ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্তকরণ: নতুন উদ্যোগে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এবার শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৩০০ শিক্ষার্থীকে ডিএমপির 'ট্রাফিক পক্ষ' কার্যক্রমে সম্মানীর বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আগামী ২১ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে এবং পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।
সোমবার (২১ অক্টোবর) রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ডিএমপি ট্রাফিক পক্ষ-২০২৪ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, "ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। তারা ইতিমধ্যেই ৫ আগস্টের পর সড়কে দায়িত্ব পালনে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে। তাদের যুক্ত করার মাধ্যমে রাস্তার পরিস্থিতি কিছুটা হলেও উন্নত হবে বলে আমরা আশাবাদী।"
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন, ঢাকায় প্রায় ২ কোটি মানুষের বসবাসের কারণে যানবাহনের ধারণক্ষমতা অপ্রতুল। সড়ক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কার্যকর উন্নয়ন এখনও দূরবর্তী। একই সড়কে রিকশা ও ঠেলাগাড়িসহ অযান্ত্রিক যানবাহনের চলাচলের ফলে শহরের সুশৃঙ্খল ট্রাফিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি, বিভিন্ন সময়ের আন্দোলন ও অবৈধ যানবাহনের আধিক্যের কারণে যানজট ক্রমশ অসহনীয় হয়ে উঠছে।
ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে। তবে শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, "শিক্ষার্থীদের এই সহযোগিতা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অভ্যুত্থানের পর থেকে তারা নিয়মিতভাবে ট্রাফিক দায়িত্ব পালন করছে।"
ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান ট্রাফিক ব্যবস্থার মৌলিক চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে বলেন, "সড়কে শৃঙ্খলা আনতে হলে ট্রাফিক এডুকেশন, ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভায়রনমেন্ট এবং এনফোর্সমেন্ট—এই চারটি বিষয়ের সমন্বয় দরকার। তবে আমাদের সড়কে এসব কার্যক্রম পর্যাপ্ত নয়। ট্রাফিক পুলিশ শুধু এনফোর্সমেন্টের দায়িত্ব পালন করছে, যা অপ্রতুল।"
ডিএমপি ২১ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত পক্ষকালব্যাপী ট্রাফিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে লিফলেট বিতরণ, ট্রাফিক সাইন সম্পর্কে ধারণা প্রদান, সড়ক পরিবহন আইন বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিক-মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা। এছাড়াও রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট, গার্লস গাইড, বিএনসিসি সদস্য এবং বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এসব সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে অংশ নেবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সম্পৃক্ত করে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। শুধুমাত্র সরকার বা পুলিশের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। নগরবাসীকে সম্পৃক্ত করতে হবে, এবং তাদের সচেতনতার মাধ্যমে ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাই বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য।
আশা করা হচ্ছে, এ কর্মসূচির মাধ্যমে ঢাকা শহরের যানজট ও ট্রাফিক সমস্যার উন্নয়ন ঘটবে, যা জনভোগান্তি কমাতে সহায়ক হবে।