নারীর ক্ষমতায়নে উন্নয়নশীল বিশ্বে বাংলাদেশ রোল মডেল: স্পিকার
নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল বিশ্বে বাংলাদেশ রোল মডেল বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
বুধবার (১০ আগস্ট) ইউএন ওমেন সদর দপ্তরে ইউএন ওমেনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক অনিতা ভাটিয়া ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠককালে স্পিকার এ কথা বলেন।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ইউএনওমেন এর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তিনি এর কার্যক্রমের সঙ্গে নানানভাবে সম্পৃক্ত রয়েছেন। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরনে নিবেদিত ইউএনওমেন এর কার্যক্রমের প্রতি তাই তার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে।
অনিতা ভাটিয়া ইউএনওমেন সদর দপ্তরে স্পিকারকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, নারীর সার্বিক উন্নয়নে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর বিশেষ আগ্রহ ও মনোযোগ সম্পর্কে ইউএনওমেন সম্যক অবগত আছে।
স্পিকার বলেন, পার্লামেন্ট রাষ্ট্রের সকল কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু। রাষ্ট্র পরিচালনা এবং উন্নয়ন ও জনস্বার্থ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সময়োপযোগী আইন প্রণয়ন সংসদের প্রধান কাজ। কিন্তু সমকালীন বিশ্বে আইন প্রণয়নের বাইরেও পার্লামেন্টের ভূমিকা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। সমকালীন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, জেন্ডার সমতা নিশ্চিতকরণ, জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতাসহ সকল প্রকার সহিংসতা নির্মূল, দারিদ্র্য বিমোচনসহ গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণে পার্লামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ আন্তরকিভাবে কাজ করে যাচ্ছ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ইউএন ওমেনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক বলেন, বাংলাদেশ সার্বিকভাবে নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশেষ করে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের গৃহীত নানান পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের মাধ্যমে ইউএন ওমেন বাংলাদেশে জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করনে কাজ করতে আগ্রহী বলে তিনি জানান।
সেই লক্ষ্যে সংসদ সদস্যগণের সমন্বয়ে নারী উন্নয়ন বিষয়ক সর্বদলীয় পার্লামেন্টারি গ্রুপ গঠন করতে ইউএন ওমেন কারিগরি সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত বলে তিনি উল্লেখ করেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বাংলাদেশে জনসংখ্যা ও উন্নয়ন ইস্যূতে সংসদ সদস্যগণের সম্পৃক্ততা জোরালো করার জন্য বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পার্লামেন্টারিয়ানস অন পপুলেশন অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট-বিএপিপিডি গঠনের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, বিএপিপিডি অত্যন্ত নিষ্ঠা ও সাফল্যের সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা নারী, শিশু ও যুব সমাজের কল্যাণ ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে শুধুমাত্র আইন প্রণয়ণেই সীমাবদ্ধ না থেকে জাতীয় সংসদের স্পীকারের নেতৃত্বে বিএপিপিডির আওতায় ‘বাল্যবিবাহ ও জেন্ডার ভিক্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ; ‘মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন, নিরাপদ প্রসব নিশ্চিতকরণ ও পরিবার পরিকল্পনা; এবং ‘জনসংখ্যার বহুমাত্রিকতা ও যুব উন্নয়ন-এ তিনটি ইস্যুতে আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করাসহ মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছেন।
স্পিকার বলেন, এ ক্ষেত্রে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য সংসদ সদস্যগণ যার যার নির্বাচনী এলাকাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাথে সংযোগ স্থাপন করে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। এ ক্ষেত্রে ইউএনএফপিএ কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করে আসছে।
