বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ফল ‘পাল্টে’ দিতেন মেহেদী!
মেহেদী হাসান। বাড়ি নড়াইলের ঝামারঘোপ গ্রামে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে গ্রুপ খুলতেন হোয়াটঅ্যাপসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এসব সামাজিক মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের টার্গেট করে দিতেন বিভিন্ন ধরনের পোস্ট।
কখনো অ্যাডমিশনে চান্স পাইয়ে দেয়া, কখনো আবার অকৃতকার্যদের মাত্র ২০ হাজার টাকায় ফল পাল্টে দেয়ার পোস্টও দিতেন। অর্থ সংগ্রহের পর বন্ধ করে দিতেন এসব গ্রুপ।
এভাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বিপুল অর্থ আত্মসাত করেন মেহেদী হাসান।
সোমবার (১৭ জানুয়ারি) নড়াইল থেকে মেহেদী হাসানকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানায় পুলিশের অপরাধ বিভাগ (সিআইডি)। এ সময় তার কাছ থেকে বিকাশ সিমসহ মোট ১০টি সিম, ৩টি মোবাইল ফোন এবং ১টি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়।
সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ জানান, নিয়মিত অনলাইন মনিটরিংয়ের সময় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তির জন্য একটি প্রতারক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে এমন তথ্য পায় তারা। সাইবার টিম জানতে পারে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জালিয়াতি করে ভর্তির প্রলোভন দিয়ে যাচ্ছে একটি অসাধু চক্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির বিষয়ে ভুয়া তথ্য সরবরাহ করে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থও হাতিয়ে নিচ্ছে তারা।
প্রতারণার ধরন জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘brur চান্স ১০০% করে দিব’ নামের গ্রুপ থেকে একটি বার্তা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শেয়ার করা হয়।
ওই বার্তায় বলা হয়, যারা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়নি, তাদের চান্স পেয়ে দেব। এতে খরচ হবে ২০ হাজার টাকা। অগ্রিম পেমেন্ট করতে হবে ৮৫০ টাকা। একই গ্রুপ থেকে আরেকটি বার্তা শেয়ার করা হয়। সেখানে লেখা ছিল, ‘যারা রেজাল্ট চেঞ্জ করার জন্য ৮৫০ টাকা দিয়েছেন তাদের রেজাল্ট চেঞ্জ হয়েছে। বিকেল ৫টার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে রেজাল্ট পাবেন। বাকি টাকা ভর্তির পর দেবেন।’
সিআইডি সাইবার টিম এ ব্যাপারে তৎপর হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। অনুসন্ধান চালানো হয় বেশ কয়েকদিন। অবশেষে প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করে সিআইডি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতারক চক্রটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি জালিয়াতি সঙ্গেও যুক্ত। এ পদ্ধতি অবলম্বন করে চক্রটি বিভিন্ন মোবাইল নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিতো’ যুক্ত করেন তিনি।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে সিআইডি জানায়, মেহেদী হাসান ২০১৭ সাল থেকে বিভিন্ন সময় এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেন। প্রতারক চক্র মূলত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। তাদের দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাইয়ে দেওয়ার জন্য আশ্বস্ত করা হতো এবং নিবন্ধনের টাকা দেওয়ার জন্য বাধ্য করা হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির রেজাল্টের পর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বন্ধ করে দেওয়া হতো। সঙ্গে এডমিন নম্বর এবং বিকাশ নম্বরও বন্ধ করে দিতো।
এনএইচ/এমএসপি