শিক্ষার হার বাড়াতে আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার হার বাড়াতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের সময় এ আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে তার কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে কম্পিউটারের বোতাম চেপে ২০২২ সালের মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডসহ ১১টি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন।
এ সময় তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর আমরা শিক্ষার হার ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করলেও বিগত বিএনপি সরকারের সময় এ হার কমে ৪৪ শতাংশে নেমে আসে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার হার বর্তমানে ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ থেকে আরও বাড়াতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তবে, আমরা (গত) বিএনপি সরকারের আমলের শিক্ষার হারকে বাড়িয়ে ৪৪ শতাংশ থেকে ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী সময়মতো পরীক্ষা আয়োজন ও ফল প্রকাশের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হতে এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।
সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন তার ‘সোনার বাংলা গড়ার জন্য সোনার মানুষ চাই’। সেক্ষেত্রে আমাদের আজকের ছেলে-মেয়েরাইতো সোনার মানুষ।’
তিনি বলেন, বোর্ড পরীক্ষার পর অবসর সময়ে শিক্ষার্থীদের বুনিয়াদি ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রশিক্ষণের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। যাতে তারা নিজেদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারে। তাহলে তারা দেশ-বিদেশে চাকরি পেতে সুবিধা পাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার তথ্য-প্রযুক্তি প্রশিক্ষণের জন্য এবং ইনকিউবেশন সেন্টার ও ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অনেক সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। পরীক্ষার নিয়মিত প্রস্তুতির পাশাপাশি তারা আইসিটি বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিতে পারছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান যুগ ডিজিটাল ডিভাইসের যুগ কাজেই সেদিকে তারা আরও নজর দিলে সেখানে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। তা ছাড়া আমরা প্রত্যেকটা উপজেলায় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠাসহ বহুমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তিনি বলেন, ‘শুধু বিএ, এমএ পাশ করলে হবে না, একই সময়ে তাদের তথ্য-প্রযুক্তির ওপর জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কারণ, বর্তমান যুগটা ডিজিটাল ডিভাইসের যুগ।’
তিনি ছেলে-মেয়েদের অযথা সময় নষ্ট না করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদেরকে দক্ষ করে গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সরকারপ্রধান বলেন, তার সরকার প্রত্যেকটি উপজেলা পর্যায়ে একটি করে স্কুল ও কলেজ সরকারিকরণ করে দিয়েছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ঘরের খেয়ে যেন ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষা নিতে পারে সেই সুযোগ আমরা করে দিচ্ছি।
প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত তার সরকারের বিভিন্ন বৃত্তি ও উপবৃত্তি প্রদান, বিদেশে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণসহ নানাবিধ সুযোগ সুবিধা প্রদানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার গবেষণার প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করেছে। যা একসময় আমাদের দেশে ছিল না। ’৯৬ সালে সরকারে এসেই প্রথম তিনি গবেষণার জন্য পৃথক বরাদ্দ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছি এটা, গবেষণারই ফসল। বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও কৃষির বর্তমানে যে গবেষণা চলছে তার সঙ্গে অন্যান্য ক্ষেত্রেও তিনি গবেষণার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন।
এর আগে, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সম্মিলিত ফলাফলের সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। পরে একে একে ১১টি শিক্ষা বোর্ড- নয়টি সাধারণ বোর্ড, একটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং একটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা নিজ নিজ বোর্ডের ফল প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান।
করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় গত ৬ নভেম্বর সারাদেশে স্বাভাবিক পরিবেশে শুরু হয় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা এবং শেষ হয় ২২ ডিসেম্বর। মাত্র ৫৭ দিনের মাথায় ফল প্রকাশ করা হলো। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১২ লাখ ৩ হাজার ৪০৭জন। এর মধ্যে ৬ লাখ ২২ হাজার ৭৯৬ জন ছাত্র এবং ছাত্রী ৫ লাখ ৮০ হাজার ৬১১ জন।
আরএ/
