শাস্তি যেন ক্ষতিপূরণ না হয়, শাস্তি হবে দায়বদ্ধতা
গতকালের দুর্ঘটনাটি আমাদের জন্য একটি মেসেজ । আমি মনে করি, আমাদের প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট ফাঁক রয়েছে। প্রকল্প পূর্ব ‘প্রাক-সমীক্ষা’ এবং প্রকল্প চলাকালীন জনদুর্ভোগ এবং জননিরাপত্তা বিষয়ে অর্থের সংস্থান সেটি রাখা প্রয়োজন। আবার সেটি রাখা হলেও তার যথাযথ ব্যবস্থাপনা হচ্ছে কি না সেটি খেয়াল করা। যাতে করে প্রকল্প চলাকালীন জনদুর্ভোগের ব্যবস্থাপনা করা যায়। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। সেটিকে দায়বদ্ধ আচরণের ভেতর দিয়ে বাস্তবায়িত করতে হয়।
একই সঙ্গে আমাদের প্রকল্পগুলো দীর্ঘসূত্রিতার ভেতর দিয়ে প্রকল্প ব্যয় যখন বেড়ে যায়, তখন শুধু ব্যয় বৃদ্ধি নয়, সময় বেড়ে যাওয়ার কারণে এক ধরনের অবহেলা প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে জেঁকে বসে। এটি নিশ্চয়ই দুঃখজনক।
আমাদের দেশে এই ধরনের আরও তিনটি ছোট বড় ঘটনা ঘটেছে। এর কোনোটিরই সঠিক বিচার অথবা তার দায়বদ্ধতারও নিশ্চিত আচরণ করা হয় নাই। প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই এটি ধারণা করেন, এটি বোধহয় পার পাওয়া সংস্কৃতির অংশ। এ কারণেই অবহেলা শুরু হয় এবং অবহেলা থেকেই আসে হত্যাকাণ্ড। ফলে অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড নিরোধক প্রথম কাজ হচ্ছে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে জননিরাপত্তা ও জনদুর্ভোগ প্রাধান্যের বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ বানানোর জন্য একটি জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
শাস্তি বলতে আমরা ক্ষতিপূরণের বিপক্ষে। শাস্তি যেন ক্ষতিপূরণ না হয়। শাস্তি হবে দায়বদ্ধতা। এই দায়বদ্ধতা সকলের।
দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। যাতে করে এটির পুনরাবৃত্তি আমরা ঠেকাতে পারি। এই পুরো কার্যক্রমের একই ধরনের ঘটনা নগরজুড়ে ঘটেছে। এম আর টি র কাজ হয়েছে। সেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটে নাই। এই পুরো কার্যক্রমে একই ধরনের ঘটনা ঘটেনাই। তার কারণ হলো, উপযুক্ত সাবধানতা জননিরাপত্তা নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে অথবা এটি দেখার জন্য কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করেছেন। ফলে এখানে বারংবার চেষ্টা ব্যহত হচ্ছে কেন? সেই জায়গাগুলো এখনই যদি কঠোর সিদ্ধান্ত এবং বাস্তবায়ন করা হয় কঠোর কতগুলো পদক্ষেপ নেওয়া হয় তাহলে ভবিষ্যতে এটির পুনরাবৃত্তি বন্ধ করা যাবে।
গুরুত্বপূর্ণ ৫টি বিষয়ে আমাদের মনযোগ দিতে হবে এখনই।
১.প্রকল্প প্রণয়নকালীন প্রাক-সমীক্ষা করে এর যথার্থতা অনুধাবন করা।
২. প্রকল্প চলাকালীন সময়ে জননিরাপত্তা ও জনদূর্ভোগ মোকাবেলার জন্য অর্থ বরাদ্দ এবং কর্মসুচি রাখা।
৩. সেটির তত্ত্বাবধান যারা করবে তার বাধ্যবাধকতা এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা।
৪. এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানোর জন্য এসমস্ত কার্যক্রম বারংবার ঘটনা ঘটার পরেও জারি থাকলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।
৫. পুরো বিষয়টি সকল ব্যয় সংকোচন যারা করছেন তাদের মধ্যে সচেতনতা সৃস্টির জন্য বেস্ট প্র্যাকটিস যেটি এম আর টিতে করেছে, সেটিকে উদাহরণ হিসেবে অনুপ্রাণিত করা।
লেখক: নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি