হরতালের নামে সহিংসতা-ভাঙচুর করলে কঠোর ব্যবস্থা: ডিএমপি কমিশনার
ছবি সংগৃহিত
হরতালের নামে সহিংসতা ও ভাঙচুর করলে পুলিশ আইনানুগভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে শনিবার রাত পৌনে ১১টায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই সতর্কবার্তা দেন।
হাবিবুর রহমান বলেন, হরতাল একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। ঠিক তেমনি হরতাল পালন না করাও জনগণের একটি অধিকার। হরতালের নামে অনেক ধরনের নৈরাজ্য চালানো হয়ে থাকে। আগামীকাল (রোববার) একটি দল হরতাল আহ্বান করেছে। হরতালের নামে কেউ যদি মানুষের স্বাধীন চলাফেরায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করে, তাহলে পুলিশ আইনানুগভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
শান্তিপূর্ণ সমাবেশের প্রতিশ্রুতি দিয়েও বিএনপি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ করেন ডিএমপি কমিশনার।
তিনি বলেন, আমাদের কাছ থেকে ১৪টি রাজনৈতিক দল সমাবেশ করার জন্য অনুমতি নিয়েছিল। আমরা আশা করেছিলাম তারা সবাই শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করবে। বিএনপি লিখিত দিয়েছিল। আমরা যে শর্ত দিয়েছিলাম সেই শর্ত মেনেই সমাবেশ করতে এসেছিল। সবাইকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সিসিটিভি লাগিয়েছি। যারা সমাবেশে অংশ নিয়েছে তাদের নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিয়েও আমরা কাজ করেছি। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করেছি— যে যার সমাবেশ যেন সফল করতে পারে। আমরা চেয়েছিলাম নেতিবাচক কোনও পরিস্থিতির যেন সৃষ্টি না হয়।
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, পল্টন ও আশপাশের এলাকায় বিএনপির একটি সমাবেশ ছিল। এছাড়াও আশপাশে আরও কয়েকটি দলের সমাবেশ ছিল। অনুমতি গ্রহণের সময় বিএনপি নেতারা নিজেরাই উল্লেখ করেন যে বিজয়নগর মোড় থেকে ফকিরেরপুল মোড় পর্যন্ত এক থেকে এক লাখ বিশ হাজার জমায়েত করবেন। তাদের সমাবেশ যাতে কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয়, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড কেউ চালাতে না পারে সেজন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সার্বিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কিন্তু বিস্ময়ের সাথে আপনারা লক্ষ্য করেছেন— সকাল দশটা নাগাদ বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী কাকরাইল মসজিদের মোড়ে এবং আশেপাশে অবস্থান নেয়। বিনা কারণে উপর্যুপরি বাস এবং বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে হামলা চালাতে থাকে। এর কিছুক্ষণ পর অতর্কিতভাবে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে আক্রমণ করে এবং গেট ভেঙে ফেলে।
এক পর্যায়ে তারা লাঠিসোটা হাতে ভবনের ভিতরে ঢুকে পড়ে এবং সেখানেও ভাঙচুর চালায়। অতঃপর পুলিশি বাধার মুখে তারা বাসা থেকে বেরিয়ে যায় এবং পার্শ্ববর্তী সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের বাসভবন জাজেস কমপ্লেক্সে আক্রমণ চালায় এবং অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে। জাজেস কমপ্লেক্সের সিসিটিভি ক্যামেরাসহ আশপাশে পুলিশের সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে। তাণ্ডবলীলার একপর্যায়ে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা কিন্তু ধ্বংসযজ্ঞের এই বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও ধারণাতীত ছিল। তবু বাংলাদেশ পুলিশ উচ্ছৃঙ্খল আক্রমণকারীকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এক পর্যায়ে দুষ্কৃতিকারীরা কাকরাইল থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত যানবাহন জ্বালিয়ে দেয়।
তিনি আরো বলেন, আইন অমান্যকারীদের ধিক্কার জানাচ্ছি। যেসব পুলিশ সদস্য পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিহত, আহত হয়েছেন, তাদের ও তাদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের দুষ্কর্ম ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যাতে সংগঠিত হতে না পারে, সে জন্য সর্বশক্তি দিয়ে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে শনিবার রাতে পুলিশ সদরদপ্তর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের জনগণের জানমাল এবং সরকারি সম্পত্তির নিরাপত্তা বিধান বাংলাদেশ পুলিশের আইনি দায়িত্ব। পুলিশ জনগণকে সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নাগরিকরা চলাফেরার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন হলে বা আইনি সহায়তার প্রয়োজন হলে নিকটস্থ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।