পৌনে দুই হাজার কোটি টাকার পাবনা-ঢালারচর রেলপথ কাজে আসছে না
দীর্ঘ ছয় বছর নির্মাণযজ্ঞ চলেছে পাবনা-ঢালারচর রেলপথ নির্মাণে। প্রায় ৭৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এ পথটি শতভাগ সরকারি অর্থায়নে নির্মাণ হয়েছে। খরচ হয়েছে প্রায় পৌনে দুই হাজার কোটি টাকা। কিন্তু পাবনা-ঢালারচর রেলপথ তেমন কোনো কাজেই আসছে না। একটিমাত্র লোকাল ট্রেন চলে, তাও অনিয়মিত।
ঈশ্বরদী-ঢালারচর রেলপথ নির্মাণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল রেলের রাজস্ব আয় বাড়ানো। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের প্রসার, রাজধানীর সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ স্থাপন, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে এবং রিজিওনাল কানেক্টিভিটির নতুন ও বিকল্প রেল রুট স্থাপন। যদিও বিপুল অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে গড়ে তোলা এ রেলপথে বর্তমানে চলাচল করছে দিনে একটি মাত্র ট্রেন।স্টেশনগুলোতে ধুলা জমেছে, চলছে বখাটের আড্ডা। বিপুল টাকায় নির্মিত স্থাপনার নিরাপত্তা দেওয়ারও লোক নেই।
ঢালারচর এক্সপ্রেস-৭৭৯ নামের ট্রেনটি সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে ঢালারচর থেকে ছেড়ে বেলা ১১টায় রাজশাহী পৌঁছায়। একই ট্রেন (ঢালারচর এক্সপ্রেস-৭৮০) রাজশাহী থেকে বিকাল সাড়ে ৪টায় ছেড়ে ঢালারচর পৌঁছায় রাত ৮টা ১৫ মিনিটে। ট্রেনটি চলে সপ্তাহে ছয়দিন।
রেলওয়ের তথ্য বলছে, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত নতুন লাইন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১০ সালের ৫ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়। শুরুতে রেলপথটির নির্মাণ ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৯৮৩ কোটি টাকা। মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১০ সালের জুন থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত। তবে নির্মাণকাজের দীর্ঘসূত্রতার কারণে একাধিকবার মেয়াদ ও ব্যয় সংশোধন করা হয়। প্রকল্পটি শেষ করতে রেলওয়ের সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ১ হাজার ৭১৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিপুল বিনিয়োগে গড়ে তোলা এ রেলপথে একটি মাত্র ট্রেন পরিচালনার মাধ্যমে রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না।
ঈশ্বরদী-ঢালারচর রেলপথে ঢালারচর এক্সপ্রেস ট্রেনের চলাচল শুরু হয় ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে। এরপর সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও রুটটিতে নতুন কোনো ট্রেন চালু করতে পারেনি রেলওয়ে। সংস্থাটির কর্মকর্তারা এজন্য অবশ্য জনবলস্বল্পতাকে দায়ী করেছেন। জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রেলওয়েতে জনবল রয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় কম। এ কারণে আমরা চাইলেও বিভিন্ন রুটে আমাদের পরিচালন কার্যক্রম বাড়াতে পারছি না। তবে জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান। প্রয়োজনীয়সংখ্যক জনবল পেলে ঈশ্বরদী-ঢালারচর রুটে নতুন ট্রেন চালু করতে পারব।’
এদিকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১৬ মে পাবনা সফরে গিয়ে ঢাকা-পাবনা সরাসরি ট্রেন চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর পাবনা সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘ট্রেন চালুর বিষয়টি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ফাইল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত গেছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনায় আছে। তিনি রেল কর্তৃপক্ষকে সার্বিক বিষয় বিবেচনা করতে বলেছেন। ট্রেন চালু করতে রেলওয়ের লাভ-লোকসানের একটি বিষয় আছে। রেল কর্তৃপক্ষ সেগুলো বিবেচনা করছে।’