সেতুর কাজে যারা বাধা দিয়েছিল তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে যারা বাধা দিয়েছিল তাদের কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নাই। কারো বিরুদ্ধে কোনো অনুযোগ নাই। তাদের হয় তো চিন্তায় দৈন্যতা আছে আত্মবিশ্বাসের দৈন্যতা আছে, সেটাই আমি মনে করি। আজ থেকে আমি মনে করি তাদেরও আত্মবিশ্বাস বাড়বে যে না বাংলাদেশ পারে। সেতুর কাজ বন্ধ করতে যারা নানাভাবে ষড়যন্ত্র করেছিল বা বাধা দিয়েছে, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে, তাদের হৃদয়ে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে। দেশের মানুষের প্রতি তারা আরও দায়িত্ববান হবেন।
শনিবার (২৫ জুন) সকালে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মাওয়া প্রান্তের সুধী সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ। যারা বার বার আমাকে সাহস যুগিয়েছেন। আমি বাবা-মা, ভাই সব হারিয়ে এদেশের মানুষের উপর ভরসা রেখেই ফিরে এসেছিলাম। আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করেছিল বলেই ফিরে এসেছিলাম। অনেক বাধা ছিল। এসেছিলাম একটি লক্ষ্য সামনে নিয়ে। যে দেশ আমার বাবা স্বাধীন করে গেছেন সেই দেশ এভাবে অবহেলিত থাকতে পারে না। এই দেশের জন্য আমাকে কিছু করতে হবে। যে সাহস আমি পেয়েছি, দেশের জনগণ যে সাহস দিয়েছে। আমার মা-বাবার দোয়া সবসময় আমার উপরে ছিল। তাদের আশীর্বাদের হাত আমার মাথায় আছে বলেই এই কাজগুলো করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, এই সেতুর কাজ বন্ধ করতে যারা নানাভাবে ষড়যন্ত্র করেছিল বা বাধা দিয়েছে, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে, তাদের হৃদয়ে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে। দেশের মানুষের প্রতি তারা আরও দায়িত্ববান হবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক যখন অর্থায়ন বন্ধ করল আমরা থেমে যাইনি। পদ্মা সেতু বানানো নিয়ে দুর্নীতি, এটা আমরা করতে পারি না, করব না। অনেক পানি ঘোলা, অনেক ষড়যন্ত্র অনেক কিছু মোকাবিলা করলাম। এর সঙ্গে যুক্ত হলো আমাদের অনেক স্বনামধন্য, জ্ঞানী অর্থনীতিবিদ তাদেরও মতামত এবং এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি হলো যে সত্যি বুঝি দুর্নীতি হয়েছে। যেখানে কোটি টাকা-পয়সা ছাড় হয়নি দুর্নীতি কোথা থেকে এলো। যখন কানাডার আদালত রায় দিলো বিশ্বব্যাংকের সব অভিযোগ মিথ্যা, ভুয়া, কোনো দুর্নীতি এখানেই হয় নাই। তারপর তারা থেমে যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আমাদের দেশ, এদেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা, কল্যাণ করা এটাকে দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছি। যতই অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করুক। একই সঙ্গে আমার বোন রেহানা, আমার ছেলে-মেয়েদের ওপর কম ধকল যায়নি। যখন সকল প্রতিষ্ঠান অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়াল। আমি যখন পার্লামেন্টে ঘোষণা দিয়েছিলাম নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করব। এই ঘোষণার পর দেশবাসীর কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছিলাম, তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। মানুষের শক্তিটাই হচ্ছে বড় শক্তি। সেই শক্তি নিয়েই এই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করি। অনেকের মতামত ছিল নিজস্ব অর্থায়নে আবার কীভাবে করব। তাদের ধারণা ছিল বাংলাদেশ সারাজীবন পরনির্ভরশীল থাকবে, আর অন্যের দয়ায় চলতে হবে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা আমাদের শিখিয়েছেন আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে। বাংলাদেশকে আমরা আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবেই গড়ে তুলতে চাই। এ লক্ষ্য নিয়ে সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা এগিয়ে চলছি। কৃতজ্ঞতা দেশের জনগণের প্রতি। সেদিন আমার পাশে শুধু দাঁড়ান নাই, অনেকে অর্থ দিয়েছিলেন যে যতটুক পেরেছেন। আমি বলেছিলাম নিজেদের বাজেট থেকে করতে পারব, ওই টাকাও তো জনগণের টাকা। যারা তখন এই কথাগুলো বলেছিলেন এটা হবে না, নিজস্ব অর্থায়নে সম্ভব না, এটা একটা স্বপ্ন মাত্র, এটা কখনই বাস্তবায়ন সম্ভব না। যা হোক আমার কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নাই। কারো বিরুদ্ধে কোনো অনুযোগ নাই। তাদের হয়তো চিন্তায় দৈন্যতা আছে, আত্মবিশ্বাসের দৈন্যতা আছে সেটাই আমি মনে করি। আজ থেকে আমি মনে করি তাদেরও আত্মবিশ্বাস বাড়বে যে না বাংলাদেশ পারে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে, মর্যাদা পাবে। আসুন শপথ করি এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব। বাঙালি জাতি বীরের জাতি। বাঙালির ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে রচিত হয়েছে অনেক ত্যাগ-তীতিক্ষা, অনেক রক্ত ধারা, বার বার আঘাত এসেছে, বাঙালি ঘুরে দাঁড়িয়েছে, উঠে দাঁড়িয়েছে। বাঙালি বার বার আঘাতের পরও সদর্পে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। যতবারেই হত্যা কর জন্মাব আবার, দারুণ সূর্য হব লিখব নতুন ইতিহাস। জয় বাংলা।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এসএম/এসজি/