৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও টিকে থাকার প্রযুক্তি ব্যবহার হয়েছে পদ্মা সেতুতে

বিশ্বের অন্যতম খরস্রোতা নদী পদ্মা। এই নদীর গভীরতা, স্রোত ও পানির পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ায় পদ্মার উপর সেতু নির্মাণ ছিল অসম্ভব একটি কাজ। তবে এই অসম্ভব কাজই সম্ভব হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্বের সব অত্যাধুনিক প্রযুক্তির। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে যেন টিকে থাকতে পারে সেভাবেই নির্মাণ করা হয়েছে পদ্মা সেতু।
পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে ব্যাপক জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে বেশ কয়েকবার। সেসব জটিলতা সামলে অবশেষে তৈরি হয়েছে ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু।
খরস্রোত পদ্মার কারণে সেতু নির্মাণের শুরুতে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। পদ্মা সেতুর ইঞ্জিনিয়ারিং নকশা করেছে বিখ্যাত মার্কিন প্রতিষ্ঠান এইসিওএম। বিশ্বের অসংখ্য মেগা প্রকল্পের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানের নাম জড়িয়ে আছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হয়েছে নকশায়। কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেকোনো অবকাঠামোর জন্য ধ্বংসাত্মক হতে পারে। বেশ কিছু গুরুতর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে এইসিওএম।
পদ্মা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম নদী এবং পলি পরিবহনের বৃহত্তম আয়তন রয়েছে। বর্ষায় নদীর ভয়াবহ রূপ দেখা যায়। পদ্মা নদী ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত। তাই পদ্মা সেতু এলাকায় আশঙ্কা রয়েছে ভূমিকম্পের। এসব কিছু বিবেচনায় সেতুর নকশা করা হয়। ভূমিকম্পের ঝুঁকির দুটি স্তর অনুসরণ করা হয়েছিল- অপারেটিং পর্যায়ের ভূমিকম্প এবং কন্টিনজেন্সি পর্যায়ের ভূমিকম্প।
অপারেটিং পর্যায়ে আগামী ১০০ বছরের মধ্যে এই ভূমিকম্প আবার হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং সেই সময়ের মধ্যে এই ভূমিকম্প আরও ভয়ঙ্কর হওয়ার সম্ভাবনা ৬৫ শতাংশ। কন্টিনজেন্সি পর্যায়ে ভূমিকম্পের ৪৭৫ বছরের রেকর্ড ধরা হয়েছে। ১০০ বছরের সেতুর আয়ুষ্কালে ২০ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে এত তীব্র মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার।
এইসিওএম এই বিষয় বিবেচনায় সর্বোত্তম ফাউন্ডেশন ডিজাইন নির্ধারণের জন্য আরও বিশ্লেষণ করেছে। পদ্মা সেতুতে সর্বোচ্চ ক্ষমতার বিশেষ ধরনের বিয়ারিং ‘ডাবল কারভেচার ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং’ ব্যবহার করা হয়েছে। সেতুতে মোট বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়েছে ৯৬ সেট। সবচেয়ে বড় বিয়ারিংয়ের ওজন ১৫ টন। সেতুর পিলার ও স্প্যানের মাঝে বসানো হয়েছে বিয়ারিং। পদ্মা সেতুতে ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং’ সক্ষমতা ১০ হাজার টন। বিশ্বের কোনো সেতুতে এখন পর্যন্ত এমন সক্ষমতার বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়নি। সেতুটি রিখতার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে যেন টিকে থাকতে পারে সেভাবেই নির্মাণ করা হয়েছে।
এসজি/
