‘বঙ্গবন্ধু হত্যার দিন আওয়ামী লীগ নেতারা মোস্তাকের সঙ্গে ছিল’
বঙ্গবন্ধুকে যেদিন সপরিবারে হত্যা করা হয় সেদনি কোন প্রতিবাদ করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম ওবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘সেদিন আওয়ামী লীগের নেতারা মোস্তাকের সঙ্গে ছিল। আমরা ছাত্ররা একটা মিছিল করতে পারিনি কারণ আমাদের উপরে যারা ছিলেন তারা প্রতিবাদ করতে দেননি। কি দুর্ভাগা আমাদের।’
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দুপুরে জাতীয় সংসদের পার্লামেন্টস মেম্বরস ক্লাবে পার্লামেন্ট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন-বিপিজেএ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক চিফ হুইপ ও বর্তমান অনুমিত হিসাব কমিটির সভাপতি উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ। এ ছাড়া আলোচক হিসেবে ছিলেন, জাতীয় সংসদের হুইপ মাহবুব আরা গিনি, স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু, সড়ক পরিবন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নান।
বিপিজেএ আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক নিখিল ভদ্রের সঞ্চালনা ও সদস্য সচিব কাজী আফিফুজ্জামানের (কাজী সোহাগ) পরিচালনায় এই আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিপিজেএ নির্বাহী কমিটির সিনিয়র সদস্য রফিকুল ইসলাম সবুজ প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্য আব্দুস শহীদ বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্ব নেতা। বাংলাদেশ এই নামটিও বঙ্গবন্ধুর দেওয়া। বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে বলতেন বাংলাকে স্বাধীন করতে হলে জয়বাংলা স্লোগান দিতে হবে। আমরা যখনই কোথাও মিছিল মিটিং হতো এই জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে উজ্জিবিত করতাম।
অনেকে বলেন বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে কারা? নেপথ্যে কারা সেটি তো পঞ্চম সংশোধনী দেখলেই বোঝা যায়। জিয়াউর রহমান কেন সেদনি পঞ্চম সংশোধনী করলেন? নিজেকে বাঁচানোর জন্যই সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনি এনেছিলেন। এখন তার উত্তরসরিরা মাঝে মাঝে আন্দোলনের হুমকি দেয়। কিন্ত তাদের ডাকে মানুষ সাড়া দেয় না।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সময় সংবাদ মাধ্যমের বেশি স্বাধীনতা ছিল। অথচ বলা হয় বাকশাল ছিল এই ছিল সেই ছিল। সাংবাদিকরা নিজেরা লিখতে না পেরে বঙ্গবন্ধুকে দোষ দিত। আসলে মানুষকে চোখে ধুলা দিয়ে দেশকে অন্যভাবে পরিচালিত করাই ছিল ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশে।
ওবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় সেদিন আওয়ামী লীগের নেতারা মোস্তাকের সাথেই ছিল। আমরা ছাত্ররা একটা মিছিল করতে পারিনি। কারণ, আমাদের উপরে যারা ছিলেন তারা প্রতিবাদ করতে দেননি। নেতারা সেদিন অন্য ভূমিকা পালন করেছিল, আওয়ামী লীগের নেতারা সবাই তো মোস্তাকের সঙ্গেই ছিল।
তিনি বলেন, যে লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম সেই লক্ষ্য উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে। আমি খুবই মর্মাহত যখন দেখি বঙ্গবন্ধুর মুড়াল বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়ার হুমকি দেয় মামুনুল হকদের মতো লোক, তখন তার বিরুদ্ধে কোনো উচ্চারণ হয়নি বাংলাদেশে।
অথচ আওয়ামী লীগের বিশাল অর্গানাইজেশন আছে। লাখ লাখ লোককে সমাবেত করার ক্ষমতা আওয়ামী লীগের ছিল। কিন্তু আমাদের নেতৃত্ব সবাই এক মুখি হয়ে আছে। সবাই নেত্রীর দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি কিছু বলবেন কি না। এই অবস্থা চলতে পারি। যদি দেশটাকে বাংলাদেশ রাখতে চান না। মানুষকে দেশ রাখতে চান না। কতিপয় দুর্বৃত্তের হাতে দেশ ছেড়ে দিতে পারি না। যারা ধর্ম নিয়ে কথা বলেন আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছি কোথায় ধর্মে শুধু ইসলামের কথা বলা আছে? ইসলাম ধর্মে মানুষের কথা বলা আছে।
শামসুল হক টুকু বলেন, এই মাসটি আমাদের কষ্টের মাস, বেদনার মাস। আবার ঘুরে দাড়ানোর মাস, অর্থাৎ সকল শোক ব্যথাকে উপেক্ষা করে শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা নিরলস চেষ্টা করছেন। সেগুলোকে বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে ঘাতকদের সমুচিত জবাব দেওয়া।
হুইপ মাহবুব আরা গিনি বলেন, সেদিন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। সেদিন বঙ্গমাতার কি দোষ ছিল, ছোট রাসেলের কী দোষ ছিল। ওরা তাদেরকেও বাঁচতে দেয়নি। এ রকম একজন মহান নেতার জন্ম হয়েছিল বলেই বাংলাদেশ পেয়েছি আমরা সৌভাগ্যবান যে তার সুযোগ্য কন্যাকে পেয়েছি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি যারা পলাতক আছে তারা কী ভালো লাইভ লিড করছে? যতই বিদেশে থাকুক তা কিন্তু না।
বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, আওয়ামী লেীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছিল; এটা অস্বীকার করার উপায় নাই। এক সময় মানুষ চেয়েছিল ষড়যন্ত্র করে জাতির পিতাকে বাদ দিতে কিন্তু তার যোগ্য কন্যা যেভাবে সারা দেশের মানুষকে নিয়ে সারা জাতিকে ইতিহাস সমৃদ্ধ করেছেন, সামনে এনেছেন আর কেউ বঙ্গবন্ধুকে পেছনে টানতে পারবে না। বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন সভা সেমিনারে বঙ্গবন্ধু প্রতিদিনিই নতুন করে জন্ম নিচ্ছেন। সারা পৃথিবীতে নতুন করে উজ্জিবিত হচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুকে আর কেউ ভুলবে না।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মাত্র ৫৫ বছর আমাদের মাঝে ছিলেন। যার ত্যাগ তীতিক্ষা হাজার বছর ছাড়িয়ে গেছে। কত সংগ্রাম করেছেন। তার সেই ত্যাগ তীতিক্ষা হাজার হাজার বছর ছাড়িয়ে গেছে। সেজন্যই তাকে বলে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি।
এসএম/এমএমএ/