বাজেট ঘাটতি ও ‘কর ব্যতীত প্রাপ্তি’
রাষ্ট্রীয় বাজেটে ঘাটতি একটি স্থায়ী ফিচার বা বৈশিষ্ট্য হয়ে আছে। প্রতিবছরই বাজেট দলিলে ঘাটতির পরিমাণ উল্লেখ থাকে ও কীভাবে তা পূরণ হবে (বৈদেশিক সহায়তাসহ) তাও উল্লেখ করা থাকে।
পরিচালন ব্যয়, উন্নয়ন ব্যয়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি সব মিলিয়ে যে খরচ দেখানো হয় তা মিটানোর জন্য সরকার বিভিন্ন খাত থেকে বিভিন্ন কায়দায় রাজস্ব সংগ্রহ করার পরিকল্পনাও পেশ করে থাকেন। কিন্তু ঘাট্তি সম্পূর্নভাবে পূরণ সম্ভব হয় না। ঘাটতি নিয়েই অর্থ বছর অতিক্রান্ত হয়ে যায়।
বাজেট প্রস্তুত প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায় উন্নয়নশীল দেশের জন্য ঘাটতি বাজেট অস্বাভাবিক ব্যাপার হয়। আর বাজেট বিশ্লেষকদের মতে ঘাটতি বাজেট নিয়মিত ফিচার বা বৈশিষ্ট্য হলে তা সংশ্লিষ্ট দেশের পরিচালন দক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ ও কর পরামর্শকদের মতে সম্পদ আহরণ ক্ষমতার দিকে নজর রেখেই সংশ্লিষ্টদেশের বাজেটের আকার নির্ধারিত হওয়া উচিৎ। এতে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ কমে আসবে। বছরের মাঝামাঝি সময় সংশোধন করে রাজস্ব সংগ্রহমাত্রা কমিয়ে আনলে (যা প্রতিবছর করা হয়) সরকারের কর্মদক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, যা কাম্য নয়।
তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাজেটের আকার বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং এটাই স্বাভাবিক। তবে সেইসঙ্গে যদি ঘাটতিও বাড়তে থাকে সেটা হবে দুঃখজনক এবং লজ্জাজনক ব্যাপার। তাদের মতে ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত’ ও ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত’ কর ক্ষেত্র থেকে রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেইসঙ্গে ‘কর ব্যতীত প্রাপ্তি’ নামে মোটা দাগে একটি ক্ষেত্র রয়েছে সেখান থেকেই রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির চেষ্টা থাকা উচিৎ।
তারা বলেন, ‘কর ব্যতীত প্রাপ্তি’ শিরোনামের আওতায় যে পরিমাণ অর্থ বিভিন্নভাবে সংগৃহীত হয় তা বহুলাংশে বৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে। এই ক্ষেত্রে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য ভাবে ভূমিকা পালন করতে পারে ভোক্ত অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে এই তিনটি সরকারি অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের অবদান রাখার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এই সরকারি প্রতিষ্ঠান ত্রয় প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়ে পরিকল্পনামাফিক কাজ করলে তা শুধু সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি করবে না, সকল স্তরের জনগণকে আইন মেনে চলতে উৎসাহী বা বাধ্য করবে।
এর ফলে দেশের বিশেষ করে নগরের পরিবেশ উন্নত হবে। নাগরিকদের আইন সচেতনতা বাড়াবে। সেইসঙ্গে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাজেট ঘাটতি কমাতে সহায়ক হবে।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক