‘গুম হওয়া’ রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্যের খণ্ডিত অংশ মিলল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

মুক্তচিন্তা ও স্বাধীন মতপ্রকাশের বাধার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পার্শ্বে স্থাপন করা হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের প্রতীকী ভাস্কর্য, সেই ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এর প্রতিবাদে ‘গুম হয়ে গেছেন রবীন্দ্রনাথ’ এক অমসৃণ কাপড় লিখে টাঙিয়ে দেয়। ‘সেই গুম হওয়া’ রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্যের খণ্ডিত অংশ মিলছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
গত শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসি সংলগ্ন ফটক ও ছবির হাটের মাঝামাঝি স্থানে ভাস্কর্যটির খণ্ডিত অংশ পড়ে থাকতে দেখেন পথচারীরা। পরে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা ভাস্কর্যটির খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করেন।
গেল মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) হাতে পেরেকবিদ্ধ গীতাঞ্জলি, মুখে টেপ আটকানো কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এমন অভিনব ভাস্কর্য ঢাবি সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাশে মুক্তচিন্তা ও স্বাধীন মতপ্রকাশের বাধার বিষয়টি প্রতিবাদ নির্মাণ করা হয়। কথা ছিল ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে রাজু ভাস্কর্যের পাশে ভাস্কর্যটি থাকবে। কিন্তু ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের’ সম্মানহানি ও অবমাননা করা হয়েছে, এমন যুক্তি তুলে বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সেটি সরিয়ে ফেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, যারা এভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উপস্থাপন করেছেন, তারা বাংলা সাহিত্যের পুরধা এ ব্যক্তিকে অবমাননা করেছেন। যারা গোপনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কাজটি করেছেন তারা ঠিক করেননি।
আগামীতে এ ধরনের রসিকতা থেকে শিক্ষার্থীদের বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। তা ছাড়া, রাজু ভাস্কর্যের পাশে আরেকটা ভাস্কর্য স্থাপন করাতে সৌন্দর্যহানি হয়েছে।
ভাস্কর্য তৈরি ও স্থাপনের কাজে জড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি শিমুল কুম্ভকার বলেন, রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্য স্থাপনা করা অপসংস্কৃতি, সৌন্দর্যহানির কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর। তবে সেটি সরিয়ে কেন ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দিল! তার সদুত্তর এখনো আমরা পাইনি। রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্যের মাথা ভেঙে আলাদা করে ফেলা হয়েছে! কেন এমনটি করল? এটি কী অবমাননা নয়?
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের নির্দেশে রাতের অন্ধকারে ভাস্কর্যটি অপসারণ করা হয়েছে। এটি এখন আর আমাদের অবাক করে না। এর মাধ্যমে রাষ্ট্র যেভাবে মতপ্রকাশকে দমন করে আসছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের দালাল প্রশাসন সেই দমন-পীড়নবিরোধী একটি প্রয়াসকে একই উপায়েই দমন করল বলে প্রমাণিত হয়।
উল্লেখ্য, বাঁশ-থার্মোকল-বইয়ের পাতার আবরণে তৈরি হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাড়ে ১৯ ফুট দীর্ঘ প্রতীকী ভাস্কর্য। যার মাধ্যমে বইমেলায় আদর্শের স্টল বরাদ্দের না দেওয়া, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হয়রানিসহ বইমেলাতে লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যার মত বিষয়গুলোতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
এমএমএ/
