পাইলট হিন্দির মৃত্যু
গুলশান থানার বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়ার অভিযোগ মার্কিন নাগরিকের

গালফ এয়ারের পাইলট ক্যাপ্টেন মোহাম্মাদ ইউসুফ আল হিন্দির মৃত্যুতে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনে গুলশান থানায় মামলার আবেদন করেছেন মৃতের বোন মার্কিন নাগরিক তালা এলহেনদি জোসেফানো। তবে গুলশান থানা মামলাটি নেয়নি। থানা থেকে তাকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় ইউনাইটেড মেডিকেলের বিরুদ্ধে মামলা করতে আইনজীবীকে নিয়ে গুলশান থানায় যান এলহেনদি। বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরমান আলী ও গুলশান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার নিউটন দাসের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
পুলিশ জানায়, এই ঘটনাটি গুরুতর উল্লেখ করে তাদের কোর্টে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অবশ্য কোর্ট থেকে থানায় এফআইআর করতে বলা হলে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বস্থ করেন তারা।
এ বিষয়ে এলহেনদি অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ প্রথমে মামলা নিতে রাজি ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তারা মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মামলা না নিতে পুলিশকে প্রভাবিত করেছে। পুলিশ তার ভাইয়ের হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে হাসপাতালকে সাহায্য করছে।
এলহেনদির আইনজীবী ব্যারিস্টার মহুয়া মোর্শেদ জানান, এলহেনদি আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন। আমরা শিগগিরই আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গণমাধ্যমকে অবহিত করব।’
এর আগে গত ২২ ডিসেম্বর মার্কিন নাগরিক মোহাম্মদ ইউসুফ আল হিন্দির মৃত্যু হয়। এর ৪৬ দিন পর সোমবার (৩০ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বেলা সাড়ে ১২টায় সংবাদ সম্মেলনে তালা এলহেনদি অভিযোগ করেন, ইউনাইটেড হাসপাতালের ভুল চিকিৎসায় তার ভাইর মৃত্যু হয়েছে।
মোহাম্মাদ ইউসুফ আল হিন্দি ও তালা এলহেনদি জোসেফানো ভাইবোন দু'জনই যুক্তরাষ্ট্র ও জর্ডানের দ্বৈত নাগরিক। ভাইয়ের এমন মৃত্যুর পর বাংলাদেশে ছুটে আসেন এলহেনদি। খোঁজখবর নিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতাল ও গালফ এয়ার কর্তৃপক্ষের অবহেলার নানা প্রমাণ পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, তার ভাই ফ্লাইট নিয়ে বাংলাদেশে আসার পর অসুস্থ হয়ে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হলে ভুল চিকিৎসায় ও অবহেলায় মারা যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে কাগজপত্র চাইলে অসহযোগিতা করে। তিনি হাসপাতালটির লাইসেন্স বাতিলের দাবি তোলেন। নিজের কর্মস্থল গালফ এয়ারও সময়মতো তার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারেনি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন ভোর ৪টার দিকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পড়ে যান হিন্দি। এ সময় তার প্রথম কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। পরে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হলে কার্ডিওলজিস্টের বদলে অনভিজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অপ্রয়োজনীয় কিছু টেস্ট করিয়ে অযথা সময় নষ্ট করেন তারা। ভোর সাড়ে ৫টায় হাসপাতালে নেওয়ার পর সকাল সোয়া ১১টায় মারা যান তিনি।
এলহেনদির অভিযোগ, সিসিটিভি ফুটেজ ও হাসপাতালের কাগজপত্রে কারসাজি করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডা. কায়সার নাসির এসব প্রক্রিয়া করেছেন বলে জানায়। কিন্তু নাসির কার্ডিওলজিস্ট কিনা, তাও পরিস্কার না। কারণ চিকিৎসার কাগজপত্রে তার নাম উল্লেখ নেই। তিনি হাসপাতালে সশরীরে ছিলেন না।
এলহেনদি জানিয়েছেন, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। তারা বলেছেন, চিকিৎসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এক ঘণ্টার জায়গায় ইউনাইটেড হাসপাতাল ছয় ঘণ্টা লাগিয়েছে।
তবে এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
কেএম/এএস
