গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি অযৌক্তিক
কোভিড পরবর্তী সময়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে সর্বত্র। আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সাথে সাথে সকল কিছুতেই মূল্যস্ফীতি আমরা দেখতে পাচ্ছি। এর একটি ইমপ্যাক্ট ইতিমধ্যে জনজীবনে পড়েছে এবং সেটি অবশ্যই আরও বাড়বে। যেমন, সীমিত আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমবে। ভোগ ব্যয় কমবে এবং ভোগ্যপণ্য কম ব্যবহার করে তারা বঞ্চিত হবে। জীবনযাত্রার মান কমে যাবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোম্পানিগুলির মুনাফা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুর্নীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অযৌক্তিক ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, সময়ের সাথে সাথে। যখন আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যায়, দাম কমানোর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পণ্যের রাজস্ব, সরকারের ট্যাক্স কমায়। কিন্তু গ্যাস বিদ্যুৎ জ্বালানির ক্ষেত্রে সেই ব্যাপারগুলি দেখা যাচ্ছে না। সেগুলি আরও বাড়ানো হচ্ছে। সার্বিক মূল্য হারে যেটি প্রায় ৮ হাজার ৮০০কোটি টাকা বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। কোম্পানিগুলির স্ট্যান্ডার্ডমুনাফা আরও কয়েকগুণ মুনাফা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়গুলি বিবেচনা করলে যেমন ভাল হবে, ঠিক তার আগে বোর্ডগুলিকে হামলাদের কবল থেকে রক্ষা করতে হবে। তারা যে জিম্মি হয়ে আছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মূলত অযৌক্তিক ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয়ে বন্দী হয়ে আছে, সেই বন্দী দশা থেকে গ্যাস বিদ্যুৎকে মুক্ত করতে হবে। এদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
আমি খুবই দু:খের সাথে বলতে চাই যে, কোন সিদ্ধান্তই জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে হয় না। অর্থাৎ ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ চিন্তা করে হয় না। এবারের গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি তারই ধারাবাহিকতার বহি:প্রকাশ। এবার আমরা ক্যাটাগরিক্যালি স্ট্রাকচারাল ওয়েতে কোথায় অযৌক্তিক ব্যয় সংঘটিত হচ্ছে, লুন্ঠনমূলক ব্যয় সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি নির্ধারণের প্রস্তাব এসেছে, সেগুলি না তুলে ভোক্তা স্বার্থ রক্ষা করা যায়, সেসব কোন প্রস্তাব বিবেচনায় না এনে, এ বিষয়ে কোন মতামত না দিয়ে, একতরফাভাবে মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে।
আমরা বিভিন্ন পন্থা দেখিয়েছি। আমরা বলেছি যে, মূল্যবৃদ্ধি কোন মতেই সমীচীন হবে না। নানা ধরণের পণ্য সেবার মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা যাচ্ছে না। সরকার সে জায়গাটিতে ব্যর্থ হচ্ছে। জনগণ অসহায়ত্বের মধ্যে আছে। অবমুল্যায়ণের কারণে টাকার মান কমে যাচ্ছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি না করার বিষয়ে অনেক বলা হচ্ছে, কিন্তু বিবেচনায় আসছে না। এক্ষেত্রে অসাধুব্যবসায়ী মনোবৃত্তি যেভাবে কাজ করে, সেসবেরই একটি আভাস আমরা দেখতে পাচ্ছি।
ব্যবসায়ী দুর্বৃত্তায়ন হচ্ছে। বিধি বিধান লঙ্ঘন করে কিভাবে বেশি পয়সা আয় করা যায় এবং সেক্ষেত্রে রাস্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায়, রাস্ট্রের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে নিজ স্বার্থে আরও কি কি করা যায় সেইসব সুযোগ সৃষ্টি করা। আমাদের পক্ষ থেকে অনেক কথা থাকলেও সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে না।
এখন আমাদের কথাগুলি হয়ে গিয়েছে উলোবনে মুক্তো ছড়ানোর মতোই। আমাদের কথা র কোন মূল্য নেই। কাজেই আমি মনে করি এখন যেটি দরকার সেটি হচ্ছে সার্বিকভাবে জনসচেতনতা সৃস্টি করা। এই সকল দুর্বৃত্তায়ন রোধে জনগণকেই তাদের স্বার্থ রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। জনমত তৈরি করতে হবে। এছাড়া কোন পথ নেই।
লেখক: জ্বালানি উপদেষ্টা, ক্যাব