শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

জেলহত্যা: ইতিহাসের আরেক কালো অধ্যায়

বাঙালি জাতির ইতিহাসে আরেকটি কলঙ্কিত অধ্যায়ের নাম জেলহত্যা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারের অভ্যন্তরে বিনাবিচারে এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্র বর্বরোচিতভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। এর কিছুদিন পরই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ইতিহাসের আরেকটি বর্বর হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করতে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোদ্ধা জাতীয় চার নেতাকে।

স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্র ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর আজীবন রাজনৈতিক সহকর্মী, তার অবর্তমানে যারা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেন সেই জাতীয় চার নেতা—সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মুনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে জেলখানার ভেতরে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।

কখন ও কেন জাতীয় চার নেতাকে হত্যার সিদ্ধান্ত?
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের পরেই এ চারজন নেতা ছিলেন দলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধকালে মুজিবনগর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে থেকে জাতীয় চার নেতা ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণার পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। ওই সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মুনসুর আলী, খাদ্য ও ত্রাণমন্ত্রী এ এইচ এম কামারুজ্জামান। এই সরকারের নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জিত হয়।

শেখ মুজিবকে হত্যার প্রায় আড়াই মাস পরে কারাগারে এ চার নেতাকে কেন হত্যা করা হয়েছিল?
শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব তখন অনেকটা দিশেহারা। চারজন সিনিয়র নেতাসহ অনেকেই কারাগারে এবং অনেকে আত্নগোপনে ছিলেন। বাকি নেতারা প্রকাশ্য কিংবা অপ্রকাশ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদের সঙ্গে সমঝোতা করেন। অনেকে আবার রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান।

তৎকালীন রাজনীতির বিশ্লেষক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করেন জেল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ৩ নভেম্বর মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে পাল্টা সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কিত। কারণ মুজিব হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা ভেবেছিলেন খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে সে অভ্যুত্থান আওয়ামী লীগ বা বাকশালের পক্ষে হচ্ছে। কিন্তু খালেদ মোশাররফ ও তার সমর্থকদের কার্যকলাপ থেকে এ ধরনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে মহিউদ্দিন আহমেদ উল্লেখ করেন।

তিনি আহমেদ বলেন, ‘ক্ষমতাসীন মোশতাক বা তার সমর্থকরা চাননি যে তাদের বিরোধী আরেকটি শক্তি শাসন ক্ষমতায় পুনর্বহাল হোক। ওই ধরনের একটা সরকার যদি হতো তাহলে জেলে থাকা সে চারজন ছিলেন সম্ভাব্য নেতা।’ তিনি বলেন এ সম্ভাবনা থেকে জেল হত্যাকাণ্ড হতে পারে। পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টিতে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর থেকেই হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা পাল্টা আরেকটি অভ্যুত্থানের আশঙ্কায় ছিল।

সেনাবাহিনীর মধ্যে ছিল এক ধরনের বিশৃঙ্খলা। সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিল ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। একদিকে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং অন্যদিকে মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ।

তখন ঢাকা সেনানিবাসে মেজর পদমর্যাদায় কর্মরত ছিলেন বর্তমানে বিগ্রেডিয়ার (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি এসব ঘটনা প্রবাহ বেশ কাছ থেকে দেখেছেন। তার সে অভিজ্ঞতা নিয়ে সাখাওয়াত হোসেন একটি বই লিখেছেন 'বাংলাদেশ রক্তাক্ত অধ্যায়: ১৯৭৫-৮১' শিরোনামে।

শেখ মুজিবকে হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা তখন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহেমদকে পরিচালনা করছিলেন। সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বঙ্গভবনের থাকা সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটা সংঘাত চলছিল সেনানিবাসের ঊর্ধ্বতন কিছু সেনা কর্মকর্তাদের। খন্দকার মোশতাক যে বেশিদিন ওখানে টিকবেন না, এটাও ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে সিনিয়র অফিসারদের মধ্যে একটা ধারণা জন্মেছিল। তখন আবার সিনিয়র অফিসারদের মধ্যেও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ছিল।’

