বাংলাদেশের গর্বের ও স্বপ্নের সেতু পদ্মা
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে নির্মাণাধীন একটি সেতু। এই সেতু বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযােগ ঘটিয়েছে। এই সেতুকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা স্বপ্ন পূরণের পথে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষ। আগামী ২৫ জুন, ২০২২ পদ্মা সেতু চালু হলে বদলে দেবে দেশের অর্থনীতি, উন্নত হবে মানুষের জীবনযাত্রা। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় এই প্রকল্প খুলে দেবে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার।
দেশের সক্ষমতার প্রকাশে অনন্য নিদর্শনের প্রকল্প পদ্মা সেতু:
পদ্মা সেতু স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। বিভিন্ন সময় নানা প্রতিবন্ধকতার মুখােমুখি হয়েছে এই প্রকল্প। ২০০৯ সালের পর বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করলে তাদের সাথে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হয়। কিন্তু ২০১২ সালে ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক; অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে পদ্মা সেতু প্রকল্প। পরবর্তীতে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘােষণা দেয়। ষড়যন্ত্রের বাধা জয় করে এগিয়ে চলে পদ্মা সেতুর কাজ; নিজস্ব অর্থায়নে দৃশ্যমান হতে থাকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।
দেশের দীর্ঘতম সেতু পদ্মা সেতু:
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলােমিটার এবং প্রস্থ হবে ২১ দশমিক ১০ মিটার। সেতুটি হবে দ্বিতল; উপর দিয়ে চলবে যানবাহন এবং নিচে চলবে ট্রেন। সেতুটি নির্মিত হবে কংক্রিট এবং স্টিল দিয়ে। সেতুর দুই পাড়ে ১২ কিলােমিটার সংযােগ সড়ক নির্মিত হয়েছে। দুইপাড়ের সংযােগ সড়ক ও অবকাঠামাে উন্নয়নের জন্য কাজ সম্পন্ন করে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর রেল সংযােগ প্রকল্পে ১৪টি নতুন স্টেশন নির্মাণ এবং ৬টি বিদ্যমান স্টেশন উন্নয়ন ও অবকাঠামাে নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। মূল সেতুর পিলার সংখ্যা ৪২টি, এর মধ্যে নদীর মধ্যে ৪০টি ও নদীর দুই পাড়ে ২টি পিলার আছে। নদীর ভেতরের ৪০টি পিলারে ৬টি করে মােট ২৪০টি পাইল করা হয়েছে।
পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
শিল্পক্ষেত্রে প্রভাব-পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সাথে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হবে। যার ফলে শিল্পক্ষেত্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এই সেতু।
কৃষিক্ষেত্রে প্রভাব-কৃষকরা নায্যমূল্য বঞ্চিত হওয়ায় কৃষিকাজে যে বিরুপ প্রভাব বিস্তার করছে এই সমস্যা সমাধানে পদ্মা সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। স্বল্প সময়ের মধ্যে কৃষকদের উৎপাদিত মালামাল বিভিন্ন যায়গায় পৌঁছানোর সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা নায্যমূল্য পাবে এবং উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষিখাতের বিস্তারে গতিশীলতা আনবে।
বেকারত্ব দূরীকরণে প্রভাব-পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞলের মানুষের দারিদ্র্য বিমােচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই সেতু নির্মাণের ফলে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় সেখানে গড়ে উঠা শিল্পপ্রতিষ্ঠানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সহজেই ওই অঞ্চলের মানুষ কাজের জন্য অন্যান্য স্থানে যেতে পারবে। এতে বেকারদের কর্মসংস্থান হবে।
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মানুষের একটি স্বপ্নের নাম, যা চালু হলে দেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দিতে সক্ষম হবে। এই সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে উঠবে ব্যাপক শিল্পকারখানা, গার্মেন্টস, গােডাউন প্রভৃতি। ব্যবসা-বাণিজ্যে আসবে নতুন গতি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সাহসী ভূমিকায় নানা অনিশ্চয়তাকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের টাকায় বাঙালির অধরা স্বপ্ন এখন বাস্তবতায় রুপ নিয়েছে। এই সেতু অচিরেই বদলে দেবে দেশের অর্থনীতি, উন্নত করবে মানুষের জীবনযাত্রা।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সাহসিকতার অনুপ্রেরণা:
পদ্মা সেতুর ইতিহাস বিশ্লেষণে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম খুঁজে পাবে এমন একজন মানুষের সাহিকতার গল্প যিনি এই সেতু নির্মাণে সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে বিশ্বের দরবারে নতুন করে বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশের মানুষের কাছে যিনি অদম্য সাহসিকতার প্রতীক, তিনি আর কেউ নন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর অসীম সাহসিকতায় আমরা পেয়েছি আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ তাঁরই সুযোগ্য কন্যার সাহসিকতায় পেতে যাচ্ছে অর্থনৈতিক মুক্তির বাংলাদেশ। উন্নয়নহীন গণতন্ত্র মূল্যহীন, দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় গতিশীলতা আনতে দল মত নির্বিশেষে আমাদের মতিষ্কে অনুধাবন করার সময় এসেছে যে, আগামীতেও সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার বিকল্প কেবলই শেখ হাসিনা।
লেখক: প্রচার সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় কমিটি