পরিবেশ উন্নয়নে সবাইকে সচেতন হতে হবে
পৃথিবীর সব উন্নত দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অনেক আধুনিক। সেসব দেশের মানুষ তাদের প্রতি দিনের ব্যবহৃত বর্জ্য যেমন— খাবারের অবশিষ্টাংশ, কাগজ বা ব্যবহৃত টিস্যু পেপার, পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যাগ, পঁচা ফল-মূল, মুখের কফ, সিগারেটের অবশিষ্টাংশসহ সবকিছু নির্দিষ্ট বিনে বা বাক্সে ফেলে। সেখান থেকে সেসব বর্জ্য নির্ধারিত লোকজন সংগ্রহ করেন। এরমধ্যে যেসব বর্জ্য পুনর্ব্যবহার (recycling) করা যায় সেসব আলাদা করেন এবং প্রক্রিয়া (process) করে পুনরায় ব্যবহার করেন।
আমাদের মত উন্নয়শীল দেশে সেটা করা এখনো সম্ভবপর হয়নি। তাই বলে এটি কখনো করা সম্ভব নয়— তা কিন্তু নয়। এটি অবশ্যই করা সম্ভব এবং তা করতেই হবে। না করলে আমাদের মৃত্যুর পর আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের অভিযুক্ত করবে । আমরা নিশ্চয়ই সে অভিযোগে অপমানিত হতে চাই না ।
অজ্ঞতা ও অসচেতনতার জন্য আমাদের মত দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী তাদের বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলে দিয়ে মনে করে এটা কোনো অপকর্ম নয় ..। কিন্তু তারা জানে না যে, তাদের ফেলা এ সব বর্জ্যের মধ্যে অনেকগুলো রোগ বালাই সৃষ্টি করে তাদের নিজের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঘটনা ঘটাচ্ছে। পরিবেশ দূষণের মাধ্যমে আমরা যে নিজেদের জীবন এবং আমাদের সন্তানদের অনাগত জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছি তা বুঝাতে হবে আমাদের বিশাল অসচেতন জনগোষ্ঠীকে।
সরকারের এ বিষয়ে বড় দায়িত্ব রয়েছে। জেলা উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে যত প্রশাসনিক সভা হয়ে থাকে সেখানে পরিবেশের ব্যাপারে সব জনপ্রতিনিধিকে সচেতন করতে হবে। প্রয়োজনে মাসিক সমন্বয় সভায় যে সব জনপ্রতিনিধি পরিবেশ নিয়ে প্রশংসনীয় কাজ করে চলেছেন তাদের পুরস্কৃত করতে পারে সরকার। তাহলে অন্যরাও এ বিষয়ে সচেতন হবেন এবং নিজেরাও পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করবেন ।
গ্রাম-গঞ্জ কিংবা শহরে যত রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ হয় সেসব সভা-সমাবেশের যিনি প্রধান অতিথি কিংবা বক্তা থাকেন তিনি দেশের পরিবেশ উন্নয়ন ও এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধির ব্যাপারে বক্তব্য রাখার জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেওয়া দরকার। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সবক্ষেত্রে আধুনিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন, পরিবেশ উন্নয়ন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা , মানবাধিকার সুরক্ষা, সরকারি অর্থের সঠিক ব্যবহার, নারী নির্যাতন বন্ধ করা ইত্যাদি বিষয়ে সব সময় আলোচনা করতে হবে আমাদের।
দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অঙ্গন পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পরিবেশ সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে বার বার সচেতন করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও তা জানাতে হবে। যে সব শিশু শৈশব থেকে পরিষ্কার-পরিছন্ন থাকতে শেখে তারা সারা জীবন পরিষ্কার রাখে নিজেকে ও চারপাশকে।
আমি দেশের ৭২টি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। এদের ৯০% প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর সৌভাগ্যও হয়েছে আমার। এসবের মধ্যে নটরডেম কলেজ যেটিতে আমি শিক্ষার্থী ছিলাম ৪৩ বছর আগে সেটির পরিবেশ অসাধারণ। যা কিনা আমার জীবনকে পাল্টে দিয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাসের প্রশংসা করতেই হবে। সেটির সম্মানিত অধ্যক্ষ ২০১৭ সালে আমাকে সঙ্গে নিয়ে কলেজটির সব স্থান দেখান। তিনি আমাকে জানালেন যে, এখানে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার পর কয়েকটি বিষয়ে সর্তক করা হয় । তা হলো—
- কলেজের টয়লেটের বেসিন ব্যতীত অন্য কোথায় থুথু ফেলা
যাবে না ।
-দেয়াল লিখন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ সেখানে
-ধুমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ।
-ফুল বা অন্য গাছের পাতা ছেঁড়া যাবে না ।
-কাগজের টুকরা মাটিতে ফেলা যাবে না ।
-উচ্চ স্বরে কথা বলা যাবে না । এসব আরও কিছু বিষয় ।
রাজশাহী কলেজটির ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ ও রেজাল্ট বিবেচনায় সেটি অনেকবার সেরা কলেজের পুরস্কার পেয়েছে।
ক্যাডেট কলেজসহ দেশের অনেক স্কুল কলেজের পরিবেশ পরিছন্ন রয়েছে। তবে বিপুল সংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরের পরিবেশ ভাল দেখিনি। আমি যখনই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলি তখনই তাদের পরিবেশ সচেতন করতে চেষ্টা করি। তাদের সৌন্দর্য বোধ সম্পর্কে অবহিত করি।
আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমরা নিজেরা যত পরিবেশ সুন্দর রাখব, দেশ তত সুন্দর হবে। আসুন আমরা আমাদের চার পাশের সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন করি।
লেখক: সাবেক কর কমিশনার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর ট্যাক্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ
আরএ/