শেখ মুজিবকে হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা ধারণা করেছিলেন যেকোনো পাল্টা অভ্যুত্থান হলে সেটি আওয়ামী লীগের সমর্থন পাবে। সে ধরনের পরিস্থিতি হলে কী করতে হবে সে বিষয়ে মুজিব হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা কিছুটা ভেবেও রেখেছিলেন। সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ওই ধরনের ক্যু হলে তখনকার আওয়ামী লীগে যাতে কোনো ধরনের লিডারশিপ না থাকে সেটাই তারা বোধ হয় নিশ্চিত করেছিল।’ হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা ভেবেছিল যদি সে চারজন রাজনীতিবিদকে যদি হত্যা করা হয় তাহলে পাল্টা অভ্যুত্থান হলেও সেটি রাজনৈতিক সমর্থন পাবে না।

         লেখক: নিরাপত্তা বিশ্লেষক, লেখক ও কলামিস্ট

খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান যে আওয়ামী লীগের সমর্থনে হবে এমন ধারণা সঠিক ছিল না বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। কিন্তু তারপরেও সে ধারণার ভিত্তিতে তৎকালীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় চারজন নেতাদের হত্যা করা হয় বলে বিশ্লেষকরা বলছেন। যদিও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন, খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে যে অভ্যুত্থান হয়েছিল সেটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক বা সমর্থনের বিষয়টি পরিষ্কার নয়।

কারাগারের ভেতর জাতীয় চার নেতা যেভাবে খুন করা হয়
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে একটি পিকআপ এসে থামে। তখন রাত আনুমানিক দেড়টা থেকে দুইটা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় সে গাড়িতে কয়েকজন সেনা সদস্য ছিল। ঢাকা তখন অস্থিরতার নগরী। সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থান নিয়ে নানা রকম কথা শোনা যাচ্ছে তখন। সে সময় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলার হিসেবে কর্মরত ছিলেন আমিনুর রহমান।

রাত দেড়টার দিকে কারা মহাপরিদর্শক টেলিফোন করে জেলার আমিনুর রহমানকে তাৎক্ষণিক আসতে বলেন। দ্রুত কারাগারের মূল ফটকে গিয়ে আমিনুর রহমান দেখলেন, একটি পিকআপে কয়েকজন সেনা সদস্য সশস্ত্র অবস্থায় আছে। মূল ফটকের সামনে সেনা সদস্যরা কারা মহাপরিদর্শককে একটি কাগজ দিলেন।

সেখানে কী লেখা ছিল সেটি অবশ্য জানতে পারেননি আমিনু রহমান। মূল ফটক দিয়ে ঢুকে বাম দিকেই ছিল জেলার আমিনুর রহমানের কক্ষ। তখন সেখানকার টেলিফোনটি বেজে উঠে। তিনি যখন টেলিফোনের রিসিভারটি তুললেন, তখন অপর প্রান্ত থেকে বলা হলো প্রেসিডেন্ট কথা বলবেন।

২০১০ সালে বিবিসি বাংলার কাছে সে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আমিনুর রহমান বলেন, ‘টেলিফোনে বলা হলো প্রেসিডেন্ট কথা বলবে আইজি সাহেবের সঙ্গে। তখন আমি দৌড়ে গিয়ে আইজি সাহেবকে খবর দিলাম। কথা শেষে আইজি সাহেব বললেন যে প্রেসিডেন্ট সাহেব ফোনে বলছে আর্মি অফিসাররা যা চায়, সেটা তোমরা কর।’

মূল ফটকের সামনে কথাবার্তার চলতে থাকে। এক সময় রাত তিনটা বেজে যায়। আমিনুর রহমান বলেন, এক পর্যায়ে কারাগারে থাকা তৎকালীন আওয়ামী লীগের চার জন নেতাকে একত্রিত করার আদেশ আসে।

কারা মহাপরিদর্শক একটি কাগজে চার ব্যক্তির নাম লিখে জেলার আমিনুর রহমানকে দিলেন। সেই চারজন হলেন- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামান। আমিনুর রহমানের বর্ণনা অনুযায়ী সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমদ কারাগারের একটি কক্ষে ছিলেন। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামানকে অপর কক্ষ থেকে এখানে নিয়ে আসা হয়। সেখানে আসার আগে ক্যাপ্টেন মনসুর আলী কাপড় পাল্টে নিলেন।

