পদ্মা সেতু উদ্বোধন করলেন শেখ হাসিনা
উদ্বোধন হয়ে গেল স্বপ্নের পদ্মা সেতু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ১১টা ৪৭ মিনিটে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে টোল প্লাজায় নিজ হাতে টোল পরিশোধ করেন। এরপর ১১টা ৫৩ মিনিটে ফলকের কাছে গিয়ে মোনাজাত করেন এবং ১১টা ৫৮ মিনিটে সেতুর ফলক উম্মোচন করে স্বপ্নের সেতুর উদ্বোধন করেন। ফলক উন্মোচনের সময় সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও সাবেক সেতু সচিব মোশারফ হোসেন ভু্ইয়া পাশে ছিলেন। এসময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও পাশে ছিলেন। মোনাজাত পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
এর মধ্য দিয়ে অবসান হলো দীর্ঘ প্রতীক্ষার। খুলল দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ, উন্নয়ন, শিল্পায়নসহ বহুমুখী সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। একই সুতোয় পুরো বাংলাদেশ যুক্ত হলো সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায়। সমৃদ্ধির পথে আগাল আরেক ধাপ।
সব ষড়যন্ত্রকে পেছনে ফেলে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াল। স্বাধীনতার ৫১ বছরের মাথায় এসে নিজেদের সক্ষমতার স্পষ্ট জানান দিল বিশ্ববাসীকে। নানান কাঠখড়, ষড়যন্ত্র, প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তা, আত্মবিশ্বাস আর জনগণের প্রতি দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে খরশ্রোতা প্রমত্তা পদ্মার বুকে ৪২টি পিলারের উপর নির্মিত হলো বাংলাদেশের মর্যাদা, অহংকার, গৌরবের প্রতীক পদ্মা সেতু।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ দেন মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশে। সকাল সাড়ে ৯টায় গণভবন থেকে বের হয়ে প্রধানমন্ত্রী তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে যান। সেখান থেকে তিনি হেলিকপ্টারে করে রওনা হন মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে। সকাল ১০টায় সেখানে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি সুধী সমাবেশস্থলে পৌঁছেন।
প্রায় সাড়ে ৩ হাজার অতিথির উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশ মঞ্চে উঠে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হাত নেড়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান। এসময় সুধী সমাবেশে উপস্থিত দেশি-বিদেশি অতিথিরা দাঁড়িয়ে তাকে স্বাগত জানান।
সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠানের শুরুতে পদ্মা সেতুর থিমসং পরিবেশেন করেন দেশবরণ্যে শিল্পীরা। এরপর শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সমাবেশ বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
এসময় তিনি পদ্মা সেতু প্রকল্পে জমি দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য জমিদাতাদের প্রতি কৃজ্ঞতা জানান। তিনি পরিচয় করে দেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের কর্মযজ্ঞের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন সেই প্রকল্প পরিচলক, উপপ্রকল্প পরিচালক, মূল সেতুর প্রকৌশলীসহ অনেককে।
তার বক্তব্যের পর একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। যেখানে ফুটিয়ে তোলা হয় দেশের মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চর ভাষণ, ১৫ আগেস্টের শোকাবহ দিন থেকে শুরু করে নানা ইতিহাস তুলে ধরা হয়। এতে তুলে ধরা হয় পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন চুক্তির পর কথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সেই চুক্তি থেকে সরে যাওয়াসহ পদ্মা সেতুর আদ্যপান্ত।
এরপর সভাপতির বক্তব্য রাখেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আজকে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে আমরা অপমানের প্রতিশোধ নিয়েছি।
এরপর বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আবেগঘন বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু নির্মাণের গল্প তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই সেতু শুধু একটা সেতু, একটা রড, সিমেন্ট, পাথরের অবকাঠামো নয়, এটা আমাদের মর্যাদা, সক্ষমতার শক্তি। আমাদের গৌরব, অহংকার। এই সেতু বাংলাদেশের মানুষের অহংকার। তিনি বলেন, নানান প্রতিকূলতা ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণ করতে সক্ষম হই।
বক্তব্য শেষ হওয়ার পর একটি বিশেষ স্মারক ডাক-টিকিট অবমুক্ত করেন। স্যুভেনির শিট, উদ্বোধন খাম ও সিলমোহর প্রকাশ করেন। এসময় ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার ও সচিব উপস্থিত ছিলেন।এরপর প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর ১০০ টাকার স্মারক নোট অবমুক্ত করেন। এসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির ছিলেন। একই সঙ্গে চায়না মেজর কোম্পানি লিমিটেড পদ্মা সেতুর রেপ্লিকা উপহার দেয় প্রধানমন্ত্রীকে।
এরপর প্রধানমন্ত্রী নিজেই ১১টা ৪৭ মিনিটে মাওয়াপ্রান্তে টোল প্লাজায় টোল দেন। এরপর পদ্মা সেতুর ফলক উম্মোচন করেন এবং মোনাজাত করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারি গাড়ি বহর রওনা হয় টোল প্লাজায় দিকে। সেখানে পৌঁছে প্রথমে টোল পরিশোধ করেন প্রধানমন্ত্রী। তারপর প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর সেতুর শরীয়তপুরের জাজিরা অভিমুখে রওয়ানা হয়। মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই তিনি সেখানে পৌঁছে যান। প্রধানমন্ত্রী জাজিরাপ্রান্তে তিনি আরেকদফা সেতুর ফলক উম্মোচন ও মোনাজাত করেন।
এনএইচবি/এসএন