জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস আজ
ছবি সংগৃহিত
‘একটি সড়ক দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না’। এ কান্নার যন্ত্রণা হয়তো দুর্ঘটনা ঘটরা আগে কেউ বুঝে না। দুর্ঘটনার পর আহত ব্যক্তিকে বেঁচে থাকার শেষ দিন পর্যন্ত বইতে হয় সেই কান্নার ভার। আর যিনি অকালে প্রাণ হারান, সেখানে ভুগতে হয় তার পরিবারকে। দিনের পর দিন নানা কারণে সড়ক দুর্ঘটনা, আহত ও নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। একই সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সচেতনতাও আগের চেয়ে বেড়েছে।
রোববার (২২ অক্টোবর) দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস। ‘আইন মেনে সড়কে চলি-স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি’ স্লোগানকে সামনে রেখে এ বছর সপ্তমবারের মতো সরকারি উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
২০১৭ সালের ৫ জুন মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ও অনুমোদন করা হয়। অবশ্য তার আগেই একটি বেসরকারী সংগঠন দিবসটি পালন করে আসছিলো। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার দিবসটি পালনে উদ্যোগী হয় বলে সংগঠনটি জানিয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
প্রদত্ত বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ সম্প্রতি মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যুগে প্রবেশ করেছে। কর্ণফুলির বুক চিরে তৈরি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল। বাঙালির আত্মমর্যাদার প্রতীক পদ্মা সেতু চালুর মাধ্যমে পরিবর্তন ঘটেছে দক্ষিণাঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থার।
প্রদত্ত বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ তথা সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে সরকারের পাশাপাশি পরিবহন মালিক, শ্রমিক, যাত্রী, পথচারী ও সংশ্লিষ্ট সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে একযোগে কাজ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পর ক্ষতিগ্রস্ত সকল সড়ক ও সেতু মেরামত করে যোগাযোগ অবকাঠামো পুনঃস্থাপন করেন। তিনি ১৯৭৪ সালের মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধে ধ্বংসপ্রাপ্ত সকল সেতু পুন:নির্মাণ করে চলাচলের উপযোগী করেন, পাশাপাশি তিনি ৪৯০ কি.মি. নতুন সড়ক নির্মাণ করেন।
তিনি বলেন, এবারই প্রথম সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির পরিবারকে এককালীন অন্যূন ৫ (পাঁচ) লাখ টাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গহানিসহ আহত ব্যক্তিকে অন্যূন ৩ (তিন) লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে স্বয়ংক্রিয় মোটরযান ফিটনেস সেন্টার চালু করা হয়েছে। ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রবর্তনের মাধ্যমে বিআরটিএ’র প্রায় সকল সেবা ডিজিটালাইজড করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ৬ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ রোড সেফটি প্রজেক্ট’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি আশা করেন, নিরাপদ সড়কের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে পারব, ইনশাল্লাহ।
ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে গঠিত নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর পক্ষ থেকে প্রতিবছর ২২ অক্টোবরকে নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে পালনের দাবি উত্থাপন করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে নিসচা ১ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত মাসব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিয়ে সচেতনতামূলক সেমিনার, আলোচনা, র্যালি, নিরাপদ নামে স্মরণিকা, পোস্টার ও লিফলেট প্রকাশ এবং বিতরণ প্রভৃতি কর্মসূচি পালন করছে।