আমিনুর রহমান বর্ণনা করেন, ‘তাজউদ্দীন সাহেব তখন কোরআন শরিফ পড়ছিলেন। ওনারা কেউ আমাদের জিজ্ঞেস করলেন না আমাদের কোথায় নেওয়া হচ্ছে? সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেব হাত-মুখ ধুলেন। আমি বললাম আর্মি আসছে।’ চারজনকে যখন একটি কক্ষে একত্রিত করার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগার কারণে সেনাসদস্যরা কারা কর্মকর্তাদের নোংরা ভাষায় গালিগালাজ করছিল বলে জানান আমিনুর রহমান।

‘মনসুর আলি সাহেব বসা ছিল সর্ব দক্ষিণে। যতদূর আমার মনে পড়ে। আমি মনসুর আলীর 'ম' কথাটা উচ্চারণ করতে পারি নাই, সঙ্গে সঙ্গে গুলি,’ বলেন আমিনুর। কারাগারের ভেতর এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের খবর চার নেতার পরিবার সেদিন জানতে পারেননি। শেখ মুজিব হত্যার সঙ্গে চার নেতা হত্যাকাণ্ডের যোগসূত্র আছে বলে মনে করা হয়।

তাজউদ্দীন আহমদের পরিবার কারাগারের খোঁজ নেওয়ার জন্য সারাদিন চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। পরের দিন অর্থাৎ ৪ নভেম্বর পুরনো ঢাকার এক বাসিন্দা তাজউদ্দীন আহমদের বাসায় এসে জানান যে তিনি আগের দিন ভোরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গুলির শব্দ শুনেছেন। প্রয়াত তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি ২০১০ সালে বিবিসি বাংলাকে বলেন, ৪ নভেম্বর বিকেল চারটার দিকে খবর আসতে শুরু করলো তাজউদ্দীন আহমদসহ চারজন নেতাকে হত্যা করা হয়েছে।

তখন ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে কর্মরত ছিলেন আমিন আহমেদ চৌধুরী, যিনি পরবর্তীতে মেজর জেনারেল হয়েছিলেন। কয়েক বছর আগে মারা গেছেন মি. চৌধুরী। ২০১০ সালে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, তখন সেনাবাহিনীতে নেতৃত্ব নিয়ে টানাপোড়েনের পরিণতি ছিল জেলখানার হত্যাকাণ্ড।

১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের বিপরীতে পাল্টা আরেকটি অভ্যুত্থান হয়েছিল তেসরা নভেম্বর। সেটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশারফ। আমিন আহমেদ চৌধুরীর মতে, তেসরা নভেম্বরের অভ্যুত্থানটি ছিল অনিবার্য। কারণ শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছয়জন জুনিয়র সেনা কর্মকর্তা তখন বঙ্গভবনে বসে রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাককে পরিচালনা করছিলেন।

শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছয়জন জুনিয়র সামরিক কর্মকর্তাকে সেনাবাহিনীর চেইন অব কমাণ্ডের আওতায় আনার জন্য তেসরা নভেম্বর খালেদ মোশারফের নেতৃত্ব অভ্যুত্থান হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন জেনারেল চৌধুরী। তা ছাড়া শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডকেও তারা মেনে নিতে পারছিলেন না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

কিন্তু খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে সে অভ্যুত্থান সেনাবাহিনীর ভেতরে আবারও চেইন অব কমান্ড ভাঙার সম্ভাবনা তৈরি করেছিল বলে মনে করেন জেনারেল চৌধুরী। খালেদ মোশারফের অনুগত সৈন্যরা বন্দি করে সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে। ঢাকা সেনানিবাসে যখন এ অবস্থা চলছিল সে সময় পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে জেলখানায় আওয়ামী লীগের চারজন সিনিয়র নেতাকে হত্যা করা হয়।

পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টিতে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর থেকেই হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা পাল্টা আরেকটি অভ্যুত্থানের আশঙ্কায় ছিল। সেনাবাহিনীর মধ্যে ছিল এক ধরনের বিশৃঙ্খলা। সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিল ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। একদিকে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং অন্যদিকে মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ।

