‘আমাদের অর্থে আমাদের পদ্মা সেতু’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন সম্পাদিত ‘আমাদের অর্থে আমাদের পদ্মা সেতু’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) সকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে গ্রন্থটির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘চন্দ্রাবতী একাডেমি’ আয়োজিত প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে স্পিকার গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করেন।
চন্দ্রাবতী একাডেমি প্রকাশিত বইটিতে শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী, বিশেষজ্ঞ ও নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের ৬৭টি লেখা, গুরুত্বপূর্ণ ছবি, তথ্য উপাত্ত্ব স্থান পেয়েছে।বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে পদ্মা সেতুর স্বপ্নদ্রষ্টা ও মূলরূপকার বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
এসময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বড়ো উদ্যোগে এ ধরনের প্রকাশনা সব সময় প্রয়োজন আছে। পদ্মা সেতুর নির্মানের পেছনের গল্পগুলো সবারই জানা উচিৎ। কি কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এগিয়েছেন, এগুলো জানতে হবে।
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, যারা হতাশার কথা বলতো, তারা তাদের জবাব পেয়ে গেছে। আমরা নিজেরা যে কিছু করতে পারি, পদ্মা সেতু তারই প্রমাণ। স্বাধীনতা অর্জনের পর পদ্মাসেতু বড় ধরনের একটি মাইলফলক।
মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে বিশ্বব্যাংকের চলে যাওয়া সঠিক ছিল না মন্তব্য করে আনিসুল হক বলেন, সংস্থাটি সে সময় যে ব্যবহার করেছিল, তা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য অসম্মানের। বাঙালিকে দাবায়ে রাখতে পারবা না, এটা আবারো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মানুষের আত্মমর্যাদা বেড়েছে।দুনীতির অভিযোগ দিয়ে তারা প্রমাণ করতে পারেনি। অভিযোগ সাপে বর হয়েছে নিজেদের টাকায় সেতু বানিয়ে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ধার করা অর্থে টেকসই উন্নয়ন হয় না। নিজস্ব অর্থায়নে, নিজেদের জ্ঞান ও বুদ্ধির বদৌলতে এ দেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। আমরা আমাদের সক্ষমতা দেখিয়েছি, ভবিষ্যতে এই জ্ঞানকে কাজে লাগানোর কোন বিকল্প নেই।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, পদ্মা সেতুতে রাজনীতি এত বেশি প্রবল ছিল, যে টেকনিক্যাল জটিলতার কথা কেউ দেখার প্রয়োজন বোধ করেননি। দেশি বিশেষজ্ঞরা সব কিছু সামলেছেন। এই সেতু নিয়ে এই আলোচনা বহুদিন চলমান থাকবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সবচেয়ে দুরূহ কাজটি সম্পাদন করা সম্ভব হয়েছে। আমরা অনেক বড় পরনির্ভরশীল ছিলাম। পদ্মা সেতু উন্নত বাংলাদেশের শুরুর বিন্দু। এরপর শুধু সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। আমরাও পারি, এটা বুঝতে হবে।
১৩/১৪ টা বিষয়ে পিএইচডি করার মত বিষয় পদ্মা সেতুতে বিকশিত হয়েছে দাবি করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ড্রয়িং ও ডিজাইন চূড়ান্ত করার আগে কোন প্রকল্পের খরচ নির্ধারণ করা যায় না। পদ্মা সেতুতে সেসময় খরচে হিসেব যা দেয়া হয়েছিল, তার হিসেব নিকেষ সঠিক ছিল না। ৩০ হাজার কোটি টাকায় স্থির থাকাটা বড় ধরনের সফলতা।
সভাপতির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের গর্ব, আত্ম প্রত্যয়ের। বিদেশিরা বললেই, লাফালাফির কিছু নাই। বিদেশিদের সকল পরামর্শ গ্রহণ করার প্রয়োজন নেই। এই শিক্ষা আমরা পদ্মা সেতু থেকে শিখেছি।
বাংলাদেশ সম্পর্কে আমরা সবচেয়ে ভালো জানি, অন্যরা নয় এমন মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঢালাওভাবে দুনীতির অভিযোগ দুঃখজনক। যখন বলা হয়, টাকা পাচার হয় বাংলাদেশ থেকে। তথ্য চাইলে তখন আর তথ্য মিলেনা, গোপনীয়তার দোহাই দিয়ে। দেশের জনগণ এই সেতুর জন্য উজার করে দিয়েছে। পদ্মা সেতু সারাবিশ্বে বাংলাদেশ মর্যাদা বাড়িয়ে চলছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন গ্রন্থটির প্রকাশক চন্দ্রাবতী একাডেমির স্বত্ত্বাধিকারী কামরুজ্জামান খন্দকার কাজল। অনুষ্ঠানের শুরুতে পদ্মা সেতু বিষয়ক একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে গ্রন্থটিতে প্রকাশিত প্রবন্ধের লেখকরা, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
আরইউ/