ব্যানারে ‘জয় বাংলা’ না লেখায় রেলমন্ত্রীর তোপের মুখে ইউএনও

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় একটি বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানের ব্যানারে ‘জয় বাংলা’ না লেখাকে কেন্দ্র করে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের তোপের মুখে পড়েন দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম ফেরদৌস।
সোমবার (৬ মার্চ) দুপুরে উপজেলার সুন্দরদীঘি ইউনিয়নের সুন্দরদীঘি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবনির্মিত একাডেমিক ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিদ্যালয় চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। ইউএনও গোলাম ফেরদৌসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেলমন্ত্রী ও পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম সুজন।
পরে বিকালে এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, সুন্দরদীঘি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবনির্মিত একাডেমিক ভবনে পতাকা উত্তোলনের পর রেলমন্ত্রী উপস্থিত দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। এসময় হঠাৎ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাসনাৎ জামান চৌধুরী জর্জ উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতা-কর্মীকে নিয়ে রেলমন্ত্রীর কাছে এসে অনুষ্ঠানের ব্যানারে ‘জয় বাংলা’ না লেখায় উত্তেজিত হয়ে অভিযোগ দিতে থাকেন। এই সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসনাৎ জামান চৌধুরী জর্জকে উত্তেজিত হয়ে বলতে শোনা যায়, ‘ইউএনও গেজেট দেখতে চায় আমার কাছে। তিনি ব্যানারে জয় বাংলা লেখেন নাই।’ সেসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, সিনিয়র সহসভাপতি গোলাম রহমান সরকারসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী ইউএনওকে উদ্দেশ্য করে ‘মানি না মানব না’, ‘জবাব চাই’, ‘এই সাহসটা কোথায় পায়’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। পরিস্থিতির একপর্যায়ে রেলমন্ত্রী রাগান্বিত হয়ে ইউএনও গোলাম ফেরদৌসের হাত ধরে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিতে দেখা যায়। পরে ইউএনও ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রী মহোদয়ের উপস্থিতিতে আমরা অনেক প্রোগ্রাম সম্পন্ন করেছি। অনেকগুলো অনুষ্ঠানের ব্যানারে ‘জয় বাংলা’ লেখা ছিল না। সেই সময় কোনো সমস্যা না হলেও আজ একই বিষয়কে কেন্দ্র করে একটি মহল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়েছে। যা খুবই দুঃখজনক।
দেবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসনাৎ জামান চৌধুরী জর্জ বলেন, ইউএনও ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ লেখেননি। জাতীয় কোনো অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ থাকবে না এটা এই প্রথম দেখলাম। মন্ত্রী মহোদয় তো আর নতুন কোনো অনুষ্ঠান করতেছেন না। আগেও অনেক অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ লেখা ছিল কিন্তু হঠাৎ গতকালের (সোমবার) অনুষ্ঠানে ছিল না। এটা মন্ত্রী মহোদয় আমাদের কাছে শুনে ইউএনওর কাছে জানতে চেয়েছেন। পরে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় মন্ত্রী মহোদয় তাকে (ইউএনওকে) বলেন, আপনি চলে যান। আমরা অনুষ্ঠান শেষ করতেছি।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম ফেরদৌস মুঠোফোনে বলেন, আসলে বিষয়টি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছিল। ভুল বোঝাবুঝির কারণে এমনটি হয়েছে। আমি আপনাদের গেজেট দেখাতে পারি যে, ‘জয় বাংলা’ বলতে হবে। কিন্তু ব্যানারে লিখতেই হবে এমন কোনো নির্দেশনা নেই।
জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, সেখানে কী ঘটেছিল বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২ মার্চ বাংলাদেশ সরকার জারিকৃত গেজেট অনুযায়ী, সাংবিধানিক পদাধিকারী, দেশে ও দেশের বাইরে কর্মরত সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব ধরনের জাতীয় দিবস উদযাপন এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ও সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উচ্চারণ করবেন।
এসজি