শুধু মুক্তিযুদ্ধ নয়, সকল আন্দোলন-সংগ্রামে এই চার নেতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকেছেন। বিভিন্ন সময় বঙ্গবন্ধুকে যখন কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে তখন আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়ে এই চার নেতা আন্দলন-সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়েছেন। ঘাতক চক্রের লক্ষ্য ছিল বাঙালিকে নেতৃত্বশূন্য করে বাংলাদেশকে পুনরায় পাকিস্তানের পদানত করে মুক্তিযুদ্ধের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়া। তাই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানে আটক করে রাখার পর যে চার নেতা বঙ্গবন্ধুর হয়ে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনেন, সেই জাতীয় চার নেতাকেও বঙ্গবন্ধুর মতো নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

খুনি মোশতাকের নেতৃত্বে স্বাধীনতাবিরোধী ওই চক্রটি এ দেশকে পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশ যাতে ঘুরে দাঁড়িয়ে আর এগোতে না পারে, স্বাধীনতা যাতে ব্যর্থ হয়, বাংলাদেশ যাতে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয় সেই চক্রান্ত করে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র অগ্রসর হয়। এরই অংশ হিসেবে এবং এ দেশে যাতে কোনোদিন স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সে জন্য রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার, হত্যা, নির্যাতনের ষড়যন্ত্র শুরু করে। সেই ষড়যন্ত্র থেকেই জেলখানার ভেতরে এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করে তারা।

মানবতাবোধের চরম নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতার সাক্ষী হচ্ছে ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবস। দেশের আপামর জনতা যাদের নেতৃত্বে ও নির্দেশে এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে মাত্র নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে দেশকে স্বাধীন করেছিল, যারা মুক্তিযুদ্ধকালে মুজিবনগর সরকারের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করে, এ দেশের জনগণকে একত্রিত করে ও দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বেগবান করে বিজয়ের পতাকা উঁচিয়ে ধরেছেন, সেই জাতীয় চার নেতাকে চরম নির্মমতার স্বাক্ষর রেখে ৩ নভেম্বর কারাগারের ভেতরে রাতের অন্ধকারে হত্যা করা হয়।

তথ্য সংগ্রহ: বিবিসি বাংলা, উইকিপিডিয়া এবং বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ।

লেখক: নিরাপত্তা বিশ্লেষক, লেখক ও কলামিস্ট।

এসএন

Header Ad

গাজীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালী গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

মৃত তিন শিক্ষার্থী হলেন- মোজাম্মেল হোসেন নাঈম (২৪), মোস্তাকিম রহমান মাহিন (২২) ও জোবায়ের আলম সাকিব (২২)।

জানা গেছে, শনিবার সকালে গাজীপুর মহানগরের বোর্ড বাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রায় ৪৬০ জন শিক্ষার্থী বিআরটিসির ৬টি ডাবল ডেকার বাস ও ৩টি মাইক্রোবাসে করে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উত্তর পেলাইদ গ্রামের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামীণ আঞ্চলিক সড়ক ধরে রিসোর্টের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় উত্তর পেলাইদ গ্রামের উদয়খালী বাজারে পৌঁছালে বিআরটিসির ডাবল ডেকার একটি বাস পল্লী বিদ্যুতের তারের স্পর্শে আসে। এ সময় বাসটি বিদ্যুতায়িত হলে কয়েকজন শিক্ষার্থী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। তাদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক জাকিউল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, তিনজনকেই মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। আহত সংখ্যা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। আমরা জরুরি বিভাগে যাচ্ছি।

Header Ad

কবে বিয়ে করবেন জানালেন তামান্না ভাটিয়া

ছবি: সংগৃহীত

মিল্ক বিউটিখ্যাত দক্ষিনি অভিনেত্রী তামান্না ভাটিয়া নতুন বছরে তার জীবনের একটি বিশেষ অধ্যায়ে পা রাখতে যাচ্ছেন। খলচরিত্র করে আলোড়ন তোলা অভিনেতা বিজয় ভার্মার সঙ্গে তার প্রেমের গুঞ্জন চলছিল অনেক দিন ধরেই। তবে এ নিয়ে কেউই মুখ খোলেননি। এবার তাদের সম্পর্ক নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তামান্না। এমনকি ২০২৫ সালে সাতপাকে বাঁধা পড়ার সম্ভাবনা আছে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমের এক প্রোমোশনাল ইন্টারভিউতে তামান্না তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে জানান, প্রেমের সম্পর্কের জন্য জীবনে দুবার হৃদয় ভেঙেছে তার। সেই সময়টা তামান্নার জন্য খুবই ভয়াবহ ছিল।

