রাফির বিরুদ্ধে ৩২ কোটি টাকা লেনদেনের সত্যতা মেলেনি
সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি। ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফির বিরুদ্ধে ৩২ কোটি টাকার তদবির বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে সংবাদ প্রচার করে একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম।
গত বুধবার (৮ জানুয়ারি) এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে মুর্হুতেই আলোড়ন সৃষ্টি হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর, রাফি নিজে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে সরাসরি অবস্থান তুলে ধরেছেন।
এছাড়াও রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, খান তালাত মাহমুদ রাফি ও তার মায়ের বিকাশ অ্যাকাউন্টে গত বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে অস্বাভাবিক লেনদেনের যে দাবি তোলা হয়েছে তা সঠিক নয় বরং উল্লিখিত সময়ের মধ্যে রাফির অ্যাকাউন্টে ৩২ হাজার ৬০২ টাকার লেনদেন হয় এবং তার মায়ের নামের অ্যাকাউন্টে কোনো লেনদেনই হয়নি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ২০২৪ সালের ২৪ অক্টোবর ‘বাংলাদেশ আর্কাইভ – Bangladesh Archive’ নামে এক ফেসবুক পেজে একই দাবি সম্বলিত একটি পোস্টের সন্ধান পায় রিউমর স্ক্যানার। এই পোস্ট এবং অনলাইনে প্রচারিত প্রতিবেদনে উল্লিখিত রাফির বিকাশের লেনদেনের তথ্যগুলোয় সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
অথাৎ, সংবাদমাধ্যমে সহ-সমন্বয়ক রাফির কথিত বিকাশ লেনদেনের বিষয়ে সম্প্রতি যে দাবি প্রচার করেছে তা অন্তত দুই মাস পূর্বেই কতিপয় ফেসবুক পোস্টে পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ আর্কাইভ পেজটির এ সংক্রান্ত পোস্টের কমেন্টে The Bengal Telegram নামে একটি পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণ সদৃশ পাতার স্ক্রিনশট যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। রিউমর স্ক্যানার কিওয়ার্ড সার্চ করে এই নামে কোনো পত্রিকার অস্তিত্ব পায়নি।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেদিন সন্ধ্যায় ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তায় তিনি দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা।
রাফি বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগে আমি অত্যন্ত হতাশ। আমি সবসময় আন্দোলনের মূল নীতির প্রতি বিশ্বস্ত ছিলাম এবং আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা নিছক একটি ষড়যন্ত্রের অংশ।’
ভিডিও বার্তায় রাফি আরও বলেন, প্রতিটি অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত এবং ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত। তিনি এই ঘটনায় তদন্তের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।
বিকাশের ওয়েবসাইটে দেওয়া শর্ত অনুযায়ী, একজন বিকাশ একাউন্ট হোল্ডার যে কোন মুহূর্তে তার একাউন্টে সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা রাখতে পারবেন। একজন বিকাশ গ্রাহক তার বিকাশ একাউন্ট থেকে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা এবং প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত টাকা তুলতে পারবেন (এজেন্ট এবং এটিএম থেকে সম্মিলিতভাবে)। অথচ, দাবি করা হচ্ছে, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর এই দুই মাসে রাফি ও তার মায়ের অ্যাকাউন্টে লেনদেন হয়েছে যথাক্রমে ৬১ লাখ ও ৩১ লাখ টাকার বেশি যা এই শর্তবিরোধী। কারণ একটি অ্যাকাউন্ট থেকে দুই মাসে সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা তোলা যায়।
পরবর্তী অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার রাফি ও তার মায়ের বিকাশ অ্যাকাউন্টে উল্লিখিত সময়ের লেনদেনের ইতিহাস খুঁজে বের করেছে। রাফির বিকাশ অ্যাকাউন্টের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১ আগস্ট তার বিকাশ অ্যাকাউন্টে (০১৯৯৫৮৮৭১**) জমা ছিল ২ হাজার ৪ টাকা ২৪ পয়সা। ১ আগস্ট থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত তার অ্যাকাউন্টে লেনদেন হয়েছে ৩২ হাজার ৬০২ টাকা। ১ অক্টোবর তার অ্যাকাউন্টে জমা ছিল ৯ হাজার ৭ টাকা। ২ অক্টোবর থেকে ৭ জানুয়ারি সকাল পর্যন্ত তার অ্যাকাউন্টে লেনদেন হয়েছে ১ লক্ষ ৩৮ হাজার ১৪৩ টাকা। সে সময় তার অ্যাকাউন্টে জমা ছিল ১৭৮ টাকা ২৫ পয়সা। রাফি অনলাইন প্লাটফর্ম ফেস দ্য পিপলের একটি লাইভ অনুষ্ঠানেও গতকাল (০৮ জানুয়ারি) তার অ্যাকাউন্টের সর্বশেষ স্থিতির বিষয়ে একই তথ্য দিয়েছেন।
রাফির মায়ের মোবাইল নম্বর দিয়ে খোলা অপর বিকাশ অ্যাকাউন্টে (০১৭০৯১৯৭৩**) ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে গত ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে মাত্র ২০ টাকা (২৫ অক্টোবর এই ২০ টাকা লেনদেন হয়)। অ্যাকাউন্টটিতে সর্বশেষ জমা আছে ২৩৮ টাকা ৬১ পয়সা।