ মোকাবিলায় আর কোনো পথ আছে বলে আমার জানা নেই। পুরো বিষয়টিই রাজনৈতিক কঠোর সদিচ্ছা ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। আমরা জানি পদক্ষেপগুলো সমীক্ষানির্ভর, তাই একধরনের মূল্যায়ন জরুরি। সেই মূল্যায়নের জন্য সরকারের ইঞ্জিনগুলোও কার্যকর নয়। এমনকি আইনগতভাবেও সক্ষমতা নেই। এ বিষয়ে সাবের হোসেন চৌধুরী আইনি কাঠামোর উন্নয়ন সংস্কারের চেষ্টা হিসেবে উদ্যোগ নিয়েও তিনি সেই আইনটি পাস করতে পারেনি।
একইরকমভাবে নদী কমিশন তৈরি করেও তাদের ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে রাখা হয়েছে। তারা শুধু সুপারিশ করতে পারে কিন্তু কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে না। এই ধরনের কাঠামো দিয়ে অর্থাৎ এই ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি দিয়ে আমরা মনে করি না ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। অতএব রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বুলি আওড়ানোর দিন শেষ। কাজেই পদক্ষেপনির্ভর সমীক্ষার মধ্য দিয়েই তাদের এগোনো আমাদের কাছে প্রত্যাশিত। অর্থাৎ আইনি কাঠামো সুদৃঢ়করণ, স্থানীয় সরকার যেন এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনার অধীনে ব্যাপক কাঠামো বিষয়ে ইতোমধ্যে একটি আইন সরকারের আওতাধীন আছে। নদী কমিশনের বিষয়ে আমাদের অনেকদিনের আশা যে, শুধুমাত্র সুপারিশ নয়, উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এই বিষয়গুলি আমলে নিয়ে এ বিষয়ে যত্নশীল হলেই কেবল বিরাট একটি উত্তরণের পথ দেখা যেতে পারে।
লেখক: নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি।
এসএন