তিনি আরও জানান, তিনি খুব কম বয়সে একজন ছেলের সঙ্গে প্রথম ভালোবাসায় জড়িয়েছিলেন এবং তার দ্বিতীয় সম্পর্কটি ছিল তার অভিনয় ক্যারিয়ারের শিখরে থাকা অবস্থায়। তবে সে সময় তিনি অনুভব করেন যে, সেই ছেলে তার সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের জন্য সঠিক ব্যক্তি নয়।

তবে এত কিছুর পরও বাহুবলিখ্যাত তামান্না প্রেমিকের নাম প্রকাশ করেননি। এর আগে গুঞ্জন ছিল যে, তিনি ভারতীয় অভিনেতা বিজয় ভার্মার সঙ্গে ডেট করছেন। পাপারাজ্জিদের ক্যামেরায় বহুবার ফ্রেমবন্দি হয়েছেন তারা। যদিও নিজেদের এ সম্পর্ক আড়ালে রাখতে বদ্ধপরিকর দুজনই। এখন দেখার অপেক্ষা তামান্না জীবনসঙ্গী হিসেবে কাকে বেছে নেন।

সবশেষ তামান্না ভাটিয়াকে আইটেম গার্ল হিসেবে দেখা যায় অমর কৌশিক পরিচালিত ‘স্ত্রী ২’ সিনেমায়। এ সিনেমায় আরও অভিনয় করেন রাজকুমার রাও, শ্রদ্ধা কাপুর, পঙ্ক ত্রিপাঠিসহ আরও অনেকে।

Header Ad

পঞ্চগড়ে ৫০০ টাকায় সন্তান বিক্রি, অতঃপর যা ঘটল...

ছবি: সংগৃহীত

পঞ্চগড়ে ৫০০ টাকার বিনিময়ে নয় মাসের শিশু সন্তানকে দত্তক দেন শরীফা খাতুন নামে মানসিক ভারস্যমহীন এক মা। বিষয়টি জানতে পেরে গতকাল শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ওই নবজাতককে উদ্ধার করে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশের সহায়তায় ওই শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফেরত দেন।
মানসিক ভারসাম্যহীন নারী শরীফা খাতুন বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের জেমজুট মুসলিমবাগ এলাকায় তিন সন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালান।

প্রতিবেশী ও পরিবারের সদস্যরা জানান, গত এক বছর আগে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় শরীফা খাতুনের। এর পর সন্তানদের নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে চলত তার পরিবার।

গত মঙ্গলবার নিজের ৯ মাসের কন্যা সন্তানকে পঞ্চগড় পৌরসভার দক্ষিণ তেলিপাড়া এলাকায় একটি হলুদ খেতে রেখে ভিক্ষা করতে যান শরীফা খাতুন। এ সময় শিশুটিকে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে স্থানীয় রুনা আক্তার নামে এক নারী; একইসঙ্গে শরীফাকেও নিজ বাড়িতে নেন তিনি। রুনা নামে ওই নারীর নিজ সন্তান না থাকায় শিশুটিকে দত্তক নিতে চাইলে, ৫০০ টাকার বিনিময়ে রেখে চলে যান শরীফা।

এরপর চার দিন পর অবশেষে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় নিজ পরিবারের কাছে ফিরেছে শিশুটি। বর্তমানে শিশুটিকে দেখভাল করছেন মানসিক ভারসামহীন শরীফার ১৬ বছরের বড় ছেলে নয়ন।

এ বিষয়ে শরীফার ছেলে নয়ন ইসলাম বলেন, গত চার দিন আগে মা বোনকে নিয়ে হঠাৎ পঞ্চগড়ে যান। পরে একসময় বাড়িতে একাই এসে ঘরে তালা লাগিয়ে বন্দি অবস্থায় থাকতে শুরু করেন। বোন কোথায় তা জানতে চাইলে কোনো কিছুই জানাচ্ছিলেন না।

