আড়িপাতা সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন: জিএম কাদের

জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, টেলিফোনে আড়িপাতা সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদের ৪৩ ধারায় সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে শুনছি, বিরোধী মতালম্বীদের বিশেষ করে সাংবাদিক, মানবাধীকার কর্মী, আইনজীবী, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী ও সরকারের বিরোধীতা করে কথা বলেন এমন ব্যক্তিদের স্মার্ট ফোনে আড়িপাতা হচ্ছে।’
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাব সম্পর্কে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে তিনি আরও বলেন, ইসরাইলি কোম্পানি প্যাসিটোরার তৈরি স্পাই ওয়ার নামে একটি প্রযুক্তির মাধ্যমে এই আড়িপাতা হচ্ছে। ওয়াশিংটন পোস্টসহ বিশ্বের ২৭টি নামি দামি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী বিশ্বের ৪৫টি দেশে স্মার্ট ফোনে আড়িপাতার জন্য একটি গোয়েন্দা প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। সে তালিকায় বাংলাদেশও আছে। সেখানে রিপোর্টে বলা হয়েছে, স্মার্ট ফোনে অড়িপাতার জন্য পিয়ারহেড বা স্পাই ওয়ার ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০২২ সালে ৫৭ লাখ ইউএস ডলার ব্যয়ে এ আড়িপাতা প্রযুক্তি কিনেছে বাংলাদেশ।
সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা বলেন, ‘সংবিধানে বলা আছে প্রত্যেক নাগরিক নিয়মিত কথা বলা ও মনোভাব আদান প্রদান করতে পারবে, এটা তার জম্মগত অধিকার। সুনির্দ্দিষ্ট অভিয়োগ ব্যতিরেকে স্পাই ওয়ার বা যেই প্রযুক্তি ব্যবহার করুক না কেন, তা সংবিধানের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন বলা যায়। যেকোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে তার ফোনে আড়িপাতা অনৈতিক ও সংবিধান পরিপন্থি। এগুলো ব্যবহৃত হয় জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড জানার জন্য। কিন্তু আমাদের এখানে এগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে, যারা সরকারের বিরোধীতা করে তাদের ফোনালাপ, ম্যাসেনজারে নিয়মিত আড়িপাতা ও রেকর্ড করার জন্য।
তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, সরকার কী এসব ব্যক্তিদের রাষ্ট্রদ্রোহী মনে করে এসব করছে? তাহলে গণপ্রজাতন্ত্রী অর্থাৎ যেখানে জনগণই রাষ্ট্রের মালিক, সেখানে রাষ্ট্র কি এটা করতে পারে? তাহলে সরকারী দল ও রাষ্ট্র কি একীভূত হয়ে গেছে? এমনটি হলে সেখানে সুশাসন দেওয়া সম্ভব হবে না।
জিএম কাদের বলেন, আড়িপাতার আরেকটা কারণ হতে পারে- সকল বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানি করা। কিন্তু তাদের একে অপরের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান বা কথা বলার অধিকার এদেশের মানুষের জম্মগত অধিকার। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ, যে দেশে প্রজারা মালিক তারা কথা বলবে, মত প্রকাশ করবে সেটা সকলের কর্তব্য। এ ধরনের আড়িপাতার কর্মকাণ্ড এদেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। তিনি এর ঘোর বিরোধীতা করে এসব প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধের আহ্বান জানান।
নিরাপদ সড়ক আইনের বাস্তবায়ন কেন হচ্ছে না- সেই প্রশ্ন তুলে বিরোধী উপনেতা বলেন, যে আইনটি এই জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হলো। তা কার স্বার্থে, কাদের রক্ষার্থে বাস্তবায়িত হচ্ছে না, এর প্রতিবাদে সংসদে বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব আনা উচিৎ বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা গেলেও এদেশের পার্লামেন্টে তা সম্ভব নয়, যোগ করেন তিনি।
রাজধানী ঢাকার বায়ু দূষণের চিত্র তুলে ধরে জিএম কাদের বলেন, বিশ্বের বহু দেশ থেকে রাজধানী ঢাকায় এখন দূষণের মাত্র এত বেশি যে বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়েছে। মানুষ মারা যাচ্ছে নানা রকম ফুসফুস জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এটি রোধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান সংসদের বিরোধী দলয় উপনেতা।
এনএইচবি/এমএমএ/
