খালেদা জিয়ার ব্যাপারে আর কত উদারতা দেখাব: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা প্রসঙ্গে বলেছেন, তার (খালেদা) ব্যাপারে সরকার প্রধান হিসেবে অনেক উদারতা দেখানো হয়েছে, ‘আর কত উদারতা দেখাব’?
‘যিনি ১৫ আগস্ট মিথ্যা জন্মদিনের কেক কেটে আমাদের মনে আঘাত দেয়, উৎসব করার অর্থ কী? আমরা যারা বাবা-মা ভাই বোন হারিয়ে আঘাত পেয়েছি, আমাদেরকে কষ্ট দেওয়া? এটাই তো? এই কষ্ট দেবার জন্যই খালেদা জিয়া ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করে। আমার কাছ থেকে আর কত আশা করে তারা? কীভাবে আশা করে? আমার পিতা হত্যাকারীদের বিচার করতে দেবে না। এরা আমাদের কাছ থেকে কি আশা করে? আমরা যতটুক দিয়েছি। তাকে যে বাসায় থাকতে দিয়েছি, তাকে ইচ্ছামত হাসাপতালে চিকিৎসা দিচ্ছে, এটাই কি যথেষ্ট নয়? এটা কি উদারতা দেখাইনি। সেটা তো দেখিয়েছি, আর কত?’ তিনি বলেন।
বুধবার (৮ ডিসেম্বর) আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, '১৯৪৪ সালে যদি জন্ম হয়, তার বয়স কত? সেটাও তো দেখতে হবে। তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলবে আবার দুর্নীতিবাজদের জন্য কান্নাকাটি করবে, তাকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসাও করাতে হবে। এই দৈত মানসিকতা কেন?'
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে আমাদের পার্টির অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে অমানসিক নির্যাতন করেছে, অত্যাচার করেছে। দিনের পর দিন অত্যাচার করেছে, অত্যাচারের ভিডিও নিয়ে খালেদা জিয়া-তারেক উৎফুল্ল করেছে। শুধু তাই না খালেদা জিয়ার ছেলে কোকো যখন মারা গেল আমি গেলাম সহানুভূতি দেখাতে। আমি হঠাৎ করে সেখানে যাইনি, আমার সামরিক সচিব যোগাযোগ করেছে, এডিসি যোগাযোগ করেছে, সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। আমি সময়মতো গেছি আমার এখান থেকে এসএসএফ গেছে। আমি যখন রওয়ানা হয়ে গেছি যখন গুলশান রোডে ঢুকলাম তখন শুনলাম ওই বাড়ির মেইন গেইট খুলবে না, আমাকে ঢুকতে দেবে না। যখনই গাড়িটা বাড়ির সামনে দাড়িয়েছে ভেতরে যে এসএসএফ ছিল সে যখন বাইরে আসল সাথে সাথে দরজাটা বন্ধ করে তালা দিয়ে দিল। আমি গাড়ির থেকে নেমে আর ঢুকতে পারিনি।'
তিনি বলেন, 'আমি গেছি একটা মা সন্তান হারা, তাকে সহানুভূতি দেখাতে। সেখানে আমাকে অপমান করে দেওয়া হয়েছে। বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞেস করি তারা যে সহানুভূতি দেখাতে বলেছে, তারা যে সহযোগিতা চায়, খালেদা জিয়া কি আচারণ করেছে?'
তিনি আরও বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা তার আগে খালেদা জিয়ার কী বক্তব্য ছিল? যে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবে না। এই বক্তব্যই তো দিয়েছিল এবং আওয়ামী লীগ একশ বছরেও ক্ষমতায় যেতে পারবে না। আল্লাহর খেলা বোঝা ভার। বরং খালেদা জিয়াই প্রধানমন্ত্রীও হতে পারে নাই, বিরোধী দলের নেতাও হতে পারে নাই। তারপরেও সে যখন অসুস্থ এবং দুর্নীতির দায়ে গ্যাটকোর মামলা তার বিরুদ্ধে, নাইকোর মামলা তার বিরুদ্ধে, এটা কিন্তু আমাদের না আমেরিকার এফবিআই খুঁজে বের করেছে। সিঙ্গাপুরে তার ছেলের দুর্নীতি বের করছে।'
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার ছেলের বউ তো ডাক্তার। শুনেছি সে অনলাইনে শাশুড়িকে দেখে। ছেলে, ছেলের বউ তো কোন দিন তাকে দেখতে আসল না? অবশ্য কোকোর বউ দেখতে এসেছে। যা হোক বিএনপি এতদিন পর একটা সুযোগ পেয়েছে, খালেদা জিয়ার অসুস্থতার দাবিতে আন্দোলন করছে; খুব ভালো।
আন্দোলন করুক আমার যতটুক করার কথা সেটা করেছি। সব থেকে বড় কথা ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন, তার কি ১৫ আগস্ট জন্মদিন? জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যে বিয়ে হয়েছিল সেই বিয়ের ডকুমেন্টে তার জন্মতারিখ মোটেই ১৫ আগস্ট না। তারপর প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার যে পাসপোর্ট সেখানেও তো ১৫ আগস্ট না। তার তো অনেকগুলো জন্ম তারিখ, ৪/৫ টা তারিখ হয় কি কীভাবে?
তিনি আরও বলেন, ১৫ আগস্ট কেক কেটে উৎসব করার অর্থ কি? আমরা যারা মা-বাবা ভাই বোন সন্তান হারিয়েছি আমাদের মনে আঘাত করা এটাই তো এই কষ্ট দেবার জন্য তার জন্মদিন পালন করে? আমার কাছ থেকে আর কত কত সহানুভূতি আশা করে তারা। কীভাবে আশা করে?
আমার পিতা হত্যাকারীদের বিচার করতে দেবে না। পিতা হত্যার খুনিদের পুরস্কৃত করা। এই সবকিছুর উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদেরকে আরও আঘাত দেওয়া। এরা আমাদের কাছে আর কত আশা করে? একথা বলতাম না। চারদিকে নানা ধরনের কথা আসে। এদেশের মানুষ অদ্ভুত চরিত্রের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলবে আবার দুর্নীতিবাজের জন্য কান্নাকাটিও করবে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসাও করতে হবে। যারা দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত। এ ধরনের দৈত মানসিকতা কেন?
এসএম/এমএমএ/