ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের বিদেশে ১৪টি বাড়ি থাকার সংবাদ প্রকাশের পর এবার তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে নতুন করে অর্থ পাচারের অভিযোগের কারণে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বুধবার (১১ জানুয়ারি) দুদদকের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১৪ বাড়ি-সংক্রান্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে আগে থেকে চলমান অনুসন্ধানের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করেছে।
ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে ১৩ বছরে বিদেশি ঋণ করা বড় বড় প্রকল্প থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে হুন্ডিসহ বিভিন্ন উপায়ে আমেরিকায় পাচার করে লস অ্যাঞ্জেলেস, নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন শহরে বিলাসবহুল ১৪টি বাড়ি, গাড়ি ক্রয়সহ মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ সংযুক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মোহাম্মদ শফিউল্লাহ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, সব কিছু মিলিয়ে তদন্ত হলেও তার বিরুদ্ধে আমাদের অনুসন্ধানে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি বা এখনো জানা যায়নি। আগামীকাল (১২ জানুয়ারি) এ বিষয়ে ভালোভাবে বলা যাবে।
বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, দুদক উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে। টিমের অপর সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক মাহবুব আলম।
এর আগে ৯ জানুয়ারি প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের যুক্তরাষ্ট্রে ১৪টি বাড়ি কেনার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। পরে ওই প্রতিবেদন আদালত আমলে নিয়ে অভিযোগ দুটির অনুসন্ধানের অগ্রগতি জানতে চান হাইকোর্ট। এ সময় আদালত দুদককে ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে জানাতে নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে তাকসিম এ খানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।
রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম চূড়ান্ত হয়েছে। ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামে এই সাত কলেজের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। রোববার (১৬ মার্চ) ইউজিসিতে শিক্ষার্থীদের ৩২ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এর আগে নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম কী হবে, এ নিয়ে প্রতিনিধি দলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুটি মত আসে। তাদের মধ্যে ১৭ জন ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির পক্ষে মত দেন। তবে অন্য শিক্ষার্থীরা এই নাম চান না। তারা বলছেন, ঢাকা কলেজের পূর্ব নাম ছিল ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজ। তারা ফেডারেল ইউনিভার্সিটি নামের পক্ষে মত দেন। পরে ইউজিসি তাদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে বলে। পরে তারা আলোচনা করে একটি নামের পক্ষে নিজেদের মত দেন।
এর আগে গত ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরিচালক মো. জামাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সাত কলেজের নামকরণ-সংক্রান্ত বিষয়ে ছাত্র প্রতিনিধিদের টিম লিডারদের মতবিনিময় সভা আয়োজনের ঘোষণা দেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাত কলেজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সমকক্ষ একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রদানের লক্ষ্যে কমিশনের চেয়ারম্যান মহোদয়ের সভাপতিত্বে কনফারেন্স রুমে ১৬ মার্চ সকাল ১০টায় প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
হাইকোর্টের রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বুয়েটে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে নিহত শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ। তিনি গণমাধ্যমে বলেন, হাইকোর্টের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এখন সব প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুত এ রায় কার্যকর দেখতে চাই।
রোববার (১৬ মার্চ) দুপুরে বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।
এ রায় ঘোষণার সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কেবি রুমি, জহিরুল ইসলাম সুমন, নূর মোহাম্মদ আজমী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার সুমাইয়া আজিজ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় আসামিপক্ষে আইনজীবী মাসুদ হাসান চৌধুরী ও আজিজুর রহমান দুলু উপস্থিত ছিলেন। আদালত কক্ষে আবরার ফাহাদের পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বহুল আলোচিত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২০ আসামিরই সাজা বহাল রেখে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে ৫ আসামির যাবজ্জীবন দণ্ড বহাল রেখেছেন আদালত।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর রাতে বুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী পিটিয়ে হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর বুয়েটের ২০ শিক্ষার্থীকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এ মামলায় আরও পাঁচ শিক্ষার্থীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। নিম্ন আদালতের রায় খতিয়ে দেখতে ডেথ রেফারেন্স হিসেবে ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি মামলার নথি হাইকোর্টে পৌঁছায়।
