পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র যেন স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালিত হয়
পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন হলেও এটি কার্যত অপারেশনে চলে গেছে অনেক আগেই। এটি উদ্বোধন সরকারের আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এই প্রকল্পের সবচেয়ে বড় দিক হলো অল্প ব্যয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা। এ বিদ্যুৎ ব্যবহার করা গেলে সেটি অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক হতো। এখন অবশ্য দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সেটি ভালো দিক বলেই বিবেচনা করা যায়।
এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে অনেক প্রশ্ন, বিতর্ক থাকতে পারে। ইতিমধ্যে অনেকেই অনেকরকম প্রশ্ন করেছে। তবে আমি অর্থনৈতিক বিষয়টিকে প্রাধান্য দিচ্ছি। পরিবেশবিদদের উদ্বেগ কিন্তু মিটছে না, তাদের উৎকণ্ঠা রয়েই গেল অথবা থাকবে। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র অথবা রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র অথবা বাঁশখালি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইকুইপমেন্ট নিয়েও তাদের উদ্বেগ রয়েছে। পরিবেশ রক্ষার্থে তাদের উদ্বেগ, একটি বিশেষ ব্যপার। এটি স্বাভাবিকও। পক্ষান্তরে এটিও সত্যি যে, আমরা দরিদ্র দেশ। অনেক ক্ষয়ক্ষতি মেনেই আমাদের বেঁচে থাকতে হয়। আমরা তো খুব বেশি আধুনিক জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখতে পারি না। সব চাওয়া তো আর মানুষের পুরণ হয় না। কাজেই আমাদের কিছু ছাড় দিতেই হবে।
পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন সরকারের নীতিগত বিষয়। কম মূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য সরকার এটি বেছে নিয়েছে। আর্থিক অবস্থাটিই সামনে চলে এসেছে। আমরা তো সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ দিতে পারি না। কয়লার মতো দূষণের আরেক ক্ষেত্র তেল ব্যবহার করেও উচ্চমূল্যে আমাদের বিদ্যুৎ দিতে হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাইরেও প্রশ্ন আছে। এ ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় বেড়েছে। এর স্বচ্ছতা নিয়েও কথা আছে। আমরা যে স্বল্পমূল্যে বিদ্যুৎ দিতে পারছি না, এটি তো অবধারিতই ছিল। আমরা এটিও জানি যে, অনেক অসঙ্গতি বিদ্যুৎ উন্নয়ন পরিকল্পনায় থাকার কারণে এসব পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। সেখানে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত বাড়তি বিতর্ক তো আছেই এবং সেটি থাকবে। আমরা ভারত থেকেও বিদ্যুৎ আমদানি করছি। ভারত থেকে আমদানি করলে কম দাম পড়ে; কিন্তু এখানে বিদ্যুতের দাম বেশি পড়ে। সুতরাং এসব বিষয় নিয়েই মানুষের উদ্বেগ আছে এবং থাকবে।
তবে সার্বিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমরা সক্ষমতার পরিচয় দিতে পেরেছি। আমাদের বেদনার জায়গাটি হলো–স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর হয়ে গেল, আমাদের সক্ষমতার অনেক বেশি উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হয়নি। আমরা সে ক্ষেত্রে খুব বেশি সফলতা অর্জন করতে পারিনি। বিভিন্ন প্রজেক্টে দুর্নীতি জেঁকে বসেছে যেন। এ ক্ষেত্রেও যদি সরকারের সমালোচনা করতে হয়, সে ক্ষেত্রে বলা যায়, এই কোম্পানির চেয়ারম্যানকে নিয়েও কিন্তু প্রশ্ন আছে। সুতরাং এসব বিষয়াদি একটি প্রশ্নবোধক হয়ে আছে। যেখানে পেশাদার ব্যক্তির পরিবর্তে প্রজাতন্ত্রের আমলাকে এই কোম্পানির চেয়ারম্যান হতে হবে কেন?
আমার প্রত্যাশা থাকবে, আগামীতে যে বিদ্যুৎ সংকটের সম্মুখীন হতে যাচ্ছি, সেটি থেকে উত্তরণের একটি পথ আমরা পাব। এত উৎপাদনক্ষমতা তৈরি করার পরও শুধু জ্বালানি সংকট তৈরির কারণে, উচ্চমূল্যসম্পন্ন জ্বালানির কারণে, বিদ্যুৎ সংকটের পাশাপাশি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সমস্যাটির কিছুটা সমাধান হবে। সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষায় দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র একটি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। আশা করব, যেন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। একইসঙ্গে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি যেন স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালিত হয়।
লেখক: জ্বালানি উপদেষ্টা, ক্যাব
এসএ/