নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রয়োজনীয়তা
নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। ধারণা নেই নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস সম্পর্কেও। আর এটির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও জানা নেই অনেকেরই। অথচ বিষয়টি জানা উচিত প্রত্যেকেরই। সেই চিন্তাভাবনা থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্পর্কে সামান্য ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছি। বিষয়টি জানানোর আগে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস সম্পর্কে জেনে নেই আমরা।
যে শক্তির উৎস নিঃশেষ হয়ে যায় না, অল্প সময়ের মধ্যেই পুনরায় ব্যবহার করা যায়; তা-ই হচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। এই জ্বালানির উৎস হচ্ছে, সৌর শক্তি, ভূ-তাপ, বায়ু প্রবাহ, জল প্রবাহ, সমুদ্র ঢেউ, সমুদ্র তাপ, জোয়ার-ভাটা, বায়োগ্যাস, বায়োফুয়েল, আবর্জনা ইত্যাদি। এসব উৎসকে আমরা কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি অনায়েসেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছেও। তাতে করে খনিজ জ্বালানির ওপর চাপ কমে আসছে অনেকটাই। উল্লেখ্য, বায়োগ্যাস এবং আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে। অনুমোদিত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন করতে হবে, নচেৎ মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়ে পরিবেশের বিপর্য ঘটবে।
আমরা জানি, বিশ্বব্যাপী পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো সোচ্চার হয়েছে জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলা করতে। পৃথিবীটাকে বাসযোগ্য হিসেবে ঠিক রাখতে তারা কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার চেষ্টায় আন্দোলন করে যাচ্ছে। জীবাশ্মের জ্বালানি অথবা খনিজ জ্বালানি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল হতে পরামর্শ দিচ্ছে। বলে রাখা ভালো, বিশ্বে খনিজ জ্বালানির অধিকাংশই বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে। ফলে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে প্রবল বেগে। তাতে জলবায়ুর ওপর মারাত্মক ভাবে প্রভাব পড়ছে। দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে। ঋতুবৈচিত্র্যে হেরফের দেখা দিয়েছে। নতুন রোগ-বেরামের আবির্ভাব ঘটছে। এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমিয়ে আনতে হলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল হতে হবে আমাদের।
প্রশংসার বিষয় হচ্ছে, ব্যাপক ভাবে না হলেও বাংলাদেশ সৌর শক্তিকে ক্ষুদ্রভাবে কাজে লাগিয়েছেও ইতিমধ্যে, যা বাংলাদেশে ‘সোলার প্ল্যান্ট’ নামে পরিচিত। সোলার প্ল্যান্টের ব্যবহারে সফলতাও এসেছে ব্যাপক। দুর্গম অঞ্চলে কিংবা চরাঞ্চলে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে সোলার প্ল্যান্ট। ভারতেও সোলার প্ল্যান্ট ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোলার প্ল্যান্টের অবস্থান ভারতেই। প্রায় ৬৪৮ মেগাওয়াট (কমবেশি হতে পারে) বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে ভারত। অপরদিকে চীন শতাধিক কয়লা বিদ্যুৎ বন্ধ করে বায়ু বিদ্যুৎ ও সোলার প্ল্যান্ট কেন্দ্র চালু করেছে। বলা যায়, এ ক্ষেত্রে দুটি দেশ মোটামুটি সফলতা অর্জন করতে সক্ষমও হয়েছে।
আমরা ইচ্ছে করলেই সোলার প্ল্যান্টের মতো অন্যান্য শক্তিগুলোকেও কাজে লাগাতে পারি। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে আমরা বায়ু প্রবাহকে প্রাধান্য দিতে পারি। বিশ্বের কয়েকটি উন্নত রাষ্ট্রেও বায়ু প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। যেমন: অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব ও ভারত বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। এছাড়াও বিশ্বব্যাপী উন্নত ও উন্নয়নশীল অনেক দেশেই এ পলিসি গ্রহণ করেছে এবং তা জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে। কারণ পরিবেশের ভারসাম্য বজায়ের জন্য এ নিখাদ প্রযুক্তি আর দ্বিতীয়টি নেইও।
অপরদিকে, বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিশ্বের জন্য একটি সম্ভাবনাময় বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেই ক্ষেত্র আছেও প্রচুর। যেহেতু বিশ্বের প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লার মওজুদ পুরিয়ে আসছে তাতে করে দেশগুলো বায়ু শক্তির ওপর নির্ভরশীল হতে পারে। যার ফলে পরিবেশ দুষণ থেকে যেমন রেহাই পাবে বিশ্ববাসী, তেমনি নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে।
বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় দিকও আছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকার দৈর্ঘ্য প্রায় ৭২৪ কিলোমিটার। যেখানে অনবরত বায়ু প্রবাহ থাকে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা এ প্রবাহকে কাজে লাগাতে পারলে ২০০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হতে পারে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের বায়ু প্রবাহের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো হচ্ছে, হাতিয়া, সন্দীপ, মহেশখালী ও কতুবদিয়া। এছাড়াও পদ্মা-মেঘনা-যুমনার চরে বায়ুকল স্থাপন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে আগে বায়ু প্রবাহের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে হবে। অন্তত মাস তিনেকের বায়ু প্রবাহের গতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে টারবাইন বসানোর উপযোগী কীনা।
সুখবর হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতিমধ্যে কক্সবাজার, ইনানী, চাঁদপুরের কচুয়াতে ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে আগ্রহী হয়েছে। আর ভারতবর্ষেও ব্যাপক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র রয়েছে। ভারতে বায়ু প্রবাহের শত শত স্থান রয়েছে; যেখানে বায়ু প্রবাহের গতিও সন্তোষজনক।
শুধু বায়ু প্রবাহ নয়; সমুদ্র ঢেউ, সমুদ্রের তাপ, জোয়ার-ভাটার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার সম্ভব। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ জল প্রবাহকে (কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ) কাজে লাগিয়েছে। কাজে লাগিয়েছে বায়োগ্যাসকেও। এটিও বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়। গ্রামাঞ্চলে এ গ্যাসের ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে। রান্না-বান্না এবং বাতি জ্বালানোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এভাবে ময়লা-আবর্জনা রিসাইকেল করে নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন করা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন মিথেন গ্যাস উৎপন্ন না হয়, তাহলে আবার হিতে বিপরীত ঘটবে।
আরেকটি শক্তি পাওয়া যাচ্ছে জৈব জ্বালানি থেকে। সেটাকে পরিবেশবিদেরা নিরুৎসাহিত করছেন বিভিন্ন কারণেই। তার মধ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে, দরিদ্র দেশের মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিচ্ছে জৈব জ্বালানি।
জৈব জ্বালানী সম্পর্কে বলতে গেলে বিষয়টির সামান্য ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছি আমরা। জৈব জ্বালানি সম্পর্কে সর্বসাধারণের তেমন একটা ধারণা নেই। জৈব জ্বালানি বা ‘বায়োফুয়েল’ হচ্ছে এক ধরনের পরিবেশবান্ধব জ্বালানি। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর দিকটি চিন্তা করেই জৈব জ্বালানির সম্প্রসারণের সুপারিশ করেছিলেন একসময় পরিবেশবিদেরা। সেই পরামর্শ থেকে পরবর্তীতে সরে এসেছেন তারা।
জৈব জ্বালানি হচ্ছে, ইথানল ও ডিজেলের সমন্বয়ে তৈরি নতুন ধরনের জ্বালানি। যার উপাদান চাল, ডাল, গম, ভুট্টা ও তেলবীজ জাতীয় খাদ্যশস্য। এ সব খাদ্যশস্যকে বিশেষ উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করে জৈব জ্বালানি প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর ভালো-মন্দ দুটিই বিদ্যমান রয়েছে। তবে সার্বিক বিবেচনায় পরিলক্ষিত হচ্ছে জৈব জ্বালানির ব্যবহার হিতের চেয়ে ক্ষতিই বেশি বয়ে আনছে। এটি বর্তমানে শুধু উন্নত বিশ্বেই ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে তাদের অনুসরণ করেছে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া। তারা তাদের দেশে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ পামবীজ দিয়ে জৈব জ্বালানি প্রস্তুত করছে।
এ ছাড়া তৃতীয় বিশ্বের অন্য কোন দেশ দারিদ্র্যতার জন্য অদ্যাবধি জৈব জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ পায়নি। তার প্রধান কারণই হচ্ছে এ জ্বালানি প্রস্তুত করা সহজসাধ্য নয়, এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটি প্রক্রিয়া। ফলে জৈব জ্বালানি পরিচিতি পেয়েছে ‘উন্নত বিশ্বের জ্বালানি’ নামে। দেখা যাচ্ছে এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিল্পোন্নত দেশগুলো দরিদ্র দেশের মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে যানবাহনের ট্যাঙ্কে তুলে দিতে। যা অনায়াসে চরম মানবতাবিরোধী কাজের একটি হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। আগেই জানানো হয়েছে যে, এ জ্বালানি প্রস্তুত করতে প্রয়োজন অধিক খাদ্যশস্যের। যার ব্যবহার হচ্ছে ডিজেল ও গ্যাসোলিনের পরিবর্তে। এতে করে কোন ধরনের বায়ুদূষণ ঘটছে না সত্য এবং এও সত্য যে, জৈব জ্বালানি আবিষ্কার মানবজাতির জন্য সুখবর বটে। কিন্তু সে সুখবরটির আড়ালে রয়েছে মানবজাতির জন্য এক ভয়াবহ ক্ষতির দিক। যার শিকার বিশ্বের নিম্ন আয়ের ৮২টি দেশ।