পরে অনেক কৈশলে বোনের অবস্থান জানতে পারি। এরপর সেই বাড়িতে গিয়ে বোনকে ফেরত চাইলে তারা দিতে অস্বীকার করেন। আরও জানতে পারি মা বোনকে নেবেন না বললে তারা ৫০০ টাকা মাকে খেতে দিয়ে একটা কাগজে স্বাক্ষর করে নেন। শুক্রবার সাংবাদিক ও পুলিশ এসে তদন্ত করে আমার বোনকে আনতে নির্দেশ দিলে মাকে সঙ্গে নিয়ে বোনকে বাড়িতে নিয়ে আসি।

স্থানীয় মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেক আগে থেকে ওই নারীকে দেখছি। তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে পরিবার চালান। তবে কয়েকদিন আগে নিজের সন্তানকে মানুষের কাছে দিয়ে প্রায় পাগল হয়ে বেড়াচ্ছিলেন।

কাজলা নামে স্থানীয় এক নারী বলেন, সকালে শরিফা আমার কাছে এসে আমার পা জড়িয়ে ধরেছেন আর বলেছেন আপু যেভাবেই পারো আমার মেয়েকে এনে দাও।

প্রতিবেশীরা বলেন, স্বামী না থাকায় পরিবারটা চালাতে শরীফা খাতুন ভিক্ষা করতেন। এর মাঝে এমন কাণ্ড ঘটে তিনি পাগল হয়ে গেছেন। তার তিনটা সন্তান। একটা ছেলে ও দুটি মেয়ে। এদের কি হবে আমরা জানি না। তবে সরকারি সহায়তা পেলে তাদের গতি হতো।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, আগের বিষয়টি আমাদের কেউ জানায়নি। খবর পাওয়ার পর পঞ্চগড় সদর থানার ওসিকে জানানো হয়। বিষয়টি পুলিশের হস্তক্ষেপে সুষ্ঠু সমাধান করে ভারসাম্যহীন নারীর কাছে তার বাচ্চা ফেরত দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, যেহেতু ওই নারীর বাড়ি বোদা উপজেলায়, সেখানকার ইউএনওকে জানিয়ে সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

গাজীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
কবে বিয়ে করবেন জানালেন তামান্না ভাটিয়া
পঞ্চগড়ে ৫০০ টাকায় সন্তান বিক্রি, অতঃপর যা ঘটল...
অ্যান্টিগায় প্রথম দিন শেষে স্বস্তিতে টাইগাররা
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন পরীমণির প্রথম স্বামী
বিচারের আগে আ.লীগের মাঠে থাকার সুযোগ নেই: উপদেষ্টা নাহিদ
মাকে হত্যার পর থানায় হাজির ছেলে
৮ ক্রিকেটারসহ ৯ জনকে নিষিদ্ধ করলো বিসিবি
উপদেষ্টাদের যাচ্ছেতাই কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া হবে না: রিজভী
ভিসা কবে উন্মুক্ত করবে সেটা ভারতের নিজস্ব ব্যাপার: হাসান আরিফ
জুরাইন রেলক্রসিং ছাড়লেন রিকশাচালকরা, ৪ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল শুরু
পাঁচ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা
সাফজয়ী নারী ফুটবলার আইরিনকে নওগাঁয় সংবর্ধনা
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দেবে পাকিস্তান
বেনাপোলে সীমান্ত থেকে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল উদ্ধার
পুলিশ-অটোরিকশা চালক সংঘর্ষ, ঢাকা-পদ্মা সেতু ট্রেন চলাচল বন্ধ
ভারতীয় সাবমেরিনের সঙ্গে মাছ ধরা নৌকার সংঘর্ষ, নিখোঁজ ২
সংসার ভাঙার দুদিন পরই সুখবর দিলেন এ আর রহমান
ঢাকায় পৌঁছেছেন বাইডেনের বিশেষ প্রতিনিধি
আ.লীগকে নির্বাচনের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে যা বললেন হাসনাত আব্দুল্লাহ