অসাধু ওষুধ চক্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই: পবা
মানববন্ধন
দেশীয় বাজারে উৎপাদিত হচ্ছে ভেজাল ও নকল ওষুধ। যার ফলে ক্রমশই অস্থির হয়ে ওঠেছে ওষুধ শিল্প ও চিকিৎসা ব্যবস্থা। এ প্রেক্ষিতে শনিবার (৪ ডিসেম্বর) শাহবাগে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনসহ (পবা) সমমনা ১০টি সংগঠন এর যৌথ উদ্যোগে 'নকল, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ চক্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই' শীর্ষক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
পরিসংখ্যান মতে, দেশীয় বাজারে ভেজাল ও নকল ওষুধের বার্ষিক বিক্রয় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি। এসব ভেজাল ও নকল ওষুধ বাণিজ্যের ফলে সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে ও এম এ ওয়াহেদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি মো. নাজিমুদ্দিন, বিডি ক্লিকের সভাপতি আমিনুল ইসলাম টুব্বুস, সামাজিক শক্তির সভাপতি মো. হাবিব উল্লাহ, বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট সাইক্লিস্টের প্রধান সমন্বয়ক রোজিনা আক্তার, সামাজিক আন্দোলন সংস্থার সভাপতি অধ্যাপক হুমায়ুন কবির হীরু, পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মেনন চৌধুরী, দেবীদাস ঘাট সমাজ কল্যাণ সংসদের সভাপতি মো. মুসা, পরিষ্কার ঢাকার সমন্বয়ক মো. শাজাহান, বানিপার সভাপতি প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কাজ হলো মাঝে মাঝে বাজার থেকে ওষুধ সংগ্রহ করে মান পরীক্ষা করা। কিন্তু তাদের ল্যাবরেটরির সক্ষমতা কম। এই সুযোগ কাজে লাগায় অনেক কোম্পানি। লোকবলের অভাব ও ক্যাপাসিটি না থাকার দোহাই দিয়ে কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় না।
দেশে বর্তমানে প্রায় ৩০০টি ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বর্তমান বাজারমূল্য প্রতিবছর প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে মাত্র তিন শতাংশ ওষুধ আমদানি করতে হয় আর ৯৭ শতাংশ দেশীয় চাহিদা অভ্যন্তরীণ উৎপাদন থেকেই মেটানো হচ্ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ১৫৭টি দেশে বাংলাদেশ ওষুধ রফতানি করে। কিন্তু কিছু লাইসেন্সধারী ও লাইসেন্সবিহীন কোম্পানি অধিক মুনাফার জন্য ভেজাল ঔষধ তৈরি ও বাজারজাত করছে। যা মানুষকে যতটা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে তার চেয়ে বেশি শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নকল ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদন এবং বিপণনের সঙ্গে জড়িতরা গণহত্যার মতো অপরাধ করছে। আমরা বলতে চাই, এই গণহত্যা এখনই থামাতে হবে। আমরা দেখতে চাই, নকল ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত সব ঘটনার বিচার হচ্ছে, অপরাধীরা সাজা পাচ্ছে এবং সাজা ভোগ করছে। আইনের ফাঁকফোকর গলে তারা যেন বের হয়ে না আসতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক হুমকির জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি বদলাবে না।
সুপারিশসমূহ:
১. অসাধু কোম্পানির মালিক, ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরির অসাধু কর্মকর্তা এবং ওষুধ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও চিকিৎসকদের দ্রুত বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।
২. সকল ধরনের ওষুধ নিয়মিত পরীক্ষা করা এবং ফলাফল জনসম্মুখে প্রকাশ করা।
৩. ভেজাল ওষুধ চেনার এবং পরিহার করার বিষয়ে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম রেডিও-টিভিতে প্রচার করা।
৪. সারাদেশের বড় বড় মেডিক্যালের পাশে এবং বিভাগীয় শহরগুলোতে এমনকি জেলা শহরে অতি দ্রুত ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপন করা।
৫. মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা। এজন্য সৎ ও উদ্যমী কর্মী ও কর্মকর্তাদের নিযুক্ত করা।
৬. নিবন্ধনকৃত ফার্মেসি ছাড়া অন্য কেউ যেন ওষুধ বিক্রি করতে না পারে সেদিকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং যারা বিক্রি করবে তাদের মালিকদের শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৭. ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা।
৮. অতিমাত্রায় এন্টিবায়োটিক ওষুধ পরিহারের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা এবং তা কার্যকর করা।
টিটি/