হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাগরের পানি থেকে হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেছেন, এ বিষয়ে যে সকল কোম্পানি প্রস্তাব দিয়েছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। যদি সম্ভব হয় তাহলে মাতারবাড়ি, মহেশখালী বা বাঁশখালীতে হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবতা যাচাই করা হবে। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, দেশে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়াতে সরকার নানামুখি পদক্ষেপ নিয়েছে।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ তথ্য জানান।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে এ সংক্রান্ত লিখিত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খান। লিখিত প্রশ্নে তিনি কক্সবাজার সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে সুবিধাজনক স্থানে সাগরের পানি হতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জলবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে সরকারের পরিকল্পনা আছে কি না, তা জানতে চান।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, সাগরের পানি থেকে হাইড্রোজেন বিদ্যুত উৎপাদন নতুন ধারণা। বিশ্বের কোন কোন দেশে সমুদ্রের জোয়ার-ভাটাকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করা হয়, যা ব্যয়সাপেক্ষে এবং তা বাণিজ্যিকভাবে ফলপ্রসু হয়নি। ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ায় এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কোন পরিকল্পনা এই মুহূর্তে নেই। তবে ভবিষ্যতে এই ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের খরচ কমে এলে বঙ্গোপসাগরের জোয়ার-ভাটাকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে।
বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ার জন্য সরকার নানামুখি পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি জানান, রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে অধিক কর্মী পাঠানো ও বৈধভাবে ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠানো অন্যতম।
বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকার ২০১৯ সালের পহেলা জুলাই থেকে ২ শতাংশ প্রণোদনা দিয়ে আসছে। সরকার ইতোমধ্যে প্রণোদনার বিষয়টি ২ শতাংশ থেকে আড়াই শতাংশে উন্নীত করেছে। সরকারের এ সব পদক্ষেপের ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।
একই প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, বাংলাদেশ একটি উচ্চ রেমিট্যান্স প্রাপ্ত দেশ। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির পরও ২০২০-২১ অর্থ বছরে ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ২১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স এসেছে।
এ ছাড়া, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে প্রায় ১০ হাজার ৪৯৩ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে। তিনি আরও বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে রেমিট্যান্সের কোনো বিকল্প নেই এবং তা আনতে হবে বৈধ পথে। নতুন শ্রম বাজার অনুসন্ধান, বিদ্যমান বাজার সংহত করা এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সম্ভাবনাময় দেশসমুহের সরকার ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সাথে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনগুলো আলোচনা অব্যাহত রেখেছে।
আওয়ামী লীগের সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের ফলে ২০২২ সালে রেকর্ড সংখ্যক প্রায় ১১ লাখ ১৩ হাজার ৩৭৪ কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে।
এর মধ্যে নারী কর্মীর সংখ্যা এক লাখ ৫ হাজার ৪৬৬ জন। এ ছাড়া, সরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিডেটের (বোয়েসেল) মাধ্যমে ২০২২ সালে ৬১৫ জন পেশাজীবী এবং ১৭ হাজার ৯৭৮ জন দক্ষ কর্মীসহ মোট ১৮ হাজার ৫৯৩ জন কর্মীর কর্মসংস্থান লাভ করেছে।
একই প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা জানান, বর্তমানে ১৬৮টি দেশে শ্রমশক্তি রপ্তানি করা হচ্ছে। কিন্তু সরকার মধ্যপ্রাচ্য কেন্দ্রিক শ্রম বাজার নির্ভরতা কমাতে চায়। সেজন্য পূর্ব ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার নতুন কিছু দেশে শ্রমিক রপ্তানি চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও জানান, আওয়ামী লীগের ২০১৮ সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতি উপজেলা থেকে গড়ে বছরে এক হাজার কর্মী পাঠানোর জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সরকার দলীয় সদস্য বেনজির আহমেদের প্রশ্নের উত্তরে সংসদ নেতা জানান, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে যেখানে মোট খাদ্যশস্য উৎপন্ন হতো ৩ কোটি ২৮ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে ৭০টির বেশি দেশে সবজি ও ফল রপ্তানি হচ্ছে এবং কৃষি পণ্য রপ্তানিতে ১০০ কোটি ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, বর্তমান বাংলাদেশ বিশ্বে চাল উৎপাদনে ৩য় স্থানে, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদেনেও ৩য় স্থান। পাট উৎপাদনে ২য়, চা উৎপাদনে ৪র্থ এবং আলু ও আম উৎপাদনে ৭ম স্থানে উন্নীত হয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে সরকার প্রধান জানান, বর্তমান সরকারের আমলে দেশে এক হাজার ৫৫৮টি সেতু ও সাত হাজার ৪৯৮টি কালভার্ট নির্মাণ ও পূনঃনির্মাণ করা হয়েছে। আর ৯০৮ দশমিক ৪৯ কিলোমিটার সড়ক চার লেন বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। এর মধ্যে ২৩৫ দশমিক শূন্য ৩ কিলোমিটার সড়ক ইতোমধ্যে চার লেন বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত হয়েছে।
এনএইচবি/এমএমএ/