এক সমীক্ষায় জানা যায়, শিল্পোন্নত দেশের এ অমানবিক কর্মকাণ্ডের ফলে বিশ্বে চরমভাবে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যার কারণেই দাম বেড়ে গেছে যাবতীয় খাদ্যসামগ্রীরও। তৎসঙ্গে বেড়ে গেছে ভোজ্যতেলের দামও। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, জৈব জ্বালানির উপকরণ থেকে রেহাই পায়নি সয়াবিন, সরিষা, তিল, তিশি ও পামবীজসহ নানা ধরনের তেলবীজ। অবাক করা বিষয় হচ্ছে ২৫ গ্যালন জৈব জ্বালানি উৎপাদনে যে পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী ব্যবহৃত হচ্ছে, তা আফ্রিকার একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের এক বছরের আহার। তার চেয়েও বেশি অবাক করা তথ্য হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বছরে প্রায় ১০ কোটি টন খাদ্যশস্য প্রক্রিয়া করে জৈব জ্বালানি উৎপাদন করছে। এতে যে পরিমাণ খাদ্য সামগ্রীর ব্যবহার হচ্ছে তাতে বাংলাদেশের মতো ৪টি দেশের মানুষের তিন বছরের খাদ্য বিনষ্ট হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদদের অভিমত, ২০১৭ সালের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র একাই জৈব জ্বালানি উৎপাদন ১২ গুণ বাড়িয়ে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে। অপরদিকে ২০১৬ সাল নাগাদ ইউরোপে এ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে ১২ গুণ। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নও গম দিয়ে জৈব জ্বালানি উৎপাদনের সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। অপরদিকে ব্রিটেন জৈব জ্বালানি প্রস্তুতের জন্য ইতিমধ্যে ১১৩ বিলিয়ন টন ভুট্টার ব্যবহার নিশ্চিত করেছে। ব্রিটেন অবশ্য অনেক আগে থেকেই জৈব জ্বালানি তৈরি করতে বার্ষিক ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড ভর্তুকি দিয়ে আসছে। উল্লেখ্য, জৈব জ্বালানি প্রস্তুতের কারণে অধিক খাদ্যশস্য উৎপাদনের জন্য প্রচুর বনভূমি ও জলাশয় উজাড়ের প্রয়োজন দেখা দিবে। যার ফলে খনিজ তেল ব্যবহারের দূষণ থেকেও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে সমগ্র বিশ্বের পরিবেশ। বিষয়টি নিয়ে ‘দি সায়েন্স’ পত্রিকা ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। সামান্য উদাহরণ টানলে বিষয়টা আমাদের কাছে আরও পরিষ্কার হবে। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘অ্যাকশন এইড’-এর জরিপ মতে, ইউরোপের ওই লক্ষ পূরণ করতে হলে অন্তত ৬৯ হাজার বর্গকিলোমিটার জমিকে শস্য ক্ষেতে রূপান্তরিত করতে হবে- যা কিনা বেলজিয়াম এবং নেদারল্যান্ডসের আয়তনের চেয়ে বেশি।
জানা যায়, বর্তমানে বিশ্বে উৎপাদিত ৪০ বিলিয়ন লিটার ইথানলের শতকরা ৯০ ভাগই প্রস্তুত করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিল। বাদবাকি উৎপাদন করছে বিট্রেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বিশ্বব্যাংকের হিসেব মতে, ২০০৪-২০০৭ সাল পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বে ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে ৫১ মিলিয়ন টন। অথচ ওই সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একাই ইথানল তৈরিতে ব্যবহার করেছে ৫০ মিলিয়ন টন ভুট্টা।
এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৮ কোটি শিশুর আগমন ঘটছে। সে সূত্রে বলা যায়, ৮ কোটি মানুষ পর্যায়ক্রমে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে খাদ্যশস্যের ওপর ভাগও বসাচ্ছে। হিসেব মতে, জৈব জ্বালানি উৎপাদন এবং নতুন মুখের আবির্ভাবের ফলে খাদ্য ঘাটতির পরিমাণ বিশ্বে বছরে প্রায় ১০ কোটি টনে গিয়ে ঠেকবে। এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখলে বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হবে নিশ্চিত। আমরা জানি, যুক্তরাষ্ট্রের অধিক জ্বালানির চাহিদার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়েছে। সেই নির্ভরশীলতা কমাতে এবং জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও পরিবেশ দূষণের বিষয়টি মাথায় এনে তারা দক্ষিণ আফ্রিকাকে বেছে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে জৈব জ্বালানি প্রস্তুতের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার ৪০ লাখ বর্গকিলোমিটার জমিতে খাদ্যশস্য উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ উৎপাদনের পুরোটাই তারা জৈব জ্বালানি বা বায়োফুয়েল তৈরিতে ব্যবহার করবে।
এর প্রেক্ষিতে বলতে হয়, পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যাপক প্রয়োজন রয়েছে ঠিকই কিন্তু তার আগে যা প্রয়োজন তা হচ্ছে বিশ্বের অনাহারী মানুষের পেটের যন্ত্রণা নিবারণ করা। কারণ যে মানুষের কল্যাণে জৈব জ্বালানির সম্প্রসারণ, পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় মনোযোগী হওয়া; সে মানুষই যদি না খেয়ে দিনাতিপাত করেন, তাহলে ওই আবিষ্কার মানবকল্যাণের পরিপন্থি। আমরা আশাবাদী সেই দিকটি বিশ্বের কর্তা-ব্যক্তিগণ ভেবে দেখবেন আগে। তার সঠিক সমাধান হলে এ আবিষ্কার সার্থক হবে বলে আশা করা যায়।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলামিস্ট
এসএ/