গত বছরের ২৮ নভেম্বর হাইকোর্ট বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি শুরু হয়।
রংপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ শিবলী কায়সার। ছবি: সংগৃহীত
ঘুষ-বাণিজ্য ও থানায় মামলার বাদীকে মারধরের অভিযোগ ওঠার পর রংপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মোহাম্মদ শিবলী কায়সারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে রংপুর মহানগর পুলিশ থেকে তাঁকে প্রত্যাহার করে পুলিশের সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।
রংপুর মহানগর পুলিশের আরেক উপকমিশনার (অপরাধ) হাবিবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এ ছাড়া পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (প্রশাসন) কাজী মো. ফজলুল করিমের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, রোববার শিবলী কায়সার যেন সদর দপ্তরে রিপোর্ট করেন।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রংপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগে থানায় মামলা করতে গিয়ে মারধরের শিকার হন এক ব্যবসায়ীর প্রতিনিধি। শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে কর্তব্যরত কনস্টেবলের রাইফেল কেড়ে নিয়ে মামলা করতে যাওয়া ব্যক্তিকে বেধড়ক পিটুনির অভিযোগ ওঠে। নগরের কোতোয়ালি থানায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একটি অভ্যন্তরীণ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। ঘটনার পর থানা-পুলিশ চাঁদাবাজির অভিযোগে ভুক্তভোগী ব্যক্তির একটি মামলা নিলেও আসামির তালিকায় ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে রাখা হয়নি।
মোহাম্মদ শিবলী কায়সার নগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে ‘অপরাধ’ থেকে প্রত্যাহার করে ‘ক্রাইম অ্যান্ড অপসে’ সংযুক্ত করা হয়। মামলার বাদীকে মারধর ও ঘুষ–বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে গত ১৩ নভেম্বর রংপুরের হারাগাছের ব্যবসায়ী লিপি খান ভরসার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। মামলার পর রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক অমিত বণিকের মাধ্যমে লিপি খানের কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ ওঠে পুলিশ কর্মকর্তা শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে ১১ মার্চ পুলিশ সদর দপ্তরে শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন লিপি খান।
অভিযোগের সঙ্গে অমিত বণিকের সঙ্গে ঘুষ দাবির কথোপকথনের কয়েকটি অডিও রেকর্ড জমা দেন লিপি খান। এর পর বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে অমিত বণিককে থানায় ডেকে নেয় কোতোয়ালি থানার পুলিশ। এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে লিপি খানের পক্ষে কোতোয়ালি থানায় মামলা করতে যান তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক পলাশ হাসান (২৭)। ওই দিন বিকেল পাঁচটার দিকে থানায় যান উপপুলিশ কমিশনার শিবলী কায়সার। তখন থানায় আরেক উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ) হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রের ভাষ্য, শিবলী কায়সার থানায় ঢুকেই পলাশ হাসানের ওপর চড়াও হন এবং তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে কর্তব্যরত কনস্টেবলের রাইফেল কেড়ে নিয়ে তাঁকে (পলাশ) গুলি করতে উদ্যত হন। পরে চাঁদাবাজির অভিযোগে থানায় মামলা নেওয়া হলেও এতে আসামি করা হয় শুধু অমিত বণিককে। মামলায় আগে থেকেই থানা হেফাজতে থাকা অমিত বণিককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
তদন্ত সূত্রগুলো জানায়, শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে হেডকোয়ার্টার্সে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (১৩মার্চ) বিকেলে শিবলী কায়সারকে উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) থেকে বদলি করে উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) পদে সংযুক্ত করা হয়।
তদন্ত সূত্রগুলো আরও জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিএনপি, জামায়াত এবং শিক্ষার্থীদের নামে হওয়া মামলাগুলো ফাইনাল রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ দিলেও ওই কর্মকর্তা তা না দিয়ে কালক্ষেপণ করেন। সেই সময়কার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বার বার তাকে বললেও তিনি অপেশাদার আচরণ করেন।
এ বিষয়ে রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী জানান, থানার ঘটনার সাধারণ ডায়েরি হেডকোয়ার্টার্সে পাঠানো হয়েছে। এরপর তাকে হেড কোয়ার্টার্সে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি সদর দফতর বলতে পারবে।
তিনি আরও জানান, লিপি খানকে গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাচেষ্টা মামলা ছাড়াও নিজের নাম মামলা থেকে বাদ দিতে অর্থ লেনদেনের যোগসাজেশের অভিযোগ রয়েছে।