বিএপিপিডি’র আদলে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন জোরালো করাসহ জেন্ডার সমতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সংসদীয় গ্রুপ গঠন করার বিষয়ে স্পিকার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এক্ষেত্রে ইউএন ওমেন কর্তৃক কারিগরী সহযোগিতা প্রদানের সিদ্ধান্তকে তিনি স্বাগত জানান।
ইউএন ওমেনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই গ্রুপ নারীর সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জেন্ডার সমতা অর্জনের পথে যে বাধাগুলো আছে তা চিহ্নিত করবে এবং সেসব বাধা দূরীকরণে সচেতনতা জোরদার করবে।
সমকালীন বিশ্বে জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত যে সমস্যাগুলোর উদ্ভব হচ্ছে, তা নারীকে কীভাবে ইফেক্ট করছে, তাও বিভিন্ন পর্যায়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
স্পিকার বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত সংকটে নারী বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। পরিবেশ সংরক্ষণে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে পারলে সাফল্য আসবে। এ প্রসঙ্গে উদাহরণ টেনে স্পিকার বলেন, নদী কিংবা জলাশয়ের পানি নানান কাজে নারীরা ব্যবহার করে। তাদের মধ্যে এই পানি সুরক্ষার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলে পানি দূষণ কমানো সম্ভব হবে।
ইউএনওমেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, পারিবারিক মজুরিবিহীন শ্রমে নারীর অবদান আড়ালে থেকে যাচ্ছে। নারীর সেই কাজের অর্থনৈতিক মূল্য কিংবা জিডিপিতে সেই শ্রমের অবদান কতদূর, তা নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। সেটা কিভাবে নির্ধারণ করা যায় তা নিয়ে ইউএনওমেন কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিটিকস- বিবিএস এর
সঙ্গে তারা কাজ করছে। এ বিষয়ে জাতীয় সংসদ সদস্যগণের সহযোগিতা কামনা করেন।
স্পিকার বলেন, পারিবারিক কাজে নারীর এই অবদান সমগ্র বিশ্বেই আড়ালে থেকে যাচ্ছে। সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর এই অবদানকে অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই।
স্পিকার বলেন, করোনা অতিমারিতেও নারী বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। নারীকে এই অবস্থা থেকে উত্তরণে বিশ্বের সবাইকে এক যোগে কাজ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের উদাহরণ টেনে স্পিকার বলেন, করোনা অতিমারিতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষায় সরকার সরাসরি নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেছে। এই উপকারভোগীদের একটি বড় অংশ নারী।
তা ছাড়া স্কুলে বালিকাদের স্টাইপেন্ড প্রদান করা হচ্ছে। উক্ত স্টাইপেন্ডের অর্থ মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তারা যাতে এই কর্মসূচির পূর্ণ সুফল পেতে পারে সেই লক্ষ্যে তাদের মোবাইল সেটও কিনে দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক গৃহীত এইসব পদক্ষেপের ফলে করোনা অতিমারির অভিঘাতও বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী অতিক্রম করতে পেরেছে।
ইউএন ওমেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এইসব পদক্ষেপের প্রশংসা করে জানায় তিনি বিশ্বে নারী উন্নয়নের রোল মডেল। তারা বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের সামনে সব সময়ই বাংলাদেশের উদাহরণ উপস্থাপন করে থাকেন যাতে তারাও বাংলাদেশের পদাংক অনুসরণ করতে উৎসাহী হয়।
বৈঠকে ইউএন ওমেনের পক্ষ থেকে চিফ অব রিসার্চ অ্যান্ড ডাটা পাপা সেক, প্রোগ্রাম অ্যানালিস্ট-ইউরোপ অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশিয়া আনুচকা দায়বাল, রিজিওনাল এডভাইজার ফর গভার্নেন্স, পিচ অ্যান্ড সিকিউরিটি মিস সাবিন ফ্রেইজার, ডিরেক্টর-স্ট্রেটেজিক পার্টনারশিপ ডেনিয়েল সেইমর আলোচনায় অংশ নেন।
বৈঠকে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের যুগ্মসচিব এমএ কামাল বিল্লাহ, জাতিসংঘে বাংলাদেশের ডেপুটি পিআর মো. মনোয়ার হোসেন ও কাউন্সিলর মোসা. শাহানারা মনিকা উপস্থিত ছিলেন।
এসএম/এমএমএ/