মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন আমার পিতার স্বপ্ন ছিল: প্রধানমন্ত্রী
জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার পিতার স্বপ্ন ছিল, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা, বাংলাদেশের মানুষের উন্নত জীবন নিশ্চিত করা।
শনিবার (২৫ জুন) মাদারীপুর শিবচর কাঠালবাড়ী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমার লক্ষ্য জাতির পিতার সেই স্বপ্ন পূরণ করা। আজকে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। কমিউনিটি ক্লিনিক করে মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি। আমার লক্ষ্য ছিল প্রত্যেক ঘরে আলো জ্বলবে। আজকে প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পাচ্ছে মানুষ। ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। সকলের হাতে মোবাইল ফোন এখন। সবাই যেন অনলাইনে কেনাকাটা করতে পারি সে ব্যবস্থা আমরা করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আমাদেরকে ভোট দিয়েছে বলেই আমরা নির্বাচিত হয়েছি। খালেদা জিয়ার সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণ বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা ২০০৯ সালে এর কাজ শুরু করি। খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, আসুন, দেখে যান পদ্মা সেতুর নির্মাণ হয়েছে কি না? বলা হয়েছিল নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করা সম্ভব না। কিন্তু আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করেছি। জনগণ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
ড. ইউনূস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ চলে যাবার পর তিনি চলে গেলেন আমেরিকায়। সেখানে গিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করলেন। এরপর বিশ্ব ব্যাংক টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিল।
তিনি বলেন, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করবে যে সেতু, সেটা কেন আমরা করতে পারব না?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার একমাত্র শক্তি বাংলার জনগণ। বাবা-মা-ভাই সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে ফিরে এসেছিলাম এই বাংলাদেশে। এই শরীয়তপুরে যখন এসেছিলাম তখন কি ছিল? নৌকায় করে এক-একটা এলাকায় গিয়েছি। কাদা-পানি মারিয়ে মিটিং করেছি। আজ সেই এলাকা বদলে গেছে। গোপালগঞ্জে যেতে ঢাকা থেকে আগে ২২ ঘণ্টা সময় লাগত। এখন কতো সহজ হয়েছে।
পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করার পর যখন আমি উদ্যোগ নিলাম, তখন আপনাদের সাহস এবং শক্তিতেই কাজ শুরু করেছিলাম। এখন আর আপনাদের কষ্ট করতে হবে না। এই খরস্রোতা পদ্মা সেতু পার হতে গিয়ে আর কাউকে সন্তান হারাতে হবে না, বাবা-মাকে হারাতে হবে না, ভাই-বোনকে হতে হবে না। আজ নির্বিঘ্নে আপনারা চলতে পারবেন সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
যারা বাধা দিয়েছিলেন তাদের উপযুক্ত জবাব আমরা দিতে পেরেছি এই পদ্মা সেতু নির্মাণ করে। ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমাদের কেউ দাবায়া রাখতে পারবে না। বাঙালিকে কেউ দাবায়া রাখতে পারেনি।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলা করে সবাইকে টিকা দিয়েছি। তিনি সবাইকে স্বাস্থ্যসুরক্ষা মেনে চলাসহ বুস্টার ডোজ নেওয়ার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতু এলাকায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে। এখানে ফসল উৎপাদন হবে, মাছ চাষ হবে। যা তা দেশ-বিদেশে রপ্তানি করতে পারব। অন্তত ২১টি জেলার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। বন্যার সঙ্গে আমাদের বসবাস। সিলেটে আমরা পর্যাপ্ত ত্রাণ পাঠিয়েছি। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলাযর শক্তি বাংলাদেশ রাখে, বাংলাদেশের জনগণ রাখে। বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। সব মানুষকে আমরা ঘর তৈরি করে দেব, এখন আমরা দিচ্ছি। পদ্মার এপার এবং ওপার, দুই পারের জনগণকে ঘর বাড়ি তৈরি করে দিয়েছি। প্রত্যেকটা মানুষ যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে সে ব্যবস্থা করতে পারব। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে জাতির পিতার স্বপ্ন পুরণই আমাদের অঙ্গীকার।
তিনি উপস্থিত জনগণের উদ্দেশে বলেন, কেউ সারারাত জেগে আছেন, কেউ ভোর থেকে অপেক্ষা করছেন। তাদের সবার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। এই বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা জীবন দিয়ে গেছেন জীবন দিয়েছেন আমার বাবা-মা ভাই-বোন। আমি এবং আমার ছোট বোন বেঁচে আছি। এই পদ্মা সেতু তৈরি করতে গিয়ে আমাদের অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমার ছেলেমেয়ে জয়-পুতুল, বোন রেহানাসহ অনেকে মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছে। কিন্তু আমরা পিছু হটি নাই। আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল এই সেতু নির্মাণ করব এবং দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করব এবং আমরা সেটা করতে পেরেছি। সেই সাহস দিয়েছেন আপনারা।
তিনি বলেন, আপনারা যার যার জায়গায় বৃক্ষরোপণ করবেন। এক ইঞ্চি জমিও যেন পড়ে না থাকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য সারা পৃথিবীতে খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। আপনারা খাদ্য উৎপাদনে মনোযোগ দেবেন। আপনারা দেশকে গড়ে তুলবেন। কারণ এই দেশ আপনাদের, আমাদের। আজ বাংলাদেশে খাদ্য, বাসস্থান, বিদ্যুৎ সবক্ষেত্রে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে।
আপনাদের কাছে এটাই আমার ওয়াদা। আপনাদের মাঝেই আমি ফিরে পেয়েছি বাবার স্নেহ, মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ। আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমি যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত এই ওয়াদা আমি দিয়ে গেলাম।
সব শেষে কবিতার ছন্দে তিনি বলেন, ‘নিঃস্ব আমি রিক্ত আমি দেবার কিছু নেই আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই।’
এমএমএ/